কূল নাই কিনার নাই জীবন নদীর জলে
চলছি ভেসে অবিরাম আমি এক নামহীন
অজাত পদ্ম। আমার
এবড়ো থেবড়ো দেহ বিষের অনলে পোড়া
দগদগে কপাল।
নদীর এ পারে কাঁটা ওপারে বিষের শুল
ওঁৎ পেতে আছে হায়েনার মতো
কাছে পেলেই ছিন্নভিন্ন করে বসাবে ভাগা।
আমি তাই নিরূপায় মাথায় লাল পট্টি ঘুরছি
চরকির মতো বহতা নদীর বুকে বেলা অবেলা
সারাবেলা।
আমি এক বেওয়ারিশ পুরুষ জলে ভাসা অজাত পদ্ম
কখনো যাই উত্তর সীমানায় কখনো দক্ষিণে বনের ছায়ায়
মিলে না আমার ঠাঁই।
দিনের শরীর হারিয়ে গেলে রাতের আঁধারে
ন্যাংটি পরা নূরা পাগলার ন্যাংটা ডেরায়
বেসামাল ঝড় ওঠে। সেই ঝড়ে
সামিল হতে গেলে ন্যাংটি পরা পাগলের দল
আমাকে তাড়িয়ে দেয় কুকুরের মতো।
আমি পথহারা বিষাদ গানের
দিশাহীন গায়ক কূলের সন্ধানে ঝাপ দেই তখোন
পূর্বা নদীর জলে। পূর্বা নদীর জল
পশ্চিমে বয় উতাল পাতাল ঢেউ আমাকে ভাসিয়ে নেয়
ঘুর্ণি হাওয়ার কাঁটাঘেরা বনে। বনের কাঁটা মনের সুখে
আমাকে আঘাত করে অক্ষত হৃদয় করে ছিন্নভিন্ন।
আমার বস্ত্রহীন ফালাফালা দেহ বিষের অনলে পোড়া
দগদগে কপাল ছিন্নভিন্ন হৃদয়
আমি এক বিষের কলসী।
রাতের শেষ প্রহরে নিঠুর কাঁটাবন ধাক্কা মেরে
আমাকে পাঠিয়ে দেয় পশ্চিমে
জল থইথই কালো জলের কালো নদে।
কালো নদের কালো হাঙ্গর বহুকাল উপবাসী
মনের সুখে রসিয়ে রসিয়ে খায় আমার কালো মাংস
রসকষহীন কালো হাড্ডি। তারপর
অচেতন দেহ ঘুম পাড়ায় খানিকক্ষণ।
সূর্য ওঠার আগে ঘরমুখি
পাগলা হাওয়া সুরের জাল ফেলে আমাকে আবার
ফিরিয়ে আনে জীবন নদীর বিষাক্ত জলে।
জীবন নদীর বিষাক্ত জল ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ
আমাকে ভাসিয়ে নেয় কূলহীন
আঁধার ভূবনে।
(মফিজুল ইসলাম খান)