গত ৩ মাস জাবত যা দেখছি।
কোটা বিরোধী তথাকথিত মেধাবীদের আন্দোলন ছিল সবটাই বাশের কেল্লার ন্যায় প্রপাগান্ডা নির্ভর। মিথ্যা ও ভন্ডামি পদে পদে।
১। প্রথম ভন্ডামি ছিল বংগবন্ধুর ছবি।
মেধাবীদের ‘আন্দোলন।’ মুহূর্তেই হাজার হাজার মানুষ। জনস্রোত। এবং সবার হাতে বঙ্গবন্ধুর ছবি!
এরা কোথায় ছিল এতদিন? এত বিপুল দেশপ্রেমিক! কই, এরা আগে কখনো জয় বাংলা উচ্চারন করতো? জয় বংগবন্ধু তো দুরের কথা বুকে আমি রাজাকার লেখা জামাত শিবির কবে শেখ মুজিবর রহমান কে কখনো বঙ্গবন্ধু বলতো? (বঙ্গবন্ধু উচ্চারন করলে যাদের অজু নাকি নষ্ট হয়ে যায়)।
অথচ ওরা শাহবাগ - টিএসসি দখল করে রাজাকারের বাচ্চারা বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে মার্চপাস্ট করছে!
ফাজলামির সীমা থাকা দরকার।
২। আন্দোলনটা শুরুই হয়েছিল একটি মিথ্যা দিয়ে
- কোটায় গন্ডমুর্খ নিয়োগ দিয়ে দেশের "৫৫% খায়া ফেলতেছে" গত ৮-১০ বছর সরকারী নিয়োগ পর্যালচনা করে দেখা গেছে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির নিয়োগে ৭০-৭৭% নির্বাচিত হয়েছিল কোটার বাইরে থেকে, তথাকথিত মেধবীকোটায়। পর্যাপ্ত শিক্ষিত প্রার্থি না পাওয়াতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার পেয়ে আসছিল মাত্র ৩-৪% , সর্বচ্চ একবার পেয়েছিল ৭%
আন্দোলনকারিদের মুল দাবি ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ থেকে কমিয়ে ৫% করা। অতচ মুক্তিযোদ্ধারা কার্যত ৫% চেয়ে কম পেয়ে আসছিল।
অতচ নির্বিচারে প্রপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছিল - গন্ডমুর্খ নিয়োগ দিয়ে দেশের "৫৫% খায়া ফেলতেছে"।
৩। সবচেয়ে নির্লজ্জ ডাঁহা মিথ্যা প্রপাগান্ডা হচ্ছে কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তরা অ-মেধাবী, মুর্খ।
মন্ত্রিপরিষদের প্রাক্তন সচিব সাদাত হোসেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির টকশোতে স্পষ্ট ভাবে বলেছেন এই দাবি অসত্য।
কোটা প্রার্থিরা মেধাবীদের মতই পর্যাপ্ত জিপিএ নিয়ে আবেদন করতে হয়, একই প্রশ্নপত্রে পরিক্ষা হয়, পরিক্ষায় মেধাবিদের মত পর্যাপ্ত নম্বর পেয়ে পাশ করার পরই কোটার ব্যাপারটি আসে। কোটাধারি নির্বাচিতরা অ-মেধাবী বা মুর্খ হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
অর্থাৎ কোটায় নির্বাচিত প্রার্থিরা তথাকথিত মেধাবীদের মতই সমান বা বেশী মেধাবী, কারন তাদের বুকে অন্তত "আমি রাজাকার" লেখা নেই।
৪। রগকাটা গুজবের কথা তো সবারই জানা।
আগের দিন গভীর রাতে উষ্কানি দিয়ে ছাত্রীদের হল থেকে রাস্তায় নামানো হয়েছিল, রাতের আধারে একটা দুর্ঘটনা ঘটলে দায়ী করার জন্য ছাত্রলীগ তো আছেই। তাই পরদিন ছাত্র নেত্রীরা প্রতিটি রুমে যেয়ে সাবধান করে দেয় যাতে আজ রাতে কেউ আর বের না হয়।
হয়তো উষ্কানি দেয়া নেত্রীদের রুমে একটু খারাপ ভাষায় বলেছিল "আজ রাতে যেই খানকি গেইট থেকে বের হবি .. তাদের থাবরানো হবে" বা আরো খারাপ ভাষায় খারাপ ভাবে বলতে পারে।
হয়তো রুমের অন্যান্য মেয়েরা একথায় তেমন প্রতিবাদি না হওয়ায় বা এমনিতেই ক্ষোভে অন্ধ হয়ে কাঁচের পার্টিশনে লাথি মারে, পা কেটে রক্তাক্ত হলে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল।
অতচ নির্বিচারে গুজব ছড়ানো হয়েছিল ছাত্রলীগ আন্দোলনরত এক ছাত্রীর রগ কেটে দিয়েছে। ছবি সহ লক্ষ লক্ষ শেয়ার, স্ট্যাটাস। সামুতেও ডজন ডজন পোষ্ট, মেয়েটি পর্যন্ত হাসপাতালে বলেছিল কেউ রগ কাটেনি, রগকাটা হয় নাই। এরপরও হাজার হাজার স্ট্যাটাস, পোষ্ট, লাইক, শেয়ার,
এই মিথ্যা ছবি দিয়ে সামুতে আমেরিকায় পিএইডি করা এক নামজাদা হেভিওয়েট ব্লগার, কানাডা প্রবাসি এক নারী সেলিব্রেটি ও আরো অনেকে চরম উষ্কানিমুলোক পোষ্ট দিয়েছিল। এতে প্রকৃত সত্য মিথার পাহাড়ে ডুবে যায়। পরে মিথ্যা প্রমানিত হওয়ার পরও এসব সেলিব্রেটিরা একবারো দুঃখিত বা অনুতপ্ত হয় নি।
৫। আরেকটি নির্লজ্জ ডাঁহা মিথ্যা তাদের ৩ নেতাকে চোখ বেধে গ্রেফতার করে মেঝেতে বসিয়ে রাখা হয়েছিল।
কিন্তু ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির খালেদের জেরার মুখে স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে কাউকেই চোখ বাধা হয়নি, মেঝেতে নয়, সবাই চেয়ারেই বসা ছিল।
৬। আরেকটি নির্লজ্জ মিথ্যাচার! আহত তরিকুলকে চিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
রাজশাহীতে তরিকুল পর্যাপ্ত চিকিৎসা পেয়েছিল।
রামেক ডাক্তার সাহেব নিজেই বলেছেন তরিকুল হাসপাতালে এলে তাৎক্ষনিক তরিকুলের এক্সরে করা হয়।
তরিকুলের ভাংগা পা রক্তাক্ত ছিল না, ভেতরে হাড্ডি ক্র্যাক ছিল। তাকে পর্যাপ্ত চিকিৎসা দিয়ে ব্যান্ডেজ দিয়ে, অসুধপত্র দিয়ে পরদিন ছুটি দেয়া হয়। ১৫ দিন পর আসলে আবার এক্সরে হবে, তার পর অবস্থা বুঝে ১০-১৫ দিন পর ব্যান্ডেজ খুলতে আবার আসতে হবে।
গুরুতর বাদে সাধারন হাড্ডি ভাংগা সকল রোগিদের জন্য এটাই নিয়ম।
কিন্তু এখানেও মিথ্যা প্রপাগান্ডা। মিথ্যা প্রচার চলছে,
টকশোতে এখনো বলে যাচ্ছে তরিকুলকে চিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। দিনের পর দিন বলে যাচ্ছে নির্লজ্জ মিথ্যুক বেহায়ার দল।
এখন শুরু হয়েছে "উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজ" ব্যানারে কাহিনী।
দু-চার জনকে চড় থাপ্পোর/পিটুনি, কেউ মারা যায় নি, হাত পা ভাংগেনি, রক্তাক্ত হয়নি। এত উদ্বিগ্ন হওয়ার কি আছে?
আগে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুকবাজি, বোমা গ্রেনেড, ইলিয়াস আলি অভিদের পিস্তলের তান্ডোবে লাশের পর লাশ পড়তো।
বা দুতিন বছর আগে আন্দোলনের নামে শতাধিক বাসযাত্রী, ড্রাইভাব হেল্পার, সিএনজি চালক পেট্রলবোমায় পুড়িয়ে কয়লা বানানো হচ্ছিল!
বা মাত্র কিছুদিন আগেও ধর্মাদ্ধ জঙ্গিরা দিনের পর দিন চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত তান্ডোব চালাচ্ছিল, তখন এই "উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজ" শিক্ষক নামের কুলাঙ্গাররা কোথায় ছিল?
কোটা বাতিল/স্থগিত হয়েছে আগেই, সংস্কার লাগবে। মাত্রই বাজেট অধিবেশন শেষ হল।
তারহুরা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা এত সহজ না। প্রয়োজনও নেই। কারন মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কখনোই ৩-৪% বেশী পাচ্ছে না, দেশের ৫৫% খায়া ফেলতেছে না। এখনতো সবই বন্ধ। এই দুমাসে কোন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হয় নি, বিশ্বব্যাঙ্ক বলেছে সরকারি জনবল প্রয়জনের চেয়ে অনেক বেশী। মাথাভারি প্রশাসন। নিয়োগ দুচার বছর বন্ধ রেখে কিছু ছাটাই করা উচিত।
রাতারাতি প্রজ্ঞাপন কিভাবে সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী দেশের মালিক না যে বললেই কোটা বাতিল হয়ে যাবে। কয়েকদিন স্থগিত রাখতে পারে সুধু।
আদিবাসি/খুদে নৃগোষ্ঠি, পঙ্গু, এজিবিটি, মহিলা কোটা থাকতেই হবে।
বাংলাদেশ জেন্ডার ইকুইটি স্বাক্ষরকারি দেশ। চাকুরি বাজারে নারী-পুরুষ একটা কাছাকাছি গ্রহযোগ্য সমতা না আসা পর্যন্ত এসব সুরক্ষা দিতে রাষ্ট্র অংগিকারাবদ্ধ।
জেলা কোটাও থাকতে হবে। সরকারি উচ্চপদে ৯০% কুমিল্লা সিলেটের। উত্তরবঙ্গের একটাও নেই! জেলা বৈষম্য কমিয়ে আনাটাও জরুরি।
সরকারি চাকুরি জন্য এত মাথা খারাপ কেন? চাকুরির বাজারে সরকারি চাকুরি (সচিব থেকে পিয়ন পর্যন্ত) ৪% মাত্র।
শুন্যপদ ১% এর কম হবে। আজকাল পদ শুন্য হলেও নতুন নিয়োগ হয় না, কারন মাথাভারি প্রশাসন। বিশ্বব্যাঙ্ক বলেছে বাংলাদেশে সরকারি জনবল প্রয়জনের চেয়ে অনেক বেশী। মাথাভারি প্রশাসন। নিয়োগ দুচার বছর বন্ধ রেখে কিছু ছাটাই করা উচিত।
বেসরকারি কর্পোরেট ৯৬% চাকুরির তো কোটা নেই। প্রডাক্সান খাতে উচ্চ বেতনে ম্যনেজমেন্ট পদে বেশির ভাগ ভারতীয়রা দখল করে আছে। অনেকেই বেআইনি ভাবে। স্কোয়ার ও ইউনাইটেড হাসপাতালে দেখা যায় বিদেশী নার্স! দেশের ছেলে-মেয়েরা বেকার, আর কর্পোরেট আগ্রাসন! বিদেশী নিয়োগের বিলাসিতা চলছে! বাহহ!
প্রবাসী ভারতীয়দের সবচেয়ে বেশী বৈদেশিক রেমিটেন্স আসে বাংলাদেশ থেকেই।
কথিত মেধাবিরা কি কখনো দাবী করেছে "বিদেশীরা, ভারতীয়রা আমাদের চাকুরির বাজার দখল করছে" এর অবসান চাই?
ইসলামি ব্যাঙ্ক সহ দেশের ডজন খানেন শরিয়া ভিত্তিক ব্যাঙ্ক এ অলিখিত ১০০% শিবির কোটা, ওহাবী-সালাফি কোটা।
কেউ মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিলে চাকুরি হলেও সে ফায়ার হবে নিশ্চিত। হিন্দু বা অন্য ধর্মের একজনও নেই। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শুধু মুসলিমরা আবেদন করার যোগ্য! ইবিনেসিনাও একই অবস্থা।
এসব বৈষম্যের কোন প্রতিবাদ আছে?
প্রজ্ঞাপন জারি এত সহজ কোন ব্যাপার না।
কে কত পার্সেন্ট কোটা প্রাপ্য একটা এক্সপার্ট কমিটি তৈরি হবে,
গনশুনানি হবে, একটা প্রস্তাব হবে, প্রস্তাব ফাইনাল হবে
সংসদে আলোচনা হবে,
আইনটি প্রস্তাব আকারে সংসদে উথাপিত হবে, সংসোধনের দাবি পালটা দাবি হবে।
সময় হলে সংসদে ভোটাভুটি হবে।
প্রয়জনে আরো আলোচনা আরো সংসোধন হবে।
হা/না ভোটে আইনটি পাস হলে, বিলটি প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে যাবে ,
প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষর ও প্রাথমিক অনুমোদন করে প্রেসিডেন্টের কাছে স্বাক্ষর করতে পাঠাবেন।
প্রেসিডেন্টের মনপুত না হলে উনি ফেরত পাঠাতে পারেন। আরো সংসোধন/ সংযোজনের জন্য।
ফাইনালি প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষর হয়ে গেলে ফাইলটি সচিবালয়ে যাবে।
তারপর গেজেট নটিফিকেশন বা প্রজ্ঞাপন।
এসব দুএক মাসে হওয়ার কথা না। দুবছর লাগলেও আমি কোন সমস্যা দেখিনা।
প্রজ্ঞাপন হাতের মোয়া না যে প্যাডে কম্পোজ করে, সাইন করে ফটোকপি করে দেয়ার মত এত সহজ কিছু না।
এই সকল বাস্তবতা না বুঝে, না জেনে যে সকল শিক্ষিত শয়তান, আর কিছু বখাটে পোলাপান অনবরত বলেই চলেছে একটি প্রজ্ঞাপন দিলেই নাকি ঝামেলা শেষ!! এই সকল বদমাশের দল, জানেনা তারহুরা করে শুন্য কোটার প্রজ্ঞাপন জারী হলে প্রান্তিক পিছিয়ে পড়া মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে! মানবধিকার লঙ্ঘন হবে, আদালতে রিট হবে, একটা বড়সড় অরাজগতার শৃষ্টি হবে।
কোটা সংস্কার হবে। তবে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।