somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

.....ধরার উপরে আছি......

০১ লা মার্চ, ২০১১ দুপুর ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জন্মের পর থেইকা এই বান্দা ধরার উপরেই আছে। প্রথম সন্তান হওয়ায়, বাবা-মার যেহেতু বাচ্চা মানুষ করার পূর্বাভিজ্ঞতা ছিলনা তাই তাহারা নির্দয় ভাবে আমার উপর দিয়াই সব এক্সপেরিমেন্ট চালাইতো। যতই রিওয়ার্ড করি ততই চোখে ঝাপসা মত ভেসে উঠে আমার সব দু:সহ স্মৃতি.......
সামান্য গা গরম, তাতেই মায়ের ত্রাহি চিত্তকার "ওষু..ধ....ধ"
আমারও শুরু হত জীবন বাচানোর চিৎকার "না.............না....."
বাবা দৌড়ে আসতেন.."কি??"
তারপর শুরু হত; জমে-মানুষে টানাটানি....মানে...অনভিজ্ঞ বাবা "আমারে চ্যাংদোলা করে চার হাত-পা ধরতো আর মায়ের হাতে থাকতো ওষুধের চামুম.....
"হা কর বলছি...হা কর"
আমিও চিৎকার করতাম "না........" আর এই সুযোগে মা ঢেলে দিত জঘন্য সব ওষধ.....আমি কোৎ করে বমি করে দিতাম। আবার চলতো এই টানাটানির পুন:প্রচার।

রাম ধরা: এই অত্যাচারের মধ্যে বেড়ে উঠা আমার মধ্যে অকালে যৌবন চলে আসল। মানে...ক্লাস সেভেন/এইটের সময়ই হিন্দি ফিল্মের ইশক্ জেগে উঠে.....বিপুল বিক্রমে...প্লাস বন্ধুরা বিপুল ভোটে....প্লাস...আরও বিপুল উৎসাহে.......আমার বন্ধু জহিরের (সে তখন এলাকার উঠতি ভাই) জজবার সহিত বলা স্লোগানে "দোস্ত তুই এগিয়ে যা, আমি আছি তোর পেছনে" । এহেন জনসমর্থন দেখিয়া....কোন এক রজণীতে রবীন্দ্রনাথ ভর করলেন এক কিশোরের ঘাড়ে.........অতএব....রচিত হইল সেই মহান কবিতা
"...............আমি তোমায় ভালোবাসি"
পরদিন; সমবিভ্যহারে কিশোর পিছু নেয় তার লায়িকার......স্কুল ফেরত বালিকা তখন কিছু গজ সামনে....বন্ধু জহির উত্তেজিত হয়ে বলে, "এই সুযোগ, তুই যা দোস্ত আমি আছি."
এগিয়ে গেলাম বীরদর্পে (কিন্তুক পদ ও হস্তযুগল এবং মাথাটা কিন্ঞিত ফাঁপা মনে হইতেছিল)
কোনমতে....গলা দিয়ে চি..চি...করে আওয়াজ বের হল..
লায়িকা বেণিদুলানো মাথা ঝাকা দিয়ে প্রশ্ন করলো...."কি বলবেন বলেন?" তাহার সখিরাও সন্ধিগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইল...
কোনমতে চিঠিখানা তারা হাতে দিতেই.....তার ঝাঝালো
"এইটা কি? হ্যাঁ..."
তার সখিদের মধ্যে কে যেন বলে উঠলো..."ওমা....লেটার দিছে?. আল্লাহ."
"আপনার এত্তবড় সাহস...." ইহার পরে আমার মাথা আর কাজ করিতেছিলনা, সাহায্যের আশায় বন্ধু জহিরের উদ্দেশ্যে পেছন ফিরলাম...দেখি ভাই আগেই দৌড় দিছে....
ঐদিকে নায়িকা.....কি যেন বলছে আর তা দেখেই....বাংলার নায়ক (জনগন)..এগিয়ে আসবে কিনা ভাবছে ....।
ততক্ষনে আমার সকল 'ভাব-ভালোবাসা' বিলীন হইয়া গেছে....
মান-সুলেমান রক্ষার্থে বললাম..."থাক এইটা পড়তে হবেনা...."
"কিউ?" হিন্দি সিনেমার মত কিচ্ করে উঠলো.
"দরকার নাই আমার ভুল হইছে...স্যরি..." আমি তখন চোখে সরিষা গাছ দেখিতেছি, কারণ দুয়েকজন দূর হইতে ঘটনা অবলোক করিতেছে...
কিন্তুক আমার বেণিদুলানো লায়িকা......পার্ট লইয়া মিচকা হাসি দিয়া কয়...
"আপনার চিঠির উত্তর...আব্বুর মাধ্যমে আপনার আব্বুর কাছে দিয়ে দিব...হ্যাঁ?" এই বলিয়া......গা-দুলানো হাসি দিয়া তাহার সকল সখিদের লইয়া প্রস্থান হইল আর আমার ততক্ষনে.......এই নিষ্ঠুর দুনিয়ার প্রতি সকল মায়ামমতা উঠিয়া গেল....... কোন জাগতিক চিন্তাভাবনাই আমার তখন মাথায় রইল না....রইল শুধু আসন্ন বিপদের হাত থেকে মুক্তির জন্য নফল নামাজের ওযু করার কথা......সেই দিন আর পরর্বতী কয়টা দিনে মোট কত রাকাত নফল নামাজ পড়েছিলাম আজ আর মনে পড়ে না...

ধরার-উপর ওষুধ নাই: কেলাস টেনের বৎসর; মনে অকাল বৈরাগ্যের উ্দ্ভব হইল। পৃথিবীতে কেউ নাই কিছু নাই টাইপ.....সেই সময়ে আমাদের দেশে বিদু্ৎতের অবস্থা এমন শোচনীয় ছিল না। সে ছিল একটা সময় যখন রাতে কারেন্ট গেলে ছেলেমেয়েরা খুশিতে চিৎকার দিয়ে উঠতো, সবাই বাসার সামনের মাঠে চলে আসতো, জমতো আড্ডা........সেই সময়কালে আমার বন্ধুগণ সবাই সাবালাক হয়ে উঠলো...এবং তাহারা সিগারেট খাইতো....। আর রাতের বিদু্ৎবিহীন এই সময়টা হয়ে উঠতো তাহাদের সাধনার সময়; কোন একটা চিপা-চাপায় বসে তারা এই অমৃত স্বাদ আস্বাদন করতো আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখতাম....উহুঁ অবশ্যই না কারণ আমি বড় হয়েছিনা। আমার ইচ্ছা হইছে আমি সিগারেট খাব আমার বাবার কি? আমি কি ডরাই না কি..ঐ টাকলুরে..? এমন একরাতে, বিদুৎহীন সময়ে.....আমাদের গোপন জায়গায় সবাই হাজির হয়ে সুখটান দিচ্ছে...বাট কোন হালার কাছে এক্সট্রা নাই....তার উপর এক হারামী আমারে কয় বাবু তুই আরেকটু কাছে আয় তাইলে আমি ধোয়া ছাড়লে তুই ঔটা টাইনা নিছ.....এহেন অপমান সহ্য করতে না পেরে...সিগারেট কিনতে গেলাম কাছেই এক কুলিংকর্ণারে।
"ভাই একটা সিগারেট দেনতো..." নিজেকে দোকানে জ্বলা মোমবাতির আলোর চেয়ে একটু অন্ধারে রেখে বললাম।
দোকানি সিগারেট দিতে দেরি হইতেছে দেখে বলে উঠলাম...
"কি হইল ভাই, একটা সিগারেট দেন...."
ভেতর থেকে আওয়াজ আসে....সাথে মানুষও বের হয়ে আসে...
"১টা কেন বদমাস..? পুরা প্যাকেট নে...আজ তোকে আমি সিগারেট খাওয়া
শিখামু....." চেম্বার থেকে আসার সময় কুলিংকর্ণারে কিছু কিনতে আসা পিতার রাগে লাল হওয়া মুখ মোমবাতির আলোয় দেখার আগেই আমি নাই............................এ্ই ধরা-এবং ধরা পরর্বতী রিমান্ডসেলের নির্যাতন জাতি অনেকদিন পিঠে বহন করিয়াছিল।....





২৩টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×