আহমেদ ফারিয়া । ফেসবুকে রাতারাতি talk of the town এ পরিণত হয়েছেন । নিজের জন্মদাতা পিতা ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, যিনি পেশায় কিনা একজন মিরপুর শাখার এক কোম্পানির ডিরেক্টর, তাকেই কিনা খারাপ বানিয়েছে মেয়েটি !!
আহমেদ ফারিয়ার ১০ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের ভিডিও যারা যারা দেখেছেন নিঃসন্দেহে তাদের সহানুভূতির জায়গাটা এই মেয়েটা জুড়ে বসেছে । যারা দেখেননি, তাদের জন্য ভিডিও লিংকঃ ফেসবুকে আহমেদ ফারিয়ার যে ভিডিওটি বর্তমানে মানুষের আলোচনায়
পুরো ১০ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে মেয়েটি অভিযোগ করেছে, তার জন্মদাতা পিতা নাকি তাকে মারতে মারতে মেরে ফেলার উপক্রম করেছে, তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্চনা করেছে, তার সকল ধরনের অধিকারগুলোকে অবজ্ঞা করেছে ইত্যাদি । এই ভিডিওটি প্রথম দেখাতে যে কেউই মেয়েটির সাইড নিয়ে মেয়েটির বাবাকে খারাপ মনে করতে পারে কিংবা গালিও দিয়ে বসতে পারে ।
এখন পর্যন্ত ভিডিওটি প্রায় ১.২ মিলিয়ন বার দেখা হয়েছে আর ৭৭৫৫ বার শেয়ার করা হয়েছে । কিন্তু আফসোস, অতি সূক্ষ্মভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে মেয়েটি শুধু মিথ্যাচারই করেছে, তার কথার মধ্যে কোন সত্যটা নেই । কিভাবে ? তাহলে আসুন একটু জেনে নিই ।
মেয়েটির ভিডিও আপলোড করার কয়েক ঘণ্টা পর মেয়েটির ছোট ভাই, ইফানউদ্দিন আহমেদ ইরাম আরেকটি ভিডিও আপলোড করে (ভিডিওটির লিংকঃ আহমেদ ফারিয়ার ছোট ভাই ইফানউদ্দিন আহমেদ ইরাম এর আপলোড করা ভিডিও
যে কিনা পরিস্কারভাবেই বলে যে মেয়েটি যা বলেছে তা সব ডাহা মিথ্যা । বাড়ির সকলেই সন্দেহ করছে যে সারাদিন ঘরের মধ্যে সকল জানালা লাগিয়ে রুম অন্ধকার করে শুধু ফ্যান চালিয়ে শুয়ে থাকা নিশ্চয় কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের কাজ হতে পারে না । বাড়ির সকলে তো এও সন্দেহ করছে মেয়েটি নেশাগ্রস্থ । ফারিয়া ৬ দিন ধরে বাড়িতে নেই । বাড়ির লোকজন সারাদিন খুঁজাখুঁজি করেও তাকে পাচ্ছিল না, ঠিক সেই মুহূর্তেই এই ভিডিওটি তার বাড়ির সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে । কিন্তু এসব হলো কিভাবে ? মানে সকলের ফারিয়ার নেশাগ্রস্থ হওয়ার সন্দেহ হলো কিভাবে ? আসুন সেটাও জেনে নিই ।
ফারিয়া পড়াশুনা করছে UIU বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে, অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বাকী সকলের চেয়ে সে ব্যতিক্রম কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও সে কোন ভালো বন্ধুই জুটাতে পারেনি । তার বন্ধুত্ব হয় NSU বিশ্ববিদ্যালয়ের সিয়াম আশিক ও তাজরিন চৌধুরী দুই ছাত্রের সাথে । বিষয়টা অনেক ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক হতে পারতো যদি না নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মত ব্যপার না হতো ।
যাই হোক, বাড়ির সকলের সন্দেহ নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ দুইজনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মেশার পরই ফারিয়া আহমেদ নেশার জগতে পা রাখে ।
আচ্ছা এবার আসি আসল কথায় । কেন সন্দেহ হলো মেয়েটি মিথ্যা বলছে !! কিছু লজিক দিয়ে কথাগুলো বুঝা যাবে । পয়েন্ট আকারেই বলি -
১. কোন মা কখনই ক্লাস ফাইভে পড়ুয়া মেয়েকে তার বাবার কাছে গোসল করতে পাঠাবে না, তাও আবার টানা দুই বছর ।
২. পুরো ১০ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের এই ভিদিওতে মেয়েটি কান্নাকাটি করলেও মেয়েটির চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানিও পড়তে দেখা যায়নি (যে কেউই ভালো করে চেক করে দেখতে পারেন) ।
৩. মেয়েটি যে মিথ্যা বলছে, এটা তার ছোট ভাইয়ের ভিডিও দেখেই পরিস্কার হয় । যেখানে মেয়েটি তার নিজের ভিডিও এর শেষে বলে বাবা সালিশ বসানো মানেই মেরে শেষ করে ফেলা, তার ছোট ভাইকেও নাকি একবার এরকম সালিশ বসিয়েছিল, আবার নাকি বসাবে - এই কথারই তেমন কোন ভিত্তি নেই ।
৪. উপরে দুইটা স্ক্রিনশটের ছবি দিয়েছি । ছবি দুইটি আহমেদ ফারিয়ার ২০১৫ সালের ইন্সট্রাগ্রাম ও ফেসবুক থেকে নেওয়া । ছবি দুইটিতে রেড বক্স করা লেখাগুলো পড়লেই বুঝা যায় মেয়েটি আসলে তার বাবার খুব ভক্ত ছিল, যা তার নিজের করা ভিডিও তে মোটেই বুঝা যায়নি । তাহলে এই ২ বছরে এমন কি পরিবর্তন হলো ?
এই বিষয়ে আরও ক্লিয়ার হতে এই ভিডিও-টি দেখুনঃ মানুষ ফেমাস হওয়ার জন্য কি জঘন্য কাজ করতে পারে !! নিজের বাপকেও ছাড়লো না !!
ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটস্-অ্যাপ, ভাইবার, ইমো ইত্যাদির যুগে ভাইরাল হওয়া বা ফেমাস হওয়া খুবই সহজ ব্যাপার । কিন্তু এরকম সস্তা খ্যাতি পাওয়ার জন্য আমরা অনেকে যে পথের আশ্রয় নেই । এটা কতটুকু বৈধ ? তবে মেয়েটি যে একেবারে মিথ্যা বলেছে তা না । হ্যাঁ, হয়তো তার বাবা সত্যিই তার রুমের দরজা খুলে নিয়ে গিয়েছিল । এরকম নেশাগ্রস্থ মেয়ে একা একা ঘরে কি কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলবে, এই ভয়তে হয়তো । যাই হোক, এরকম সস্তা সেলেব্রিটিদের ভিডিও যাচাই না করে শেয়ার করে আপনি আসলে তাদেরকেই বাহবা দিচ্ছেন, না জেনেই । এমনটা করা উচিৎ না মোটেও ।
আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে ঐশী রহমানের কথা । পুলিশের এসবি মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে অর্থাৎ নিজের বাবা-মাকেই দুই বন্ধু মিজানুর রহমান ও আসাদুজ্জামানের সহায়তায় কুপিয়ে মেরেছিল মেয়েটি । নেশার কাজে বাধা দেওয়াতেই ঘটেছিল সেই আলোচিত ঘটনাটি । কি জঘন্য ও ঘৃণ্য কাজ !! ঠিক সেরকমই যেন ঘটেছে এই আহমেদ ফারিয়ার বেলাতেই । এবারও সেই একই ব্যাপার, বাধা আবার সেই নেশাতেই । ভাবতেই গা শিউরে ওঠে !!
বাবা শব্দটা অনেক জটিল । এই শব্দের সাথে মিশে আছে হাজারো-লাখো ছেলে-মেয়ের আবেগ, শক্তি পাওয়ার জায়গাটা । আপনি না জেনে এমনকিছু শেয়ার করবেন আর অবুঝ ছেলে-মেয়েগুলোর বাবা শব্দটার সাথেই একটা সন্দেহ ঢুকে যাবে মনে, যা আদৌ কাম্য নয় । বিখ্যাত লেখক হুমায়ুন আহমেদ একটা কথা বলেছিলেন, "এই পৃথিবীতে হাজারটা খারাপ মানুষ আছে কিন্তু একটাও খারাপ বাবা নেই" । কথাটা আসলেই মনে গিয়ে লাগে । এরকম সস্তা সেলেব্রিটিদের মুখে চপেটাঘাত পড়বে তখনই, যখন আপনি এদের মূলে গিয়ে জিজ্ঞেস করবেন, এদের আসল ঘটনা জেনে এদেরকে ধরবেন কিংবা এদের সত্যটা যাচাই করে এদেরকে এক্সপোজ করে দিবেন ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:০০