১৯৯১ সালের ৯ জুন এক কুয়েতি আমির প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলে ইউনাইটেড সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংক এর মাধ্যমে ১২ দশমিক ৫৫ লাখ মার্কিন ডলার দেয়, যা বাংলাদেশি টাকায় তৎকালীন ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা। (বর্তমান ভ্যালু ৮০০ কোটি টাকার বেশী)
তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় ১৯৯১ সালের ৯ জুন থেকে ১৯৯৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই অর্থ দেশের প্রতিষ্ঠিত কোনো এতিমখানায় না দিয়ে একটি অস্তিত্ববিহীন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট গঠন করেন। অথচ কোনো নীতিমালা বা সদস্য গঠন কিছুই তিনি তৈরি করেননি, করেননি কোনো জবাবদিহিতীর ব্যবস্থাও। অথচ খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল থেকে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা অস্তিত্ববিহিনী জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে পাঠান। পরে ওই টাকা ভিন্ন ব্যাক্তি একাউন্টে আত্মসাত করেন, যার জন্য তিনি দায়ী। তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে বলেন, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় থেকে নিজের পদমর্যাদা বলে সরকারি এতিম তহবিলের আর্থিক দায়িত্ববান বা জিম্মাদার হয়ে বা তহবিল পরিচালনার ভারপ্রাপ্ত হয়ে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে দণ্ডবিধির ৪০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারার অপরাধ করেছেন।
এই ছয় আসামির বিরুদ্ধে যেসব ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে, এতে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন, সর্বনিম্ন যেকোনো মেয়াদে কারাদণ্ড। এর সঙ্গে আর্থিক কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
বিদেশ থেকে পাঠানো এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্য বিদেশ থেকে পাঠানো ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা ক্ষমতার অপব্যহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করার অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই দুদক এই মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া, তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন দুদকের উপপরিচালক হারুন অর রশীদ। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আদালত খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯, ১০৯ ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ গঠন করেন।
দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি তার সরকারি কর্মচারীজনিত ক্ষমতার বা একজন ব্যাংকার, বণিক, আড়তদার, দালাল, অ্যাটর্নি হিসেবে তার ব্যবসায় যেকোনো প্রকারের কোনো সম্পত্তি বা কোনো সম্পত্তির ওপর আধিপত্যের ভারপ্রাপ্ত হয়ে সম্পত্তি সম্পর্কে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করেন, সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
আর দুর্নীতি দমন আইনের ৫(২)-এ বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী অপরাধমূলক অসদাচরণ করিলে বা করার উদ্যোগ গ্রহণ করিলে তিনি সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের যোগ্য হবেন। অপরাধমূলক অসদাচরণ সংশ্লিষ্ট অর্থিক সম্পদ অথবা সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অন্য আসামিরা হলেন -
বহুল আলোচিত মাগুরা নির্বাচন খ্যাত সাংসদ ও ব্যবসায়ী (ইকোনো বলপেন) কাজী সালিমুল হক কামাল,
সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী,
তারেক রহমান
ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ
ও জিয়াউর রহমানের বোনের ছেলে মমিনুর রহমান।
মামলায় শুরু থেকে পলাতক আছেন তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।
২০০৮ সালের জুনে জিয়া এতিমখানা অর্থ আত্মসাত মামলা দায়েরের সময়, এতিম তহবিলের অ্যাকাউন্টে টাকা ছিল না। সৌদি আরবের ব্যাংক থেকে টাকা আসার পর হাত বদল হয়েছে ১৭ বার। প্রথম ১৪ বছরের মধ্যে ৭ বছরই টাকা ঘুরেছে খালেদা পুত্র তারেক রহমানসহ বিভিন্নজনের ব্যক্তিগত একাউন্টে। মানে নিজেরা কেনাকাটা করেছে, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম, ডলারে কনভার্ট বা বকেয়া শোধ দিয়েছে। প্রচলিত ব্যাংঙ্কিং মাধ্যমে যা হয়েছে সেটাই রেকর্ডে আছে। বাকিটা নেই।
তদন্ত অনুযায়ী, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ৫০ লক্ষ টাকা (ব্যক্তিনামে) কাজী সলিমুল হকের নামে ২০০৬ সালের ১২ এপ্রিল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের একাউন্ট থেকে ট্রান্সফার করা হয়।
এই শাখায় কাজী সলিমুল হকের নামে পরবর্তীতে ২ কোটি টাকার আরো দু’টি এফডিআর খোলা হয়। যা তিনি নিজ নামেই ট্রান্সফার করেন।
ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের ছেলে সৈয়দ আহমেদের নামে একটি ১ কোটি টাকা এবং দুজনের যৌথ নামে আরেকটি ১ কোটি টাকার এফডিআর খোলেন কাজী সলিমুল হক। এদের মধ্যে সৈয়দ আহমেদ এখন মৃত।
পরে এই দুই এফডিআর থেকে গিয়াস উদ্দিন আহমেদের (তারেকের বন্ধু মামুনের বড়ভাই) এফডিআরে ট্রান্সফার হয়।
এর কিছুদিন পরই গিয়াস উদ্দিন আহমেদ তার এফডিআরের এক কোটি টাকা ভেঙে ৫০ লাখ টাকার ২টি এফডিআর করেন।
এরপর আবার সেই এফডিআর ভেঙ্গে শরফুদ্দিনের একাউন্টে ৬টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফার করেন।
পরে শরফুদ্দিন আহমেদ ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ক্যাশ করেন।
কোন ক্যাশমেমো, দলিল ভাউচার, চুক্তিনামা, ইনভয়েস ছাড়া ব্যক্তিনামে এই ২,১০,৭১,৬৪৩ টাকা হস্তান্তরের নামে আত্নসাতই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার মুল ভ্যালু।
একাউন্ট তছরুপ করে পরে ধরা খাওয়ার পর ব্যক্তি খাতে কেনা একটি জমি বা কিছু টাকা দেখিয়ে যদি বলা হয় টাকা এখানে আছে !
এসব ফালতু কথা আদালতে টিকে?
এ নিয়ে ৩ বছর আগে আমার একটি লেখা -
আত্নসাতকারিরা টাকা সরানোর সময়ে মোটেই সতর্ক ছিলনা
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৪৩