নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হওয়ার কিছু আগে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস২১১ বিমানের পাইলট ও ওই বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের কিছু কথোপকথন পাওয়া গেছে।
তবে ওই অডিও ক্লিপটির যথার্থতা নিশ্চিত হওয়া যায় নি।
এতে পাইলট ও এটিসির (এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল) মধ্যে যে কথোপকথন হয়েছে তাতে এক রকম দ্বিধার প্রকাশ পেয়েছে, যে আসলে কি ঘটতে যাচ্ছিল। বিমানটি কোনদিক দিয়ে অবতরণ করবে, তার অবতরণের অনুমতি আছে কিনা এবং রানওয়েতে কোনো ট্রাফিক আছে কিনা তা নিয়ে এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব। ওই কথোপকথনের শুরুতে এটিসিকে বার বার বলতে শোনা যায়, বিএস২১১ ফ্লাইটটিকে (ইউএস বাংলা Dash 8 Q400) রানওয়ে ২০ (নর্থ ওয়ে) তে না যেতে বলছে বার বার।
সেখান থেকে বিমানের পাইলটকে ‘হোল্ডিং পজিশনে’ চলে যেতে বলা হয়। হোল্ডিং পজিশন মানে হলো উপরে উঠে আকাশে চক্রাকারে চক্কর দেয়া। এ সময় এটিসি’কে পাইলট আবিদ সুলতান জানান তিনি ডানদিকে মোড় নিচ্ছেন হোল্ডিং পজিশনে যেতে, যাতে তিনি রানওয়ে ০২ তে অবতরণ করতে পারেন। এ সময় এটিসি থেকে বলতে শোনা যায়, ওকে ঠিক আছে। খুব ভাল কথা। তবে অবতরণ করবেন না। ট্রাফিক ইন অন শর্ট, ফাইনাল রানওয়ে ০২।
এ সময় পাইলট আবিদ সুলতানকে বলতে শোনা যায়- আমাদেরকে বলুন কখন আমরা নিরাপদে অবতরণ করতে পারবো।
এরপরেই এটিসি’কে অন্য ট্রাফিকের সঙ্গে তাদের অবস্থান ও নির্দেশনা সম্পর্কে কথা বলতে শোনা যায়। তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলেন নেপালি ভাষায়।
এরপর এয়ার কন্ট্রোলার বিএস২১১ এর পাইলটকে বলেন, অবতরণের জন্য রানওয়ে ক্লিয়ার। রানওয়ে ফাঁকা করে দেয়া হয়েছে। রানওয়ে ০২ অথবা ২০ কোনটি বেছে নেবেন আপনি?
এভাবে বলা সম্পুর্ন নিয়মের বাইরে।
যে কোন বিমান ছোট হোক বড় হোক নামতে বা উঠতে হয় বায়ু প্রবাহের বিপরিত দিক থেকে, তাই দক্ষিন এশিয়ার সব রানওয়ে উত্তর দক্ষিন লম্বা। বায়ু প্রবাহ শীতকালে উত্তর দিক থেকে, আর নরমাল টাইমে দক্ষিন থেকে। সেদিন বায়ু প্রবাহ ছিল 220 degrees, seven knots অর্থাৎ দক্ষিন-পশ্চিম দিক
এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল জানে কোন দিক দিয়ে নামা বায়ু প্রবাহের প্রতিকুল। তারাই ল্যান্ডিং দিক ০২ বা ২০ সুনির্দিষ্ট করে দিবে। পাইলট বা ক্যাপ্টেনের ক্ষমতা নেই এটিপির নির্দেশ অমান্য করা।
(ত্রীভুবনের রানওয়ে তো একটাই। সম্ভবত ২০ = নর্থ ল্যান্ডিং আর ০২ = সাউথ)
তাদের এ জিজ্ঞাসার জবাবে আবিদ সুলতান বলেন, স্যার আমরা ২০ নম্বর রানওয়েতে অবতরণ করতে চাই।
এরপর ২০ নম্বর রানওয়েতে পাই্লটকে অবতরণের ক্লিয়ারেন্স দেয় এটিসি। তা মেনে নেন পাইলট ক্যাঃ আবিদ সুলতান এবং অবতরণের নির্দেশনা সম্পর্কে আবারও নিশ্চিত হন।
এরপর বিএস২১১ বিমানের পাইলটের কাছে এটিসি জানতে চায়, তারা কি রানওয়ে দেখতে পাচ্ছে কিনা। জবাবে (নেগেটিভ) নেতিবাচক জবাব দেন পাইলট। তখন আবার ডানদিকে মোড় নেয়ার (চক্কোর) নির্দেশনা দেয়া হয় এটিসি থেকে। পাইলটের কাছে আবার জানতে চাওয়া হয় "নিশ্চিত করে বলুন আপনি কি এখনও রানওয়ে দেখতে পাচ্ছেন না"।
জবাবে পাইলট ক্যাঃ আবিদ সুলতান বলেন, হ্যাঁ। আমরা রানওয়ে দেখতে পাচ্ছি। অবতরণের জন্য সব ক্লিয়ার রাখার অনুরোধ করছি।
বিমানটি অবতরণের ক্লিয়ারেন্স দেয়া হয় এটিসি থেকে। পাইলটকে বলে নিশ্চিত হয়ে নেন। জানতে চান- বিএস২১১ এর জন্য রানওয়ে ০২ ক্লিয়ার।
ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এটিসি থেকে তাকে নিশ্চয়তা দেয়া হয়। বলা হয় "ক্লিয়ার টু ল্যান্ড রানওয়ে ০২ বিএস২১১"।
এ সময় আরেকটি বিমানের সঙ্গে এটিসিকে কথা বলতে শোনা যায়। হোল্ড করতে বলা হয় বিএস২১১, যেহেতু অন্য একটি ছোট বিমান অবতরণ করবে। অল্প সময়ের পর অবতরনের জন্য ক্লিয়ার হবে।
তখন আরো একজনকে কথা বলতে শোনা যায়। তিনি জানতে চান, তার অবতরণের জন্য সব ক্লিয়ার কিনা।
এরপরই এটিটি থেকে বলতে শোনা যায় ‘বিএস২১১ আমি আপনাকে আবারো বলছি টার্ন...।
কিন্তু বাক্যটি তিনি শেষ করেন নি।
কনফিউজিং ...
ওরকম যোগাযোগ বিঘ্ন বা কনফিউজিং নির্দেশ হলে বা অন্য সমস্যা হলে নিয়ম হল আবার উচুতে উঠে যেয়ে হোল্ডিং, মানে আকাশে চক্কোর দেয়া, পুনরায় কোন নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত।
কিন্তু ক্যাপ্টেন সম্ভবত তা করেন নি বরং ল্যান্ডি প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
তারপর যা শোনা যায় ওই টেপে তা হলো এটিসি বিমান বিধ্বস্ত হওয়া নিয়ে কথা বলছে। এ সময় অন্য বিমানগুলোর কাছে বার্তা দেয়া হয়। বলা হয়, বিমানবন্দরটি বন্ধ করা হয়েছে।
আমার মনে হয় বিমানটি ল্যান্ডিং এর দিক বায়ু অনুকুল ছিল, তাই দ্রুত পতন হয়েছে। রানওয়ের আগেই মাঠে আছড়ে পড়েছে। যারা ফ্লাইট ট্রেনিং নিয়েছে তারা ভালভাবে জানে বাতাসের বিপরিতে না নামলে কি বিপদ।
থরো ইনভেষ্টিগেশন হলে হয়তো জানা যাবে আসলে কি ঘটেছিল।
ওদিকে বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়া নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একজন কর্মকর্তা বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, বিধ্বস্ত বিমানের পাইলট কন্ট্রোলারের নির্দেশনা অনুসরণ করেন নি। তারা দাবি করেন, বিমানটি দক্ষিণ দিক থেকে অবতরণের কথা ছিল। কিন্তু পাইলট বেছে নেন উল্টো দিক।
ইউরো-বাংলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আসিফ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এটিসির সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ২:২২