বিসিএস এ যোগদানের জন্য আজিজের কম্পিউটার দোকানের বায়োডাটার ফরম্যাটে গিয়ে দেখলাম মুসলিমরা ধর্মের যায়গায় ইসলাম লিখে ব্র্যাকেটে আবার সুন্নি লিখছে। আমি কম্পিউটার অপারেটরকে বললাম মামা সুন্নি শব্দটা কেটে দেন। তারপর বললাম ধর্মের যায়গাটা বাদ দেওয়া যায়না? মামা বললেন সবাই দিছে আপনি না দিলে কেমন দেখা যায়। তাই আমি বাদ না দিয়ে ধর্মের যায়গাটা রেখে দিলাম।
আমি যতদূর জানি কোথাও হিন্দুরা ব্রাহ্মণ, বৈশ্য বা শূদ্র উল্লেখ করেনা। ক্রিশ্চিয়ানরা ক্যাথলিক বা ব্যাপ্টিস্ট বা প্রটেস্ট্যান্ট উল্লেখ করেনা। কিন্তু শুধু মুসলিমদের ক্ষেত্রে জাত উল্লেখ করা হয়, শিয়া বা সুন্নি। হিন্দুরা সবচেয়ে বেশি বর্ণ বিদ্বেষী হওয়া স্বত্বেও তারা তা উল্লেখ করেনা। তাহলে অবশ্যই মুসলিমরা জাত পাতে বিভক্ত। শিয়া সুন্নিকে দেখতে পারেনা। সুন্নি শিয়াকে দেখতে পারেনা। সুন্নি অনেক আলেম শিয়াদের কাফের মনে করে। আর শিয়ারা সুন্নিদের দিকভ্রষ্ট মনে করে। শুধু এটুকুতেই তারা ক্ষান্ত নয়। সুন্নিদের কট্টরপন্থিরা শিয়া মসজিদে বোমা হামলা করে তাদের হত্যা করে। আর শিয়ারা চেষ্টা করে তার প্রতিশোধ নিতে। অন্য কোন ধর্মে এধরণের নিজেরা নিজেদের রক্ত দিয়ে হোলি খেলে না। কট্টরপন্থিরা কোন যৌক্তিক সমালোচনা পছন্দ করেনা। শুধু তাইনা সমালোচনা করতে গেলে মুরতাদ আক্ষা দিয়ে হত্যা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে।
যে ধর্মকে সবচেয়ে লেটেস্ট এবং উদার দাবী করা হয় তার এই ক্ষত বিক্ষত আর নোংরা চেহারার জন্য কে বা কারা দায়ী তা সয়ং ঈশ্বরই হয়ত জানেন। রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখার জন্য জঘন্যতম পন্থায় আমেরিকার পদলেহন করে। এমনকি রাজা পরিচালিত এবং প্রযোজিত সৌদি তথাকথিত গ্র্যান্ড মুফতি ফতোয়া দিয়ে আমেরিকা এবং ঈসরাইলের বিরুদ্ধে কথা বলা নিষিদ্ধ করে। সৌদ বংশ পরিচালিত আরব ভুখন্ডের ভন্ড শাসকগোষ্ঠি ইরানে হামলার জন্য আমেরিকাকে প্ররোচনা দেয় আর এর বিপরীতে আমেরিকাকে যুদ্ধে অর্থ সাহায্য দেওয়ার অঙ্গীকার করে। আমাদের অঞ্চলে একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে, ‘বৃক্ষ তোর নাম কি? বৃক্ষের উত্তরঃ ফলেই আমার পরিচয়।” ফল দেখেই আসলে বৃক্ষ চেনা যায়। কথিত মুসলিম জাহানের এমন অবস্থা দেখে এর ইতিহাস বুঝা যায়। এক রাজনীতিবিদ বলেছেন-‘ ইসলাম হচ্ছে এরাবিক যুদ্ধাদের ধর্ম।’ অবস্থা দেখে তাই-ই মনে হয়।
এবার আসি কথিত ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধরত আইএসআইএস এর প্রসঙ্গে। তারা নির্বিচারে নিরীহ অমুসলিম জনগোষ্ঠি, ইয়াযেদি জনগোষ্ঠি আর শিয়া মুসলিমদের হত্যা করছে। নিরীহ নারী, শিশু এদের কি অপরাধ? একসাথে ১৫০০ জনের মত নিরীহ নারী, শিশু, আবাল বৃদ্ধ বনীতাদের মাথায় গুলি করে হত্যা করে হত্যাকান্ডের বীভৎস দৃশ্য সুনিপুনভাবে ভিডিও করে সেটা ইউটিউবে পোষ্ট করেছে। একজন খৃষ্টান যুবককে কালেমা পড়িয়ে আল্লাহু আকবর বলে গলায় ছুরি চালিয়ে করাত দিয়ে গাছ কাটার মত করে গলা কেটে দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে হত্যা করার দৃশ্য ইউটিউবে দেখে আমি প্রায় অজ্ঞান হওয়ার অবস্থায় চলে গেছিলাম। মানুষ মানুষকে কিভাবে নৃষংশভাবে হত্যা করে এটা দেখে কষ্টে আমি মুর্ছা যাচ্ছিলাম। এটা যদি ধর্ম হয় তাহলে ধর্ম কিভাবে মানবিক হয়? কারো মতের অনুসারী না হওয়ার শাস্তি জঘন্য উপায়ে মৃত্যুদন্ড? পবিত্র কোরআন কিন্তু নিরীহ অমুসলিমদের হত্যার কথা বলেনি। তাহলে তারা এগুলো কেন করছে?
এবার আসি সিরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত সুন্নী জঙ্গিদের প্রসঙ্গে। তারা আইএসআইএস এর পূর্বেই এধরণের দৃষ্টান্ত প্রতিষ্টা করেছে। সৌদ পরিবার কর্তৃক পরিচালিত আরব ভূখন্ডের অনেক মুফতি আলজেরিয়া সহ সুন্নী জঙ্গিদের ভ্রাতৃপ্রতিম দেশসমূহের নারীদেরকে যৌন দাসী হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। এটা নাকি সওয়াবের কাজ। আর এ কাজ করলে জিহাদিদের সাথে তারা জান্নাতে যাবে। অথচ বিবাহিত অবস্থায় ব্যাভিচারের শাস্তি হল পাথর নিক্ষেপ করে সবচেয়ে কঠিনতম যন্ত্রণা দিয়ে হত্যা করা। আর এই মহান(!!) কাজটি সেই আরব ভূখন্ডে করা হয় পবিত্র যুম্মাবারের দিন মহান যুম্মার নামায শেষ করে। সবাই কিছু কিছু করে পাথর নিক্ষেপ করে এক সুমহান সওয়াবের কাজে এমনভাবে শরিক হয় যেন সেটা একটা উৎসব। উৎসবের উচ্ছ্বাসে তারা আদিম উন্মত্ততায় লিপ্ত হয়। আর আরেকদিকে তথাকথিত ইসলামী রাষ্ট্রের যুবরাজরা ইউরোপ আমেরিকাতে টাকার বিনিময়ে শয্যা সঙ্গিনী নিয়ে আদিম উন্মত্ততায় যৌনকর্ম করে। শুধু তাই নয় তারা মদ, জোয়া সহ এমন কোন জঘন্য কাজ নেই যেটাতে লিপ্ত হয়না। আমি এই মুহূর্তে নাম মনে করতে পারছিনা- এক যুবরাজের স্ত্রী দেশ থেকে পালিয়ে বাইরের দেশে গিয়ে সৌদি মহান রাজপুত্রদের কুকর্ম নিয়ে বই লিখেছিলেন। সেটার বাংলা সংস্করণ আমার পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। তাহলে কি বলব আল্লাহর নামে পতিতা বা যৌন দাসী হওয়া জায়েজ? গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায় সে আবার পরনারীর সাথে গল্প করা নিষিদ্ধ করে। মুফতিরা হয়ত এই ফতোয়া যুদ্ধজয়ের পর সাহাবীদের যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে অনন্য সাধারণ ব্যবহারের শিক্ষা থেকে পেয়েছেন। এটা আমার হাইপোথিসিস।
আমেরিকা তার মিত্রদের নিয়ে যা করছে তা মোটেও সমর্থন যোগ্য নয়। আর এটাতে ঈন্ধন যুগাচ্ছে সৌদ রাজবংশ। শুধু শুধু আমেরিকা আর তার মিত্রদেরকে দোষ দিয়ে লাভ কি যখন ঘরের শ্ত্রুই বিভীষণ। সবার শরীরে একই রক্ত বইছে। জন্মের পর পৃথিবীর সব শিশুদের অর্ধস্ফুট ধ্বনি একই। তার পরিবেশ থেকে আলাদা আলাদা ভাষা আর সংস্কৃতি লাভ করে। মৃত্যুর সময়ও সবাই একই রকমভাবে মারা যায়। জাতি বা ধর্মভেদে কোথাও কোন পার্থক্য নেই।
সীমান্তরক্ষীদের স্লোগান এক শত্রু এক বুলেট। কাঁটা তারের অপর প্রান্তে মানুষ বাস করেনা। তারা মন্সষ্টার! আর এর কোন বিচারও নেই। বড়জোড় ক্ষমা চাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। জীবিকার জন্য কাঁটাতার লুকিয়ে পার হওয়ার চেষ্টারত সাধারণ মানুষকে কুকুরের মত গুলি করে হত্যা করা হয়।
এক বন্ধুর স্ট্যাটাসে দেখলাম ছাত্রলীগের কমরেডগণ কাউকে ছাড় নেই। সামনে শিবিরের যাকে পাও তাকেই হত্যা কর। রক্ত গঙ্গা বইয়ে দিয়ে তাতে স্নান কর। শিবিরের কারো এদেশে বেঁচে থাকার বিন্দু মাত্র অধিকার নেই। তারা পশু। হ্যাঁ রক্তগঙ্গা নয় রক্ত দিয়ে মিসিসিপি লাল বর্ণে রঞ্জিত করে দাও। কিন্তু তার আগে একটু ভাব সেও মানুষ। তারাও কোন না কোন মায়ের সন্তান। ক্ষমতার পালাবদলে আবার যখন তারা সুবিধাজনক অবস্থানে আসবে তখন তারাও একই কান্ড ঘটাবে। শুধুমাত্র তথাকথিত ভ্রষ্ট মৌলিকত্বের জন্য মানুষ হত্যা করোনা। শিবির যখন এগুলো করবে তখন আমি বলব মানুষকে কথিত ভ্রষ্ট আদর্শের জন্য হত্যা করোনা। একমাত্র হত্যাকান্ড ছাড়া কোন কিছুর শাস্তিই মৃত্যদন্ড হতে পারেনা। সব কিছু মুছে ফেলে মানুষকে শুধু মানুষ হিসেবে ভাবতে শিখুক পৃথিবীর সবাই। সবার উপরে মানুষ সত্য। মানুষ হত্যার প্ররোচনাদানকারী সকল বিভেদ ছিন্ন হোক, নিপাত যাক। সবসময় সর্বোপরি মানবতার জয় হোক। আগামী পৃথিবী হোক মানবপ্রাণ সংহারমুক্ত সত্য ও সুন্দরে ভরা অহিংসা ও ক্ষমার নতুন সুশোভিত পৃথিবী।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:০৮