কাবুলে লাশ, লাশ মিউনিখে। ঢাকা, নিউইয়র্ক, কাশ্মির, জুবা, আলেপ্পো, বাগদাদ, গাজা, পশ্চিম তীর, প্যারিস, লন্ডন, পৃথিবীর কোনায় কোনায় আজ মৃত্যুর মিছিল।
আমার শহরে কিছু হয়নি ভেবে আজ আমরা স্বস্তিতে ঘুমাতে যাচ্ছি। কিন্তু এ মিছিল কখন আমাদের এর মাঝে নিয়ে নেবে কে জানে? তৃপ্তিতে আমরা নিজের ঘার থেকে ভার নামাতে চাচ্ছি কিন্তু সেই ভার অন্য ঘারে গিয়ে একই কাজ করবে তা জেনেও আজ আমরা ভাবছি তবু আমি বেঁচে গেলাম বা আমার কোন দোষ নেই।
আসলেই কি তাই?
ঢাকা ঘটনার পর ছেলেমেয়ে কে সময় দেয়া, পারিবারিক বন্ধন বাড়ানো, ছেলে মেয়েদের স্বাভাবিক মানসিক বিকাশের ব্যাপারে নানা মুনির নানা মত শুনছি। কিন্তু তারা বা আমরা আসলেই কি সেসব কিছু মানছি? একজন পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া ছাত্রের রুটিন দিচ্ছি, ভাববেন না এটা শহরের বড় কোন বিদ্যালয়ের ছাত্রের,
সকাল ৬ টায় প্রাইভেট
৭.৩০ থেকে৮-.৩০ বাসায় পড়াশোনা।
৯ টায় স্কুলে যাওয়া।
৯ টা থেকে ১১ টা স্কুলে বিশেষ কোচিং।
১১ টা থেকে ৫ টা স্কুলের ক্লাশ।
৫ টা থেকে ৬ টা কোচিং এর ক্লাশ বা বাসায় বাড়ির কাজ তৈরি করা।
৬ টা থেকে ৭ টা একটু অবসর।
৭ টা থেকে ৮.৩০ বাসায় টিউশন (স্যারের কাছে)
৮.৩০ থেকে ৯.৩০ বা ১০ টা পর দিনের কোচিং এর পড়া রেডি করা।
এর পর ঘুম আর পরবর্তি এক বিভীষিকাময় দিনের অপেক্ষা।
কেউ কি বলতে পারেন, এখানে সৃজনশীলতা কোথায়?
লাখ লাখ শিক্ষার্থী এমন এক সিস্টেমে বড় হচ্ছে। ওরা জানে না মাঠে গিয়ে খেলায় একটা ফুটবল ম্যাচ হেরে গেলে কি করে হার কে মেনে নিতে হয়।
ওরা জানে না ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে কাটা ঘুড়ির পেছনে ছুটতে ছুটতে নতুন কোন যায়গা খুঁজে পাওয়ার আনন্দ।
ওরা জানেনা কবিতা পড়ে তা থেকে কি করে মজা নিতে হয়।? স্কুলে তোঁ শব্দার্থ, কবির ভাব, ছন্দের প্রকার ভেদ এসবে ওদেরকে অতিষ্ট করে তুলছে।
ওরা জানে না নতুন কিছু সৃষ্টির এক অনাবিল আনন্দ কেমন হয়।
আমরা মানুষ হয়ে যন্ত্র তৈরি করছি। সেই যন্ত্র একটু আধটু যন্ত্রের ন্যায় কাজ করলে তাতে খুব বেশি অবাক হয়ার কি আছে?
এসব যন্ত্র কে একটু বুদ্ধি করে নিজের মত করে অপারেটিং সিস্টেম মাথায় ঢুকিয়ে দিতে পারলেই খুব সহজে তাদের মাঝের যন্ত্র কে দানবে রূপান্তর করা যায়।
তারা শুধু হ্যাঁ আর নাই বলতে শেখে ঠিক যন্ত্র যেমন। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমাদের হ্যাঁ আর না এর মাঝে যে অনেক খানি দূরত্ব থাকে। কখনো হ্যাঁ বললে না আর না বললে হ্যাঁ বুঝায়।
আমাদের সেই হ্যাঁ আর না এর মাঝের মানুষ দরকার। যারা মানবিক মানুষ হবে।
অন্ধকারে তাই পথ চলছি আশায় ভর করে। মৃত্যু নিশ্চিত জানি কিন্তু অন্ধকারের পরে আলোর দেখা পাবো, এ আশা হারিয়ে যায় নি। মৃত্যু টা হয়ত আলোতে এসেও হতে পারে বা তাঁকে দৃষ্টি সীমায় দেখেও হতে পারে বা এই কোটি কোটি স্বপ্নবাজ মানুষের যাত্রা পথে অন্ধকারেও হতে পারে। মহাকালের যাত্রা পথে একটি মানুষ এই আলোর দেখা পেলেও এ যাত্রা সফল।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৪