পড়াশোনার উদ্দেশে এখন আমি দেশের বাহিরে এসেছি। আল্লাহর রহমতে ভালোও আছি। নতুন দেশ, নতুন নতুন বন্ধু, নতুন পরিবেশ। এখানে অল্প সংখাক বিদেশী স্টুডেন্ট হওয়ার কারনে সবার আগ্রহটাও একটু বেশি থাকে। যখনই কোন নতুন বন্ধু হয়, হোক তাইওয়ান এর অথবা অন্য কোন দেশের, সে বলে, তোমার দেশ সম্পর্কে বল। আমিও ছোট বেলার মুখস্ত বুলির মত বলে দেই, সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা শান্তির দেশ আমার এবং আরও কত কি।
কিন্তু কষ্ট পাই তখনই, যখন সে বলে, Can you show your country in Google? যখন বাংলাদেশ লিখে গুগলে সার্চ করা হয় তখন শো করে কিছু মানচিত্র এবং মিছিল, মারপিট, দাঙ্গা, পুলিশ এর গ্রেপ্তার, রক্তাক্ত লাশ, ভবন ধস, জ্যাম, ঘনবসতি ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব দেখে আমার নতুন তো বিস্মিত হয়ই সাথে আমিও দ্বিধায় পরে যাই, আসলেই কি এটা আমার বাংলাদেশ?
কষ্ট পাই তখনই, যখন ল্যাব এর বন্ধুরা একসাথে গল্প করার সময় কেউ একজন বলে, Hei, I saw in news, Something is happening in your country, like riot, Some peoples are killing some peoples, তারপর হাসে। খুব কষ্ট লাগে।
কষ্ট পাই তখনই যখন দেখি, (বাবা মার কাছেই সন্তান থাকে নিরাপদ। তারা সবসময় চাইবে আমার সন্তান আমার কাছেই থাক।) কিন্ত এখন তাদের থেকে, দেশ থেক অনেক অনেক দূরে, তাদের কষ্ট পাওয়াটাই স্বাভাবিক, হয়ত তারা কষ্ট পায়ও। কিন্তু আমার শান্তির দেশে এখন এমন অশান্তি চলতেসে, বাবা মা মনে করে যাক আমার সন্তান আমার কাছে নেই ভাল হইছে, নিরাপদে আছে। বিষয়টা উপলব্ধি করলে কষ্ট লাগে।
কষ্ট পাই তখনই, যখন বন্ধুদের কথা মনে পরে কিন্তু তাদের সাথে কথা বললে তারা বলে, ভাল আছিস ভাল থাক, দেশে ফেরার দরকার নেই। দেশে বসবাস করার মত কোন পরিবেশ নেই।
কষ্ট পাই তখনই, যখন ভাবি আমার দেশ, আমার জন্মভূমি, আমার ঠিকানা থাকা সত্ত্বেও অদৃশ্য ভাবে আমি উদ্বাস্তু বা শরণার্থীতে পরিনত হচ্ছি। কারন যত ভালই থাকি না কেন এটা তো আমার দেশ না। মনে তো কষ্ট থেকেই যায়।