আনন্দের সংবাদ! ছাড়পোকার কামড়, দুর্গন্ধের 'শোভাসিত' টয়লেট, ভাঙা জানালা, ভাঙা সিট, নোংরা কম্পার্টমেন্ট, বাতিল ফ্যান... সর্বোপরি ২ঘণ্টার পথ মাত্র ৫ঘণ্টায় উপভোগ করার মূল্য হিসেবে আবারও রেলপথের ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। আবারও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে: সেবার মান বাড়বেই বাড়বে। মাত্র বছর দুই আগে ৫০-১১০% ভাড়া বাড়িয়ে বলা হয়েছিল, সেবার মান বাড়বে। তখন ছিলেন মিষ্টভাষী ওবায়দুল কাদের, এবার নতুন জামাই মুজিবুল হক। আপনারা যারা ২দিন আগে গিয়েও অগ্রিম টিকেট পাচ্ছেন না অথবা টিকিট কেটেও সিট পাচ্ছেন না, সিট পেয়েও বসতে পারছেন না, বসেও শান্তি পাচ্ছেন না দাঁড়ানো-যাত্রীর জন্য, অথবা যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না, তাদের জন্য আনন্দের সংবাদটি হলো... আবারও ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে! কারণ কী? কারণ হলো কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বর্ধিত বেতনের টাকা যোগাতে হবে। সঙ্গে আবারও সেই পুরাতন মূলা... যথা, সার্ভিস কোয়ালিটি অচিরেই বাড়বে।
শুনুন, না বুঝেই রেগে যাবেন না! রেলওয়ের ‘হনেস্ট ও হনারেবল’ এবং মারাত্মকভাবে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও কর্মচারি মাসভরে যে কী পরিশ্রম করে কালোবাজারির হাতে টিকেটগুলো বিক্রি করে, সেটি খেয়াল করেছেন? তারপর রেলওয়ের জমাজমিগুলো এলাকার প্রাণপ্রিয় নেতানেত্রীদেরকে ব্যবহার করতে দিয়ে তারা যে কী দেশপ্রেমের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন, বিষয়টি কি দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আমাদের বুঝা উচিত নয়? তাদের মাত্র ১০০% বেতন বেড়েছে, এটি কি খুব বেশি হয়ে গেলো?
সবচেয়ে বড় কথা হলো, সেবার মানের স্থিতিশীলতা। ভালো হোক মন্দ হোক, কোনকিছু ধরে রাখাটা খুবই কঠিন কাজ। তারা সেই শতবছর আগের কোয়ালিটি আজও বজায় রেখেছে। এবং ’নয়টার গাড়ি কয়টায় চলে’ এই ঐতিহ্যবাহী স্লোগানটিকে আজও ধরে রেখেছে। তা আজ কত সত্য এবং কত উজ্জ্বল! প্রতিটি যাত্রী প্রতিদিন সেটি উপলব্ধি করতে পারেন। ছাড়পোকার কথা বলছেন তো? রেলে চড়বেন, সেখানে ছাড়পোকায় কামড়াবে না তো বাঘে কামড়াবে? এখানে তো এরচে' বড় পোকা ধরে রাখা সম্ভব না!
অতএব সেবার মানের গৌরবময় স্থিতিশীলতা এবং ঐতিহ্যবাহী বিলম্বিত যাতায়াতে রেলওয়ে কর্মী ও কর্মকর্তাবর্গের বিরামহীন অবদানের কারণে আমাদের উচিত প্রতিমাসে তাদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে এমুহূর্তে আন্দোলনে নামা। না হলে 'ঝাতির প্রতি' ভীষণ বেঈমানি হয়ে যাবে। তা না করে, কী করছি আমরা এই শুক্রবারের ছুটিতে?
[ফেইসবুক স্ট্যাটাস]
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:০৩