somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসার ঘুণপোকা

১২ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লাইব্রেরীতে বসে আড়চোখে চেয়ে আছে আবির। অনেক দূরে একটা টেবিলে খুব মন দিয়ে পড়ছে সুপ্তি। আবির একটু চুপচাপ আর শান্ত স্বভাবের ছেলে। খুব একটা কথা সে বলে না। প্রয়োজন ছাড়া তো একেবারেই না। ওর এই স্বভাবের কারনে খুব একটা বন্ধু নেই ওর। মেডিকেল এর তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সে। বাবামায়ের একমাত্র সন্তান।

একদিন হঠাত করেই দেখা হয় সুপ্তির সাথে। লাইব্রেরি থেকে ফেরার পথে সুপ্তি ডেকে বলেছিল, ভাইয়া আপনাদের অফিস রুমটা কোনদিকে বলবেন একটু? আবির যেহেতু মানুষের সাথে তেমন একটা কথা বলে না তাই প্রথমে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলো। কিছুটা কাঁপা স্বরে উত্তর দিলো সামনে এগিয়ে গেলেই পাবেন। সুপ্তি হেসে বলল, ধন্যবাদ ভাইয়া। আমি এখানে নতুন ভর্তি হয়েছি। আজ ই প্রথম আসলাম। আমার নাম সুপ্তি। আবির খানিকটা হেসে বলল, আমি আবির। তৃতীয় বর্ষে পরছি। কোন প্রয়োজন হলে জানাবেন।

সুপ্তি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। দেখতে শ্যাম বর্ণের, কিন্তু অসম্ভব মায়া কাড়া চেহারা। সুপ্তির ছোটবেলায় ওর বাবা মারা যায়। চার ভাইবোনের বিশাল সংসার ওর মা অনেক কষ্টে চালিয়েছেন। সুপ্তির বাবার খুব ইচ্ছে ছিল সুপ্তি ডাক্তার হবে। বাবার স্বপ্ন পুরন করাই সুপ্তির লক্ষ্য।

প্রথম দিন দেখেই সুপ্তিকে ভালো লেগে যায় আবিরের। রোজ সুপ্তিকে দেখার জন্য তীর্থের কাকের মত দাড়িয়ে থাকে। দূর থেকে দেখে কিন্তু কাছে যায় না।এর মাঝেই আবির জানতে পারে সুপ্তি অন্য এক ছেলেকে ভালোবাসে। ছেলেটির সাথে সুপ্তির অনেক দিনের সম্পরক।একদিন আবির দূর থেকে ছেলেটিকে দেখতে পায় সুপ্তির সাথে। সুপ্তি আবির কে দেখে হাতের ইশারায় কাছে যেতে ডাকে। আবির খুব লজ্জায় পড়ে যায়। কিছুটা ইতস্তত করে অবশেষে কাছে যায়। সুপ্তি বলে ওঠে, আরে আবির ভাইয়া।ওখানে কি করছিলেন? আসেন পরিচয় করিয়ে দেই। ও হচ্ছে রনি। এলএলবি করছে। আমাদের এলাকাতেই থাকে।
রনিকে দেখেই আবিরের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। কারন, রনিকে দেখে তার ভালো ছেলে মনে হয় নি। কোথায় যেন কিছু একটা ঝামেলা আছে বলে মনে হল। সুপ্তির মত ভালো একটা মেয়ে জীবনে এতো বড় ভুল সিদ্ধান্ত কিভাবে নিলো আবির ভেবে পেলো না।
এভাবে প্রায় বছর খানেক চলে গেলো। একদিন শরতের এক বিকেলে সুপ্তির মন খারাপ দেখে এগিয়ে যায় আবির। জানতে চায়, কি হয়েছে? সুপ্তি বলে, কোই কিছু না আবির ভাই। আবির বলে, কিছু একটা হয়েছে আমি জানি। তুমি না বলতে চাইলে থাক। তবে বললে ভালো হবে। হয়তো আমি সাহায্য করতে পারি তোমাকে।

সুপ্তি অনেক ভেবে বলা শুরু করলো। আবির ভাই, আমার জীবনটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। রনিকে চিনতে আমি ভুল করেছি। ও আসলে এতদিন আমাকে যা বলেছে সব মিত্থ্যা ছিল। ও কোন পড়াশুনা করে না। বাবা মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নেশা করতো আর বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়াতো। এলাকায় মাস্তানি করতো। আমার বাসায় রনির কথা জানার পর থেকে সবাই আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। এদিকে রনি আমাকে বলেছে, আমি যদি তাকে বিয়ে না করি তবে আমার জন্য তা খারাপ হবে। এখন আপনি বলেন আমি কি করবো?
আবির খুব শান্ত ভঙ্গিতে জানতে চাইলো, সুপ্তি সত্যি করে একটা কথা বল আমাকে, তুমি কি রনিকে বিয়ে করতে চাও? থাকতে চাও ওর সাথে? সুপ্তি মাথা নেড়ে বলল, না আবির ভাইয়া। ওর মত একটা মিত্থ্যাবাদীর সাথে থাকা সম্ভব না। আবির সুপ্তিকে বলে, তবে ওকে নিয়ে আর ভেব না। যা হবার হবে। দেখা যাবে।
আজ অনেকদিন পর দূর থেকে সুপ্তিকে দেখে আবিরের বুকের গভিরে জমানো ভালোবাসা মোচড় দিয়ে ওঠে। অনেক সাহস নিয়ে আবির সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে আজ সে সুপ্তিকে তার মনের কথা বলবে। ধীর পায়ে উঠে সে সুপ্তির টেবিলের কাছে গিয়ে দাড়ায়। সুপ্তিকে বলে, সুপ্তি আমার কিছু কথা আছে। একটু বাইরে আসবে?

সুপ্তি বের হয়ে আসে। আবির খুব সাহস নিয়ে সুপ্তির হাতটা আলতো করে ধরে। তারপর বলে, সুপ্তি তোমাকে আমি ভালোবাসি। অল্প না অনেক বেশি ভালোবাসি। কোনদিন বলা হবে ভাবিনি। তবে আজ যখন সুযোগ এসেছে বলার সাহস করেছি। আজ থেকে নয়, প্রথম যেদিন দেখেছি সেদিন থেকে ভালোবাসি। আমি তোমার হাত সারাজীবন ধরে রাখতে চাই। থাকবে আমার সাথে?
সুপ্তি ভেজা কণ্ঠে বলে ওঠে, আবির ভাই! আপনি তো জানেন সব ই। তারপরেও?? আবির বলে, হুম!! তারপরেও আমি তোমাকেই ভালোবাসি। তুমি যেমনি হউনা কেন, আমি সকল অবস্থায় শুধু তোমাকেই চাই।সুপ্তি আরও কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু চোখের জলে বলা হল না। আবির বলে ওঠে, এখন থেকে আর আবির ভাই নয়, শুধু আবির বল।
আবিরের হাতে হাত রেখে আজ সুপ্তির মনে হচ্ছে এতদিনে সে খুঁজে পেয়েছে তার আসল ঠিকানা। তার স্বপ্নলোকের চাবি, সত্যিকারের ভালোবাসা। সুপ্তি ভাবছে, কখনোকি পারবে দিতে আবিরের ভালোবাসার প্রতিদান!!
৫৩টি মন্তব্য ৫০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×