somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টুকরো সুতোর বাঁধন

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রিদুর প্রতিটা সকাল শুরু হয় গ্রাহামবেলকে কঠিন একটা গালি দিয়ে।এই লোক টেলিফোন আবিষ্কার না করলে এত সকালে কেউ তাকে কল দিতে পারতো না!

:হ্যালো...
:তুমি এখনো ঘুমোচ্ছ?

:তুমি এত সকালে কল দিলা কেন?আমি এখন উঠবো না!
:তুমি উঠবে, তোমার আব্বা উঠবে!

:তাহলে আব্বাকে কল দাও আমারে কেন দিলে?
:তুমি এখন উঠ,আমি রেডি হচ্ছি!প্লিজ আজ দেড়ি করো না!

প্রতিটা মেয়েই এক,আর তাদের হাতেই থাকে ঘুড়ির সুতো। আসলে আমরা তাদের হাতে নিজেকে সপে দিয়ে ঘুড়ি হয়ে যাই।আকাশে উড়ে ভাবি আমরা মুক্ত আসলে নাটাই "তাহা"র হাতে।

রিদুর নাটাই "তাহা"র হাতেই।তবে বাকিদের মত সে স্বেচ্ছাচারী নয়,সে রিদুর নিজস্বতা নষ্ট করেনি।

শুরুটা ঠিক কবে হয়েছিল মনে নেই।তবে কিভাবে হয়েছিল তা মনে আছে।

সেমিস্টার ব্রেক শেষে,"ঢাকা আসছি " ফেসবুকে রিদু পোস্ট লিখেছিল।সেখানে কমেন্ট করেই একটা রিকুয়েস্ট এসেছিল "ovimani Megh" নামের আইডি থেকে।ফেক ভেবে রিয়াদ একসেপ্ট করেনি।কিন্তু মেয়েটি দমে যায়নি,সে মেসেজ পাঠিয়েছে!
:কে-গো তুমি?
:মায়ের ছেলে,ভাবির দেবর....
রিদু বরাবরের মত অনেক পেঁচিয়েছিল! তারপর কথা চলতে চলতে, তুমি থেকে তুই!আজ আবার তুই থেকে তুমি।তাদের ভালোবাসা শুরু হয়েছিল,আজব না!

রিদু সুদর্শন,ভালো ছাত্র।প্রকৃতি পূর্ণতা পছন্দ করে না।রিদুর কি অপূর্ণতা, আমার জানা নেই!
তাদের কথা হত,একজন আরেকজনকে পাত্র/পাত্রী খুজে দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছিল।আশার কথা এই যে, কেউ সফল হয় নি।

রিদুর পাত্র নিপু পছন্দ করেনি,আর নিপুর পছন্দ করা পাত্রী রিদুর বাজে লাগতো। কিভাবে হবে, প্রকৃতির অন্যরকম প্ল্যান ছিল যে!


তাদের প্রথম দেখার সাক্ষী হয়েছিল সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০৪ নাম্বার রুম।তারিখ বোকাছেলেটার মনে নেই!কিন্তু নিপুর আছে,তাকে আমি জিজ্ঞেস করিনি।
:এই তুমি রিয়াদ না?
:হ্যা...

রিয়াদ ভ্যাবাচেকা খেয়েছিল,কারণ মেয়েটিকে সে চিনতে পারেনি।

:তোমার চয়েজ খুবই বাজে।কি আজেবাজে ছেলের ছবি দাও!ছি:এদের সাথে প্রেম করা যায়?
:তুমি কি দাও,সব চাচী-খালা!সুন্দরীরা তোমার চোখে পড়ে না!

পুরো ক্লাস তার কিচিরমিচিরে তাদের দিকে তাকিয়েছিল।
:আমার নাম নিপা।

লিখে মেয়েদের রূপের বর্ণনা দেয়া যায়কি?যায় না,সবাই পারে না।নিপার প্রতি মুগ্ধতা রিয়াদ লুকোতে পারেনি!

তারপর তাদের কথা চলতো মেসেঞ্জার, ভাইবারে!তারা তাদের ভালোবাসায় আধুনিক
প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার করেছিল!

দু দিন পর....রিদুকে নিপু কল দিয়ে ধানমণ্ডি লেকে আসতে বললো।ধানমণ্ডি লেক তাদের প্রথম দেখা করার সাক্ষী!
নীল নাকি বেদনার রঙ,কিন্ত সেদিন নিপাকে নীল শাড়ীতে বেশ লাগছিল।নীল অপরাজিতায় মোড়ানো নিপু, রিদুকে মোহিত করেছিল!

রিদু সেদিন কি নিয়ে বাসায় ফিরেছিল,কেবল সেই জানে!আমরা কেবল জানি,নিপু নামে কেউ আছে তাকে নীল শাড়িতে রিয়াদের ভালো লাগে।

নিপুকে আমি যেদিন দেখেছি,সেদিন নিপু সবুজ শাড়ি পড়ে এসেছিল।আমি জানতাম,সবুজ রঙ কেবল জাতীয় পতাকাতেই মানায়।সেদিন নিপুকে দেখে, জান্নাতে পোশাকের রঙ কেন সবুজ হবে তার সার্থকতা বুঝেছি।
আমি বুজতে পারলাম,রিদু ঘুড়ির সুতো নিপুর হাতে দিতে প্রস্তুত!আর নিপু...?আমি তখনো বুঝতে পারি নি।

তারপর কত ঘুরাঘুরি, সিনেমা দেখা আর কথা বলা শেষে নিপা এগিয়েছিল।তাকে সাহসিনী বলা যায়...

নিপু সাহস করে বুদ্ধুটার হাত ধরেছিল।১০ জন বন্ধু,এত মানুষের ভীড়ে নিপু রিদুর হাত ধরেছিল।রিদু-নিপুর কেমন লেগেছিল,আমার জানা নেই।পৃথিবীর কোন লেখক সেই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়নি,আমিতো কোন নচ্ছার!


মূল ঘটনা ঘটলো ৫ই ডিসেম্বর,২০১৫!
:রিদু,
:হ্যা,বল।

:আমার চোখের দিকে তাকাও!
:হুম,চোখে কাজল দিয়েছ,আরকি?

:আর কিছু দেখতে পাওনা?
:নাহ্,,,,,
এটা বলে রিদু কোথায় একটা শুণ্যতা অনুভব করলো।সত্যিইতো ঐদুচোখ কিছুতো একটা বলছিল!মেয়েদের চোখের ভাষা পড়ার ক্ষমতা ঈশ্বর ছেলেদের দেয়নি।

রিদু নীরব দর্শক... নীরবতা নিপুই ভাঙলো।
:রিদু, আমি তোমায় ভালোবাসি!

বাকি সুদর্শন ছেলেদের মত রিদুও নিপুর "I love You!" বাক্যটাকে সহজভাবে নিয়েছিল!তার সিরিয়াস হতে সময় লাগলো তিন মাস।

তিনমাস পর সে ঠিকই বুঝতে পেরেছিল, "আমিও তোমায় ভালোবাসি" এটা বলা অত সহজ নয়!আর রিদুর নাটাই পুরোপুরি নিপুর হাতে চলে গেল.....

রিদু কিছুতেই স্বীকার করতো না!

তারপর কত ভালোবাসা-খুনসুটি পেড়িয়ে,আজ প্রায় তিন বছর....তাদের প্রেম পরিণতি পেতে যাচ্ছে!আজ রিদুর বিয়ে....

:এই রিদুর-বাচ্চা,উঠ!বিয়ের দিন তো আলসেমি ছাড়।
:ধুর,আজ সারারাত জাগার প্রস্তুতি নিচ্ছি,বিরক্ত করিস না।যাহ্‌,ভাগ!
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×