আমার গল্প তো অনেক হল এবার আর আমার গল্প না। এবার হবে পরীর গল্প। একটা অন্যরকম পরী। হুম!!সত্যি বলছি।আমার একটা পরী আছে। ছোট্ট একটা পরী। বয়স মাত্র ৪৪ দিন। আমার পরী, আমার প্রথম সন্তান, আমার কন্যা পারিজাদ।
দীর্ঘ নয়টি মাস অপেক্ষার পর অবশেষে গত মাসের ১০ তারিখে রাত ১২ টা ৫০ মিনিটে আমার পরী পৃথিবীতে আসে। এই নয় মাস এক অন্যরকম অনুভূতি ছিল। ছিল অনেক ভালোলাগা, ছিল অনেক শারীরিক কষ্ট। পারিজাদের যেদিন জন্ম হল সেদিন সারাদিন একবারও মনে হয়নি আজকেই সেই শুভ দিন যেদিন আমাদের জীবনে অন্যরকম একটা পরীর আগমন ঘটবে। রোজকার মত সেদিনও সারাদিন ঘরেই কাটালাম। দুপুরের দিকে শরীর একটু খারাপ লাগা শুরু হলে ভাবলাম হয়তো এমনিতেই খারাপ লাগছে। সন্ধ্যায় খারাপ লাগা বাড়তে থাকলে ডাক্তারকে ফোন করে বলি সমস্যার কথা। ডাক্তার শুনে হসপিটালে যেতে বলে কাগজপত্র নিয়ে। শুনে পরীর বাবা কে ফোন করে চলে আসতে বলি হসপিটালে।
হসপিটালে যাবার পরেই নিয়ে যাওয়া হল প্রাথমিক পরীক্ষার জন্য। আমি ভাবলাম হয়তো পরীক্ষা শেষে বের হয়ে সবার সাথে কথা বলে ঠিক করবো কি করা যায়। কিন্তু ডাক্তাররা কিছু বুঝে উঠবার আগেই বলল তৈরি হয়ে যান। কিছুক্ষন পরেই আপনার অপারেশন হবে। আমি বাইরে যেতে চাইলে বলল বাইরে পরে যাবেন আগে তৈরি হয়ে নিন। ততক্ষণে আমার দুই চোখ ভেঙ্গে পানি আসছে। আরে এটা কোন কথা হল আপনারাই বলেন?? কুরবানির আগে গলায় ছুরি ধরে বলছে এখন আপনাকে জবাই করবো চলেন। কারো সাথে কথা বলার একটু সময় দিলনা।
যাই হক অপারেশন থিয়েটার এ নেবার আগে দশ মিনিট সময় দিল সবার সাথে কথা বলার। দশ মিনিটে কারো সাথেই ভাল করে কিছু বলা হয়নি। বিশেষ করে আমার স্বামী কে কিছুই বলা হলনা সবার সামনে। যদি আমার কিছু হয়ে যায়, যদি মরে যাই নানান রকম কথা মনে হচ্ছিলো।
অপারেশন থিয়েটার এ যাবার পর কেন যেন কোন ভয় লাগেনি। শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম একবার বলে আসা হল না তাঁকে অনেক ভালোবাসি।এখন যদি মরে যাই তাহলে তো আর কখনোই বলা হবেনা।একটু পরে ডাক্তার এলো। অপারেশন শুরু করলো। আমি উপরে লাইটের দিকে তাকিয়ে দেখতে পাচ্ছিলাম সব। কিছুক্ষন পরে একটা চিৎকার করে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। ডাক্তার জানালো আমার পরী পৃথিবীতে চলে এসেছে। শুনে চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই গড়িয়ে পড়লো পানি। ডাক্তার বলল এটা নিশ্চই আনন্দের কান্না। আসলেই তাই। অনেক আনন্দ আর মিশ্র এক অনুভূতি হচ্ছিলো। একটু পরে যখন আমার পরীকে নিয়ে এলো আমার কাছে তখন মনে হল পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর দৃশ্য আমি দেখতে পারছি চোখের সামনে। সবথেকে সুন্দর আর অদ্ভুত এক অনুভূতি যা কিনা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। এই অনুভূতির সামনে গত নয় মাসের কষ্ট কোন কিছুই মনে হবার নয়। সব কষ্ট ভুলে যাওয়া যায় শুধু পরীর মুখ দেখেই।
একটা ছোট্ট সাদা পরী, লাল ঠোঁট, মাথা ভর্তি চুল, চোখগুলো মেলে পিট পিট করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। হাত দিয়ে তাঁকে ছুঁয়ে দেখতে পারছিলাম না। নার্স এসে গাল দুটো আমার গালে ছুঁইয়ে দিলে মনে হল এমন করে সারাজীবন থাকতে পারলে খারাপ লাগতোনা।
মা হবার অনুভূতি আসলেই অন্যরকম। পৃথিবীর কোন অনুভূতির সাথেই এর তুলনা করা যায়না। এই অনুভূতি শুধু মা হবার পরেই বুঝতে পারা যায়। মহান আল্লাহ্ তাআলার কাছে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাকে এই অনুভূতি উপভোগ করার সুযোগ দেবার জন্য। আল্লাহ্ আমার পরী কে ভালো রাখুক, সুস্থ রাখুক। সবাই আমার ছোট্ট পারিজাদের জন্য দোয়া করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ২:২২