প্রথম এবং একমাত্র গল্প লিখে পাঠকপ্রিয় হয়েছেন তেমন কোন নজির বাংলাসাহিত্যে দ্বিতীয়টি নেই। যা পেয়েছিলেন কালজয়ী ঔপন্যাসিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়(১৯০৮-১৯৬৫)। লেখক হওয়ার আগেই যাঁর অভিমান ছিলো 'বিচিত্রা' খ্যাতিমানদের ছাড়া কারো লেখা ছাপে না। তারপরও বন্ধুর সাথে বাজি ধরে পাঠালেন জীবনে প্রথম লেখা গল্প 'অতসী মামী'। পাঠানোর পরের সংখ্যাতেই ছাপা হলো গল্পটি এবং সেটি একেইসাথে পেয়ে যায় পাঠকপ্রিয়তা। তবে তার মানে এই নয় যে, তিনি বিনা প্রস্তুতিতে গল্প লিখেছেন। তাঁর লেকক হওয়ার মত পঠন-পাঠন আগে থেকেই ছিলো। ফলে পাঠকের আনুকুল্য পাওয়ার পর তিনি লিখতে শুরু করেন। লেখেন প্রায় ৩৯ টি উপন্যাস, সোয়া দুইশো গল্প, নাটক এবং প্রবন্ধ। তাঁর প্রতিটি লেখাতেই পাওয়া যায় সময়ের ছাপচিত্র। অনেক গল্পতেই তাঁর জীবনের সরাসরি উপস্থাপন দেখা যায়। পারিপাির্শ্বক পরিবেশ-প্রতিবেশকে তাঁর মত করে উপস্থাপন বিরল। বাম রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে তিনি ফ্রয়েডীয় চিন্তা থেকে কিভাবে মার্কসে ঝুঁকলেন তাও তার লেখায় বুঝা যায়। প্রান্তিক মানুষের এই গল্প বলিয়ে শেষ জীবনে মাত্র কয়আনা পয়সার জন্য চিকিতসা নিতে হাসপাতালে যেতে পারেন না। প্রায় মৃত অবস্থাকেই এক বন্ধু তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেই যাত্রায় তিনি আর ফিরে আসেন নি( ৩ ডিসেম্বর ১৯৫৬)। আজ বাংলাসাহিত্যের এই ধীমান কথাসাহিত্যেকের ১০৬তম জন্মদিন(১৯ মে, ১৯০৮)। এই দিনে আমার মনে হচ্ছে তাঁর সৃষ্ট চরিত্ররা এখনো আমাদের সমাজে বিরাজ করে। তাদের মধ্য দিয়ে মানিক এখনো বেঁচে আছেন। আমি নিজের কাছে কেবল প্রশ্ন করি কোনদিন কি মানিকের মত লিখতে পারবো?