somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নবনীতার ডায়েরি - ৭

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নবনীতার ডায়েরি - ৬


ক'দিন আগে হুট করে শ্রাবণ এসে একটা ভালো নিউজ দিয়েছিলো। বিপাশার জন্য একটা পাত্রের খোঁজ এনেছিল। আমিই আলসেমি করে আজ ফোন দেই কাল ফোন দেই দেই করে বিপাশাকে ফোন দিচ্ছিলাম না। লাঞ্চ তাড়াতাড়ি সেরে নিয়ে বিপাশাকে ফোন দিয়ে আমতা আমতা করছিলাম বিপাশাকে খবরটা দিবো কি দিবো না। তবুও শেষমেশ দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ঝেড়ে ওকে বলি,


দোস্তো,আসলে তোরে একটা কথা বলার জন্য ফোন দিছিলাম!


সেইটা বলার জন্য তোর আবার পারমিশন লাগবো নাকি? বইলা ফেল।


ভয়ে ভয়ে বলবো না নির্ভয়ে?


ওইত্তেরি,তুই আবার আমারে কবে থিকা ডরানি শুরু করলি দোস্তো? বলে ও হা হাহ হা করে হাসি শুরু করলো। উদ্দাম হাসি।


ওর হাসি শুনে আমার অস্বাভাবিক লাগে। ভয় ভয় লাগে আবার না ক্ষেপে যায়। ও নিজ থেকে আমাকে বলেনি আবার বিয়েতে ওর মত আছে কিনা। তবুও নিজ দায়িত্ব মনে করে একটা কাজে হাত দিয়েছি এটা ওকে না বলেও পারছিলাম না।


আরে নবনীতা বিবি,বলো বলো আমি শুনছি। নির্ভয়ে বলো। ফোনের ভিতর দিয়ে এসে তো আর কিল,ঘুসি মারতে পারবো না। ঢঙ করতে হবে না আর।


দোস্তো, শ্রাবণ তোর জন্য একটা পাত্রের খোঁজ আনছিলো। আমার কাছে ছবি, বায়োডাটা দিয়ে রাখছে। তোর অনুমতি পেলে সামনে আগাবো।


আমার কথা শুনে ও আরেকদফা হাসি শুরু করলো। হাসতে হাসতে বললো -


আরে এটা তো ভালো নিউজ। এখন অবধি ভালো নিউজ। তাড়াতাড়ি তুই ছেলে দেখা শুরু করে দে।

আমি খুব কনফিউজড হয়ে যাই ওর কথা শুনে।জিজ্ঞেস করি -


তুই কি রাগ করলি ?


না ,না রাগ করি নাই। কিন্তু দোস্তো, তুই খুব অল্পতেই হতাশ হয়ে যাবি দেখিস। ডিভোর্সী মেয়েদের তাও একটা বাচ্চা সহ মেয়ের বিয়ে হওয়া আমাদের সমাজে এতো সহজ না।


ওর কথা শুনে ওকে আমি আমাদের কলেজ ফ্রেন্ড নিপার রেফারেন্স দেই। দুই বাচ্চাসহ বিয়ে করেছে ওর হাসব্যান্ড মারা যাবার পর বিপত্নীক এক ভদ্রলোককে। এখন ইউকে তে ভালোই সংসার করছে।


তা শ্রাবণ ভাই আমার জন্য যে ব্যাটার খোঁজ আনল,তার নাম ধাম আতাপাতা কিছু বল। করে কি ?


তোরে ভাইবারে দাঁড়া লোকটার ছবি পাঠাই। উনার নাম সাব্বির। একটা বায়িং অফিসের কমপ্লায়েন্স ম্যানেজার। একটা রেপুটেড কোম্পানিতে জব করে। নামটা তো ভুলে গেলাম। আচ্ছা শ্রাবণের সাথে কথা বলে পরে জানাবো নে।


আচ্ছা পাঠাইস ছবি। তো লোকটার বউয়ের সাথে ডিভোর্স হইছে ক্যান? তার বাচ্চাকাচ্চা আছে ?


হুম সাত-আট বছরের একটা ছেলে আছে। আর শুনছি লোকটার বউ তার প্রেমিকের সাথে ভেগে গেছে।


জামাই বর্তমান থাকতে আরেক ব্যাটার সাথে প্রেম করে ক্যামনে মাইয়ারা এইটাই তো বুঝলাম না। আনস্মার্ট ক্ষ্যাত রইয়া গেলাম রে।


বললাম না একটা ভালো বায়িং অফিসে জব করে। প্রায়ই দেশের বাইরে ট্যুর দিতে হয়।


জামাই দেশের বাইরে থাকলে তাইলে এই ব্যাটারে বিয়া কইরা লাভ কি। সে তো আমারে বিয়া করলে দেশের বাইরে যাইয়া সারাদিন আমার পিছে লাইগা থাকবো আমিও কারো সাথে প্রেম পিরিতি শুরু করলাম নাকি! দাঁড়া ভাইবারে ছবি আসছে। দেইখা নেই।


আমি আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করি বিপাশার মন্তব্য শোনার জন্য। ও জানায় -


দেখতে খুব খারাপ না,আহামরিও না। চলে। আর সেকেন্ড বিয়ার জন্য রূপবান হওয়া অত জরুরী না।


আমি জানতে চাই- তাহলে কোন বিষয়টা তুই জরুরী মনে করিস ?


কি আবার ! মন মানসিকতা,আর্থিক স্বচ্ছলতা ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন গুছাইয়া বলতে পারবো না।


আচ্ছা ঐ ভদ্রলোককে তোর বায়োডাটা, ছবি দিতে হবে। দিবো কি না জানা। আর তোর রিসেন্ট কিছু ছবি থাকলে আমাকে ভাইবারে সেন্ড কর। ও আমাকে আমার ইমেইল আইডি জিজ্ঞেস করে।


আমার মোবাইলে নোটিফিকেশন আসলে বুঝি বিপাশা ওর ছবি পাঠিয়েছে। দেখি ওর ছেলে ফাযানের সাথে তোলা কিছু ছবি। নো সিঙ্গেল ছবি। এক হিসেবে ভালোই করেছে বিপাশা। যেহেতু ও ওর ছেলেকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারে না,ছেলেসহ ছবি দিয়েই বিপাশা ওর সিদ্ধান্ত লোকটাকে জানিয়ে দিলো। ওকে জানাই ওর ছবি পেয়েছি। প্রয়োজন হলে তোর ফোন নাম্বার দিবো। তোরা নিজেরাই কথা বলে নিস। সেটাই ভালো হবে। আর আমি শ্রাবণের কাছে তোর ছবি,বায়োডাটা পাঠিয়ে দিচ্ছি। বাকীটা তোকে পরে জানাচ্ছি।


ওকে। ঐ লোক আমাকে ফোন দিলে তোকেও জানাব কি কথা হলো। আর তুই যেহেতু আমার সম্পর্কে সবই জানিস,আমার মানসিকতা বুঝিস, সেই অনুযায়ী তুই শ্রাবণ ভাইয়ের সাথে ডিসকাস করে নিস। তবে আই থিঙ্ক এখানে আমার কিছু ক্লিক করবে না লোকটার সাথে। খামোখা কিছু টাইম ওয়েস্ট হবে!


সেটা পরে দেখা যাবে বলে বিদায় নিয়ে আমি ফোন রেখে দেই। আমিও বুঝি বাচ্চাসহ কোনো মেয়েকে কোনো পুরুষ একান্ত ঠেকায় না পড়লে বিয়ে করতে চায় না। তবুও চেষ্টা করতে দোষ কি। বিপাশার মতো এতো কিউট একটা মেয়ে সারাটা জীবন একা একা কাটিয়ে দিবে,এটা আমি আমার ভাবনাতেও জায়গা দিতে চাই না। আমিও ঝটপট শ্রাবণকে বিপাশার ছবিগুলো পাঠিয়ে দিয়ে ওকে ফোন দিয়ে জানাই। শ্রাবণ জানালো অফিস ছুটির সময় আমাকে অপেক্ষা করতে,ও পিক করবে আমাকে বারিধারা থেকে। আমার ভেতর নানান দুশ্চিন্তার পাশাপাশি ছেলেমানুষি অস্থিরতারাও ছুটোছুটি করে। ভাবতে থাকি বিপাশারও যদি সত্যিই একটা কমপ্লিট ফ্যামিলি হয় কতই না ভালো হবে। ওর বিয়ের শপিং করতে হবে না, সামনাসামনি সাব্বির নামের লোকটার সাথে বিপাশাকে দেখা করিয়ে দেবার ব্যবস্থা করা, বিপাশার ফ্যামিলির মানুষজনের পারমিশন নেয়া কত কাজ! তবে বিপাশার মা খুব কঠিন স্বভাবের আর প্যাঁচালো টাইপের। খালাম্মা পারলে তূর্য ভাইয়ের সাথেই আবার ওকে বিয়ে দিতে চায়। অদ্ভুত মহিলা একজন! নিজের মেয়ের চেয়ে শয়তান প্রাক্তন মেয়ের জামাইকেই সবসময় সাপোর্ট দিয়ে আসছে। উনার কথা একটাই, মেয়ে মানুষের আবার বিয়ে কয়জনের সাথে হয়! এতই যদি তূর্য ভাইয়ের বিপাশার প্রতি প্রেম থাকতো, তাহলে কি ডিভোর্সের পাঁচ দিনের দিনই ঐ লোক আবার বিয়ে করে ফেলে। বিপাশার মতো করে আমারও বলতে ইচ্ছে করে তূর্যের খাউজ বেশি!


অফিস ছুটির পর শ্রাবণের সাথে বাড়ি ফিরতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। শ্রাবণের কতখানি ভালো লাগে জানি না কিন্তু আমার অফিসের সমত ক্লান্তি,দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যায় সারাদিন পর ওকে পেলে। মাঝে একজন ড্রাইভার ছিল, শাহজাহান নাম। কিন্তু তখন আমি মন খুলে শ্রাবণের সাথে কথা বলতে পারতাম না, ওর হাতটা ধরতে পারতাম না, ওকে হুটহাট চুমুও খেতে পারতাম না। তবে শ্রাবণের ব্যস্ততা বাড়লে হয়তো আবার ড্রাইভার নিয়োগ হতে পারে। গাড়িতে ওঠার সাথে সাথেই শ্রাবণ বললো -


গুলশান দুই নাম্বারে থামাবো ? হালিম খাবে মামার দোকানের ?


আমি বুঝলাম ওর খিদে পেয়েছে। তাই আমাকে জিজ্ঞেস করছে হালিম খাবো কি না। বলি -

চলো। আমারও খিদে পেয়েছে। খেতে খেতে কথা বলি। সাব্বির নামের লোকটার সাথে তোমার আর কথা হয়েছে?

ডিসিসি মার্কেটের ওখানে গাড়ি পার্ক করতে করতে ও বলে, দাঁড়াও নেমে বলছি।


মামার দোকানের হালিমটা শ্রাবণের খুব প্রিয়। ও এক বাটি খেয়ে প্রায়ই আরেক বাটি খায়। খেতে খেতে বলে -

হালিমের কালারটা দেখছ কী ফ্রেশ আর গন্ধটাও সুন্দর! ও হালিমে মশলা, পেঁয়াজ বেরেস্তা,কাচামরিচ কুঁচি সব মিশিয়ে নিয়ে খায়। এই জায়গাটাইয় আসলে আমার ভালোই লাগে। অফিস ফেরতা অনেক মানুষজনই এখানে এসে হালিম খায়। পায়া,নলি, ছোট -বড় বাটির হালিম ছাড়াও পার্সেলের ব্যবস্থা আছে। আজকে দেখি মামার দোকানে বসারই জায়গা নাই। অবশ্য এতে আমাদের অসুবিধা হয় না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করতে করতে খাওয়ার মজাই আলাদা।


বুঝলে নবনীতা, আমার সাব্বির লোকটার একটা কথা ভালো লাগে নাই। এমনিতে অনেক মার্জিত ভাবে কথা বলে, সুন্দর ভয়েজ, স্মার্ট, স্যালারিও ভালো। কিন্তু বিপাশার ছবি দেখে পছন্দও হয়েছে, ফোন নাম্বারও নিয়েছে। লোকটা ফোন রাখার আগে একবার জিজ্ঞেস করেছে বিপাশার ছেলে কোথায় থাকবে? বিপাশার সাথেই নাকি অন্য কিছু চিন্তা আছে বিপাশার?


কথাটা শুনেই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আমি ওকে জিজ্ঞেস করি -

তুমি কি উত্তর দিলা?


আমি বলেছি - বিপাশা যেহেতু ওর ছেলেকে ওর আগের হাসব্যান্ডের কাছে দেয়নি ,তাতে তো বোঝা যাচ্ছে ওর ছেলেকে ও নিজের কাছেই রাখতে চায়। তবে ছেলের বাবা হয়তো পরে দেশের বাইরে নিজের কাছে নিয়ে যেতে পারে। তবে ব্যাপারটা নিয়ে আপনি বিপাশার সাথেই কথা বলে নিলে ভালো হয় !


ক্যান তুমি তাকে বলতে পারলা না, তারও তো ছেলে আছে। তার ছেলে তো তার কাছেই থাকে নাকি বিপাশার সাথে বিয়ে হলে সে তার ছেলেকে তার প্রাক্তন স্ত্রীর কাছে দিয়ে দিবে! অদ্ভুত লোক তো !


তুমি রেগে যাচ্ছো ক্যানো! মাত্র তো কথাবার্তা শুরু হলো। বিপাশা খুবই স্মার্ট আর বুদ্ধিমান মেয়ে। সে নিশ্চয়ই বুঝেশুনেই সাব্বির সাহেবের সাথে কথা বলবে।


এইটুকু শুনেই আমার এতো রাগ লাগছে যে এতো মজার হালিমটাও বিস্বাদ লাগছে। পুরুষরা এমন ক্যানো এই কথাটা মনের মাঝে ঘুরপাক খেতে থাকে। আমিও তো একজন পুরুষের সাথে আছি। কই তার মনমানসিকতা তো খারাপ লেভেলে গিয়ে চিন্তাভাবনা করে না। নাকি শ্রাবণের কোনো খারাপই আমার চোখে পড়ে না? ওর ব্যাপারে কি আমি অন্ধ?


আরেকটু হালিম নিবে?


না খাবো না আর। আমার বাটিতে কুড়কুড়া হাড্ডি পড়ছে কয়েকটা। তুমি নিবে? তোমার তো এগুলি পছন্দ।খাও, বলে আমি ওর বাটিতে আমার বাটি থেকে হাড় তুলে দেই।


ও খেতে খেতে বলে -


আরে বিপাশার পাত্র দেখা নিয়ে কথা। এতো আর্লি ডিজহার্টেড হয়ে গেলে চলবে ক্যানো!


গাড়িতে উঠে বসতেই দেখি আমার মোবাইল বাজছে। নির্ঘাত বিপাশার ফোন! রিসিভ করে বললাম -

হ্যাঁ বল, শুনছি।


সাব্বির সাহেবের সাথে কথা হয়েছিলো। উনিই ফোন দিলো বিকেলের দিকে।

হুম


কি হুম হুম করতাছস! এদিকে আমার বিয়ার সানাই বাজলো বইলা আর তুই দেখি জানার জন্য কোনো আগ্রহ দেখাস না


আগ্রহ না থাকলে কি আর তোর জন্য প্রোপোজাল আনতাম! আমিই তোকে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে ফোন দিতাম। আমরা এখন রাস্তায় অন দ্য ওয়ে টু হোম।


ওকে দোস্তো, পরে কথা হবে বলে বিপাশা ফোন রেখে দেয়।


বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে ঘণ্টাখানেক পর এক কাপ চা নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসি বিপাশা ফোন দিবো বলি। বাতাসে শীতআগমনী গন্ধ। আমার প্রিয় ঋতুর সূচনা হতে যাচ্ছে।


হ্যালো বিপাশা, তুই ফ্রী আছিস? কথা বলতে পারবি ?


হুম,আমি তোর ফোনের জন্যই অপেক্ষাইতাছিলাম। শোন দোস্তো, ঐ ব্যাটা ফোন দিয়া কোনো ভনিতা করে নাই। সরাসরিই আমারে জিগাইছে সে যে উদ্দেশ্যে ফোন দিছে আমি সেইটা জানি কিনা।


আমিও বলছি না জানার তো কারণ নাই।

হুম তারপর ।


তারপর আর কি নিজের প্রেজেন্ট স্ট্যাটাস তুইল্যা ধরলো, বাচ্চার কথা বললো। তারপর কাজকর্ম নিয়া একটু আলাপ। তার কই কই থিকা কেমন স্ট্যাটাসের মেয়েদের ফ্যামিলি থেইক্যা বিয়ার প্রোপজাল আসে এইসব। খুব সুখ পাইতাছে মনে হয় ব্যাটা আনম্যারিড মাইয়ার বাপ-মা ছাড়াও আনম্যারিড মাইয়ারাও তার পিছে পিছে নাকি ঘুরে। আমি তো শুইন্যা বললাম - বাহহ্‌ বেশ ভালো খবর তো, আপনি খুব ইয়াং এবং ডিমান্ডেবল! ব্যাটা মনে হয় হাসতাছিল আমার কথা শুইন্যা। আমারে জিগাইলো - আমার জামাইয়ের সাথে আমার ডিভোর্স হবার রিজন কি। কইলাম - আমারে রাইখা অন্য মেয়েদের পিছনে ঘুরছিলো তাই।


আপনি খুব কষ্ট পেয়েছিলেন নাকি আমারে জিজ্ঞেস করে।


আমিও উত্তর দিছি - একেক জনের কষ্টের রকমভেদ আসলে আলাদা। আপনার এক্স ওয়াইফ আরেক জনের সাথে চলে যাওয়াতে নিশ্চিত আপনি কষ্ট পেয়েছিলেন। হয়তো প্রকাশভঙ্গী, সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করেছেন অন্যরকম ভাবে।


তা তো অবশ্যই


সুতরাং আমারও খারাপ না লাগার কারণ নাই। ইনফ্যাক্ট একজনের সাথে সম্পর্ক থাকা অবস্থায় আরেকদিকে মন দেয়া তো আমার কাছে রীতিমত প্রতারণা মনে হয়। তারচেয়েও বড় কথা আরেকদিকে মন যায় কীভাবে!


তারপর ?


তারপর লোকটা আমার বাচ্চার কথা আলোচনা করলো। কিন্তু ব্যাপারটা ফাইনালি গিয়া আমার ভালো লাগলো না।


আমি বিপাশাকে জিজ্ঞেস করি মানে কি ? তোর বাচ্চার কথা জিজ্ঞেস করতেছিল এটা তো ভালো নিউজ। আমার আর ইচ্ছা করে না সাব্বির সাহেব শ্রাবণের সাথে কি কি বলেছে। যদিও বিপাশার সাথে লোকটার বিয়ে হবার মতো সম্ভাবনা আমি দেখছি না কিন্তু এসব কথা শুরুতেই বিপাশাকে বলে আমি ডিজহার্টেড করতে চাচ্ছিলাম না।


আরে রাখ , মানুষের ভালোমানুষী আমার বহুত দেখা হইছে। আমি প্রথমে ভাবছিলাম সে বোধহয় খুব ফাদারলি টাইপ মানুষ, যেহেতু নিজেও এক বাচ্চার বাপ তাই হয়তো আমার বাচ্চার খবরও জানতে চাইতেছে। পরে কয়, আপনার তো ছেলে বেবি, তাই না ?


আমার তো শুইন্যাই মেজাজটা গরম লাগে। ছেলে বেবি বা মেয়ে বেবি বা হোয়াটেভার বাচ্চা নিয়া জেন্ডার তুলার কি আছে। পরে আমি বলছি , জী আমার ছেলে বেবি। আমারে জিগায়,


আপনার বেবি কোথায় থাকবে ইফ আওয়ার রিলেশন ক্লিকস। এনি হাউ ওর বাবা ওকে নিয়ে যেতে চাইবে না তো ? আপনাদের ডিসিশান নেয়া হয়েছে এটা নিয়ে ?


বিশ্বাস করো নবনীতা, এক মুহূর্তের জন্য মনে হইছিলো লোকটা মনে হয় সত্যি আমার মাদারলি ফিলিংসটা ভাইবা এই কথা বলছে। কিন্তু আমি যখন বলছি -


এটা তো ডিসিশান নেয়ার কিছু নাই। কোনো বাচ্চার বাবার যদি নিজের বাচ্চা নিয়ে কেয়ারিংনেস থাকতো তাহলে তো অন্য মহিলার দিকে বা রাস্তার মহিলাদের দিকে নজর যেতো না কিংবা ডিভোর্সের পাঁচ বা ছয়দিন পর আরেকজনকে গিয়ে বিয়ে করে ফেলত না! আমার বাচ্চা আমার কাছেই থাকবে। ওকে ছাড়া আমার লাইফটা ভাবতেই পারি না। আর ওর বাবার ওকে নিজের কাছে দেশের বাইরে নিয়ে যাবার ব্যাপারে তেমন ইন্টারেস্টও দেখি না। ইনফ্যাক্ট ও নিজে বড় হয়ে যদি কোনোদিন ওর বাবার সাথে থাকতে চায় তাহলে সেটা ভিন্ন কথা।


আমি বিপাশাকে জিজ্ঞেস করি তখন ভদ্রলোক কি বললেন ?


কি আবার বলবো! বলে -


হুম মা হিসাবে আপনার ভাবনা ঠিকই আছে। আমি আপনাকে কালকে জানাবো আপনার ব্যাপারে আমার ডিসিশানটা। তো আপনার তো ছেলে বেবিই তাই না?


তখন সত্যিই আমার রাগ ওঠে। আমি জিজ্ঞেস করি - মেয়ে বেবি হলে কি আমি বেনিফিটেড হতাম ? ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, ইফ আওয়ার রিলেশন ক্লিকস, আপনার ছেলে কোথায় থাকবে?


খুব কনফিডেন্টলি ব্যাটা উত্তর দিলো - অফকোর্স আমার কাছে।


আমিও হাসতে হাসতে বলি - সাব্বির সাহেব আমিও আমার ছেলেকে সবসময় আমার কাছেই রাখবো ইদার আমি আবার বিয়ে করি বা না করি। ভালো থাকবেন বাই বাই বইলা আমি ফোন রাইখ্যা দিছি।


সব শুইন্যা আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলি। চা' টা পুরোটুকু খাওয়া হয়নি। বিপাশার কথা শুনতে শুনতে চায়ের কথা ভুলে গেছিলাম। বিপাশাকে বলি - ভদ্রলোক বারবার ছেলে বেবি কিনা জানতে চাচ্ছিলো কেন তোর মনে হয় ?


কে জানে ক্যান জিগাইতাছিল। ঐরকমভাবে ডিপলি ভাবি নাই। কারণ লোকটার সাথে কথা কইয়াই আমি বুঝছি তার সাথে আমার হইবো না। মনে হইলো হাঁফ ছাইড়া বাঁচছি। সতি বলি নবনীতা, বিয়ার কথা অন্য কেউ কইলে চেইত্যা উঠি ঠিকই কিন্তু তুই যখন বললি আমি ভাবতাছিলাম তোরে কি কইরা এড়াই, সত্যিই যদি সব দিক দিয়া লোকটা ভালো হয় তাইলে তো আমি ফাইসা যামু।


আমি হাসতে হাসতে বিপাশাকে বলি - ফেঁসে যাবার কি হলো! তুই কি সারাজীবন একা একা বাচ্চা নিয়ে কাটিয়ে দিবি নাকি? তোকে একা থাকতে দিলে তো! তবে আমার মনে হয় বারবার ছেলে মেয়ের কথা তুলছিলো এর একটা সম্ভাব্য রিজন হতে পারে যে তোর বাচ্চাটা যদি মেয়ে হয় তাহলে তো সারাজীবন তোর কাছে থাকবে না, বিয়ে হলে গেলেই দায়িত্ব শেষ, এই টাইপের কিছু হতে পারে।


হুম হইতে পারে। লোকটা কন্ট্রাডক্টরি কথা বলতাছিল ফাঁকে ফাঁকে। একবার কয় তার সিদ্ধান্তই তার ফ্যামিলির সিদ্ধান্ত। ফ্যামিলি মানে তার মা, ভাই আর ভাইয়ের বউরা। আবার কয় আপনার ছেলে বেবি আছে এটা বাসায় জানিয়ে দেখি আমার ফ্যামিলি কি বলে!


আমি বলি - লোকটার ছবি দেখে যেমন মনে হয় কথা শুনে আবার অ্যাপিয়ারেন্স নিয়ে কিন্তু অমন মনে হয় নাই। এটা কোন ধরণের স্বার্থপর চিন্তা! তার নিজের ছেলে তার কাছে থাকতে পারবে কিন্তু যাকে বিয়ে করবে তার সন্তান বিয়ের পর তার সাথে থাকতে পারবে না। পুরুষদের কী অদ্ভুত চিন্তা!


শোন নবনীতা, তোরে একটা সিরিয়াস কথা বলি। আমি কিন্তু সেকেন্ড বিয়ার জন্য মইরা যাইতাছি তবে এইটাও ঠিক রাত্রে আমার খুব একলা লাগে। একটা সংসার পরিপূর্ণ সংসারের লাইগা আমার ভেতরটা খুব খা খা করে।


বিপাশার কথা গুলি শুইনা আমার খুব মন খারাপ হয়। এটা সত্য কথা বিপাশার কষ্ট , সংসারটা নষ্ট হয়ে যাবার যে কষ্ট তারচেয়েও বড় কষ্ট বিশ্বাসভঙ্গের। সারাদিন কাজ নিয়ে আমরা ওয়ার্কিং ওম্যানরা যতই ব্যস্ত থাকি না, নিজের স্বাতন্ত্র্য নিয়ে যতই ভাবি বা মানসিক,আর্থিক স্বাধীনতা যতই বজায় রাখি ঘুরে ফিরে আমরা ঠিকই একজন সঙ্গী কিন্তু খুঁজি। নারী পুরুষ উভয়ের জন্য এ কথাটা প্রযোজ্য। তারপরেও বিপাশাকে বলি শুধুমাত্র মানসিক বা সঙ্গীর অভাব ছাড়াও তোর একটা ফিজিক্যাল নিড কিন্তু আছে যার সাথে শারীরিক সুস্থতার অনেক ব্যাপার ডিপেন্ড করে, তুই এটাকেও অস্বীকার করতে পারবি না।


ফিজিক্যাল নিড যে ফিল করি না তা না। কিন্তু ভালোবাসা ছাড়া যে কারো সাথেই তো আমি এই কাজটাও করতে পারি না বা আমার জন্য সম্ভব না নবনীতা। অবৈধ ভাবে এসব করা আমার পক্ষে পসিবল না।


আমি বিপাশাকে বলি, হয়তো তুই চলার পথে এরকম অনেক পুরুষ পাবি যে তোর মেন্টাল সাপোর্ট দিবে বলে তোর পাশে থাকবে। কোনো একদিন পরিস্থিতির কারণে একটা অকারেন্স ঘটে গেলে কী করবি তখন? বিয়ের বিকল্প অন্য কোনো কিছু দিয়ে যেমন পাবি না তেমনি বিয়ে করে যদি সেখানেই অবিশ্বাস, ভালোবাসাহীনতা থাকে সে সম্পর্ক তুই আগিয়ে নিতে পারবি না। অভারঅল একজন বাচ্চার সুস্থতার জন্য একটা ফ্যামিলি কমপ্লিট ফ্যামিলি থাকা মাস্ট!


আচ্ছা শোন দোস্তো, একটা জরুরী কথা বলি। আমি জানি না সাব্বির সাহেব আমাকে আগামীকাল কি খবর দিবেন কিন্তু তুইই শ্রাবণ ভাইকে বলে দিস আমিই এই রিলেশনটায় যেতে আগ্রহী না। প্রথম এবং প্রধান কারণ আমি আমার ছেলেকে ছাড়া কারো সাথেই দ্বিতীয়বার কোনো সম্পর্কে যেতে আগ্রহী না। দ্বিতীয়ত ঐ ভদ্রলোক, হয়তো আমার জব করা নিয়েও পরবর্তীতে প্রশ্ন তুলতে পারে। তোরে সত্যি কথা বলি আমি প্রয়োজনের জন্য জব করছি, সংসার চালাতে হবে এবং নিজের ইন্ডেপেন্সীর জন্য। আমার মা-বাপ বা ভাইরা যে ফালাইয়া দিবো তাও না কিন্তু আমি কারো বোঝা হইতে চাই না। আমার কিন্তু অফিস করতে সিরিয়াসলি ভাল্লাগে না। আমার জব করার ইচ্ছাও নাই মাঝে মাঝে এই যন্ত্রণায়অ বিয়া করতে ইচ্ছা করে যে কেউ আমারে কামাই রোজগার কইরা খাওয়াক, আমিও সকালে আরাম কইরা একটু বেশি সময় ঘুমাই। কিন্তু ঐ লোক যদি বলে - বিয়ের পর কাজ করা চলবে না কিংবা আমার ফ্যামিলি চায় আমার বউ জব না করুক তখন আমার সত্যিই মেজাজ খারাপ হইব। আমি আমার ইচ্ছায় কাজ করবো না কিন্তু কেউ যদি চাপাইয়া দেয়া টাইপ কথা কয় আমি ওইটা মানতে পারুম না দোস্তো। তুই শ্রাবণ ভাইরে আমার মতামত জানাইয়া দিতে বলিস।


শোন বিপাশা, তোর যা পছন্দ না সেটা তুই অবশ্যই করবি না। কিন্তু লোকটাকে শুরুতেই তুই নেগেটিভ ভাবে দেখিস না। শ্রাবণের কাছে আমিও শুনছি সে তোর বাচ্চাকে নিয়ে বারবার প্রশ্ন করছে। কোনো কোনো হাসব্যান্ডরা কিন্তু সত্যিই চায় না তার বউ জব করুক, ভিড় ঠেলে বাড়ি ফিরুক, রোজ সকালে কষ্ট করে অফিস যাক। আমার কথাই ধর, আমার জব না করলেও চলে। মাঝে মাঝে আমার সকালে উঠতে ইচ্ছা করে না। এজন্য শ্রাবণ কিন্তু আমাকে বলছিলো ওর অফিসে জয়েন করতে ,তাহলে আরাম করে অফিস করতে পারবো। কিন্তু আমি যা টাকা স্যালারি পাই বা যেভাবে হেলদি ওয়েতে আমার সময়টা কাটাতে পারতেছি, এইটা সব মেয়ের কাম্য হয়তোবা। কিন্তু তুই ওইভাবে দ্যাখ, পজিটিভ ভাবেও নিতে পারিস তোর হাসব্যান্ড জব করা পছন্দ করে না। বাচ্চারাও অনেক সময় ডিমান্ড করে তার মা বাসায় তাদের সময় দিক, স্কুল থেকে আনতে যাক, প্যারেন্টস মিটিং গুলো এটেন্ড করুক। অনেক কিছু জীবনের প্রয়োজনে আমাদের মেনে নিতে হয় বা সময়ের প্রয়োজনে। সবাই একটা ঘর খোঁজে। আমি চাই তুই সংসারী হ আবার তবে অবশ্যই নিজের ব্যক্তি স্বাধীনতা নষ্ট না করে, সেটা এই সাব্বির সাহেব হোক বা অন্য যে কেউ হোক।


হুম দোস্তো ঠিক বলছো, হোম সুইট হোম!


দু'জনেই আমরা একসাথে হেসে উঠি। একে অপরকে শুভরাত্রি বলে বিদায় নেই।

চলবে







সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২১
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×