(জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে রাত)
চারিদিকে রাত পুড়ে ছাই হয়ে আছে
বাতাসের মধ্যে কে যে মিশিয়ে দিয়েছে
কার শোক; আসা হবে না আমার
ও উঠান, কল ঘাট, নারিকেল তলা
মায়ের কবরে ফোটা ফুল; অনিচ্ছার
এই ভুলে উড়ে যাবে নাকি, আম গাছে
ফুটে থাকা পাখি তাই করবে ভর্ৎসনা?
নদীটা কি চোখ মোছে উথাল-পাথাল
পাড়ের সবজি ক্ষেতে, হুহু করা গান
বাজে আব্বার বুকের ক্যাসেট প্লেয়ারে
আর মুখ কালো আম্মা, পেছনে চুলায়
পুড়ছে আনন্দ তার ক্রমে; পাশে বসে
কম্পমান আগুনের শিখায় সে নাড়ে
মধ্যমা। এ’সব কষ্ট-বিষাদে বাড়িতে
আম্মা-আব্বার বুকের মধ্যে করে মেঘ
তার তুমুল প্রতাপে ভিজে বাড়ছে তাপ
শরীরের- আহা! জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে রাত!
(পৃথিবী ম্যাজিক দেখে)
তেড়ে আসা বিষাদের আগে সাঁকো পেরুনোর
জিদ জাগে; নিচে স্রোত বড় ক্রুর মুখে ফোঁসে
তাতে প্রতিষ্ঠার যতো অহংকার মেশে নিজ
থেকে প্রকাশ্য-গোপন; দেখ্ যাদুকর দেখ্
তোরও শেখা বাকী- ওই দর্শকের সারি, গিয়ে
বস্ আপাতত; খালি মঞ্চ দেখাবে ম্যাজিক
দিগ্বিদিক যতো তালি ছোটে তার সাথে ওঠে
তোর নীল রক্ত-বমি, পৃথিবী ম্যাজিক দেখে
কে দেখায় সেটা তার বিবেচ্য নয়রে পাগলা!
(অপার অবাক)
প্রভু, শহরের পায়ে পায়ে ধাক্কা লাগে
জুতার তলায় কাটে ঠোঁট; রক্তে ভেজে
সাদা জামা। আর শহরটা বলে, শালা
রক্ত লেগে জুতাটাই নষ্ট হয়ে গেল!
প্রভু, এই মানুষের কফ-থুথু লেগে
পিচুটির মতো জমে আছে মুখে; আর
কারো কারো মনে মেঘ, সন্দেহ! নিকটে
গিয়ে যদি বলি, বন্ধু দাও হাত, যদি
ভেষজ আঙুল ধরি, হাসির মুখোশ
ছোঁড়ে! বোঝা যায় তিনি ব্রাক্ষ্মণ, শুদ্রের
স্পর্ধা দেখে হয়েছেন অপার অবাক !
(চাঁদ)
সন্ধ্যার ভেতরে ঢুকল নৌকা, নদীতে স্রোতের
বড়াই উপেক্ষা করে চলছে আর দুই পাশে
ঝাউ বনে বিক্ষুব্ধ জোনাকি ঠোঁটে ঠোঁটে নিয়ে
আপাত কোমল অগ্নি ধীরে রাতের বিরুদ্ধে
করছে বিদ্রোহ; তারা কিন্তু জানেনা মার্কসবাদ!
এদিকে পাদ্রির পোশাকের মতো ফকফকা
জ্যোৎস্না করছে স্বধর্ম প্রচার; চাঁদটা তাহলে
তার গির্জা হতে পারে, যার ঘণ্টাধ্বনি কোনো
দিন পৃথিবীর মানুষ পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি।
তাও তার অপার্থিব ঔজ্জ্বল্যের ছটা অভিভূত
চোখে। এরই প্রভাবে মনের ভেতরের লোকালয়ে
অমন উজ্জ্বল এক গির্জা গড়ি- পূর্ণ সাধ জাগে!
(প্রবারণা)
পেছনে দৌড়ায় বৃক্ষ, নদী, বন-মাঠ, বাজার-দোকান
আর ট্রেনে জানালায় বসে কেউ এই দৃশ্য দুই ঢোক
গিলে নিয়ে পড়েছে ঘুমিয়ে পাশের যাত্রীর কাঁধে কাৎ
ওদিকে আকাশে মেঘে মেঘে অট্টালিকা; জেগেছে শহর
চাঁদ নামে এক পৌর বাতি সৌম-শান্ত রাতে ছুটিতেছে
কেবা জানে কোথায় কাহার কাছে কোন্ পথে যেতে পারে!
তবে যেখানেই যাক এমন বিভূতি রেখে যে ঘুমাচ্ছে
তাকে দেখে নাকি পৌর বাতি হচ্ছেন অবাক রীতিমতো!
(পতাকা ওড়ায় ডিসেম্বর)
জমিনে অমর ফুল ফুটছে চৌচির চৈত্রের রাগে
দুই শত দিন আমি রেখেছি পরাগ মেখে মনে
ঝরেছে ধারালো সুর চোখে, তরলতম ইশারায়
যায় দিন টিনে তার তপ্ত শ্বাস ফেলে; আর তীক্ষ্ম
বায়বীয় নখে কি যে ধার! দুপুরের নগ্ন মাঠে
রেখেছে তাহার দাগ! আঁচে তার তারে ও বেতারে
হঠাৎ তুলেছে মৃদু ঝলসানো বিরুদ্ধ গুঞ্জন!
তবে বুঝি নিকটেই ফাল্গুনের ব্যাপ্ত পদক্ষেপ;
হাওয়ার হৃদপিণ্ড বুঝি দ্রুত তালে ওঠে আর নামে।
কোথাও থেমেছে ট্রেন কাছে; লাল কাপড়ের দূর
ইশারায়; চারিপাশে খাঁ খাঁ করে দুপুরের স্রোত।
রোদের মতোন সেও ঠিক বেড়ার ফোকর থেকে
ঢোকে বুকে- সামুদ্রিক পতাকা ওড়ায় ডিসেম্বর!
(প্রথমের ভাবনা)
দূর থেকে দেখে-শুনে বুঝেছি যতোটা তাতে
হাতেও জন্মাবে ভাবি দুরূহ প্রপাত; বল্গা
স্পর্শে। আর যতো ঝরে যাওয়া রুগ্ন পাখি তার
হারানো পালক দেখবে এসে ফের জড়ো হচ্ছে
পাখায় পাখায়; ওই দেখি মাঘের দিবস
ফাল্গুন হবার চায়, সাপের শরীর থেকে
গুপ্ত পৃথিবীর ঘ্রান; সে ঘ্রানেও বিষ মাখা?
বুকের ভেতরে বৃথা পরিখা খনন করে
যারা- তারা পায় টের, ধনুক-তীরের ভাষ্যে
তীরন্দাজ নেই। আর হিংসা আর বমি আর যুদ্ধ
বিস্ফার তাকানো চোখ; স্থির মৃত্যু, শুকনো রক্তে
অভ্যস্ত পৃথিবী, তার পাশ দিয়ে হাঁটছে নদী
তাহার হৃৎপিণ্ডে জমছে বালি, ঘুরতেছে ড্রেজার!
প্রথমের ভাবনা তাই হতে হয় লাফ দিয়ে
পার! হাসি-কণ্ঠ, প্রেম-চুমু দাহ্য মনে হয়!
(নষ্ট বীজ)
ও প্রিয় নষ্ট বীজ, ভুল ভাণ্ড
ত্রিশূলের ফলা, যে কথা আদতে নেই
সেই রূপে যাহা কিছু বলা
আর আগুনে বাতাস করে নেভানোর
আত্মঘাত
সাঁতার না জেনে স্রোত পেরুনোর জিদ
শত্রুর মধ্যে সুহৃদের সন্ধান
বোবা মেয়েটার মুখ- সেও এক
সুনসান গান-
সেখানে দূরগত মরু রাত্রি, প্রকৃত তৃষ্ণা পেলে
তার হাসি করে নিও পান!
(মর্যাদা)
বাইরে গুলির শব্দ, তাঁবুতে দিশেহারা বাতাসের আশ্রয়
সন্ধ্যা তবুও আসে যুদ্ধ দামামা না মেনে
আর তারাদের মৌন নির্যাতনে উভয় শিবিরে সৈন্য দল
কেমন যে উচাটন হয়!
ঘামে শ্রান্ত; কাঁধের রাইফেলও চাইছে বিশ্রাম
রাত বাড়ে আরও রাতে
সব রাত সকালের দিকে ধাবমান
সৈনিকও ঘুমিয়ে পড়ে প্রতিরোধহীন
জেগে থাকে তাদের সকল সতর্ক কান
যুদ্ধ ময়দানেও ঢোকে ভোর
পাশের নদীতে ভাসে লাশ,
সেটা পক্ষ না প্রতিপক্ষের- মৃত্যুতে তা হয়ে ওঠে ধাঁধাঁ
লাশকে বুলেট দেয় দুই পক্ষেই শহীদের মর্যাদা!
(শিউলী)
শিউলীর সাথে পরিচয়ের আগে আমি
সকল শিউলীদের সফেদ ঘ্রাণময় ভাবতাম
আর ভাবতাম তারা কিনা সন্ধ্যার দিকে ফুটে
স্বতঃপ্রনোদিত হয়ে রাতের শুশ্রুষা শেষে
প্রভাতের দিকে ঝরে যায়!
অথচ এওতো শিউলী এক-
প্রায় দুপুরে যে কালোমুখ
শুকনো ফুল
উদ্যানে জলমগ্ন বসে
ভেতরে ভেতরে যেন কার সঙ্গে লড়ে!
(আসুখ বাঁধানোর অভিপ্রায়)
ভাঙা দিন; সাদা প্লাস্টার মোড়ানো
কেমন মেঘের আড়ালে বসে আছে
আর সকালের বাসনে নিয়ে পান করছে নীরবতা
সন্তর্পণে
এদিকে সবজি ক্ষেতে
পানি দিতে থাকা কৃষকের রানী
পায়ে তারা শাপেবর কাঁটা বিঁধে গেলে
সতেজ সবজি হয়ে ওঠে কৃষকের কোলে
হঠাৎ, নির্জনতায়
সামান্য শুশ্রুষা পেয়ে রানী; মনে পুষে রাখে
বারবার আসুখ বাঁধানোর অভিপ্রায়!
(মানুষের ছাদে)
রয়েছে উচ্চতা ভীতি
অযাচিত ভয়
তাও কী মনে করে প্রায়শই উঠি একলাই
মানুষের ছাদের উপরে
কিনারে রেলিঙ নেই জেনেও দাঁড়াই
খসে পড়ি, ধসে পড়ি
ঝরে পড়ে যাই!
(ছাই)
যা-ই কিছু আছে, নেই কিছু তার
কার ছিল ভুল; ঠিক সেজদার
কে যে কার কাবা; ভাবে অন্তরে,
কেউ দেখে সরে, কেউ রাখে ধরে,
ছিলই না যাহা, তা-ই পেতে হাত,
পাথর ফাটিয়া জলের প্রপাত
সেই জলে নাকি মিশে আছে বিষ
পান করে বৃথা করছে নালিশ
জলের গরল জমজমে তাই
বিষের বদলে মধু-ধারা চাই
খাস দিলে লেখা এই ইবাদত
মাথা নত করা নয় প্রতিশোধ
তাও 'শপ্তের বৃথা দিন যায়,
তাই বলে কি তা যায় আসলেই?
নাকি ফিরে আসে ভিন্ন নামেই?
যেই নামে আসো, দেখে নিতে চাই-
কতো আগুনের কতটুকু ছাই!
(সাবান)
আহা! অতীতের মধ্যে কোথা থেকে এলো এ সাবান
আর সেটা নিয়ে লোফালুফি করেরে ঘটনা, যেন
তার গায়ে লাগা যতো কালি-ধুলাবালি সব থেকে
পরিত্রাণ আছে এ ফেনায়। যেন নামাজী উঠেছে
জেগে ডাকাতের ফজর আজানে! সাবানে বাড়ছে
তাই রাতেরও বিপুল আগ্রহ, যেন ঘষাতেই জেগে
উঠবে দিন। বিস্ময়ের ফেনা মেখে নিয়ে চুপিসারে
তাই আজ ভুল ঘটনার যতেক শকুন, রূপ
নিতে
পারে
কবুতরে!
(উন্মাদ)
এতো সব কেওয়াজের মাঝে, মুগ্ধ শরীরও রেওয়াজ করে-
হয়তো মেঘের দিন, সাদাকালো মনে লাগে বৃষ্টি ছাট
ইচ্ছে করে ভিজে; ভুলে ফেরা লুভানার নাঙ্গা চুলে ছোটে
ভেষজ দুপুর। তাতে এক পুরুষের দুনিয়া দোলেরে
পানা পুকুরের জলে। গায়িকার কঞ্চি শরীরে কীভাবে
বর্ষা তোলে তাল, তার ভঙ্গির ধনুকে আহা কাটে কার
মমীর শরীর! চাহনির বজ্রপাতে জড়বৎ দেহ
ফের জেগে উঠেছে কণ্ঠেরই অমরতা পেয়ে বুঝি। তার
আভাসে শরীরি শহরে পুরুষ চায় প্রবেশাধিকার?
বাহুর ছাউনী তবে আদমের অনাদী আশ্রয়? কণ্ঠ
থেকে বেশি আকর্ষক তার চিবুকের খাদ? তাই ঢের
তন্ময়তা বুননে আজ কিনা পতিত হবেন সে উন্মাদ!
(মহামায়া)
সে কার হাসির মধ্যে আবারও উদিত হয়ে ভাবি,
শান দিতে পারলে চোখ, একদিন আমার বিদ্যুত
জ্বলে উঠবে মানুষের মোহনায়? অফ্রিকান রাতে
বনের মধ্যে যদি নামে শীতকাল, শরীরে শরীর ঘষে
ফুটবে আগুন।
ওই যে চোখের মধ্যে যতো ডুব সাঁতার
অভিব্যক্ত আছে; আর পাতার নীচে সুপ্ত মায়ার মর্মর,
নদীতে ভাসতে থাকা লাল সালোয়ার- কার অভিঘাত
ভাসিয়ে আনছে এই লুপ্ত জনপদে? এখানে দৃশ্যের মদে
তার রশদ জোগাড় করে নিতে এই পর্যটন উড়ে এলো।
বাকের অধিক ব্যক্ত করছে শরীরের আলোড়ন-
তার ঢেউয়ে বনের ভেতরে বনে মনের গভীরে ঘোরে
যৌথ মনন!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:১৯