বাইক কিনতে গেলে বলতে গেলে সকলকেই সমস্যায় পড়তে হয় আমি কোন বাইক কিনবো? যখন বিভিন্ন জনের কাছে পরামর্শ চাওয়া হয় তখন যে বাইক গুলোর নাম বলেন বিভিন্নজনে, তার মধ্যে থেকে বাইক বেছে নিতে লটারীর আয়োজন করা ছাড়া গতি থাকে না।কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখলে আপনি নিজেই আপনার বাইকটি বেছে নিতে পারবেন। চলুন বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করি।
দেশের মার্কেটে পাওয়া যায় যে বাইকগুলো, তার ব্র্যান্ড হিসেবে বাইকগুলোর ভালো-মন্দ নির্ভর করে। যেমন জাপানি ব্রান্ড হিসেবে বাংলাদেশে পাওয়া যায় হোন্ডা, ইয়ামাহা, সুজুকি। এই বাইকগুলো আপনাকে দিবে টেকসই, গতি, নিরাপত্তা। কিন্তু দাম ও তেল খরচ তুলনামুলক বেশি। বাজাজ, টিভিএস, মাহিন্দ্র, হিরো, এলএমএল এইগুলো ইন্ডিয়ান ব্র্যান্ড। এগুলো জাপানি বাইকের তুলনাতে দাম এবং মান কিছু কম। বাজাজ বাইকের সফটনেস অনেকের পছন্দ। আমাদের দেশে প্রচুর চাইনিজ ব্র্যান্ড রয়েছে। সবগুলোর নাম লিখতে গেলে লিস্ট লম্বা হয়ে যাবে। এর মধ্যে জংসেন এবং লিফান পরিচিত নাম। চাইনিজ বাইকের বড় সুবিধা হলো দাম। তুলনামূলক কম দামে অনেক সুবিধার বাইক পাবেন। খারাপ দিক হলো টেকসই কম, জ্বালানি খরচ বেশি, এবং স্বাভাবিক ভাবেই রিসেল ভ্যালু কিছু কম। বাংলাদেশেী ব্র্যান্ড হিসেবে ওয়ালটনের নাম আমরা সবাই জানি। এছাড়া রানার চেষ্টা করছে বাংলাদেশি ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেদের আত্নপ্রকাশ করতে। ডায়াং-রানার এবং ডায়াং-ফ্রীডম নামে তাদের দুটি ব্রান্ড রয়েছে যার ২/১টি অংশ বাদে প্রায় সবই দেশে তৈরী হয়। এছাড়া যমুনা গ্রুপের পেগাসাস ব্রান্ডের কিছু বাইক মার্কেটে রয়েছে। দেশী ব্রান্ডগুলো অনেক ক্ষেত্রেই রি-ব্রান্ডিং এবং কিছু ক্ষেত্রে ইন্জিন-কার্বুরেটর বাদে বাকি পার্টস নিজেরাই তৈরি করে নেয়। দেশী ব্রান্ডগুলোর সাথে চাইনিজ বাইকগুলো পার্থক্য তেমন নেই বললেই চলে। ইদানিং ওয়াল্টন তাদের পন্যের মান কিছুটা উন্নত করেছে এবং দাম কমিয়েছে।
এই বাইক গুলো বাদেও আরো জনপ্রিয় বাইক রয়েছে যেগুলো বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চাইনিজ ভার্সন। সেগুলো স্টাইলিশ ও দাম কম। কিন্তু কম টেকসই।
বাইকের ব্রান্ড পছন্দের সাথে আপনি কী কাজে বাইকটি ব্যবহার করবেন তার উপর নির্ভর করেও আপনি বাইক পছন্দ করতে পারেন।
সাধারন ব্যবহার: আপনি যদি সাধারন ব্যবহার কারী হোন, অর্থাত স্বল্প দুরুত্বে যাতায়াত করা, সাথে কম তেল খরচ, বাইকের কম মেইন্টেনেন্স চান তাহলে ৫০সিসি থেকে ১০০সিসি বাইক গুলোর মধ্যে থেকে একটি বেছে নিতে পারেন। হতে পারে ডায়াং ৫০, ডায়াং ৮০, হোন্ডা সিডি ৮০, জংসেন ৮০, বাজাজ ডিসকোভার ১০০, বাজাজ সিটি ১০০, বাজাজ প্লাটিনা ১০০, হিরো ডন, হিরো আই স্মার্ট, টিভিএস মেট্রো, টিভিএস স্টার স্পোর্ট ইত্যাদি।
রাফ ইউজ: একটু রাফ ইউজ যাদের প্রযোজন বা যারা প্রতিদিন ৫০-১০০কিমি বাইক চালানোর প্রয়োজন পড়ে, বা গ্রাম-শহর মিলিয়ে বাইক চালাতে হয় তাদেরকে কয়েকটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হয়। কম তেল খরচ, অবশ্যই কমফোর্টেবল, এবং টেকসই। বিশেষ করে যারা ফিল্ড ওয়ার্ক বেশি করেন যেমন এমআর বা মার্কেটিং এ আছেন এমন ব্যাক্তিদের জন্য খুব পরিচিত কয়েকটি বাইক হচ্ছে হিরো স্পেল্ডর প্লাস, হোন্ডা সিজি১২৫, হিরো গ্ল্যামার, রানার ফ্রীডম রয়েল+, টিভিএস মেট্রো ইত্যাদি।
স্পীড ও স্টান্ট: স্টান্ট ও স্পীড যাদের পছন্দ তাদের জন্য ইয়ামাহা এফজেডএস অতুলণীয়। হাংক, পালসার ফেজার, মেগেলি, কেপি১৫০, গোন্ড, ট্রিগার ইত্যাদি আপনি পছন্দের তালিকাতে রাখতে পারেন।
দা বস: দীর্ঘ পথে রাজার আসনে চলতে চাইলে চপার বাইকের জুড়ি নেই। আপনার পছন্দ চপার বাইক হলে ইয়ামাহা এনটিসার অথবা রিগ্যাল রেপটর সিরিজ এর কথা ভাবতে পারেন।
স্কুটি: নারীদের পাশাপাশি অনেক পুরুষরাও স্কুটি চালান। ৮০সিসি থেকে ১৫০সিসি সব ধরনের স্কুটি বাইক মার্কেটে রয়েছে। রযেছে বৈচিত্রময় ডিজাইন। মাহিন্দ্র ডিউরো, মাহিন্দ্র রোডিও, টিভিএস ওয়েগো, টিভিএস পেপ, ছাড়াও ZNEN, SYM, UM ব্রান্ডের অনেক স্টাইলিশ স্কুটি আপনার নজর কেড়ে নিতে পারে। স্কুটিগুলো সিটি বাইক হিসেবে চমতকার।
বাইক কেনার পুর্বে অবশ্যই নির্ধারন করুন আপনার প্রধান কাজ কি? এরপরে আপনি আপনার বাজেটের মধ্যে সে বাইক খুজে নিন। মনে রাখবেন- কোনো বাইকই শতভাগ নিখুত নয়। কোনোটার স্পীড ভালো, কারো কন্ট্রোল ভালো, কেউ দেখতে সুন্দর। আপনি আপনার বাজেটের মধ্যে এই জিনিসগুলোর সমন্বয় যার মধ্যে দেখতে চোখ বুজে সেই বাইক কিনে ফেলুন। অন্যের মুখে রসগোল্লার স্বাদ বোঝার দরকার নেই।