ছেলেটা তার ক্লাসে জানতে পারে প্রজাপতির বিচিত্র জীবনচক্র সম্পর্কে। সাধারনত এক মাসের জীবন কাল পায় প্রজাপতি। এর মধ্যে ৪টা ধাপ পার হয়ে তারপর পরিনত হয় পুরনাঙ্গ প্রজাপতিতে। ডিম ফুটে বের হওয়ার পর এক রকম দেখতে থাকে আর পুরনাঙ্গ হওয়ার পর সম্পূর্ণ আলাদা। এসব শুনে ছেলেটার মনের মধ্যে একটা আগ্রহ তৈরি হয় প্রজাপতির প্রজাপতি হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া স্বচক্ষে দেখার।
সদ্য ডিম ফুটে বের হওয়া একটা প্রজাপতির লার্ভা, যেটাকে ইংরেজিতে ক্যাটারপিলার, বাংলায় কখনো কখনো শুঁয়োপোকাও বলা হয়ে থাকে, নিয়ে একটা কাচের জারে ভরে রাখল। তার ইচ্ছা পরিবর্তনগুলো নিজে চোখে দেখবে। কাচের জারে বড় হতে থাকলো লার্ভা। লার্ভা অবস্থা শেষে একবার খোলস পরিবর্তন করে পরবর্তী ধাপে চলে গেল, এটাকে বলে পিউপা। এই অবস্থায় প্রজাপতির সামান্য ডানা গজাতে শুরু করে এবং আকারে অনেকটা বড় হয়ে যায় যদিও এখনো প্রজাপতির মত দেখতে হয়ে ওঠেনি। এসব পরিবর্তন ছেলেটা প্রতিদিন মনোযোগ দিয়ে দেখে কারন সে খুব মজা পাচ্ছে বিষয়টা। এই পিউপা অবস্থাতেই দুই সপ্তাহের মত থাকে এটা। এই সময়েই শরীরের চারপাশে একটা শক্ত আবরন তৈরি করে এবং সাধারনত এই খোলস টা পাতার সাথে শক্ত করে লেগে থাকে। এই খোলস আগের দুইটা খোলস থেকেও পুরু ও শক্ত। পিউপা অবস্থাতেই প্রজাপতির পুরনাঙ্গ গঠন সম্পূর্ণ হয় এই শক্ত খোলস এর মধ্যেই। দুই সপ্তাহ পার হওয়ার পর এবার প্রজাপতির বের হয়ে আসার পালা। ছেলেটা প্রতিদিন খুব মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করে কবে বের হবে প্রজাপতি। অবশেষে একদিন দেখতে পেল প্রজাপতিটা ওই শক্ত খোলস ভেঙ্গে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছে। যেহেতু খোলস অনেক শক্ত সেহেতু অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে বের হতে। প্রজাপতির কষ্ট দেখে ছেলেটার অনেক মায়া হল, সে একটা ছুরি দিয়ে শক্ত খোলসটা কেটে প্রজাপতিটাকে বের করে আনল। ছেলেটাতো মহা খুশী এবার প্রজাপতির উড়বার পালা। কিন্তু সমস্যা হল প্রজাপতি আর উড়তে পারে না। কারন তার ডানা দুইটা অন্যান্য প্রজাপতির ডানার থেকে পুরু আর ভারী। সে আর কখনোই উড়তে পারবে না। ছেলেটা প্রজাপতিটাকে সাহায্য করতে গিয়ে তার স্বাভাবিক জীবনটাই নষ্ট করে দিল। কারন খোলসের ভিতরে থাকা অবস্থায় প্রজাপতির ডানা পুরু ও ভারী থাকে, খোলস থেকে বের হওয়ার সময় যতই চেষ্টা করতে থাকবে তখন তার শরীর থেকে একধরনের হরমোন নিঃসরণের মাধ্যমে তার ডানা বড় ও পাতলা হতে থাকে এবং নির্দিষ্ট সময় পর যখন প্রজাপতিটা পূর্ণতা লাভ করে তখন সে বের হতে পারে। এই কষ্টটা তাকে বাকি জীবন পৃথিবীর পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলতে শেখায়।
আপাত দৃষ্টিতে অনেকে অনেক কষ্টে আছে বলে মনে হয় বা অনেকে অনেক কষ্ট সহ্য করে থাকে। কিন্তু হতে পারে সেই কষ্ট সহ্যটা তার বাকি জীবনে ভালো ভাবে চলার জন্য প্রস্তুতি পর্ব। আল্লাহ্ই সবথেকে ভালো জানেন কার কি দরকার এবং কখন দরকার, তিনি সেভাবেই দেন ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৬