কাগজে পড়ি, আশে পাশে অহরহ শুনি। মেয়েরা বলে, বিয়ের পর আমার লেখাপড়াটাই বন্ধ হয়ে গেল । কত ইচ্ছা ছিল এই হব, সেই হব । হয়ত হতাম , আমার বন্ধুরা তো হয়েছিল ।
ভীষণ দুঃখের কাহিনী , স্বপ্ন ভঙ্গের গল্প ।শুনে সবাই বুক ভাসায় । আহারে , কি নিষ্ঠুর ,অবিবেচক শ্বশুরবাড়ি । বিদ্যা অর্জনে বাঁধা দেয় !
সত্যি কথা বিদ্যা অর্জনে আমার আর আগ্রহ নেই ।হাঁপিয়ে গেছি । বাবা মায়ের চাপে করছি । উপায় খুঁজছিলাম কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায় ।
ভাবলাম, বিয়ে করে ফেলি। বিয়েই পারবে আমাকে উদ্ধার করতে ।আর সব মেয়েদের তো করেছে । তারপর একদিন এরকম গল্প , আমিও শোনাবো । সবাই কাঁদবে আর আমি মুক্তির আনন্দে মনে মনে হাসব ।
কিন্তু ব্যাপারটা উল্টো হয়ে গেছে । শ্বশুর শাশুড়ি আরও পড়তে বলেন ।মাস্টার্সের পর পি এইচ ডি। তারপর হয় পোস্ট ডক নয় চাকরি । তাঁরা তাদের মুখ উজ্জ্বল করার কথা বলেন , দেশের মুখ উজ্জল করার কথা বলেন ।
এসব শুনে আমার মুখটা অনুজ্জ্বল হয়ে যায় । আরজি নিয়ে যাই তার কাছে । তার কথা “পড়াশোনা করতে চাও না , হাউজ ওয়াইফ হবা , খুব ভাল কথা । তাহলে দেশে রেখে আসি , অপশন একঃ আমি আমেরিকায়, তুমি দেশে । চিন্তার কারন নেই । মাসের খরচ পাবা । অপশন দুইঃ চল একেবারে দেশে ফিরে যাই দুজনেই । আমি চাকরিতে জয়েন করি । ভালই থাকবা , বাসা দেবে , গাড়িতে করে ঘুরবা .........ইত্যাদি ইত্যাদি “। থামিয়ে দেই তাকে ।
এর পরের গল্প আমার মুখস্থ ।সব ছেলেরাই তার চাকরি নিয়ে বউ এর কাছে যে ভাব নেয় , সে আগেই জানতাম । তবে তাকে দেখে শতভাগ নিশ্চিত হয়েছি।
পিওন গোছের লোকও বউকে এসে প্রথমে মেজাজ দেখায় , যেন সে বিরাট কিছু করে এসেছে। তারপর মেজাজ ঠাণ্ডা হলে অফিসের গল্প , জান বউ অফিসের বড় সাহেব তো আমার ডিসিশন ছাড়া কোন কাজই করেন না ।
দুলাভাইকে দেখেছি । নিজের বাবাকেও দেখেছি , এখন যোগ হয়েছেন উনি ।তারপর উনি নাকি আবার কি সব ক্যাডার । আমাকে তো তাই বলে ।
হাউসওয়াইফ হতে যে খুব আমার ইচ্ছে করে তা কিন্তু নয় ।চাকরি হবে এরকম । কোন নিয়োগ পরীক্ষা নেই । দীর্ঘ ষোল বছর ধরে এত এত পরীক্ষা দিয়েছি সেই তো যথেষ্ট ।অফিসের গাড়ি আসবে , নতুন নতুন শাড়ি পরে অফিস যাব , ফাইল সাইন করব । আমার এক সাইনেই অফিসের কোটি কোটি টাকা লাভ হবে । প্রমসন পাব । দুপুর তিনটায় বাসায় ফিরব । দায়িত্বশীল মা আমি , মুখে উপটান দিয়ে বাচ্চাকে পড়তে বসাবো । পরদিন এগারোটায় রান্না-বান্না করে অফিস যাব । প্রেগনেন্ট হলে দু ‘বছর মেটারনিটি লিভ পাবো ।
এরকম চাকরি জানি কোথাও নেই । কি আর করা , তাহলে কি শুধু পড়েই যেতে হবে ! শ্বশুর আবার জিগ্যেস করেছে সি জি পি এ কত এসেছে !কোথায় যাব! বুঝলাম বিয়ে করে ভাল ভাবেই ফেঁসেছি ।
তবুও আশায় আছি , একদিন আমার উনি এসে বলবেন , বউ থামো । অনেক তো হল, এইবার ঘরের কাজে মন দাও । বাইরের কাজের জন্য আমি তো আছি ।