ইয়েমেনে নিজ মতাদর্শী লোকদের ক্ষমতায় বসাতে অজস্র শিশু ও নারী হত্যা, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ও রাজ পরিবারের শতাধিক ধনকুবেরকে বন্দি করে রিজ-কার্লটন ঘটনা, গত আটমাসে মানবাধিকারকর্মীসহ ১৩৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড, হারামাইনের সংস্কারবাদি ইমামদের একের পর এক অপসারণ…
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরিকে নিজ দেশে দাওয়াত করে নিয়ে অস্ত্রের মুখে পদত্যাগপত্র লেখানো, ভ্রাতৃপ্রতীম আরব মুসলিম রাষ্ট্র কাতারকে কেবল মুসলিম দেশ-ব্যক্তি-সংগঠনকে সহযোগিতা করার অপরাধে (?) মাসের পর মাস অবরুদ্ধ করে রাখা, জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতি দিতে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে জবরদস্তি করা, যার জের ধরে এখনও রক্ত ঝরছে…সর্বশেষ নিজের বডিগার্ড পাঠিয়ে ভিন্নদেশে দূতাবাসে খাশোগিকে নির্মমভাবে হত্যা।
আর কত পাপের উদাহরণ বাড়াবেন?
তারপরও দেখি আমাদের দেশের কতিপয় চাটুকার তোষামোদি ধর্মীয় পণ্ডিত সৌদআরব বলতেই এমন অজ্ঞান যে, যেন ওটা পৃথিবীর ইসলামের একমাত্র রাজধানী এবং সেখানে যারা শাসন করেন, তারা হাউজে কাউসারের গোসলে এক্কেবারে শুচিশুদ্ধ ওমর-ওসমান । নারীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স, স্টেডিয়ামে খেলা দেখা, আর ব্যাংক আর বিমানের চাকরির বৈপ্লবিক ঘোষণা শুনে তারা ক্ষণে ক্ষণে চৌদ্দশ’ বছর আগের হেন উপমা নেই যা গোরখুদে পেশ করেন না।
ভাবখানা এমন যে, সৌদির রাস্তায় এত বছর পরে গাড়ির সিটে বসে একজন সুন্দরী নারীকে র্যাপ-সং গাইতে দেওয়ার ফজিলতে সালমান-মোহম্মাদ বাপ-বেটা মিলে যত আকাম করুক—সব আল্লাহ পাক বিনা হিসাবে মাফ করে দিয়েছেন। বলে কি না— আরবের মানুষের ইমান জানো?
সংবাদে দেখলাম—আমাদের প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মাদের কাছে গিয়ে বলেছেন, তিনি এ-পর্যন্ত ছয়বার সৌদিআরব হাজির হয়েছেন। তাতে খুশি হয়ে যুবরাজ বলেছেন—“আপনি তাইলে অর্ধেক সৌদি। অতএব, আপনাদের দেশের উন্নয়নের সহযোগী হতে চাই ।” বাহ, কী চমৎকার । আমাদের যে-সকল লীগার বন্ধু কথায় কথায় সৌদির পাপের প্রসঙ্গ টেনে বলেন যে, সৌদির বিরুদ্ধে মোল্লারা কেনো মিছিল করে না—তাদের কি এখন লজ্জা হয় না?
ইতিহাস বলে, পাপ বাপেরেও ছাড়ে না। মুহাম্মাদের পূর্বের উনিশজন আলে মুকরিন আলে সৌদ বাদশার ইতিহাস মনে রাখা দরকার। দিরিয়া আমিরাত আর নজদে দুই দুইটা রাষ্ট্র গড়েও শাসন ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে নি তারা । বরং সৌদ পরিবারের শতাধিক সদস্যকে কিভাবে নির্মমতার মুখে মরুর বালুতে মিশে যেতে হয়েছে। ব্রিটিশদের কূটচাল না থাকলে আধুনিক সৌদি রাষ্ট্রও দাঁড়াতো না। ‘লরেন্স অব অ্যারাবিয়া’ দেখে কিছুটা তো বুঝেছেন?
ধর্মীয় পণ্ডিতদেরও মনে রাখা দরকার—সৌদির বাদশা খলিফা নন। সৌদির পয়সা খেয়ে আলেম হলেও হককথা বলাই হবে আপনার সত্যিকারের নিমকহালালি। স্মরণ করুন, মক্কায় প্রচলিত প্রবাদ—উনসুর আখাকা জালিমান আও মাজলুমান—এর পরিভাষা কিভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন নবীজি স.—জালেমকে জুলুম থেকে ফিরানোই তাকে সহযোগিতা করা ।
অমা আলাইনা ইল্লাল বালাগ…
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:৫৪