বেশি বেশি পোস্ট আর টুইট করলে যা হয়ঃ
ঘন ঘন ফেসবুকে, টুইটারে পোস্ট করছেন? কেউ কিছু আপনার লেখায় মন্তব্য করছে কি না, কেউ লাইক দিচ্ছে কি না তা দেখতে বার বার ফেসবুক খুলছেন কিংবা মন্তব্য কম দেখে আবারও নতুন পোস্ট দিচ্ছেন। লোকে যে যাই বলুক না কেন গবেষকেরা কিন্তু আপনাকে ‘আত্মকেন্দ্রিক’ মানুষ হিসেবেই চিহ্নিত করবেন।
বেশি বেশি পোস্ট দিলে ক্ষতি কী? আপনি হয়তো ভাবছেন যে, আপনার ভালো লাগা থেকে আপনি এই পোস্ট লিখছেন। কিন্তু গবেষকেরা জানিয়েছেন, আপনি সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুক ও টুইটারে আপনার আরও বেশি অনুসারী বাড়াতেই বেশি বেশি টুইট বা পোস্ট করে ফেলছেন।
সম্প্রতি মার্কিন গবেষকেরা এক গবেষণায় জানতে পেরেছেন, বেশি টুইট বা পোস্ট করার সঙ্গে নার্সিসিজমের সম্পর্ক রয়েছে। ফলোয়ার বা অনুসারী বাড়ানোর আকাঙ্ক্ষা নার্সিসিজমের প্রাথমিক কারণ আর এ কারণেই বেশি বেশি টুইট করা হয়। তাছাড়া অতিমাত্রায় প্রশংসিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে বেশি বেশি টুইট করা হয়ে যেতে পারে।
ফেসবুক-টুইটারে নিরাপত্তাহীনতাবোধ:
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় কানাডার গবেষকরা দাবি করেছিলেন যে, অতিরিক্ত ফেসবুক ব্যবহারকারীরা নিজেদের নিরাপত্তাহীন ভাবেন, তাঁদের মধ্যে আত্মকেন্দ্রিকতা জন্ম নেয় ও মনের জোর কমে যায়।
নার্সিসাস কিঃ
গ্রিক পুরাণের বহুল আলোচিত অনেক চরিত্রের মধ্যে অন্যতম নার্সিসাস। তিনি বিখ্যাত ছিলেন তাঁর সৌন্দর্যের জন্য। কিন্তু ওই সৌন্দর্য তাঁর জীবনহানিরও কারণ হয়েছিল। পানিতে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে তিনি এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে নিজের চোখ অন্যদিকে ফেরানোর সামর্থ্যও হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং এই অবস্থাতেই মারা যান তিনি। এই নার্সিসাস থেকেই নার্সিসিজমের ধারণা এসেছে, যা মানুষের মধ্যে এক ধরনের আত্মবাদ, আত্মগর্ব, আত্মশ্লাঘার বৈশিষ্ট্যের দিকে ইঙ্গিত করে।
নার্সিসিজমকে কখনো সামাজিক বা সাংস্কৃতিক সমস্যা হিসেবে, কখনো বা মানসিক অসুস্থতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন গবেষকেরা।
যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, নার্সিসাস-প্রভাবযুক্ত মানুষ বলে যাঁদের বিবেচনা করা হয়, ফেসবুকে তাঁদের বন্ধুসংখ্যা বেশি। তাঁরা প্রায়ই বিভিন্ন বিষয়ে বন্ধুদের ট্যাগ করেন এবং তাঁরা ঘন ঘন তাঁদের স্ট্যাটাস পরিবর্তন করেন।
এ ধরনের মানুষ তাঁদের সম্পর্কে কোনো সমালোচনামূলক মন্তব্যের জবাব দেন খুবই আক্রমণাত্মকভাবে। তাঁরা ঘন ঘন নিজেদের প্রোফাইলের ছবিটি পরিবর্তন করেন। গবেষকদের ধারণা, এসব আচরণগত বিষয়ের মধ্যে এমন কিছু দিক আছে, যার ফলে এরা নিজেদের নিয়েই সর্বদা ব্যস্ত থাকেন এবং আত্মতৃপ্তি লাভ করেন। নিজের ভুবন-কেন্দ্রিক এসব কর্মকাণ্ড ক্রমেই তাঁদেরকে নার্সিসিস্ট ব্যক্তিত্বের দিকে নিয়ে যায়।
মার্কিন গবেষকেরা জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে অতিরিক্ত সময় কাটানোর ফলে বাস্তবের বন্ধুত্বের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা কমে যায়। বাস্তবের বন্ধুদের সহমর্মিতার ও সাহচর্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে অনুসারীদের কাছে ঘন ঘন পোস্ট দিয়ে নিজেকে শুধু জাহির করার প্রবণতা দেখা যায়।
কী করবেনঃ
১. অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল নয়। তাই সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোর উপর নির্ভরতা কমিয়ে আনুন।
২. আপনার খারাপ-লাগা বিষয়গুলো নিজের মধ্যে না রেখে আপনার আস্থার বা বিশ্বস্ত কাউকে জানান। শুধু কষ্টের নয়,আনন্দের অনুভূতিগুলোও কাছের মানুষদের সাথে শেয়ার করুন। কারো কাছে বলতে না চাইলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলে ফেলতে পারেন।
৩. ঘন ঘন ফেসবুকে, টুইটারে না লিখে নিজস্ব কথাগুলো নিয়মিত ডায়রি লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।
৪.পরিবার-বন্ধুবান্ধব-সহকর্মীদের সাথে সময় করে কোথাও বেড়িয়ে আসুন।
(পুরো তথ্যের জন্য ক্রেডিট, প্রথম আলো
আমার ক্রেডিটঃ "কি করবেন" অনুচ্ছেদ, নিজের হাতে তোলা ছবির সংযুক্তকরণ এবং ছোট আকারে সংস্কার ও পরিমার্জিত রূপে রূপায়ন)