somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের লড়াই যেন মুক্তির জন্য হয়...

১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ধীরে ধীরে পরিষ্কার হচ্ছে, সত্যিকারের রাজাকার আসলে কারা । ৭১-এ কিন্তু অনেক শান্তিকমিটির সদস্যও সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে জীবনবাজি রেখেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদেরও বাঁচিয়েছেন বহুজন । তারপরও তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন হানাদার ও মুক্তিবাহিনী উভয় দলের গানপয়েন্টে । যার ফলে কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধারাদের হাতেই নিহত হয়েছেন, কেউ আবার হাতেনাতে হানাদারদের চোখে ধরা পড়ে শহিদ হয়েছেন । উদাহরণ হিসেবে আপনি জাফর ইকবালের নানার কথা ধরতে পারেন ।

একইভাবে নি:সন্দেহে বলা যায়, অনেক মুক্তিবাহিনীর সদস্যও ছিলেন, যারা মনন-মানসে ছিলেন রাজাকার । এমনকি মুক্তিযোদ্ধা সেজে রাজাকারি করেছেন এমন ইতিহাসও কম নয় । যুদ্ধের পরে যেসব রাজাকার মুক্তিযোদ্ধার সেজেছেন, তাদের আলাপ বাদ । সম্ভবত সে-কারণেই ৫ মে শাপলা চত্বরে হামলার সময় আমরা সেই পাক-হানাদার বাহিনীর নৃশসংতারই ছায়া দেখেছি । সুতরাং তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাও কোনোসূত্রে ‘রাজাকার’ হতে পারে, সেই সন্দেহ আপনি উড়িয়ে দিয়েন না ।

দ্বিতীয়ত: এইসব রাজাকারি দলের কথা বাদ দিলে একাত্তরের ঘনঘটায় এই দেশের শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষই মুক্তির পক্ষের মানুষ ছিলেন, তা আজ হলফ করেই বলা যায় । কাদের সিদ্দিকীর মতো অনেকে তা বলেছেনও বটে । হতে পারে অনেকেই পাকিস্তান বিভাজন চাননি কিন্তু বাঙালিদের মুক্তি তারা ঠিকই চেয়েছেন । পাকিস্তান ভাঙতে চাননি, কারণ তারা নিজেরাই বহু জেল-জুলম সয়ে পাকিস্তান গড়ায় ভূমিকা রেখেছিলেন । বঙ্গবন্ধুও ছিলেন তাদের একজন । মুসলমানদের অস্তিত্ব রক্ষায় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্যে তিনি যেভাবে জেহাদ করেছেন, ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র প্রথম ৫০ পৃষ্ঠা পড়লেই আপনার হৃদয়ঙ্গম হয়ে যাবে ।

আরও আশ্চর্যের কথা হলো, যারা পাকিস্তান চেয়েছেন, তারা সবাই আবার মুক্তি চান নি—শুধু পাকিস্তানই চেয়েছেন । এরা পাকিস্তান হওয়ার আগেই খানিকটা ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছেন এবং পাকিস্তান হলে যে সে-স্বাদে আরও মাত্রা পাবে, তাতে তারা নির্দ্বিধ ছিলেন । তাদের একদল কংগ্রেসের অর্থ পকেটে পুরেও পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দিয়েছেন । এরাই খাজা নাজিমুদ্দিনের লোক । তারা সীমানা ভাগাভাগি শেষ হওয়ারও আগেই পাকিস্তানে গিয়ে মন্ত্রিত্ব দখল করছেন । ভারতের মুসলিমদের কী হবে, কিংবা পাকিস্তানের হিন্দুদের রক্ষা কী করে করা যাবে—সেই চিন্তা যেন কিছুতেই তাদের আক্রমণ না করে, সে-জন্যে মদ্যপানও করেছেন প্রচুর । হোসেন সোহরাওয়ার্দির মতো মহৎ লোকেরা তাই আজীবন পাকিস্তানের জন্যে লড়েও হিন্দু-মুসলিমকে দাঙ্গা থেকে বাঁচাতে বাকি জীবন বলতে গেলে ভারতেই থেকে গিয়েছিলেন, ক্ষমতা পাওয়ার বদলে হয়েছিলেন ক্ষমতাসীনদের চক্ষুশূল। সে এক বিরাট ইতিহাস ।

এইসব কথা এই জন্যে বললাম যে, এই যে মতিয়া চৌধুরি গং, তারা যে চিৎকার করে ‘মুক্তিযুদ্ধ করেছি, মুক্তিযুদ্ধ চলবে, রাজাকারদের দেখে নিব’ টাইপের হুংকার দিচ্ছেন—এমন ছাত্রদের বিরুদ্ধে যারা মুক্তির কথা বলছে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়ছে, এমনকি এদের বিরাট সংখ্যক রাজাকারের ফাঁসি দাবি করে শাহবাগেও ভিড় জমিয়েছিল—এতে কি এটাই প্রমাণ হয় না যে, মুক্তিযুদ্ধ যদি তারাও করেও থাকেন, তবে যে-কারণেই করুন মুক্তির জন্যে করেন নি? এবং একই কারণেই কি তিনি মুক্তিকামী মানুষের সে-কালের নেতা বঙ্গবন্ধুর চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাতে চেয়েছিলেন?

তাহলে রাজাকার কে? যিনি মানুষের মুক্তি চান, বৈষম্যর বিরুদ্ধে যিনি, তিনি—নাকি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি বলে জাহির করে যিনি মানুষের মুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন তিনি?

বিস্ময়ের কথা হলো, ছাত্রলীগ করুক কিংবা করুক ছাত্র ফেডারেশন, তাদেরও আজকাল টাকার বস্তা নিয়ে নিজেদেরই মন্ত্রীদের কাছে ছুটতে হয় চাকরির জন্যে । তাহলে দলবাজ নয়, এমন নিরীহ গরীব মেধাবীদের কী হালত বলেন তো? তা ছাড়া যেখানে একটা সরকারি পদও ঘুষ ছাড়া বগলদাবা করা যায় না, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমামও হয় যেখানে ঘুষ দিয়ে, কোটার সুবিধা থাকার পরও ঘুষ দিয়ে কোটা পূরণ করতে হয়, সেখানে যদি সরকার কোটা বাদ দিয়েও দেয়, তাতেই বা কী লাভ? আমার মনে হয়, ঘুষের বিরুদ্ধে যদি আন্দোলনটা হতো এবং ঘুষটাকে যদি কন্ট্রোল করা যেতো, তাহলে ৫৬ ভাগ বাদ দিলে যে ৪৪ ভাগ থাকে তাতেই মেধাবীরা যথেষ্ট জায়গা দখল করতে পারতো । আর যদি ঘুষ বন্ধ না হয়, তাহলে কোটা থাক-বা না-থাক গরিব মেধাবীরা বঞ্চিতই থেকে যাবে চিরকাল, কিছুতেই তাদের স্থান হবে না।

তবু এইটকু বিশ্বাস আমরা রাখতেই পারি যে, যতটা সততার সাথে কোটা-বিরোধী আন্দোলন এখনও চলছে, তাতে এই ছাত্ররা যদি সরকারি পদস্থ হয়, তাহলে তারা অবশ্যই অন্তত ‘চেতনার ড্রামমুক্ত’ বাংলাদেশ উপহার দেবে—এবং তাতেই আমাদের বহুলাংশে সফলতা আসবে । আল্লাহ এই দেশকে রক্ষা করুন, দেশের মানুষকে শুভবুদ্ধি দিন এবং মুক্তিকামী মানুষকে বিজয় দান করুন । আমিন ।।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:৪৭
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×