somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেমন আছেন রোহিঙ্গা হিন্দুরা?

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ভোর ৫:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কুতুপালং বৌদ্ধমন্দিরের উল্টো দিকে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। তাতে লেখা, অসহায় হিন্দু শরণার্থীদের আশ্রয়স্থল। এই শরণার্থী শিবিরে ১১২টি পরিবারের ৫২৩ জন আশ্রয় নিয়েছে। ব্যক্তি উদ্যোগে এই শিবির চালাচ্ছেন স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা। তাঁদের একজন সুজন শর্মা বলেন, এই শরণার্থীদের জন্য যা কিছু ব্যয় হচ্ছে, তার কিছু অংশ কক্সবাজার পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ বহন করছে। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসে স্যানিটেশনের জন্য ৪১ হাজার টাকা দিয়ে গিয়েছিলেন। সরকারি ত্রাণের কার্ড তারা হাতে পেয়েছে।

সারি বেঁধে নারী-শিশু-বৃদ্ধরা দুপুরের খাবার খেতে বসেছেন। এক মুঠো ভাত, পাশে এক চামচ আলু ভর্তা ও একটুখানি ডাল। শিশুদের বড় অংশের শরীরে কোনো কাপড় নেই। কেউ কেউ অনুপস্থিত। যে মুরগির খামার ফাঁকা করে তারা ঢালাও বিছানা করে থাকছে, সেখানে থেকে গেছে দুর্বলরা। ১২ জন নারী দূরের এক মন্দিরে গেছেন। মিয়ানমারে সন্ত্রাসীরা এসব নারীর স্বামীদের ‘কেটে’ ফেলেছে। মৃতদেহ মিয়ানমারের রাখাইনে ফেলে এক কাপড়ে পাহাড়-জঙ্গল ডিঙিয়ে তাঁরা বাংলাদেশে এসেছেন একেবারে খালি হাতে। এই শিবিরের কমপক্ষে ১০ জন নারী-পুরুষ বলেছেন, তাঁরা কৃপাপ্রার্থী। তাঁরা এখন ছোট ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে শুধু প্রাণে বাঁচতে চান।

বকুল বালার স্বামী কানু রুদ্রর সঙ্গে তিনিও মাটির তৈজসপত্র বানাতেন। বাড়ি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুর চিকনছড়ি গ্রামে। পূজার আগে স্বামী-স্ত্রীতে মিলে হাঁড়ি, পাতিল, ঘট, পূজার ব্যবহার্য নানান জিনিস বানিয়ে শেষ করেছিলেন। কেনাবেচাও চলছিল বেশ। শুধু নিজেদের প্রস্তুতিটাই বাকি ছিল। কথা ছিল বড় মেয়ে সন্ধ্যা বালা নাইয়র এলে মেয়ে, মেয়েজামাই আর একমাত্র নাতিকে নিয়ে কেনাকাটাটা সেরে ফেলবেন। কানু রুদ্র আগস্টের শেষ দিকে ছোট মেয়ে সীতা বালাকে নিয়ে মেয়ের বাড়ির উদ্দেশে দই, মিষ্টি আর আস্ত মুরগি রান্না করে রওনা দিয়েছিলেন। মেয়ের বাড়ি দু-চার দিন বেড়িয়ে ফেরার কথা। আর ফিরতে পারেননি। মেয়েকে নিয়ে বাড়ি আসার সময় খুন হয়েছেন। বকুল বালা স্বামী, দুই কন্যা আর একমাত্র নাতিকে হারিয়েছেন। স্বজনের মৃতদেহ দেখারও সুযোগ হয়নি। তিন ছেলেকে নিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন।

ভালো নেই নিতাই শীলও। সারা শরীরে জখমের দাগ। চোখে রক্ত জমাট বাঁধা। চিকিৎসার দরকার। দেখার কেউ নেই।

ব্যক্তি উদ্যোগে চলা শরণার্থী শিবিরের এই মানুষেরাও রোহিঙ্গা মুসলিমদের মতোই অসহায়। মিয়ানমারে হিন্দু-মুসলিম এক পাড়ায় ছিলেন। প্রতিবেশীদের মধ্যে সদ্ভাব, সম্প্রীতি ছিল। মংডুর জন্য মন কাঁদে। বাংলাদেশে কী করবেন, ভবিষ্যৎ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে তাঁরা বলেন, এই অবস্থায় মিয়ানমারে ফিরে গেলে নিশ্চিত মৃত্যু।

*****
একজন শফিকুল্লাহ (১২); আরেকজন রফিকুল্লাহ (৮)। তারা দুই ভাই। রফিকুল্লাহ বাক্‌প্রতিবন্ধী। এই দুই রোহিঙ্গা শিশুর বাড়ি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু জেলায়। গ্রামের নাম হোয়াইক্ষং। এখন তারা কক্সবাজারের উখিয়ার থ্যাংখালী আশ্রয়কেন্দ্রে থাকছে। মা-বাবা ও পাঁচ ভাইবোনের কোনো খোঁজ তাদের জানা নেই। শুধু এটুকুই জানে, যেখানে শেষবারের মতো মা-বাবা ও অন্য ভাইবোনদের তারা দেখেছিল, সেখানে গুলি হয়েছে। অনেক মানুষ মারা গেছে।

শফিকুল্লাহ যখন সেদিনের ঘটনা বলছিল, তখন বারবার গুমরে কেঁদে উঠছিল। তবে রফিকুল্লাহ ঘটনার বর্ণনা করছিল হাতের আঙুল দিয়ে বন্দুক বানিয়ে গুলি করার ভঙ্গি দেখিয়ে।
ক্যাম্পে এ দুই ভাইকে দেখতে আসছিল অনেকেই। তাদের পরিচিতজনেরা সব সময় আশপাশেই ছিল। তারাও বলছিল ঘটনার দিনের কথা। তবে শফিকুল্লাহ পুরো ঘটনা দেখেছে কাছ থেকে। সে জানায়, কোরবানির ঈদের তিন দিন আগে খুব সকালবেলা তার বাবা নূর ছালাম তাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। বাবার হাত ধরেই গ্রামের খালপাড়ে আসে তাদের পুরো পরিবার। সেখানে আরও বহু মানুষ ছিল। এর মধ্যেই গ্রামের বড়দের লক্ষ্য করে হঠাৎ গুলি শুরু হয়।
সেসহ আরও কয়েকজনকে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানকার একটি ঘরে। তার মাথায় ছুরি দিয়ে কোপ দেওয়া হয়। এরপর সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। যখন জ্ঞান ফেরে, তখন কক্ষ থেকে বের হয়ে পাশের একটি ধানখেতে লুকিয়ে পড়ে। সারা রাত সে ওই ধানখেতে লুকিয়ে ছিল। এর এক দিন পর গ্রামের পরিচিত মানুষের দেখা পায় সে। তাদের সঙ্গেই কক্সবাজারের টেকনাফে এসে শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নেয় শফিকুল্লাহ।
বাক্‌প্রতিবন্ধী রফিকুল্লাহ কীভাবে বেঁচে কক্সবাজারে এসেছে, সে তা বলতে পারে না। ইশারায় সম্ভবত ওই দিনের ঘটনা বলার চেষ্টা করে কিন্তু তা অন্যরা বুঝতে পারে না। ক্যাম্পের কয়েকজন জানালেন, গ্রামের পাশেই একটি পাহাড়ে ছিল রফিকুল্লাহ। সেখান থেকে তাঁরা তাকে কক্সবাজারে নিয়ে আসেন। এখানে এসেই দুই ভাইয়ের দেখা হয়।

সুত্র- প্রথম আলো
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ভোর ৫:২৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×