যদি বলি আসিফ মহিউদ্দিন, আরিফুর রহমান এবং তসলিমা নাসরিনের এই ভিডিও-টি একটি অসৎ ও কু-রুচিপূর্ণ চরিত্র চরিতার্থ্য করার উদ্দেশ্যে বানানো হয়েছে তবে সেটা কি বেশি বলা হবে? সেকুলারিজমের কথা বলে, মুক্ত চিন্তা-ভাবনার কথা বলে আরেকজনের বিশ্বাস বা ভালবাসাকে আঘাত করে কথা বা কাজ করাটা কতটুকু মুক্ত-চিন্তা বা বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের পক্ষে সম্ভব তা জানতে ইচ্ছা করে?
ইসলাম ধর্মের অনুসারী মুসলমানদের কাছে কোরআন শরীফ হচ্ছে আল্লাহর অশেষ নিয়ামতের একটি নিদর্শনস্বরূপ। এটা মুসলমানদের জীবন ব্যবস্থার পাথেয় । ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখার পাশাপাশি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল এবং তার ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরীফের উপরও বিশ্বাস রাখতে হয়। এই কথা ব্যাখ্যা করে বলার কিছু নাই, মুসলমান সহ অন্য ধর্মের মানুষরাও এই বিষয়ে জানেন। তারপরও এরকম দৃশ্য (ধর্মকে অবমাননা করে কথা বলা) হর-হামেশা দেখা যায়। তবে এই দৃশ্য উন্নত বিশ্বের থেকে আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের গরীব দেশগুলাতেই বেশি! কেন? কারণ, এই সকল কর্মই (সব ক্ষেত্রে নয়) করা হয় উন্নত দেশে গিয়ে সহজেই সেই দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য! এই সব কর্ম-কান্ড করে তারা সহজেই প্রমাণ করতে পারে যে - তাদের নিজ দেশে তাদের জীবনের ঝুকি আছে।
আসেন এখন এই ভিডিওটি নিয়ে একটু বিশ্লেষণ করি - আমরা জানি বই লেখা বা ফিল্ম বানানো হয় সমাজকে মেসেজ দেওয়ার জন্য, সর্বপোরি সচেতন করার জন্য । তাহলে এই ভিডিওটি কি মেসেজ দেওয়ার জন্য বানানো হলো ? এটা কি কোন অসতর্কতা মূলক ভিডিও ? না কি অন্য কিছু ? এখানে এই তিন জন খুব ভাল ভাবে লক্ষ্য করলেই বুঝা যায় তারা সব কিছুই জানেন! তারা জানেন তারা কি করছেন? পিছনের বুক সেল্ফ-এ এত এত বই থাকতে কেনইবা তাদের কোরআনা শরীফ নিতে হলো ? যেখানে এত বড় একটি টেবিল রয়েছে এবং টেবিলটি সমতল অবস্থায় আছে সেখানে কি দরকার সেই টেবিলের উপর কোন বই ( তাও আবার কোরআন শরীফ ) রেখে তার উপরচায়ের কাপ নিয়ে চা খেতে হবে ? এই সকল প্রশ্নের কি একটাই উত্তর হয় না ? তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই কাজটি করেছে । আর ভিডিওটি এমনভাবে করা হয়েছে যেন মনে করা হচ্ছে এটা একটি গোপন ভিডিও!অনেকে আবার বলতে পারেন, না ভাই গোপন হবে কেন? আরিফুর রহমান সাহেব নিজেই তো এই ভিডিওটি আপলোড দিয়েছে! জি ভাই, আপনি ঠিকই বলেছেন । কিন্তু আমরা যারা টিভিতে কাজ করে থাকি তারা এই ধরণের ভিডিও রেকর্ড করাকে গোপন ভিডিওই বলে থাকি । এই ভিডিওগুলাতে একটি লাভ হচ্ছে বিপদে পড়লে অনেক সময় অস্বীকার করে ফেলা যায় যে আমি জানতাম না এটা কিভাবে করা হয়েছে !?!
এবার আসেন কি উদ্দেশ্য নিয়ে করা ? এই ভিডিওটি দেখার পর যেকোন মুসলমানের পক্ষেই সম্ভব হবেনা নিজের রাগ চেপে রাখার । আর এটাই হচ্ছে এদের মূল উদ্দেশ্য । এরা চাচ্ছে যে আমাদের দেশের উগ্র মৌলবাদীরা যেন এখন তেড়ে-তুড়ে এদেরকে মারার জন্য বিভিন্ন বক্তব্য বা মামলা-হামলা করুক । কারণ আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের এত সময় নাই এইসব বাল-ছালদের নিয়ে মিটিং মিছিল করার । এই সব কর্ম-কান্ডের জন্য আমাদের দেশে মাথা মোটা কিছু লোকজন আছে যারা বুঝে না বুঝে এই সব শয়তানদের পাতা ফান্দে পা দিয়ে এদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলে সহায়তা করে । আমার ভূল হতেও পারে তবে আর সাধারণ আট-দশজনের মত আমারও অভিমত হচ্ছে এরা এই কাজগুলো করেছে ইউরোপের যেকোন দেশগুলোতে সহজে স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য ! মানে “অ্যাসাইলেম” ক্লেইম করে খুব সহজেই সেই সব দেশের যে কোন একটি দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য । আসিফ মহিউদ্দিন এবং তসলিমা নাসরিনের সম্প্রতি ঘটনাগুলো জোড়া দিলেই খুব সহজেই বুঝা যায় তাদের এই সকল কর্মকান্ডের হেতু। ( এখানে প্রথমেই একটি কথা বলে রাখতে চাই - আর সব স্বাধীন মানুষের মত আমিও বাক স্বাধীনতারপক্ষে । তবে তারমানে এই না যে আপনি যা খুশি বলে যাবেন । আবার এটারও বিপক্ষে যে রাষ্ট্র তার একজন নাগরিককে নিশ্চিন্তে রাষ্ট্রে বসবাস করার নিরাপত্তা দিতে পারে না! ) সম্প্রতি তসলিমা নাসরিনকে ভারত সরকার তার পারমানেন্ট রেসিডেন্স বাতিল করে মাত্র ১ সপ্তাহের সুযোগ দিয়েছিল দেশ থেকে বের হয়ে যাওয়ার । আর আসিফ সাহেব তো বাংলাদেশে আছেন দৌড়ের উপর । দুই দুইবার তার উপর শাররিকভাবে হামলা হয়েছে মৌলবাদীদেরপক্ষ থেকে । সেই সময় এর প্রতিবাদ করেছি । কিন্তু এইবার তারা যে কাজটি করল তারপর এইকথা না বলে উপায় নাই যে সাধারণ ধর্মপ্রাণ বা ধর্মভীরু মানুষরা তাদেরকে মারবে না কেন? আর আরিফুর রহমান অলরেডি সেটেল্ড লন্ডনে। সে এইসব কর্মকান্ড কেন করছেন তা সে নিজেই ভাল বলতে পারবেন ! আরও মজার বিষয় হচ্ছে এখন এই তিনজনেই আছেন লন্ডনে !?! ২ + ২ = ৪ বানানোর জন্য তো বেশি মাথা ঘামানোর দরকার পড়ে না; তাই না? বিশ্বের সবাই জানে ইংল্যান্ড হচ্ছে মানবধিকারের দেশ । আপনি আপনার দেশে খুন করে এসেও ইংল্যান্ডে যদি প্রমাণ করতে পারেন যে আপনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার, তা হলে তো কেল্লা ফতে ! এই দেশের নাগরিকত্বের সাথে সাথে ফ্রী-ল্যান্স মানবধিকার কর্মি হিসাবে কাজ করারও সুযোগ মিলে যেতে পারে বা যাবে।
নাস্তিকতা বা ধর্ম বিশ্বাস না করাটা যার যার ব্যক্তিগত । তাই বলে তো আপনি অন্যের বিশ্বাস বা শ্রদ্ধাকে কটাক্ষ করে কিছু বলতে পারেন না; তাই না? সোস্যাল সমাজে উগ্র কোন কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন গ্রহণযোগ্য নয় উগ্র মৌলবাদি । ঠিক তেমনি এই ধরণের উগ্র নাস্তিকতাও গ্রহণযোগ্য নয় । এই দুই শ্রেণীর মানুষই সমাজের শান্তি বিনিষ্ট করার জন্য দায়ী ।
ফুটনোটঃ আমি আমার এই বক্তব্যের জন্য খোলাখুলি দুঃখ প্রকাশ করতে রাজি আছি যদি দেখি আসিফ মহিউদ্দিন সাহেব ইউরোপের কোন দেশে অ্যাসাইলেম না নিয়ে (আমাদের ধারণা ভূল প্রমাণিত করে) বাংলাদেশে ফিরে গিয়েছেন । আর তসলিমা নাসরিনের কথা না হয় বাদই দিলাম । উনি তো আবার এই ক্ষেত্রে সবার থেকে এক ধাপ এগিয়ে । এখন আবার কেউ যদি বলেন তারা দেশে ফিরে যাবে কিভাবে ? তাদেরকেতো মৌলবাদীরা মেরে ফেলবে ! তাহলে ভাই/বোন আপনার কাছে প্রশ্ন এই অবস্থা কে সৃষ্টি করেছে?