১।
আইল অব ওয়াইট
পা আর মাথায় আয়েশি ভাজ নিয়ে
পাথরখন্ডে লুকিয়েছ প্রাগৈতিহাসিক ডায়নোসরের হাড়
শীলাস্তর ভেদ করে মাঝে মাঝে উঁকি দেয় বৃক্ষ-ফুল
কোথাও বিন্যস্ত হরিৎ এলানো চুল
আদিম ঘাসেরা জিউসের বাসনা তেজে
তুষারখন্ডের মত চোয়াল থেকে ঝুলে পড়া
সোনালী রোদের রঙে উথলে উঠছে জল
তুমি বড় মায়াবী হে আইল অব ওয়াইট
সহস্র পথচারী আটকে রাখো তাদের অজান্তে
যারা তোমার সঙ্গম শেষে ফিরে গেছে
কেবল তারাই জানে কত পালক ফেলে গেছে
তোমার ব্যসনব্যঞ্জনায়।
গ্রীবা থেকে নিতম্ব অবধি কেবলই বাঁক নেয়া মায়া
পাঁজরকন্দর থেকে নিয়ত ফুঁসে উঠছে মাতাল জোয়ার
কত কত রমনীরা নিজেকে আত্মাহুতির দিকে ঠেলে দেয়
তুমি শীতলচুমু এঁকে দিলে রতিবিদ্যায়
মার্গীয় উচ্চতায় নিজেকে উত্তীর্ণ করে,
আমি ঈর্ষায় চোখ বুজে তোমাকে দেখে নিই
হাত রাখি তোমার জলজ ঠোঁটে
যে ঠোঁটে এঁকেছো সহস্র রমণীর শিহরণ
সেই ঠোঁট আমি পান করি
পান করি সহস্র রমণীয় হাসি, শীতলমায়া, উষ্ণ চিবুক।
তুমি কি বলতে পারো পৃথিবীর মায়াবী সমুদ্রগুলো
কেন কেঁদে ওঠে বিবাগীর মত?
কেন তার জল এতো স্বচ্ছ হয়, কেনো উগরে দেয়
দেহখাজে লুকানো যাবতীয় গোপন।
তোমার জলে আমার সমাধি প্রার্থনা করেছি
অথচ তোমার স্বচ্ছ জলের ভেতর সবাই দেখে ফেলেছে
আমার লুকানোর কৌশল।
নুড়ি পাথরের জলজ উদ্যানে পা ডুবিয়ে গভীর প্রার্থনায় মগ্ন হয়েছি
পয়মন্ত মাছেরা আমার চেয়েও বেশি ধ্যানি তাও জানতে পেরেছি
তোমার কাছে সব ধুয়ে মুছে চলে যাচ্ছি, হয়তোবা যাচ্ছিনা
আমাকেও তুমি আটকে রেখেছ সহস্র পথিকের মত।
তোমার পাশে আজ রাত জেগে আছি
তুমি এবং তোমার মত ব্রক্ষ্মান্ডে আরো অনেকে জেগে থাকে
নিকষ অন্ধকারে ছুঁড়ে দিয়ে নিরব গোঙানির শব্দ
তুমি অন্ধকারকে আরো ভারী করে তুলো না
বরং অন্ধকারের কপাট খুলে খুলে ঢেলে দাও উচ্ছাস
আর,আমার মত সমুদ্রযাত্রীরা সাহসী হয়ে ওঠে
স্বচ্ছ অন্ধকারে তোমার বুকে কান পেতে উঠিয়ে আনে
তুনের খবর।
২।
সমুদ্র
টানা দুই দিন সমুদ্রের গায়ে শুয়েছিল আগুনের মত রোদ
ফোস্কাপড়া জলে ভয়ংকর মাছেরা শুকিয়ে নিলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
মাঝে মাঝে মালবাহী জাহাজেরা তুলে নিলো মৃত শুশুকের দেহ
সেই শোকে নাবিকেরা পথ ভুলে চলে গেছে দিশাহীন সমুদ্র পথে।
তারা আর কোনদিন এই পথে ফিরবে কিনা সেই সংবাদ জানেনা কেউ
তবে যে বিলাপ অসীম সমুদ্রে ঢেলে দিয়ে গেছে
তার বিস্বাদ পানে নীল হয়ে গেছে সমুদ্রের জল
এভাবে কখনো কখনো পরাধীন হয়ে পড়ে ভাসমান প্রাচীন রাজ্য
আসলে সমুদ্রের রহস্য কতটুকুইবা আবিষ্কৃত
উদ্যানের মত জাহাজ টেনে কেন যে পাজরে নতুন নগর পত্তন করে
সেই রহস্য উন্মোচনে কোন ডুবুরি নিয়োগ করবে তুমি?
৩।
প্রশ্ন
দূরে মাঝ সমুদ্রে নোঙর ফেলেছে যে জাহাজ
তার খবর নিতে ইচ্ছে করে,
কি আছে ওইখানে গভীর সমুদ্রের তলদেশে
ধাক্কা লেগে যে জল কিনারে এলো তার কাছেও
নেই কোন বার্তা,
সমুদ্রের এতো কাছাকাছি বসে আছি
কেবল ভালোবাসতে ইচ্ছে করে
জংধরা ছুরিটাকে শান দিচ্ছি
যদি ভালোবেসে কোনদিন জল কেটে
পৌঁছে যেতে পারি মাঝ-সমুদ্রে
যদি খবর নিতে পারি নিরুদ্দেশ নাবিকের
কেনইবা গভীর অন্ধকারে টিমটিমে আলো জ্বেলে
শূন্যগর্ভে দাঁড়িয়ে থাকা,
নাবিক কি জানে আমি জলের রহস্য আবিস্কারে
একটি রাজ্য স্বাধীন করতে যাচ্ছি।
http://arts.bdnews24.com/?p=6922
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ভোর ৪:৩৩