somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মিন্টু শাহজাদা
আমি মিন্টু শাহজাদা। গান গাই, কবিতা লিখি, গল্প-প্রবন্ধ লিখি, চাকরি করে খাই। আমি একজন মুসলিম। কারো সাথে আমার কোন বিরোধ নেই। কারো মনে বিন্দুমাত্র অাঘাত দেবার কোন ইচ্ছাও নেই। সকলে মিলে ভাল থাকতে চাই, ভাল রাখতে চাই। আর কিছু নয়।

প্রচার মাধ্যমে বিকৃত বাংলাভাষা ও আমার কিছু সুপারিশ

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রচার মাধ্যমে বিকৃত বাংলাভাষা ও আমার কিছু সুপারিশ

মিন্টু শাহজাদা

আমাদের কয়েকজন বন্ধু আর. জে. মানে রেডিও জকি হয়েছিল। কারা যেন এর বাংলা নাম দিয়েছে ‘কথাবন্ধু।’ এই আরজে’র বাংলা রূপ কথাবন্ধু যে কার মাথা থেকে এসেছে জানিনা। কথাবন্ধু না হয়ে অন্য কিছু হলে হয়ত ভাল হত। ’কথা বলে যে বন্ধু’ কিংবা ’কথার বন্ধু’ যে সমাসেই ফেলেন না কেন তা কিন্তু রেডিও কিংবা বেতারকে প্রাসঙ্গিক করে না। আর কথা তো সবাই বলে। সবাই কি কথাবন্ধু? পাগলও তো কথা বলে। ফেরিওয়ালা মধুর স্বরে হাক দেয় - ‘এই মুরগী.....!’ সবাই কথা বলে। তাহলে কথাবন্ধু কি করে আরজে’র বাংলা রূপ হতে পারে? তাই ’আরজে’ পারিভাষিক বাংলা শব্দ হিসেবেই প্রচলিত হতে পারে অথবা বেতারকে প্রাসঙ্গিক করে এবং আরজে কে প্রাসঙ্গিক করে এমন কোন বাংলা শব্দ বিবেচিত হতে পারে। যাই হোক প্রসঙ্গে ফিরে যাই। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে যারা আরজে হয়েছিল (এখনও আছে কিনা জানি না।) এদের মধ্যে অনেকে সুন্দর এবং বিশুদ্ধ বাংলা বলতে পারত। অনেকে ভাল আবৃত্তিও করতে পারত।বাংলা উচ্চারণে কোন ইংরেজির প্রভাব ছিল না। কথার ফাঁকে ফাঁকে অযথা So, But, Anyway, Awesome প্রভৃতির অপ্রাসঙ্গিক ব্যবহার করত না। ওদের প্রজ্ঞা কিংবা ব্যক্তিত্বও ভাল ছিল।ওরা অধিকাংশই গ্রামীন মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। কখনও বিদেশে গেছে কিনা তখন পর্যন্ত আমার জানা ছিল না (পরে গেছে কিনা জানিনা।) কিন্তু আরজে হওয়ার পর কি এক অজানা কারণে অদ্ভুতভাবে কথা বলতে শুরু করল।মনে হচ্ছিল ওরা ছেলেবেলা থেকে ব্রিটেন কিংবা আমেরিকা থাকে, তাই বাংলা উচ্চারণে ইংরেজি ভাষার এত প্রভাব! ওদের কথা শুনে খুব হতাশ হয়েছিলাম। মনে মনে রাগও হয়েছিল। সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য ওরা এমন করতে পারল?


কিছুদিন পরে দেখি, নাটকে, সিনেমায় এমনকি গানেও সেই অদ্ভুত উচ্চারণ! ক্রমে ক্রমে সবকিছুতেই ছেয়ে গেল। এরা না জানে ভাল ইংরেজির উচ্চারণ, না জানে বাংলার। এ এক অদ্ভুত সময়। স্কুল, কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়েও এখন এমন উচ্চারণের হিড়িক। এভাবে না বললে স্মার্টনেস প্রকাশ পায় না। কোন নির্বোধ যে এ ভাষার আমদানীকারক আল্লাহ মালুম। এ থেকে পরিত্রাণের পথ কি? কথা বললেই হয়ত বলবেন, আমি ভাষার স্বাধীনতাকে খর্ব করার পক্ষপাতি। মশাই, না।ভাষার বিবর্তন রোধ করা যায় না। রোধ করতে যাওয়াও বুদ্ধিমানের কাজ নয়।তবে বিকৃতি ঠেকানো যেতেই পারে। রক্ত দিয়ে প্রতিষ্ঠিত বাংলাভাষার বিবর্তনের স্রোতকে সুপথে ধাবমান করার জন্য্ কিছু কিছু পদক্ষেপ পদক্ষেপ আমরা নিতেই পারি।বাংলা ভাষা রক্ষার জন্য আমাদের স্বজনেরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। সে বিবেচনায় এ আর এমন কি? এগুলো কারো অসুবিধা করার জন্য বলছি না। স্রেফ একজন বাঙালি হিসেবে বাংলা ভাষার বিশুদ্ধতা রক্ষার চেষ্টা হিসেবেই কিছু কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুপারিশ করছি।


এক. সকল প্রচার মাধ্যমে বিদেশী ভাষার আদলে বাংলা উচ্চারণকে আইনতঃ নিষিদ্ধ করতে হবে।রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র কিংবা সংগীতে অশুদ্ধ কিংবা বিকৃত উচ্চারণ (আঞ্চলিক ভাষার ক্ষেত্রে নয়, কেবলমাত্র বিদেশী ভাষার আদলে বাংলা উচ্চারণের ক্ষেত্রে।) রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। যে সকল প্রচার মাধ্যম আইনের ব্যত্যয় ঘটাবে অর্থাৎ বিকৃত উচ্চারণের পৃষ্ঠপোষকদের জন্য উপযুক্ত শাস্তির বিধান আরোপ করা যেতে পারে। যেমন, সতর্কতা, জরিমানা এমনকি অপরাধ গুরুতর হলে প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা যেতে পারে। মাধ্যমে কর্মরত ঘোষক, উপস্থাপক কিংবা আরজে এবং এ জাতীয় অন্যান্য কুশিলবকে বাংলা ভাষার বিকৃত উচ্চারণ থেকে বিরত থাকার নিয়ম করতে হবে। সেন্সরবোর্ড অভিনেতা, অভিনেত্রীদের উচ্চারণ পর্যবেক্ষণ করতে পারেন এবং সমস্যা থাকলে তা অনুমোদন দেয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন। সঙ্গীতের ক্ষেত্রে বিকৃত উচ্চারণকারী শিল্পীদের সঙ্গীতকে বাজেয়াপ্ত করা যেতে পারে। আইন ভঙ্গ করে কোন মাধ্যমে কেউ বিকৃত উচ্চারণের সঙ্গীত প্রচার করলে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

দুই. স্কুল কলেজে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ এবং বাক উৎকর্ষ বিষয়ক আবশ্যিক পাঠদানের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

তিন. বিকৃত উচ্চারণের স্রোত রোধ করার জন্য এবং কোমলমতি শিশু কিশোরদের বিকৃত উচ্চারণে নিরুৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করা যেতে পারে।

চার. সকল আঞ্চলিক ভাষা আমাদের সম্পদ। এ ভাষাতেই রচিত সাহিত্য ও সঙ্গীত বাংলার অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ।সকল আঞ্চলিক ভাষা সংরক্ষণের জন্য প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা অসম্মানের নয় বরং গৌরবের। যে সকল লেখক গোষ্ঠি ইদানিং আঞ্চলিক ভাষায় লেখালেখি করছেন তাঁরা কিন্তু আঞ্চলিক ভাষাকে সংরক্ষণের পথ সুগম করছেন। তবে লেখকগণ যদি স্ব স্ব আঞ্চলিক ভাষার বিশুদ্ধতা রক্ষায় যত্নবান হন, তাহলে তাঁরা তাঁদের স্ব স্ব আঞ্চলিক ভাষারই উপকার করবেন।আঞ্চলিক ভাষায় রচিত কিংবা নির্মিত নাটক, চলচ্চিত্র এবং সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও এ চেষ্টা অব্যাহত রাখা যেতে পারে।

মায়ের ভাষা বাঁচাতে আমরা এ পদক্ষেপগুলো শ্রদ্ধার সাথে গ্রহণ করতেই পারি।

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:৩৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×