- ভাই দৌড়াচ্ছেন কেনো? আস্তে আস্তে! হাপিয়ে যাচ্ছিতো!
- আপনিও কি তার লোক?
- জ্বি আমি তার লোক।
- ভাই আমাকে মাফ করে দেন। প্লিজ চলে যান। আমাকে বাচঁতে দিন। প্লিজ, আপনার কাছে আল্লাহর দোহাই লাগে।
- আর দৌড়াতে পারছি না। হাপিয়ে যাচ্ছিতো। আপনি একটু আস্তে দৌড়ান না ভাই। বলুন কি হয়েছে?
- না না! থামা যাবে না। আপনি আমাকে ধরে ফেলবেন তাহলে। প্লিজ তাকে গিয়ে বলুন আমাকে মাফ করে দিতে।
- এই ভাই, এই যে। থামুন না একটু। বলে যান কি কয়েছে।
পারলাম না। মাঝ বয়সি ভদ্রলোককে আর থামানো গেলো না। তিনি কি দেখে বা কার ভয়ে দৌড়াচ্ছেন তাও জানা গেলো না।
শহরের মানুষগুলো অনেক কিছুর ভয়ে দৌড়ায়। কেউ দৌড়ায় পাওনা দারের ভয়ে, কেউ ধার দেয়ার ভয়ে, কেউবা কোন ভাই অথবা মামার ভয়ে। কেউবা আবার পছন্দের কোন নারীর নতুন প্রেমিকের ভয়ে।কেউবা মলম পার্টি, কেউবা চোর, কেউবা গুম পার্টির ভয়েও দৌড়ায় । লোকটা কিসের ভয়ে দৌড়াচ্ছে সেটাই চিন্তার বিষয়। হয়তো পাব্লিক টয়লেটের টাকা পরিশোধের ভয়ে দৌড়াচ্ছে। হুম এর জন্যেও অনেকে দৌড়ায়। দেখেছিলাম একবার। লোকটার খুব চেপেছিলে। বলা যায় প্রচন্ড। আশে পাশে কোন পাবলিক টয়লেট ও ছিলো না। রাস্তার এক পাশে একটা খাম্বা ধরে চ্যাগিয়ে দাড়িয়েছিলেন। চ্যাগিয়ে মানে আকাঁ বাকাঁ হয়ে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, " চ্যাগাইয়া দাড়ায় ছিলো " । দূর থেকে তার অবস্থা দেখে তার কাছে গেলাম,
- ভাইয়ের কি কোন সমস্যা? হার্টের রোগী?
- না না ভাই। আমার ডাইবেটিস নাই। হাটার রুগী হবো কেনো?
- না না মানে আপনি কি হার্টের রোগী?
- উফফ ভাই! বললাম তো না। জ্বালান কেন? নিজের রাস্তা মাপেন।
- জ্বি মানে মৃগী রোগী?
- ছিঃ ছিঃ! মাগী ফাগী কি বলেন এসব? আপনি আমারে চেনেন?
- জ্বি মানে আপনার সমস্যাটা বলুন? আপনি এভাবে খাম্বা ধরে করুন ভাবে দাড়িয়ে আছেন দেখে সাহায্য করতে চাইছি।
- সত্যি বলতেসেন?
- জ্বি সত্যি?
- আমাকে আপনার বাসায় নিয়ে চলেন।
- জ্বি বাসায় মানে?
- হাগবো! চেপেছে খুব!
- আমার বাসাতো এদিকে না ভাই।
- তাইলে পাব্লিক টয়লেটে নিয়ে চলেন।
- এদিকে তো পাব্লিক টয়লেট পাবেন না।
- কোথায় পাবো নিয়ে চলেন।
- কাছে ধারে নেই। যেতে হলে রিক্সা নিতে হবে। আর রিক্সার রাস্তা প্রচন্ড খারাপ। রিক্সার ঝাকিতে সব বের হয়ে যাবে।
- উফফ ভাই। আপনি বুঝতেসেন না। কিছু না পাইলে সিএঞ্জি ডাকেন।
লোকটার বেগতিক অবস্থা দেখে শেষে একটা সিএনজি ডাকলাম।
- মামা যাবেন পাব্লিক টয়লেট?
- রোজা রমজানের মাস, নাইলে জুতাইয়্যা দিতাম। ফাইজলামি করেন?
- মামা ভুল বুঝতেসেন। সত্যিই যাবেন পাব্লিক টয়লেট?
- খারাপ হইতাসে কইলাম! সিএনজি উঠায় দিমু গলা দিয়া।
- মামা ওই দেখেন খাম্বার পাশে লোকটার খুব খারাপ অবস্থা। তার জন্যইইই...
শেষে সিএনজি ম্যানেজ হলো। লোকটা সিএনজিতে উঠে নিচে এক হাত দিয়ে চেপে বসে ছিলেন। তার অবস্থা দেখে সিএনজি ওয়ালা আর আমার প্রচন্ড খারাপ লাগলো। এর উপর রাস্তায় পড়েছে বিশাল জ্যাম। সিএনজি ওয়ালা একবার তার দিকে তাকায় একবার আমার দিকে তাকায়। আমিও একবার লোকটায় দিকে তাকাই আরেকবার সিএনজি ওয়ালার দিকে।সিএনজি ওয়ালা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন " মামা! দরজা খুইলা রিক্সা গুলারে সাইড হতে বলেন। বলেন রুগী আসে "। আমিও সাথে সাথে দরজা খুলে চিৎকার দেয়া শুরু করলাম, " এই রোগী আসে রোগী আসে! সাইড দেন! " । না, মানুষগুলো খুব নিষ্ঠুর। কেউ ফিরেও তাকালো না। সাইড তো দিলো না কেউই। উপায়ান্তু না দেখে আবার চিৎকার দিলাম, " এই হাইগা দিলো, হাইগা দিলো, সাইডে চাপ! " । না, ভুল ভাবছেন। এবার শুধু কাজ হয়নি। বলা যায় ডাইরেক্ট একশন হয়েছে। সাথে সাথে রাস্তা পুরো ফাকা। আমাদের সিএনজি একটা দুটো করে রিক্সা পাস করছে আর রিক্সা ওয়ালারা চিৎকার দিয়ে বলছে, " ওই সাইডে চাপ! বসে হাইগা দিলো "। আমি শুধু নির্বাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছি। মানুষগুলো সত্যিই বদলে গেছে, নিজে যে অবস্থায় কোনদিন পরে না সে অবস্থা সম্পর্কে কোনদিন সে কর্নপাত ও করে না। আর যে অবস্থার মধ্যে দিয়ে গেছে সে অবস্থাকে সে প্রনাম করে নেয়।হয়তো করুনাও করে । যেমন হয়েছে এই হাগু বসকে নিয়ে। কারন টয়লেট সম্পর্কে শহরের কম বেশি সকল মানুশের খুব তিক্ত অবিজ্ঞতা আছে।
খুব দ্রুত জ্যাম কাটিয়ে সিএনজি একটা পাবলিক টয়লেটের সামনে থেমেছে। সিএনজি শুধু থামতে দেরি হয়েছে, লোকটা নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে টয়লেটে দৌড়। লোকটাকে টয়লেটে পৌছে দিয়েই হাটতে শুরু করলাম।ঠিক বিশ মিনিট পর । রাস্তা পার হওয়ার জন্য দাড়িয়ে আছি। হঠাৎ করে কেউ একজন আমাকে প্রচন্ড জোড়ে ধাক্কা দিয়ে নিজেই পরে গেলো। নিজেকে কোনমতে সামলে নিয়ে তাকে তুলতে যাবো দেখি সেই ব্যাক্তি।
- জ্বি ভাই আপনি? দৌড়াচ্ছিলেন কেনো?
- হাআ হাআ! আরেহ ভাই বইলেন না। টয়লেট থেকে বের হয়ে দেখি মানিব্যাগ নাই। কই গেলো কই গেলো? আবার টয়লেটে ফেরত গিয়া দেখি গুয়ের মধ্যে পইরা আসে। টয়েলেটের কেয়ারটেকাররে ব্যাপারটা বলতেই সে বললো, " ট্যাকা দেন নাইলে গু সাব কইরা দিয়া যান "। কি মুসিবত বলেন ভাই? সাথে সাথে ফাক ফুকুর পাইয়া দিলাম এক ভোঁ দৌড়।
- দৌড় দিলেন?
- হ্যা দিসি। নাইলে গু সাব করুম?
তখন কি বলবো খুঁজে পাচ্ছিলাম না। হয়তো মানুষ গুলো এমনি। ঠিক অনেকটা প্রেমিকাদের মতো। তারা কথায় কথায়, " জানিনা " বলে বাচঁতে চায়। আর শহুরে মানুষ গুলো দৌড়ে বাচঁতে চায়।
সারাদিন অকাজে অকাজে আমার রোজা ধরেছে। শুধু ধরেনি ঘাড় মটকে দিয়েছে। রোজার মাসে মানুষদের যে শুধু ঘাড় মটকানো যায় তা কিন্তু না। সাথে সাথে আবেগ ও মটকে দেয়া যায়। যেমন এগারো বারো বছরের ছেলেটা সবার আবেগ মটকাচ্ছে। " ভাই দুইটা ট্যাকা দেন। ইফতার করুম । দেন না কিছু। ও ভাই। ছোড বইনডা ও রুজা রাখসে। ওর লেইগা দেন। " ছোট ছেলেটা আর মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়ে কান্না চলে আসে এমন অবস্থা। এতো ছোট একটা মেয়ে না খেয়ে সারাদিন ভিক্ষা করছে। তাও ভিক্ষার পাত্রে মোটে মিলে ছয় টাকা। সত্যিই নিজেকে ছোট লাগছিলো। কিছু টাকা দিয়েই নিজেকে বড় বানানো যায়। তাই অপেক্ষা না করে ছেলেটার কাছে চলে গেলাম। পেছন থেকে আবেগী সুরে বললাম, "রোজা রাখসস? " ছেলেটা অপারেশন ফেরত রোগীর মতো বললো, " জ্বে ভাইজান, কিসু দেন " ব্যাক গ্রাউন্ড পিকচার হিসেবে পিচ্চি মেয়েটা তখন কেঁদেই দেয় এই অবস্থা। নিজের কান্না কোনমতে চাপিয়ে বললাম, " চল আমার সাথে! "
" কই যামু? "
" ইফতার করবি! যা খেতে চাস সব খাওয়াবো। এখানের দামী হোটেলে খাওয়াবো "
এরপর কি হলো বুঝতে খুব বেগ পেতে হয়েছে। নাসার বিজ্ঞানীদের আনলেও ব্যাপারটার রহস্য মিমাংসা করতে অনন্ত কাল না হলেও মহাকাল নিশ্চই লাগবে। তাদের ইফতার করাবো কথাটা বলার সাথে সাথেই তারা একজন আরেকজনের হাত ধরে আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে আবার ভিক্ষা খুঁজতে শুরু করলো। তাদের পেছন থেকে ডাকবো কিনা বুঝতে পারছিলাম না। একবার মাথা ঘুরিয়ে নিজের পোশাক আশাকের দিকে তাকালাম। তারা কি বুঝতে পেরেছে আমি একজন ব্যাচেলর? আল্লাহ কি তাদের আগেই বলে দিয়েছে আমার মাছি মারা ব্যাংক ব্যালেন্স আর অক্ষত এক হাজার টাকার নোট বহনকারী মানি ব্যাগটার অবস্থা? জানি না। তবেও জানতেও চাচ্ছি না। তবে এ বুঝতে পেরেছি, ব্যাচেলরদের সমাজ কি চোখে দেখে। পথ শিশুদের কাছেও যেনো এই ব্যাচেলর নিকৃষ্ট মানব।
ইফতারের আর দশ মিনিট বাকী। ঘুরে ঘুরে শুধু একটা টং দোকান ফাকাঁ পেয়েছি। সব রিক্সা আর সি এন জি ওয়ালাদের মাঝে নিজের জায়গা টুকু করে নিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। আজান দেয়ার সাথে সাথে মুখে পানি নিতে যাবো ঠিক তখন দেখলাম সেই লোকটা। সেই মাঝ বয়সী লোকটা, একটা কলা আর রুটি নিয়ে ভাবলেষহীন ভাবে দাড়িয়ে আছে। সাথে সাথে সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার হাত ধরে বসালাম। সে আমাকে দেখে তার মুখ যেনো পুরোপুরি শুকিয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। সে আমার দিকে করুন ভাবে তাকিয়ে বললো,
- ভাই আমারে প্লিজ ছেড়ে দেন ভাই।
- আপনাকে তো ধরে রাখবো না। কিন্তু তখন দৌড়াচ্ছিলেন কেনো?
- তার থেকে বাচাঁর জন্য দৌড়চ্ছিলাম। আপনি তার লোক না?
- জ্বি আমি আল্লাহর লোক।
- মানে আপনি তার লোক না?
- বললাম তো আমি আল্লাহর লোক।
- আরেহ ভাই! আগে বলবেন তো। আপনাকে দেখে এতোক্ষন বুকে পানি ছিলো না।
- আপনি কার থেকে বাঁচার জন্য দৌড়চ্ছিলেন তা বলুন।
- বউয়ের থেকে।
- বউ?
- সে কি আপনাকে মেরে ফেলতে চায়?
- জ্বি ভাই!
- থানায় জিডি করুন।
- পুলিশ হাসবে!
- আপনাকে মেরে ফেলতে চায় এটা হাসির ব্যাপার?
- সে কি আমাকে আর জানে মারবে ভাই?
- তাহলে?
- এক সপ্তাহ ধরে মার্কেটে ঘুরতেসি তারে নিয়া। এক সপ্তাহ ঘুইরা সে একটা ড্রেস কিনসে। আরো ছয়টা ড্রেস কেনা বাকী। ভাই মার্কেটে ঘুরাইতে ঘুরাইতে সে আমাকে মেরে ফেলবে ভাই।
- কি বলেন! মারাত্মক ব্যাপার।
- আরেহ হ্যা ভাই। মার্কেট থেকে পালিয়ে যাই দেখে সে নিজের ভাইদের ডেকে আনসে। তার ভাইয়েরা আবার ভাড়াটে গুন্ডা লেলিয়ে দিসে আমার পেছনে। মরে যাবো আমি।
- মরবেন না। একটা বুদ্ধি শুনুন।
- কি বুদ্ধি? জলদি বলেন ভাই।
- হসপিটালে যান।
- ওইখানে কেনো যাবো ভাই?
-হসপিটালে ভর্তি হয়ে বসে থাকুন। বউকে বলবেন এক্সিডেন্ট করেছেন। ঈদের দিন বাসায় আসবেন। সব ঝামেলা থেকে মুক্তি।
লোকটা আমার দিকে ভরাট দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে যেনো আমাকে গিলে খাবে। গলা দিয়ে শুধু গদ গদ শব্দ বেড়োচ্ছে। হঠাৎ চোখ বন্ধ করে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। কাদোঁ কাদোঁ কন্ঠে বললেন, " ভাই আপনি আমাকে বাচাঁলেন! আজ থেকে আপনি আমার মায়ের পেটের ভাই "
লোকটা যখন আমাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে আমি তখন ভাবছি। পুরুষেরা বরং নারীর চাইতে অসহায়।পুরুষ নারীকে ছেড়েও দিতে পারে না, পারে না তার উদ্ধত কাজ গুলো সহ্য করতে।
মাঝ বয়সী লোকটাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করে বেরিয়ে আসলাম। তার স্ত্রীকে ফোন করে বানোয়াট গল্পটাও বলেছি। মহিলার কন্ঠ শুনে মনে হয়েছে তিনি কষ্ট পাননি। বরং খুশি হয়েছেন। মনে মনে হয়তো বলছেন, " যাক বাবা! বাসায় রান্নার ঝামেলা চুকে গেছে! সারাদিন শপিং করতে পারবো! "
ঢাকা মেডিকেল থেকে বেরিয়ে রাস্তায় দাড়াতেই ওই দুটো পথ শিশুকে দেখলাম। পিচ্চি মেয়েটা পলিথিনে করা খাবার খাচ্ছে আর ছেলেটা কোন এক কাজে ব্যাস্ত । কাছে গিয়ে দেখলাম ছেলেটা টাকা গুনছে।
- কিরে এতো টাকা কোথায় পেলি?
- আমার ট্যাকা!
- কে দিয়েছে?
- কে দিবো মানে? ভিক্ষা কইরা পাইসি!
- এতো টাকা?
- হ!
- এই টাকা দিয়ে তো পুরো মাস বসে বসেই খেতে পারবি। আর ভিক্ষা করা লাগবে না।
- হ আর সারা বছর আপনে খাওয়াইবেন?
ছেলেটার দিকে তাকিয়ে হাসলাম। যেনো হাসি দিয়েই নিজের কিছুটা লজ্জা লুকিয়েছি। বুঝতে পেরেছি আমার এক দিনের এক বেলার আবেগে ওদের সারা বছরের তিন বেলা পেট পুরবে না। তাই আবেগ দিয়েই এক মাস ওরা কামিয়ে নেয়। হয়তো এক মাস পর মসজিদের মতো মানুষের আবেগটাও শূন্যের কোঠায় দাড়ায়।
রাতের শহরকে দেখছি। এক আলো অন্ধকার মেশানো শহর কোথাও আলো আছে আবার কোথাও নষ্ট লেম্পপোস্টের নিচে অন্ধকার আর নেশার খেলা। আলো অন্ধকারের মাঝে হাটতে হাটতে নেশার গন্ধ নাকে আসছে। কতো নেশা দিয়ে কতো দুঃখের সমুদ্র পার করা যায় আমার জানা নেই। তবে মানুষের নেশাটা দুঃখকে ঘিরেই।কখনো কখনো হয়তো হতাশা নয়তো অপ্রাপ্তি । তাতে কোন সন্দেহ নেই। নিরিবিলি এক আধো নেশা মেশানো শ্যাতশ্যাতে রাস্তার পাশে বসে একটা সিগারেট জ্বালিয়েছি। সিগারেটের আগুনটা যেনো এই নেশার রাজ্যে ছোট শিশু। তাই দূর দূর থেকে সবাই চোখ ঘুরিয়ে আমাকে দেখছে। একটার পর একটা গাড়ি আমার সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে।
সিগারেটে আরেকটা চুমুক দিয়ে কল্পনার রাজ্যে প্রবেশ করলাম। একটা সাদা রং এর করোলা, আমার সামনে এসে থেমেছে। আমি সেদিকে তাকিয়ে আছি। গাড়ির পেছনের দরজা খুলে একটা মেয়ে বেড়িয়ে এসেছে।বড় বড় উজ্জল চোখ, চুলগুলো যেনো আকাঁ বাকাঁ নদীর মতো। যেনো এক নদীর পুরো সৌন্দর্য - নেশা তার চুলে মিশে গেছে।একটা লাল রং এর শাড়ি। হাতে অনেক অনেক চুড়ি। যে চুরির শব্দেই মাতাল হওয়া যায় সহজে। খুব চিকন একটা মানুষ। যেনো ধরলেই ভেঙ্গে পরবে। আমাকে দেখে মুখে একটা গোমাটে ভাব। কিন্তু পরক্ষনেই একটু মুচকি হাসি দিয়ে মন মাতিয়ে দিতে চাইছে। চিনতে পেরেছি তাকে। সে আমার খুব চেনা। হয়তো একদিন খুব বেশিই চেনা ছিলো। আজ অচেনা নয়, বরং যেনো সবটুকুই চেনা আজ। আজ তার স্বার্থপর রুপটাও খুব চিনে গেছি। গাড়ি থেকে নেমে সে আমার সামনে এসে দাড়িয়েছে। সদা মাতাল করা সেই মিষ্টি কন্ঠে আমার নাম ধরে ডাকলো,
- চমক!
- হুম?
- ভালোবাসি!
আমি দৌড়চ্ছি। প্রচন্ড ভয়ে। তার ভয়ে, তার ভালোবাসার ভয়ে। কারন তার ভালোবাসাটা শুধু কষ্টই দিয়েছে। তার সাথে সুখের মূহূর্তগুলো এখন শুধু কষ্টই দেয়। আমি এখন সুখান্ধ। সুখ দেখিনা। জানতে পেরেছি এক কলসি সুখের পর সমুদ্র সম বিশাল কষ্ট উকিঁ মারে। তার থেকে দৌড়ে পালাচ্ছি। সে ভালোবাসে না সময়ের প্রয়োজনে আসে আমার জানতে ইচ্ছে করেনা। এখন শুধু দৌড়তে হবে। আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম। না,ভালোবেসে আর কেউ দৌড়চ্ছে না। হয়তো মানুষ গুলো ভালোবাসতেই ভুলে গেছে তাদের মতো। যারা সময়ে অসময়ে ভালোবাসি বলে মনের জানালা খুলে ডুকে পরে, আর চলে যায় মনের ঘরটাকে শূন্য করে।