somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সূর্যে বাঁধি বাসা!!

২১ শে এপ্রিল, ২০০৮ ভোর ৪:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কৃষ্ণকলি ইসলামের একমাত্র এ্যালবাম "সূর্যে বাঁধি বাসা" গত বছরের পহেলা বৈশাখে (১৪১৪) বের হয়েছিল, কিভাবে যেন অনেকদিন এটার খোঁজ পাইনি, এই সেদিন পহেলা বৈশাখেই (১৪১৫) ইউটিউবে 'বন্ধু তোমার' গানটা শুনেই মনে হল কিভাবে সম্ভব এই গানটা আগে দেখি নাই। তারপর একটু খুঁজে পেতেই কৃষ্ণকলির বায়োগ্রাফী'টা পড়লাম, কি চমৎকার ভাবেই না তার নিজের জীবনের সাথে মিলিয়ে গানগুলো লিখেছেন, গেয়েছেন তিনি- সুর করেছেন অণর্ব।

সূর্যে বাঁধি বাসা এ্যালবামের নামকরনের কথাটা না বললেই না-
ছোটবেলায় যখন কৃষ্ণকলি তার মায়ের কাছে জানতে চেয়েছিল "মানুষ মরে গেলে কোথায় যায়??" - কৃষ্ণকলির মা বলেছিল মানুষ মরে গেলে আকাশের তারা হয়ে যায়- তখন কৃষ্ণকলি জানতে চায় তার মা মরে গেলে কি হবে- উত্তরে মা বলেছিল- "সূর্য হবেন তিনি" - এ্যালবাম'টা বের হবার কয়েক মাস আগেই কৃষ্ণকলির মা মারা যান - কৃষ্ণকলি তার মা মেহেরুন নেসাকে উৎসর্গ করেছেন ‘সূর্যে বাঁধি বাসা’ এ্যালবামটি আর এ এ্যালবামের প্রচ্ছদ করেছে তার ছয় বছরের মেয়ে অমৃতাঞ্জলি শ্রেষ্ঠশ্বরী।

সূর্যে বাঁধি বাসা পাবেন- এখানে

নিচে গত বছর প্রথম আলো'তে প্রকাশিত একটা লেখা শেয়ার করলাম-
_________________________________
ভিন্ন আওয়াজ কিংবা ব্যতিক্রম সুর পেলে শ্রোতারা তা সহজে লুফে নেয়-এটা কৃষ্ণকলির নতুন অ্যালবাম আবার সেটি প্রমাণ করল। ‘সূর্যে বাঁধি বাসা’ শিরোনামে তাঁর একক অ্যালবামটি ইতিমধ্যে আলোচিত হয়েছে বিশেষ মহলে। গানের সঙ্গে অনুরাগ হলেও কৃষ্ণকলির জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব তাঁর মা।

‘হারমোনিয়ামটা এত বড় ছিল যে সেটা বাজাবার জন্য আমাকে ওর ওপর চড়ে বসতে হতো। গান শেখার শুরুটা এভাবেই’-বললেন কৃষ্ণকলি। না, হারমোনিয়ামটা বিশাল ছিল না, কৃষ্ণকলি নিজে তখন এতই ছোট যে, স্বাভাবিক আকৃতির হারমোনিয়ামই তাঁর কাছে মনে হতো বিশাল। মায়ের ইচ্ছাতেই গানের হাতেখড়ি। মা নিজেই শেখাতেন শুরুতে। অর্থাৎ নিজের চেয়ে মায়ের ইচ্ছেটাই ছিল বেশি।

আর দশজন আটপৌরে বাঙালি মায়ের মতো ছিলেন না কৃষ্ণকলির মা মেহেরুন নেসা। মেয়ের নাম রাখাতেও তার আভাস আছে। মা বিশ্বাস করতেন, মাতৃভাষাতেই মানুষের নাম হওয়া উচিত। কাজেই তাঁর কালো মেয়ের নাম কৃষ্ণকলি হবে-এটাই তো তাঁর জন্য স্বাভাবিক। তা ছাড়া মা তো সর্বদাই ছিলেন রবীন্দ্রনাথের কাছে সমর্পিত।

কেমন ছিলেন তাঁর মা? কৃষ্ণকলি জানালেন, ‘খুব বাঙালি ছিলেন মা। তিনি বামপন্থী রাজনীতি করতেন, ছাত্রজীবনে জাতীয় অ্যাথলেট হিসেবে দাপিয়ে খেলতেন। পরবর্তীকালে কলেজে বাংলা সাহিত্য পড়াতেন। মৃত্যুর পরও তাঁর চোখ ও হাড় দিয়ে গেছেন মানুষের কল্যাণের জন্য। অসম্ভব নরম মনের মানুষ ছিলেন, আর খুব রোমান্টিকও। ছোটবেলায় খুব বাড়ি-পালানো মেয়ে ছিলেন, মা হয়েও তিনি আমাদের হাতে ধরে বাউণ্ডুলেপনা শিখিয়েছিলেন। নৌকা ভাড়া করে সারা রাত তারা দেখা, অচেনা-অজানা গ্রামে, অচেনা কারও ছাপরা-ঘরে গিয়ে, ওদের সঙ্গে মাছ ধরে, রান্না করে খেয়ে, সারাটা দিন কাটিয়ে আসা।’ কৃষ্ণকলি জানালেন, তখন তাঁরা থাকতেন খুলনায়। ওখানেই রয়েছে তাঁর শৈশব-কৈশোরের সোনালি সব দিনের স্মৃতি। কৃষ্ণকলি জানান, ‘ফাঁকা মাঠ, বিশাল আকাশ, অজস্র তারা-জোনাকি, কাদা-পিছল পথ, ঘুটঘুটে অন্ধকার, ঝাঁ-ঝলমলে রোদ, ঝোপ-জঙ্গল, কচি পাতা-শুকনো পাতার এই পুরো প্রকৃতি আমার মায়ের মতোনই আমারও প্রথম প্রেমিক কিংবা আমি একমাত্র তার প্রেমিকা। আমার বয়সের সতেরোটা বছর আমি খুলনায় কাটিয়েছি। ওটা মফস্বল শহর, আমার গ্রামে থাকার অভিজ্ঞতা নেই বটে, তবু যখন-তখন হারিয়ে যাওয়া চলত।’

ওই শহরে গান শিখেছেন তিনি। তবে মেয়ের জন্য গানের শিক্ষক ঠিক করা নিয়ে মায়ের ছিল ব্যাপক অসন্তুষ্টি। ফলে প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর আগেই কৃষ্ণকলি খুলনা শহরের বেশ কয়েকজন গানের শিক্ষকের মুখোমুখি হন। ওই শিক্ষকদের সবাই চাইতেন শর্টকাটে ছাত্রীর গলায় গান তুলে দিতে, যা ছিল তাঁর মায়ের একেবারে অপছন্দ। তবে সবকিছু ছাড়িয়ে মেহেরুন নেসা চাইতেন, তাঁর মেয়ে গানটা শিখুক মনপ্রাণ দিয়ে।

‘অষ্টম নাকি নবম’ কোন ক্লাসে পড়ার সময় তা মনে নেই কৃষ্ণকলির, তবে তখনই তিনি একসঙ্গে দুজন শিক্ষক পেলেন, যাদের একজন সাধন ঘোষ, অন্যজন বাসুদেব বিশ্বাস বাবলা। সাধন ঘোষ শেখাতেন রবীন্দ্রসঙ্গীত আর বাসুদেব বিশ্বাস বাবলা উচ্চাঙ্গসঙ্গীত। পরে ঢাকায় এসে ছায়ানটে বছর তিনেক রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিম নিয়েছেন তিনি। তবে খুলনায় থাকাকালে শুরু হয় তার নিজের গান লেখার চেষ্টা।

কৃষ্ণকলি জানালেন, শুরুটা ছিল নিতান্তই ছেলেমানুষিতে ভরা। তিনি বললেন, বলা যায় তখন আমি রবীন্দ্রসঙ্গীত বানাতাম। বিষয়টাকে আরো স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্যই জানালেন, আসলে রবীন্দ্রনাথের সুরের ভেতর নিজের ইচ্ছে মতোন কথা জুড়েই দেওয়াটাই ছিল তার কাজ। কাজেই আমার লেখা রবীন্দ্রসঙ্গীতগুলো গীতবিতানে নেই। বোধ হয় কাজটা অসচেতন অবস্থায় করতাম। মা একদিন বললেন, তুই যে গুন গুন করে গান তৈরি করিস সেগুলোর কথা কিন্তু চমৎকার, চাইলে তুই ওগুলো লিখে রাখতে পারিস।

স্বচরিত রবীন্দ্রসঙ্গীতের পাঠ চুকিয়ে নিজের গানে আসতে খুব বেশি সময় লাগেনি কৃষ্ণকলির। তিনি জানালেন, তার নিজের লেখা প্রথম গানটি হল ‘চাঁদের মা বুড়ি’। তবে তাও আমি গান লিখব এমন কোনো সচেতন প্রয়াস থেকে আসেনি ওই গানটি। তিনি বলেন, একাকীত্বের অভিমানে ভরা নিসঙ্গ এক কিশোরীর কথা আছে ওই গানে, যে কিশোরী চাঁদের মা বুড়ির কাছে গল্প শুনতে চায়। আসলে ওই গানটি যখন তৈরি হচ্ছে তখন আমি কাঁদছিলাম আর কেঁদে গাইছিলাম গান। গানটিতে ভাঙা পরিবারের একটি মেয়ের বেদনার নির্যাসটুকু মূর্ত হয়েছে। এর পরের গানটি হচ্ছে ‘বোশেখেতে রং মাখিবি কে কে আয়’, যা কৃষ্ণকলির সদ্যপ্রকাশিত অ্যালবামে স্থান পেয়েছে।

কৃষ্ণকলি জানালেন, তিনি গান লিখেন না, গান তার কাছে আসে। নিজের গান কৃষ্ণকলির এমনই ধারণা। তার গানের গীতিময় মগ্নতায় এ কথা বিশ্বাস করতে দ্বিধা হয় না। সত্যিকার অর্থেই দীর্ঘদিন ধরে রচিত হয় তার একেকটি গান আর গান রচনার এই দীর্ঘপ্রক্রিয়ায় গানটি চূড়ান্ত হওয়ার আগে কখনোই খাতা-কলমের আশ্রয় নেন না তিনি। কৃষ্ণকলির নিজের লেখা ও সুর করা অনেক গানের কয়েকটি নিয়ে গেল পহেলা বৈশাখে বেঙ্গল মিউজিক প্রকাশ করেছে তার প্রথম অ্যালবাম ‘সূর্যে বাঁধি বাসা’। কৃষ্ণকলির এ অ্যালবামে সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছেন নতুন প্রজ্নের দারুণ শক্তিমান শিল্পী ও পরিচালক অর্ণব।

কৃষ্ণকলি জানালেন, ‘সূর্যে বাঁধি বাসা’ প্রকাশের নেপথ্যে রয়েছে অনেক ঘটনা। অনেক তিক্ততা। তিনি জানালেন, কয়েক জন বন্ধুর কথা, যারা না থাকলে তথাকথিত সঙ্গীত পরিচালকদের ঘেরাটোপ ডিঙ্গিয়ে অর্ণবের কাছ পর্যন্ত পৌঁছানো হত না তার। কৃষ্ণকলি তার মা মেহেরুন নেসাকে উৎসর্গ করেছেন ‘সূর্যে বাঁধি বাসা’ অ্যালবামটি আর এ অ্যালবামের প্রচ্ছদ করেছে তার ছয় বছরের মেয়ে অমৃতাঞ্জলি শ্রেষ্ঠশ্বরী।

গান নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জিজ্ঞেস করলে কৃষ্ণকলি জানালেন, গানের চর্চাটাকে অনেক ফাঁকি দিয়েছি, এখন আবার রেওয়াজ করে তা পুষিয়ে নিতে চাই। তবে গাইছি নিজের গান, ভবিষ্যতেও নিজের গানই গাইব। বেঙ্গল মিউজিকের সঙ্গেই আরো তিনটি অ্যালবাম প্রকাশের চুক্তি রয়েছে তার। অবশ্য এখনই নতুন কোনো অ্যালবামের কাজে হাত দিচ্ছেন না তিনি।


সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ১০:১৩
২৮টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×