আলীপুর গোরস্তানের গলিপথ ধরে হাটছি। অপার্থিব নিরবতায় মৃদু বাতাসে ভাসছে মিষ্টি হাস্নাহেনার সুবাস। তিনদিন আগে আত্মহত্যা করেছে শহরের উঠতি ব্যবসায়ী মজনু শেখ। আমি ওর কবরের পাশে একটা সাদা গোলাপ রাখলাম। বিদায় বন্ধু তুমি পারলে না তাই হারলে। আমার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাঁসির একটা রেখা ফুটে উঠেও আবার মিলিয়ে গেল। চারিপাশে দ্রুত নজর বুলিয়ে ফিরতি পথ ধরলাম। এটা একটা নিছক আত্মহত্যা মোটিভ ব্যবসায় মারাত্মক লস, পারিবারিক কলহ অথবা মাথার গন্ডগোল হতে পারে। আমার ওসব ভাবনায় কাজ নেই। পুলিশ এখানে নিখুত কাজ দেখিয়েছে। ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার বিশ্লেষন করে তারা নিশ্চিত ওটা আত্মহত্যা ছিল আর ওসব এখন চুকে বুকে গেছে।
মজনুর সাথে আমার প্রথম পরিচয় আরগ্য সদন প্রাঃ হসপিটালে। ওখানকার স্টাফ ছিল মজনু, আলাপচারিতার ফাঁকে নিজের ভবির্ষত ভাবনা শেয়ার করত সে। একদিন এক প্যাকেট গরুর মাংস অফার করি মজনুকে খানিক ইত্স্তত করে গ্রহণ করল উপহারটা, ওর মুখে হাঁসি আর হাঁসছি আমিও দুটো ভিন্ন কারনে।
মজনুর সাথে পার্টনারশিপে ব্যবসা চালু করার সময় মাত্র দুটো শর্ত রাখি ওর সামনে। মুলধন আমার আর ব্যবসার দায়িত্ব ওর। ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে শুরু হয় আমাদের ইট বালুর কারবার। আমার শর্ত এক. ৩ বছরে টাকাকে দ্বিগুন করতে হবে। ৩ বছর শেষে আমাকে লভ্যাংশ সহ ১২ লক্ষ টাকা রিটার্ন করবে, ব্যবসা ওর নিজের হয়ে যাবে। শর্ত দুই. প্রথম শর্ত পূরণ করতে না পারলে মিলবে শাস্তি এবং সেটা আমি নির্ধারন করব আর ব্যবসায় কোন ভাবেই আমার নাম ব্যবহার করা যাবে না।
বুঝতেই পারছেন ও শর্ত পূরণ করতে পারে নি এখানে আমার কিছু করার ছিল না। আমি শেষ পর্যন্ত ওর সাথে খুবই নরম ব্যবহার করেছি। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পরি মরতে ওর খুব বেশি কষ্ট হয় নি। ফরেনসিক রিপোর্ট এখনো আসেনি তবে এলে বুঝতে পারবেন ও যে কখন মরে গেল নিজেও হয়ত টের পায়নি। আসলে আমার মনটা খুব নরম, মানুষকে কষ্ট পেতে দেখলে আমার দুচোখে জল চলে আসে আর জানেন তো ঝাপসা চোখে কাজ নিখুত করা মুশকিল তাই আমি খুবই সতর্কতার সাথে কাজ হাসিল করে থাকি।
আমার হাতে এ মুহুর্তে খুব বেশি কাজ নেই। আমার লিষ্টে আর মাত্র দুজন মানুষ আছেন ওদের আলাদা টাইমলাইন দেওয়া আছে শর্ত পূরণ করতে না পারলে শাস্তি কি হবে আমি আসলে আগ বাড়িয়ে ঠিক করতে পারি না, পরিস্থিতি বিবেচনা করে সময়ের সিদ্ধান্ত সময়েই নিয়ে থাকি। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওরা অজ্ঞাত কারনে আত্মহত্যা করে বা হারিয়ে যায় অজানায় ওদের আর খুঁজে পাওয়া যায় নি।
আজ আমার ফ্লাটের পার্টনার আসবে তাই তার জন্য যত্ন করে রান্না করছি। আমি জানিনা কোন বিশেষ দিন ছাড়া সে প্রায় আসেই না কেন। তার প্রিয় অনেক কিছুর সাথেই নিজের সাদৃশ্য খুঁজে পাই, যেমন সে আমার হাতে তৈরি বিশেষ স্টেক খেতে পছন্দ করে যেটা আবার আমিও করি। আমার আর তার সিগারেটের ব্রান্ড এক। আমরা দুজন একই ব্রান্ডের পারফিউম ইউজ করি। আরো আছে তবে সে প্যাচাল বড্ড লম্বা হয়ে যাবে আজ আপনাকে তার সাথে সামনা সামনি পরিচয় করিয়ে দিব কেমন।
সাইকো থ্রিলারঃ "বিনাস" পর্ব ১
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৩৪