এক চিলতে গল্প: দ্বিধা পর্ব- ১
সাতপাঁচ ভাবনার মাঝেই দোকানি ভাইয়া বিরস বদনে দোকান গোটানো শুরু করে দিয়েছে। কেউ কেউ দোকানের পুরনো পলিথিন মাথায় জড়িয়ে নীড়ের পথ গুনছে। আমার পালা যখন এলো দেবার মতন একটা পলিথিনও দোকানে নেই। অতঃপর পুরোটা আকাশ মাথায় নিয়েই বাসার পথ ধরলাম। দেখলাম প্রথমে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো প্যারা দিলেও কিছুটা পথ হাঁটার পরে বেশ ভালো লাগছে। যেন ফিরে ফিরে আসছে শৈশব, মনে হচ্ছে আমি আজ সেই আমি যে কিনা নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিল শহুরে কোলাহলে। নিজেকে গুটিকয়েক ভাগ্যবানের একজন মনে হচ্ছে, যারা জীবন জুয়ায় হয়ত হেরেছে কিন্তু হারিয়ে ফেলেনি হৃদয়ের কোমল অনুভূতিগুলো। নিঝুম জনশুণ্য রাস্তা, প্রবল বৃষ্টি আর আমি মিলেমিশে একাকার আজ ঐশরিক নাট্যমঞ্চে। জানিনা বিধি এ কোন পরীক্ষা নিচ্ছ আমার। জীবনের প্রতিটি ধাপে অনবরত পরীক্ষা দিতে দিতে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত আমি। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় প্রবাদ আমার কাছে নস্যি হয়ে গেছে আমারতো নুন আনতে না আনতে নুনই ফুরিয়ে যায় অবেলায়। আমি আর পরীক্ষা দিতে চাই না, তবে কেন এতো আয়োজন করে নিত্য পরীক্ষার যন্ত্রনায় ফেলো আমাকে। যারা পরীক্ষা দিতে চায় তারা পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয় যথাযথ সময় নিয়ে। আমার কোন প্রস্তুতি নেই বিধি, আমি আসলে পরীক্ষাই দিতে চাই না। তুমি হয়ত আমার কথা শুনে মুচকি হাঁসছো আর ফন্দি আটছো নতুন গ্যাড়াকলে আটার। তবে তোমার পরিকল্পনা যাই হোক আমি হাপিয়ে গেছি প্রভু একটু বিরতি আমার খুব দরকার।
ও হ্যা, বিরতি আমি পেয়েছি। বাসায় পৌছে গা-মাথা মুছতে না মুছতেই ঈশ্বর সদয় হলেন। বৃষ্টি থেমে গেল, শেষ বিকেলের মিইয়ে আসা আলোর মতন, নিভন্ত প্রদীপের মতন, শেষ দু’একটা লম্ফঝম্ফ দিয়ে। আমিও হাঁসলাম পরাজিত, অক্ষমের হাঁসি।
জানিনা কেন আজ দু’চোখে ঘুম নেই। হয়ত ঘুম দেবতার ঘুম পেয়েছিল ভীষন, তাই তিনি আমার মতন হতভাগাকে রাত জাগার পারমিট দিয়ে, তুলে নিতে ভুলে গেলেন। র্নিঘুম রাতে সাতপাঁচ ভাবনার মাঝে ফ্লাশব্যাকে এলো জীবন, খ্যাপাটে পাগলা ঘোড়ায় চেপে, নিয়ে তার বর্ণিল ঘটনা-অঘটনের সাতকাহন।
বৃষ্টির মেঘ কেটে গিয়ে আকাশে ভাসছিল হালকা সাদাটে আদুরে মেঘ, একসময় মেঘ ভেদ করে উকি দিলো একফাঁলি রুপলি চাঁদ, মধুর জোছনায় ভরিয়ে দিলো দিক দিগন্ত। আমিও ভাগ পেলাম, ঘরের ছোট্ট জানালা দিয়ে লাজুক ছুড়ির মতন, ফুলের কুড়ির মতন, উকি দিল মায়াবী জোৎস্নাধারা।
ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, একই রাতে তিনি তার অপার মহিমার দুটো রুপ দেখালেন। আহ! জীবনেও যদি এমনটি হতো, বেশ হতো তাহলে। সহসা মুচকি হেঁসে নিলাম। কল্পনার গরু গোয়ালে স্থান পায় না। কি সব ভাবছি আবোল তাবোল। অন্তরের সবটুকু আকাঙ্খা দিয়ে চাইছি “আয় ঘুম আয়।”
নাহ! ঘুম এলো না, তবে নীরা এলো, এলেবেলে ভাবনার বাহানায়। যাকে আমি ভুলে থাকতে চাইছি আপাতত। দু’বছর হতে চলল নীরাকে দেখি না। মাঝে মাঝে ওর চিঠি পাই, কেমন আছে, কি ভাবছে লিখে জানায়। একসাথে কাটানো সুখস্মৃতির জাবর কাটে। আমি কোন প্রত্ত্যুত্তর করি না। উত্তরের আশা না করেই ও চিঠি লিখে, ক্রমিক নম্বর দিয়ে। কদিন আগে পেয়েছি চিঠি নম্বর ৬৯। মুঠোফোনের যুগে চিঠি! ও হ্যা বলতে ভুলে গেছি আমি মুঠোফোন ব্যবহার করি না। (টু বি কন্টিনিউড)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪২