ঘুরে এলাম সিডনীর দ্বিতীয় পর্বে সবাইকে স্বাগতম। যদিও দ্বিতীয় পর্ব লিখতে একটু দেরি হয়ে গেলো, তারপরেও লিখতে যে পেরেছি এটাই শান্তি। তো চলুন সবাই ঘুরে আসি সিডনী থেকে
সিঙ্গাপুরের ট্রান্সিট শেষ করে আমরা আবার বিমানে উঠে বসলাম। এরপর অনেক লম্বা সফর। বিমানে আল্লাহ্ এর রহমতে কোন সমস্যা হয়নি। আমার কন্যা মোটামুটি পুরো সময়টাই ঘুমিয়ে ছিল। সিডনী যখন পৌছালাম তখন সেখানে রাত ৮ টা বাজে। ঝামেলা মুক্তভাবে এয়ারপোর্ট এর কাজ সমাধান করে আমরা গেলাম সেভেন হিলস এ আমার হাসবেন্ড এর বন্ধুর বাসায়।তারা এখানে অনেক বছর ধরে থাকে। তাদের পুরো পরিবার একসাথে থাকেন এখানে।তাদের বাড়িটা দারুন সুন্দর। আশেপাশে একদম নিরব। লোকজনের আনাগোনা নাই। কেমন যেন বেশি শান্ত চারিদিক। অনেক্ষন দাঁড়ালেও একটা মানুষ চোখে পড়েনা। তাঁরা যথেষ্ট আন্তরিকতার সাথে আমাদের আতিথেয়তা করেছেন।
পরদিন সকালে আমাদের প্ল্যান ছিল সিডনী অপেরা হাউস দেখতে যাওয়া। যেহেতু ওখানে ট্যাক্সি অনেক বেশি ভাড়া তাই আমরা চিন্তা করলাম ট্রেন এ যাবো। ওই ভাইয়া আমাদের দুইজনের জন্য ওপাল কার্ডের ব্যবস্থা করে দিলেন।
এই কার্ড রিচার্জ করে নিলে খুব সহজেই সব জায়গায় যাওয়া যায় বাস কিংবা ট্রেন এ।আমরা সেভেন হিলস স্টেশন থেকে টাউন হল স্টেশন হয়ে সার্কুলার কুয়েরি স্টেশন এ পৌঁছে গেলাম। এখানে নেমেই হেঁটে অপেরা হাউসে যেতে হয়। অপেরা হাউস সম্পর্কে যদিও সবাই জানে তারপরেও একটু বলে রাখি-“ সিডনী অপেরা হাউস দেখতে অনেকটা নৌকার পালের মত। অনেক ধরনের অনুষ্ঠান এখানে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বের কোটি কোটি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এই অপেরা হাউস। ইউনেস্কো ২০০৭ সালে এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে।
আমরা যখন গেলাম তখন আকাশে ঝলমলে রোদ। নীল আকাশ সাথে প্রচুর বাতাস। একদিকে অপেরা হাউস আর পাশে হারবার ব্রিজ। নীল সমুদ্রের পাশে শুভ্র অপেরা হাউস। চারিদিকে প্রচুর ট্যুরিস্ট এর আনাগোনা। রুহি রোদের কারনে তাকাতেই পারছিলনা। শেষ পর্যন্ত সানগ্লাস পড়তে হয়েছে তাকে।
অপেরা হাউসের একপাশে আছে হারবার ব্রিজ।এই ব্রিজটি তৈরির আগে এর নকশা অনেকবার পরিবর্তন করার পরে নিউইয়র্ক এর হেল গেট ব্রিজ এর আদলে এটি তৈরি করা হয়। ব্রিজটি স্টিল এর তৈরি। ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ১১৪৯ মিটার।
অপেরা হাউসের আরেকপাশে আছে সিডনী রয়্যাল বোটানিক গার্ডেন। চারদিকে সবুজের সমারোহ। অনেক পর্যটক এর ভিড় এখানে। কেও হাঁটছে, ছবি তুলছে, কেউবা ঘাসের উপর শুয়ে বসে বিশ্রাম করছে। ১৮১৬ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় ৭৪ একর জমির উপর তৈরি করা এই বোটানিক গার্ডেন। আমাদের রুহি এখানে অনেক দৌড়েছে।
গার্ডেন এ বিকাল পর্যন্ত কাটানোর পরে আমরা ভাবলাম বোটে করে ঘুরবো অপেরা হাউসের পাশ দিয়ে। খোঁজ নিয়ে জানা গেলো বোট আসবে সন্ধ্যা বেলা। আমরা ভাবলাম এসেছি যখন ঘুরেই যাই। ততক্ষনে হালকা কিছু খেয়ে নেয়া যায়।সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরে বোট আসলো। সন্ধ্যা বেলার সৌন্দর্য আরেকরকম। আলো ঝলমল অপেরা হাউজ আর হারবার ব্রিজ। বোটে যখন উঠলাম তখন আকাশে পূর্ণ চাঁদ। জোছনার আলোতে চারদিক আলোকিত।
এই ছিল আমাদের প্রথমদিনের ঘোরাঘুরি। আজকে আপাতত এটুকুই। পরের পর্বে আবার দেখা হবে।
ঘুরে এলাম সিডনী (পর্ব- ০১)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:২৩