somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুরান ঢাকার কুট্টির খপ্পরে মেয়েটি (পর্ব ১ - ৪) X(( :||

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হঠাৎ করে মিথিলার পথ রোধ করে একটি ছেলে । ছেলেটিকে আগে কোনদিন দেখেনি সে । পথরোধ করা ছেলেটি অবশ্য একটি বাইক নিয়ে এসেছে, সাথে তার পিছনে আবার একজন বন্ধুও আছে । মিথিলাও অবশ্য একা নয় । তার সাথে তার বান্ধবী পারুল আছে । তারা একটু আগেই নয়াপল্টনের কেএফসি থেকে বেরুলো । ছেলেটি পথরোধ করে দাঁড়ানোর সময় তারা ফকিরাপুল থেকে নাইটিংগেল মোড়ের দিকে হাঁটছিল । এরকম হঠাৎ ঘটনায় সাধারণত সকলেই বিড়ম্বনায় পড়ে, মিথিলাও হয় । ছেলেটিকে আগে কোনদিন দেখেনি সে, এমনকি তার সাথের ছেলেটিকেও না ।

- এক্সকিউজ মি, পথরোধ করে দাঁড়িয়েছেন কেন ?
- কেলা, রোড টা তুমার আব্বায় বানায়ছে নি ?
- সরি, ঠিক আছে, তাহলে আপনি অন্যকথায় গিয়ে দাঁড়ান । আমাদের সামনেই কেন ?
- শুনো, পেঁচাইয়া কইতে পারি না, এই আমার এক বদভ্যাস । সুজা কইরা কইয়া ফেলাই, তুমারে আমার ভালা লাগছে । মানে ডাইরেক আই লাভু ।
- সরি, চিনি জানি না, হঠাৎ করে সামনে এসে আই লাভ ইউ বললেই কি হয় ? দেখুন, আপনারা কিন্তু সরে দাঁড়ান, নাহলে আমরা দুইজন কিন্তু চিৎকার দেবো ।
- দাও না ? জোরে চিল্লায়লে তুমগো গলা কেমন হোনা যায়, এইডাও বুইঝা হালামু । দাও, জোরে একটু চিক্কুর দাও ।
- চিক্কুর !!! সেটা আবার কি ?
- আহা, চিক্কুর বুঝো না ? চিক্কুর মানে হইলো গিয়া তুমগো ভাষায় চিৎকার ।
- স্টুপিড ।
- উহ, ইংলিশে গালি দিলা নাকি ? আহা, কি কইলা বুঝলাম না কিন্তু হুনতে কইলাম মধুর মত মিষ্টি লাকছে ।
- যাবেন নাকি পুলিশ ডাকবো ?
- পুলিশ !!! উহুম, লাভ হইবো না । ওগো আমরা আংকেল ডাকি । ধরবো না, ধরলেও আজকাই ছাইড়া দিবো ।
- ওহ, কি জ্বালাতন, ধুর । আচ্ছা, আপনি কে বলুন তো ?
- এই তো এতক্ষণে লাইনে আইছো । নাম হইলো গিয়া ইসফাক । আব্বার নাম ইসহাক । বাড়ি আমগো বকশী বাজার । তিনতলা টাইলসের বাড়ি । ভাই-বোন দুইটা, ছুটু । গাড়ি নাই এহনও । কিন্না হালামু । এই হইলো গিয়া আমার পরিচয় । এবার কই, এহানে আইলাম ক্যামনে । তুমারে প্রত্থম দেখছি নিউমার্কেটে, এরপর আবার দেখছি ধানমণ্ডী । হেই সময়ই বাইক লইয়া তুমার পিছে পিছে গিয়া তুমার বাড়ি চিন্না আইছি । তুমি তো মধ্যবাড্ডা থাকো, না ?
- কি যন্ত্রণা !! আপনি আমার বাড়ি পর্যন্তও চিনে এসেছেন ? কিন্তু ইয়ে মানে, আমি তো একটা ছেলেকে ভালবাসি । ওকেই বিয়ে করবো । আপনি প্লিজ আমার পিছু আসবেন না আর, প্লিজ ।
- এত, পিলিজ, পিলিজ কইরা লাভ নাইক্কা । যারে ভালোবাসো তারে ডিভোর্স দাও, এরপর আমারে ভালোবাসো, তুমারে পুরান ঢাকার রাজরানী বানাইয়া রাখুম । তাতেও রাজি না হইলে কিন্তু মাইন্ড খামু ।
- ভাইয়া, প্লিজ, এমন করেন কেন ?
- (হঠাৎ রেগে জোরে চিৎকার দিয়ে) ওই, ভাইয়া কি ? ভাইয়া কি ?
- আচ্ছা, সব না হয় ঠিক আছে, কিন্তু প্রথম দেখাতেই সব হয় নাকি ? আপনার কথাগুলো তো শুনলাম, এখন একাকী বসেই না কিছু ভাববো । সব কি রাস্তায় দাড়িয়েই হয় নাকি ?
- ওক্কে, টেনশন নাইক্কা । যাও, তয় মুবাইল নাম্বারটা দাও, তুমারে রাইতে কল করুম নে ।
- ইয়ে মানে, মোবাইল নাম্বার তো ভুলে গেছি ।
- ভুইল্লা গেছো ? মশকরা করো ? আইচ্ছা যাও, আজ যাও, এহন থাইক্কা তো তুমার লগে প্রায়ই দেখা হইবো । ভাব না জমাইয়া যাইবা কোথায় ?

আর কোন কথা না বাড়িয়ে মিথিলা আর পারুল সেখান থেকে জোর কদমে হেঁটে একরকম পালিয়ে বাঁচে । তবে মিথিলা বুঝে গেছে, ভালোই বিপদ জুটেছে । পুরান ঢাকার এই ছেলের থেকে ওর সহজে নিস্তার হবে না, নির্ঘাত ।

পুরান ঢাকার ছেলের জ্বালাতন যে এমনভাবে শুরু হবে, সেটা ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি মিথিলা । সবই তো ঠিক ছিল । সকালে কলেজ, কলেজ শেষ করে বাড়ি ফিরে এসে ফ্রেশ হয়ে কোনরকমে খেয়ে-দেয়ে ব্যাচ আর ব্যাচ শেষ করে বন্ধুদের সাথে সামান্য আড্ডাবাজী এরপর গল্প করতে করতে বাড়ি ফেরা

অনেক ছেলেই এই পর্যন্ত প্রপোজ করেছে ঠিকই কিন্তু তাদের কাউকেই নিজের জীবনে প্রবেশ করতে দেয়নি সে । সেই ছেলেগুলো মধ্যে অনেক স্মার্ট, শিক্ষিত, বড়লোকের ছেলেরাও ছিল, তারাই বরং পাত্তা পেলো না আর কোথেকে কোন পুরান ঢাকার ক্ষেত আকারে কথা বলা ছেলেটাই কিনা তার পিছু লাগলো । আচ্ছা, কোন সমস্যা করবে না তো ছেলেটা !! তার পড়াশুনার ক্ষতি করবে না তো ? এইসব কিছু পথে ভাবতে ভাবতেই বাড়িতে আসলো মিথিলা । পথে বান্ধবী পারুলের সাথেও কোন কথা হয়নি । পারুল অবশ্য তাকে অনেক সান্ত্বনা দিয়েছে, কিছুই হবে না, সব ঠিক হয়ে যাবে বলেছে কিন্তু মিথিলা জানে এমন ছেলেরা এত সহজে মেয়েদের পিছু ছাড়ে না । সব এতসহজে ঠিক হবে না, এটা মিথিলা ভালোই জানে ।

যাই হোক বাড়িতে এসেই ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে চলে গেলো মিথিলা । বাড়িতে মা আর মেয়ে দুইজনই । মিথিলার বাবা সিলেটে পাথরের কন্ট্রাক্টরি করে । মিথিলা আর মিথিলার মা, মিসেস দেলোয়ারা ঢাকায় থাকে । ওয়াশরুম থেকে বের হয়েই মিথিলা খাবার টেবিলের দিলে আসতেই মিসেস দেলোয়ারার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো তার । মিথিলাকে দেখেই তার মা বুঝে ফেললো কিছু একটা সমস্যা হয়েছে । তাই মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন মিসেস দেলোয়ারা,

- কি হয়েছে রে তোর ?
- কই, মা, কিছু না তো ।
- মায়ের সাথে মিথ্যা বলে কি কেউ পারে ? সত্যি করে বল তো তোর কি হয়েছে ?
- (মায়ের কথা শুনে মিথিলা হেসে দিলো) হ্যাঁ, আসলেই কেউ মিথ্যা বলতে পারে না । আমি সত্যিই বলছি মা, কিছু হয়নি । একটু টায়ার্ড লাগছিল, তাই ফ্রেশ হয়ে নিয়েছি । এখন কিছু একটা খাবো, এরপর শোবো ।
- কি !! এখনও ৮টাই বাজেনি । এখন শুবি মানে ? শরীর খারাপ ?
- না, মা, শরীর খারাপ না কিন্তু ভালো লাগছে না । আজকে দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়বো । মনে হচ্ছে ঘুমালে একটু ভালো লাগবে ।
- আচ্ছা কি খাবি ? ভাত গরম করবো ?
- আচ্ছা, করো । কতক্ষণ লাগবে ?
- তরকারিটা ফ্রিজে রেখেছিলাম । সেটা আর ভাত গরম করতে বড়জোর ১৫ মিনিট । তুই বরং এই ১৫ মিনিট টিভি দেখ গিয়ে যা । হয়ে গেলে আমি ডেকে নেবো নে ।
- ঠিক আছে মা । তুমি খাবার গরম করো, আমি টিভি রুমে যাচ্ছি ।

মিথিলা যদিও বলেছে কিছু হয়নি কিন্তু মিসেস দেলোয়ারা জানেন কিছু একটা তো নিশ্চয়ই হয়েছে । কিন্তু তার মেয়ে মিথিলা ছোটবেলা থেকেই বড্ড চাপা স্বভাবের । নিজে থেকে কিছু না বললে জীবনেও ওর মুখ থেকে কথা বের করা এত সহজ না । মিথিলা পাশের রুমের দিকে যেতেই মিসেস দেলোয়ারা খাবার গরম করার দিকে মনোযোগী হলেন । মেয়ের মতিগতির দিকে খেয়াল রাখবেন এবার থেকে, মনে মনে এরকমই একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন তিনি ।

ঘড়িতে ৮টা বেজে ২৫ মিনিট । ভাত খেয়ে মিথিলা ঘরে ঢুকলো । কিছুক্ষণ ফেসবুক চেক করেই ঘুমিয়ে গেলো মিথিলা । ঠিক কতক্ষণ ঘুমালো সে এটা তার অজানা কিনতু হঠাৎ-ই ঘুম ভেঙে গেলো মিথিলার । ঘুম ভাঙতেই দারুন পানি পিপাসা পেয়ে গেলো তার । কিন্তু অত্যন্ত আশ্চর্যের সাথে সে খেয়াল করলো সে একটি বাসে ভিতর একা বসে আছে । বাসটি যেখানে আছে অর্থাৎ বাসস্ট্যান্ডে আরও বেশ কয়েকটি বাস আছে আশেপাশে । মিথিলার এখনও স্পষ্ট মনে আছে সে তার বাড়িতে তার খাটে শুয়েছিল । ফেসবুক লগ আউট করে মোবাইল মাথার পাশে রেখে দিয়ে সে ঘুমিয়ে গেছিল । তার তো কোনভাবেই এরকম জায়গায় আসা সম্ভব না । তাছাড়া চারিদিকে অন্ধকার অথচ বাসের ভিতর কেমন জানি একটু ঢিম আলো । আশেপাশে শুধু যে অন্ধকার তা না, সুনসান নীরবতাও বিরাজ করছে । নাহ, মিথিলার মাথায় কিছুই ঢুকছে না । সে আসলেই এখানে কিভাবে আসলো !!??

মিথিলার সন্দেহ হলো, সে কি এখানে একা ? নাকি অন্য কেউ আছে !! তার নিশ্চয় ডাকাডাকি শুরু করা উচিৎ । কেউ যদি থেকে থাকে তাহলে নিশ্চয় উত্তর দিবে । যেই ভাবা সেই কাজ । নিশ্চিত হওয়ার জন্য মিথিলা মুখ খুলে ডাকার উপক্রম হতেই হঠাৎ সে খেয়াল করলো তার মুখ থেকে কোন আওয়াজই বের হচ্ছে না । ও মা, কি সাঙ্ঘাতিক !! একে তো একাকী এখানে এরপর আবার একরকম বোবা হয়ে গেছে সে, এখন উপায় !! আচ্ছা, এটা কোন ভয়ংকর খারাপ স্বপ্ন না তো ? হলে তো ভালোই হয় । স্বপ্নটা ভেঙে গেলেই এখন ভালো হয় । এতকিছু ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ ক্যাচ ক্যাচ করে আওয়াজ হলো । মিথিলা ভালো করে খেয়াল করে বুঝার চেষ্ঠা করলো আওয়াজটা ঠিক কোথেকে আসছে । একটু পরই সে বুঝতে পারলো বাসের দরজা খুলছে । আশ্চর্য তো, এতক্ষণ কি তাহলে বাসের দরজা বন্ধ ছিল ? বাসের জানালাগুলোও তো বন্ধ । হঠাৎ মিথিলার মনে হলো সে শ্বাস নিতে পারছে ভালোভাবে । এতক্ষণ সবকিছু বন্ধ থাকার জন্য তার ভালো করে শ্বাস নিতেই সমস্যা হচ্ছিল ।

কিন্তু বাসের দরজাটা কে খুললো ? তার মানে নিশ্চয় সে ছাড়াও আরও কেউ একজন আছে আশেপাশে । কে, কে ওখানে ? হঠাৎ মিথিলার গলার আওয়াজ ফিরে এলো । কিন্তু বিপরীত পাশে কোন উত্তর নেই । মিথিলা বুঝতে পারছে না, হচ্ছেটা কি !! সবকিছু এরকম ধোঁয়াশা কেন !! এতক্ষণ মনের ভিতর বেশ ভয় কাজ করলেও এখন মিথিলার আর তেমন ভয় লাগছে না, তবে কৌতূহল হচ্ছে, সাঙ্ঘাতিক কৌতূহল । এরপর হঠাৎ-ই যে ঘটনা ঘটলো মিথিলা তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না । বাসের দরজা খুলে সেই পুরান ঢাকার ছেলেটা ঢুকলো আর ঢুকেই মিথিলার দিকে তাকিয়ে সে বলে উঠলো,

- ক্যালায়, চিক্কুর পারো ক্যালায় ?

ছেলেটিকে দেখেই মুহূর্তের মধ্যে মিথিলার শরীর যেন হিম হয়ে গেলো । এরকম কিছুর জন্য সে সত্যিই প্রস্তুত ছিল না । হঠাৎ-ই ঘুম ভেঙে গেলো মিথিলার । ওহ, তাহলে সত্যি খারাপ স্বপ্ন ছিল এটা !! মিথিলা খেয়াল করলো, সাঙ্ঘাতিক ঘেমে গেছে সে, যদিও উপরে সিলিং ফ্যানটা ঠিকঠাকভাবে তার কাজ ঠিকই করে যাচ্ছে । আচ্ছা, ছেলেটা কি সত্যি এত ভয়ানক কিছু যে এখন স্বপ্নেও মিথিলা তাকে দেখে ভয় পাচ্ছে !! সত্যি অদ্ভুত ব্যাপার । ভাবতেই ভাবতেই টয়লেটে ঢুকে গেলো মিথিলা ।

ঠিক সকালে ঘুম ভেঙে গেলো মিথিলার । গতকাল রাতের স্বপ্নটা সত্যি অনেক ভয়ংকর ছিল । একবার সেই স্বপ্নের কথা চিন্তা করে মিথিলা কেমন জানি আবারও শিউরে উঠলো । আচ্ছা, ঐ ছেলেটার মত তো কত ছেলেই আজ পর্যন্ত মিথিলার পথ রোধ করেছে, ফোন নাম্বার চেয়েছে, ওকে দেখে শিস বাজিয়েছে, ওকে দেখে অসভ্য বাক্য চালান দিয়েছে আরও কত কি !! কই তখনও তো এরকম ভয়ংকর স্বপ্নগুলো আসেনি মিথিলার । কেমন জানি অদ্ভুত ব্যাপার ।

যাই হোক ভাবতে ভাবতে ঘড়ির দিকে খেয়াল করলো মিথিলা । ওরে বাব্বা, ১০ টা বেজে গেছে । কলেজে আশিস স্যারের কেমিস্ট্রি ক্লাসটা তো তাহলে মিসই হয়ে গেলো । পরো কলেজে যতগুলো স্যার আছে, সবার মধ্যেই এই আশিস স্যারকেই মিথিলার ভালো লাগে । অনেক মজা করেন পড়ান স্যার । পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে দারুন দারুন গল্প করেন । মাঝে মাঝে তার গল্পগুলো চোখ বন্ধ করে শুনতে হয় । তখন মনে হয় গল্পের চরিত্রগুলো সত্যি সত্যি চোখের সামনে চলে আসে । তাছাড়াও স্যার কখনও বাবার মত, কখনও বড় ভাইয়ের মত আচরণ করেন । প্রত্যেক ছাত্রছাত্রী একমাত্র এই একটা স্যারের কাছে তাদের ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়েও খোলাখুলি আলোচনা করতে পারে । স্যার হাসিমুখেই সবার সমস্যা শোনেন আর সাধ্যমত সাজেশন দেন । আর মিথিলা কিনা আজকে এই লোকটার ক্লাশই মিস দিলো !! যদিও আজকে মিস হলে সেটা প্রথমবারই হবে । যাই হোক, মিথিলা দ্রুত বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলো । মাত্র আধাঘণ্টার মধ্যেই ফ্রেশ হয়ে, গুছিয়ে বাসা থেকে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো মিথিলা । বাসা থেকে বেরুতেই একটা রিকশা পেয়ে গেলো মিথিলা, ভাগ্য মনে হচ্ছে ভালো আজকে তার । অন্যদিন হলে একটা রিকশা মিলতেই বেশ বেগ পোহাতে হয় । রিকশা চলা শুরু হওয়া মাত্রই মিথিলা পারুলের ফোনে ফোন করলো । কিন্তু ওপাশ থেকে রিং হলেও কেউই ফোন উঠালো না । পারুল ফোন ধরছে না কেন !! সম্ভবত ক্লাশের মাঝে আছে তাই ।

মিথিলার বাসা থেকে ওর কলেজের দূরত্ব বেশি না । ৩-৪ কিলোমিটারের মত হবে । বাসার চার দেওয়ালের বাইরে প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে মিথিলার কেন জানি বেশ ভালো লাগছে । পুরান ঢাকার ঐ ছেলেটার কথা প্রায় মন থেকেই বেরিয়ে গেছে । রিকশা বেশ জোরেই চলছে । খোলা বাতাস মিথিলার চুলগুলোকে কেটে কেটে দিচ্ছে । মিথিলা চোখ বন্ধ করে মাথাটা সামান্য উঁচু করে বাতাস মুখে লাগানোর অভিপ্রায় করতেই হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো তার । মাথা নামিয়ে মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েই খেয়াল করলো বাবার ফোন । সিলেট থেকে ফোন দিয়েছে । জনাব আকিম হোসেন, লোকটা পুরো দুনিয়ার ব্যাপারে উদাসিন হলেও মেয়ের ব্যাপারে পুরাই সিরিয়াস । মেয়েটা যেন জান তার । বাবার ফোন পেয়ে মিথিলার মুখেও হাসি ফুটে উঠলো । হাসিমুখেই সে ফোন রিসিভ করলো,

- হ্যালো বাবা...
- কি খবর মামনি ? ভালো আছো ?
- হ্যাঁ, খুব । তুমি কেমন আছো ?
- নাহ, ভালো নেই । একেবারেই ভালো নেই ।
- (বাবার কথা শুনে একটু চমকে গিয়ে) কেন বাবা ? তোমার শরীর খারাপ নাকি ?
- না তো, শরীর তো পুরাই ফিট ।
- তাহলে ? ভালো নেই কেন তুমি ?
- তুমি আর তোমার আম্মু কত দূরে । চাইলেও প্রতিদিন তোমাদের দেখতে পারি না, একটু গল্প করতে পারি না তোমাদের সাথে, তোমার চুলে বিলে কেটে কতদিন আদর করতে পারি না, তোমার আম্মুর হাতের রান্না কতদিন খাই না - আচ্ছা, বলো তো মামনি, তবু আমি ভালো থাকি কিভাবে ?
- ওহ, আচ্ছা । এইগুলো !! তাই বলো । তাহলে তুমি চলে আসো তো বাবা । একেবারে সোজা আমাদের কাছে ।
- কিন্তু মামনি......
- আবার কিন্তু কেন ?
- আমার যে নতুন একটা কন্ট্রাক্টের কাজ শুরু হয়েছে । ৪ মাসের কাজ । তার আগে যে চাইলেও আসতে পারবো না ।
- হয়েছে, হয়েছে, প্রতিবার ফোন করেই খালি ঢং করো !! আর আসতে বললেই শুরু করো নানা বাহানা । ঠিক আছে, তোমার আসতে হবে না । কোনদিন আসতে হবে না । তুমি সিলেটেই থাকো । আমাদের ভুলে যাও ।
- (মেয়ের কথা শুনে জনাব আকিম হোসেন হেসে দিলেন, কিছুক্ষণ হাসার পর আবার কথা শুরু করলেন) ও বাবা, আমার মামনিটা কি রাগ করলো নাকি ?
- ধুর, বাবা, তোমার সাথে আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না । আমি রাখছি ।
- এই শোনো, শোনো, তুমি কি বাইরে ? কোথায় যাচ্ছ নাকি ?
- হ্যাঁ, কলেজে ।
- ওহ, তা এত দেরী করে ?
- আজকে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেছিল ।
- আচ্ছা, মামনি যাও । আমি দেখি রাতের দিকে ফোন দিবো নে আবার । তোমার আর তোমার আম্মুর সাথে একসাথে কথা বলবো নে । তখন পর্যন্ত আল্লাহ্‌ হাফেজ ।
- হুম, আল্লাহ্‌ হাফেজ ।

বাবার সাথে কথা শেষ হতেই একটু বিমর্ষ হয়ে গেলো মিথিলা । বাবা সেই কবে থেকেই আসি আসি করে আসছে না । বাবাকে ভীষণ ভালো লাগে মিথিলার । সবকিছুই বলা যায় বাবাকে । কখনও রাগ করেন না তিনি মিথিলার উপর, এমনকি আম্মু কখনও শাসন করলে তখনও তিনি মিথিলার সাপোর্টই নেন । বাবাকে হঠাৎ মিস করা শুরু করলো মিথিলা । ভাবতে ভাবতেই রিকশা কলেজ গেটের সামনে এসে পৌঁছালো । হ্যাঁ, কলেজে পৌঁছে গেছে মিথিলা ।


(বাকীটা পরবর্তী পর্বে)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:২০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×