somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুরুষগুলোঃ পুরুষ ১

৩১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[ এই সিরিজের ঘটনাগুলো জীবন্ত আর ভীষণ সত্যি, কল্পনার মিশেল সেখানে নেই। তবুও গল্পগুলো কখনও প্রচণ্ড সুন্দর- রঙিন, আবার কখনও রঙহীন-বিবর্ণ আর ভীষণ দুর্গন্ধময়। ধারাবাহিকের চরিত্র কখনও আমি নিজে, কখনও আমার পরিচিত কেউ, কাছের কেউ। তবে সব ছদ্ম নামে লেখা। কাউকে বিব্রত করতে আমি চাইনে, নিজেকেও নয়। কারণ আমি জানি এ সমাজ মেয়েদের বিব্রত করতে কতটা ভালবাসে, কতটা মুখিয়ে থাকে]

এ ঘটনা যখন বলছি তখন কলেজে (উচ্চমাধ্যমিকে) পড়ি। বাসা থেকে দূরে হোস্টেলে থাকি। বই পড়ি, কবিতা লিখি, জানালা দিয়ে মানুষ দেখি আর সময় পেলে ক্লাসের বই পড়ি।
কলেজে ভর্তির পর থেকেই আমার ফল ভাল হচ্ছিল না। মা আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিল, বাবার আচরনটাও খুব তেতো ছিল। একবার বেশ ফল হল আমার। বাসায় জানালাম। মোবাইল তখনও এত এভেইলেবল হয়নি, বাসায় টি এন্ড টি আসেনি। বাবার অফিসে ফোন করতাম। বাবা বলল তোর মাকে তো খুব নরম দেখলাম।
খুব কান্না পেল আমার আর মনে হল শিগগির বাড়ি যাওয়া চাই।
হঠাৎ করে কলেজের ৪/৫ দিন ছুটি হয়ে গেল।
দুপুরের ক্লাস করে বাস টার্মিনালে এলাম। ভীষণ বর্ষা সেদিন। বাসস্ট্যান্ডটা ভিজে কাঁদায় থকথক করছিল।
শুনলাম আমার শহরে (ধরা যাক নাম ‘ক’) যাবার সব বাস ছেড়ে গেছে। আবার কাল যাওয়া যাবে। কিন্তু আমার আর ফিরতে ইচ্ছা করল না। আজ যে আমার বাড়ি যাওয়া চাই।
বাসের কনট্রাক্টর গোছের এক লোক বুদ্ধি দিল আমাদের শহরের পাশের শহরে (ধরা যাক নাম ‘খ’) যাবার বাস আছে। তবে সে ৪ টায়। এগারোটা নাগাদ পৌঁছবে। ঘাটে দেরির সম্ভাবনা খুব বেশি। আর পৌছলে সেখান থেকে আমি ‘ক’ যাবার লোকাল ধরতে পারি। তবে অত রাতে বাস পাওয়াও নিশ্চিত নয়।
টিকেট কেটে ফেললাম আমি। বাসের জন্য অপেক্ষা করছি আর বিশ্রী একটা বৃষ্টি দেখছি। একটা গোঁফ আলা লোক আমার পাশ দিয়ে বারবার হেঁটে যাচ্ছিল আর একটা সিনেমার গান গুনগুন করে গায়ছিল। তুমিই আমার চম্পাকলি, ফুল কলি। বাস এল। আমি উঠলাম। চম্পা কলি গাওয়া লোকটা আমাকে হাত নেড়ে বিদায় দিল যেন আমি তার খুব চেনা কেউ। আমি হাত নাড়লাম না।
ফেরিঘাটে আমাদের খুব দেরি হয়ে গেল। আমি একটা বই খুলে রেখেছিলাম, যাতে পড়ুয়া ভেবে কেউ ঘাঁটাতে সাহস না করে। কিন্তু অনেক যাত্রীকেই বেশ সাহসী মনে হল। তারা কথা বলার চেষ্টা করছিল, চোখ দিয়ে যতটা গেলা যায় গিলছিল। মনে হল এদের বেশিরভাগই সারাসপ্তাহ কাজ করে বউয়ের কাছে ফিরছিল। আমার পাশের লোকটি অকারণে মাঝে মাঝেই আমাকে টপকে জানালা খুলছিল আর বন্ধ করছিল।
সেদিন বোরখা পরে ছিলাম, মুখ ঢাকা। সেসময়টায় আমাদের শহরে স্কুল কলেজের মেয়েরা বোরখা পরত। বান্ধবীদের ৯০ ভাগ বোরখা পরে স্কুল কলেজে যেত আর বাবা-মায়ের সাথে কোথাও গেলে হয়ত এলো চুলে রঙিন জামা পরত। যেসব বখাটেরা আমাদের বিরক্ত করত এদের বেশিরভাগ স্কুল বা কলেজের ছাত্র ছিল না। বেশিরভাগ ড্রপ আউট, মেয়ে নিয়ে ভাবা ছাড়া যাদের আর বিশেষ কাজ ছিল না।
আস্তে আস্তে আমাদের যাত্রা পথ কমে আসছিল। আমরা ‘খ’ শহরের কাছাকাছি হচ্ছিলাম। যাত্রীরা সব নেমে যাচ্ছিল। একসময় পিছন ফিরে তাকালাম। সবাই নেমে গেছে। শুধু এক মধ্যবয়স্ক ষণ্ডামার্কা বিশ্রী দেখতে একটা লোক বসা ছিল। লোকটার দিকে তাকিয়ে প্রচণ্ড ভয় পেলাম আমি। আমরা ‘খ’ শহরে পৌঁছে গেছি। রাত্রির বারোটা। প্রচণ্ড ঝড় শুরু হয়ে গেছে। বাসের হেল্পার, ড্রাইভারের সাথে ওই লোকটা কি জানি আলাপ করল। হেল্পার, ড্রাইভার খাবার আনবার কথা বলে নেমে গেল।
বৃষ্টি হচ্ছিল বলে দরজা ভেজিয়ে দিয়ে গেছে। আমি বুঝতে পারছিলাম এ নির্ঘাত ষড়যন্ত্র। আজ কি আমার জীবনের শেষ দিন!
অনেক ভাবনা আসছিল মাথায়। আমি আমার ব্যাগের ভিতর হাত ঢুকালাম। ওখানে একটা লোহার স্কেল ছিল। ঐটা মুঠি করে ধরে রাখলাম। ষণ্ডামার্কা লোকটি হঠাৎ আমার পাশের সারির সিটে এসে বসল। প্রচণ্ড ঘামছিলাম আমি। আমার হৃদপিণ্ড পর্যন্ত যেন ঘেমে যাচ্ছিল। লোকটি আমার পরিচয় নেবার চেষ্টা করল। আমি কিছু কিছুর উত্তর দিচ্ছিলাম আর কিছুর না। আমার হাতের স্কেলটা তখনও ব্যাগের ভিতর শক্ত করে ধরা। বিপদ বুঝলেই প্রথমে ঘাড়ে বসাব ওটা।
ড্রাইভার আর হেল্পার ফিরে এসে জানালো তারা আমার শহরেই আমাকে পৌঁছে দেবে। লোকটিও সেখানে নামবে। আমি তখন আরও পরিস্কার হলাম। সন্দেহ সত্যি। তাহলে এই শলাপরামর্শই তখন করছিল ওরা। তিন তিনটে লোক!!! আমি সুরা পড়ছিলাম আর আর আত্তরক্ষার কৌশল আঁটছিলাম।
বাস ঝড়ের চেয়েও আরও দ্রুত বেগে ছুটছিল।
আমরা আমার শহরে পৌছুলাম। আমাদেরকে নামিয়ে বাস চলে গেল টার্মিনালে।
লোকটিও নামলো। আমার কেন জানি ভয় কমে আসতে শুরু করল। লোকটিকে আর খারাপ মনে হচ্ছিল না। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি দুটোর মত বাজে। রিক্সা নেই। কোথাও ই কেউ ছিল না। প্রচণ্ড ঘুমন্ত এক শহর।
দুটো রিক্সা জোগাড় করতে বেশি দেরি হল। লোকটি বলল আমার বাসার কাছ দিয়েই সে যাবে। সে আমার পিছন পিছন যাবে। ভয়ের কিছু নেই।
বাসার কাছে এসে দেখি এক হাঁটু পানি। রিক্সাআলা বলল এ রাস্তা সে চেনে, অনেক খানাখন্দ, সে যেতে পারবে না। গলির মুখেই বাসা। কিছুটা হেটে এসে বাসার কলিং বেল চাপলাম। আমার মা-বাবা হারিকেন নিয়ে বেরিয়ে এল। লোডশেডিং ছিল সে সময়।
আমি দেখলাম, লোকটি তখনও দাড়িয়ে আছে। বারান্দায় উঠে এসে দেখি লোকটি নেই। তারপর আর কোনোদিন দেখিনি লোকটিকে। পরিচয়ও নেওয়া হয়নি।
কাপড় ছাড়িয়ে মাথা মুছিয়ে দিতে দিতে মা খুব বকছিল । সেসব কিছুই মাথায় ঢুকছিল না তখন। শুধু মনে হচ্ছিল সেই ষণ্ডা মার্কা বিশ্রী চেহারার লোকটির কথা।
পুরুষ সম্পর্কে খুব নেগেটিভ ধারণা ছিল আমার। সেদিন ধারণাটা অনেক বদলেছিল।
পুরুষ নিয়ে আমরা যে খুব খারাপ কথা বলি, ধর্ষক বলি, হেন তেন বলে গাল ব্যাথা করি। তা বোধ হয় সবসময় সত্যি নয়।
*** আজকে প্রথম পর্ব ভাল গল্প দিয়ে শুরু করলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:৪২
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×