পত্রিকায় পড়লাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ও ছাত্রীর কাহিনী । এ নিয়ে অনেকেই লিখছে , প্রতিবাদ করছে , আক্রোশে ফেটে পড়ছে ।সবার আক্রোশ এর কারণ আসামী একজন শিক্ষক ।আসামী বাসের ড্রাইভার , দূরসম্পর্কের আত্মীয় , ভিড়ের মধ্যে অচেনা মানুষ সে তো হতেই পারে । তাই বলে শিক্ষক ! বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ! এ কেমন কথা ?
আমার মনে হয় মেয়েদের নিপীড়ন শুরু হয় বিদ্যালয় থেকে ।
একটি সত্য ঘটনা বলিঃ
রুমুর ঘটনা (রুমু কাল্পনিক নাম)
বড় মেয়েরা তাদের জামার নিচে একটা ছোট জামা পরে । রুমুর স্কুলের বান্ধবীরা অনেকেই রুমুর থেকে আকার আয়তনে বড় ছিল । তাই জ্ঞানভাণ্ডার , অভিজ্ঞতা দুইই বেশি ছিল তাদের ।রুমু আর তার বান্ধবীরা একসাথে বসে প্রায়ই তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করত । সে সব অভিজ্ঞতা গুলো অনেক সময় একটু খারাপ গল্প ছিল । রুমু খুব মন দিয়ে শুনত ।
রুমুদের স্কুলে এক স্যার ছিলেন , ধরা যাক তাঁর নাম শফিক । বয়স বেশি নয়, ৩৫-৩৬ হবে। রুমুকে খুব আদর করতেন। সুযোগ পেলেই পিঠে হাত বুলিয়ে দিতেন । তবে এত হাত বোলানোর পিছনে কি কারন থাকতে পারে , এ নিয়ে রুমু কখনও মাথা ঘামাত না ।
একদিন তার এক বান্ধবি বলল শফিক স্যার তার পিঠে হাত দিয়ে ছোট জামার ফিতা ধরে টান দিয়েছেন । সাথে সাথে অন্য অনেকেই বলল তাদের সাথেও ব্যাপারটি ঘটেছে । রুমুর তখনও অত ছোট জামা পরার অভিজ্ঞতা হয়নি । মনে হল বিষয়টি খারাপ । তারপর কেন জানি সে ভুলে গেল ।
এরপর একদিন রুমু স্কুলে গিয়েছে । তখন সে সবে ছোট জামা পরা শুরু করেছে । শফিক স্যার এসে রুমুকে আগের মত আদর করে পিঠে হাত বুলালেন। এরপর রুমু ‘পটাস ‘ একটি শব্দ শুনল । স্যার রুমুর ছোট জামার ইলাস্টিক ধরে টান দিয়েছেন । টান দিয়ে আবার ছেড়ে দিয়েছেন । ইলাস্টিক যথাস্থানে ফেরত এসেছে ।
শফিক স্যার লোকটা বেশ ভাল । উনি শুধু ইলাস্টিক ধরেই টান দিতেন । আর কিছুই করতেন না । তবু উনি কাছে আসলেই রুমুরা কেমন কুঁকড়ে যেত ।
আর একটি ঘটনা বলিঃ
আর এক শিক্ষক ছিলেন , ধরি তাঁর নাম রফিক । উনার খুব প্রিয় ছাত্রী ছিল রুমু । প্রতি ক্লাসের শুরুতে উনি রুমুকে ডেকে আগে একটু গল্প করতেন । সে গল্প নিছক সরল ছিল । রুমুর বাসার কথা , রুমুর ছোট ভাইটা কত বড় হল এইসব । তবে রুমুর কাছে সেই গল্পের পুরো সময়টা অনেকটা অস্বস্তিকর ছিল ।
স্যার ছিলেন খুব ভাল কিন্তু তাঁর অবনত দৃষ্টি এক জায়গায় এসে থেমে থাকত ।একবার এক বান্ধবীকে রুমু বলল , সেও বলল তার বেলাতেও এটা ঘটে ।
রফিক শফিক এই দুই শিক্ষক রুমুদের স্কুলের বেশ ভাল , জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন । কেউ হয়ত ভাবতেও পারবেন না এরকম বিকৃত মানসিকতা তাদের থাকতে পারে ।
শিক্ষক মানে আমরা জানি পথ প্রদর্শক, যারা আমাদের দিক নির্দেশনা দেন, ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করেন । তাই আমার মনে হয় রুমুর শিক্ষক রফিক শফিক সাহেব , খুব ভুল কিছু করেননি । তারা রুমুদেরকে ভবিষ্যত নিপীড়নের জন্য প্রস্তুত করেছেন । শিখিয়েছেন নিপীড়ন খুব লজ্জার , নিপীড়িত হলে বলতে নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েটি সেই লজ্জার কথা বলে ফেলেছে । বেশ নির্লজ্জই মেয়েটি । তার এ গল্প তো নতুন কিছু নয় । যে ঘটা করে বলতে হবে ।
এ নিপীড়নের গল্প খুব পুরনো গল্প ।
জানি না এরকম দিন আসবে কিনা, যেদিন এরকম গল্পে সবাই খুব অবাক হবে। হয়ত শত সহস্র বছরে একবার ঘটবে । সেটুকুও যেন না ঘটে এ প্রার্থনাই থাকল ।
**লেখার সময় পাচ্ছিনা , পুরনো লেখা থেকে দিলাম ।