somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাহাজভাঙ্গার ভাগাড়ে নতুন খেলা > শ্রমিকরাই নিজেদের মৃত্যু দাবি করছে !

০২ রা মার্চ, ২০১০ রাত ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত সপ্তাহে জাহাজভাঙ্গা নিয়ে লেখায় বলেছিলামঃ "মাত্র এক মাস আগে জারি করা আমদানি-নীতি অনুযায়ী(বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি নীতি আদেশ ৪০ নম্বর বিধান) বাংলাদেশের কোনো আমদানিকারক বিদেশ থেকে পুরোনো জাহাজ আমদানি করতে চাইলে যে দেশ থেকে আমদানি করা হবে, সেই দেশের সরকার অনুমোদিত উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের(সার্ভেয়ার) প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে। এতে উল্লেখ থাকতে হবে, ‘জাহাজটি বিষাক্ত বর্জ্যমুক্ত’। আমদানি-নীতি শিথিলের জন্য পরিত্যক্ত জাহাজ ব্যবসায়ীরা অবশ্য দুই সপ্তাহ ধরে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) তদবির করছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সরকার যে এই বিশেষ মহলের সুপারিশে আমদানিনীতি শিথিল করতে চাইছে তার পেছনে কারণ কি? কেন দেশের স্বর্থের কথা বিবেচনায় না এনে একটি বিশেষ মহলের আবেদন বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে? "

ওখানে যেটিকে শঙ্কা হিসেবে দেখিয়েছিলাম আজ সেটি আর শঙ্কা নয়, বাস্তবতা। সেই ১০টি আমদানি করা জাহাজ না ছাড়ার কারণে জাহাজ মালিকরা এক অভিনব পন্থা আবিষ্কার করেছে! কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা! শ্রমিকদের জান-মালের নিরাপত্তা আর উপকূলের মানুষদের বিষের ছোবল থেকে বাঁচানোর জন্য সরকার আইন জারি করেছেন, সেই শ্রমিকদেরকেই সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছেন তারা। শ্রমিকদের মহাসড়কে নামিয়ে বিক্ষোভ সংগঠিত করেছেন। শ্রমিকরা এটা করতে বাধ্য, কারণ তাকে বলা হয়েছে- সরকার জাহাজ আমদানি করতে বাধা দিয়েছে, সে কারণে ইয়ার্ড বন্ধ, এবং তোমাদেরও মজুরি বন্ধ! প্রায় ৪৫ হাজার দিনমজুর মনে করেছে ইয়ার্ড বন্ধ মানে মজুরি বন্ধ! তাহলে খাব কি? বাঁচব কিভাবে? এই অসহায় শ্রমিকদের এখন অবস্থা এমন যে তারা বিষের ছোবলে ক্ষয়ে যেতে পারে, সেকেলে ব্যবস্থায় জাহাজ ভাঙ্গতে গিয়ে প্রতিনিয়ত মরতে পারে জেনেও শুধুমাত্র বেঁচে থাকার তাগিদে মালিক সমিতির প্ররোচণায় রাজপথে নেমে এসেছে! এইরকম খেটে খাওয়া গরিব মানুষকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহারের নজির এর আগে বাংলাদেশে ছিলনা। এবারই প্রথম দেখাল পুরোনো জাহাজ আমদানিকারকরা।

সরকার এখন পড়েছে উভয় সংকটে! যে শ্রমিকদের জানমাল আর নিরাপত্তার কথা ভেবে আইন করা হলো, তারাই দেখি রাজপথ অবরোধ করে বসে আছে! সরকার এখন কি করতে পারে? বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাফর আলম বলেছেন, "আমরা দুই মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আবেদন জানিয়েছি, নতুন সিদ্ধান্তের কারণে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের জাহাজ ভাঙা শিল্প হুমকির মুখে পড়বে। এই খাতে কর্মরত প্রায় আড়াই লাখ শ্রমিকের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হবে। সরকারের বার্ষিক ৬০০ থেকে ৯০০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় বাধাগ্রস্ত হবে। নতুন সিদ্ধান্তের কারণে পাইপলাইনে থাকা দুই লাখ টনের আরো ১০টি পুরনো জাহাজ আমদানিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ভারত, পাকিস্তান, চীন, তুরস্কসহ পৃথিবীর কোনো দেশে পুরনো জাহাজ আমদানির ক্ষেত্রে রপ্তানিকারক দেশের এ ধরনের সার্টিফিকেটের দরকার হয় না। হয়তো কারো প্ররোচনায় নতুন এ আমদানি নীতি প্রণয়ন করেছে আমাদের সরকার। তাছাড়া বিষাক্ত অর্থাৎ কোনো ধরনের যুদ্ধজাহাজ বাংলাদেশ কখনো আমদানি করেনি। যেসব বর্জ্যের (তেলের খাদ) কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো আমরা কখনোই সমুদ্রে ফেলি না। আমাদের দেশের ব্রিকফিল্ডে এগুলো ব্যবহৃত হয়”

তাহলে এগুলো কি?

এসব কি তেলের খাদ আর নাম না জানা হরেক কিসিমের টক্সিক নয় ?


তারা বলছেন তারা কোন বিষাক্ত জাহাজ আমদানি করেননি! ভাল কথা, এই কথাটিই তারা নিজেরা কেন বলছেন? তারা কি বিশেষজ্ঞ? এই কথাটিই তারা সেই দেশের যথাযথ সার্ভেয়ার বা যথাযথ প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বলাচ্ছেন না কেন? সার্টিফিকেট হাজির করছেন না কেন? তারা যেভাবে সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করছেন তাতে সরকার তাদের চাপের কাছে নতিস্বীকার করতে যাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। তাহলে কি ধরে নিতে হবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠির নিরাপত্তা আর জীবনের নিশ্চয়তা বিধানের গুরু দায়িত্ব থেকে সরকার মাত্র কয়েকজন হোমড়া-চোমড়ার হুমকিতে সরে আসবে? সরকারের নীতি বাস্তবায়ন হলে এই শিল্প কি কি ক্ষতির সম্মূখিন হবে সেই বিবরণ ফেনিয়ে-ফাঁপিয়ে দেওয়া হচ্ছে কোন উদ্দেশ্যে সেটা পরিষ্কার। এটা কোন যুক্তিই হতে পারেনা যে অন্যান্য দেশে সার্টিফিকেট লাগেনা বলে আমাদের দেশেও লাগতে পারবে না!

সরকারের সমালোচনাকে ধরে নেওয়া হয় গণতন্ত্রের জন্য আবশ্যিক ব্যাপার। যৌক্তিক সমালোচনা সরকারকে সঠিক পথে চলতে সাহায্য করে। একটা শক্তিশালী বিরোধীদল সংসদে থাকলে তারা সরকারকে ডিরেইলড হওয়া থেকে উদ্ধার করে। এসবই কেতাবি কথাবার্তা এবং কেতাবেই সীমাবদ্ধ। বলাবাহুল্য আমাদের দেশে এই সব গণতান্ত্রিক প্রাকটিস নেই বললেই চলে। বিরোধীদলের অবস্থান থেকে কিংবা অবহেলিত-নিপীড়িত সাধারণ মানুষের অবস্থান থেকে সরকারের কাজে সমর্থন বা সহযোগীতার উপমা দূরবীনদৃষ্টি স্বাপেক্ষ। তেমন রেওয়াজও নেই। ধরেই নেওয়া হয় সরকার যা করেন তা আখেরে জনগণের অকল্যাণই বয়ে আনে। সাধারণ নাগরিকদের অবশ্যি এক্ষেত্রে দোষও দেওয়া যাবেনা, কেননা অতীতে এই ধরণের নজিরই বেশি। এমন একটি নেতিবাঁচক ধারণা থাকার পরও আমরা দেখি এই সরকার কিছুদিন আগে একটি জনহিতকর আইন করেছিলেন। সেই আইনটি বাস্তবায়নের আগেই সরকারকে সেই অবস্থান থেকে সরিয়ে আনার জন্য আবার পায়তারা শুরু হয়েছে। যেখানে জনহিতকর পদক্ষেপ বা আইন নেই বললেই চলে, সেখানে সরকার যখন একটা ভাল কাজ করেন বা করতে উদ্যোগী হন তাতেও আমাদের সন্দেহ আর অবিশ্বাস দাপাদাপি করে!

সরকার এখন কি করতে পারে তা আমাদের পূর্বাভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারি। স্ক্র্যাপ দিয়ে হাজার হাজার টন এমএস, বিলেট ইত্যাদি তৈরি করে দেশের নির্মাণ শিল্পকে চালু রাখার নামে, সস্তায় এমএস পাওয়ার নামে এবং বার্ষিক ৬০০ থেকে ৯০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের নামে আমদানি নীতি সংশোধন করবেন। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হবে-"দেশের এবং দেশের মানুষের বৃহত্তর মঙ্গলের কথা বিবেচনা করে আমদানিনীতি অধিকতর গ্রহনযোগ্যরূপে সংশোধন করা হলো"

আর আমরাও আবার বিষাক্ত জাহাজে কর্মরত শ্রমিকের ক্ষয়ে যাওয়া হাত-পা, মৃত শ্রমিকের কদাকার মুখচ্ছবি, অসহায় সেই সব শ্রমিকের বউ-বাচ্চার আহাজারীর চিত্র সম্বলিত ওয়েভ লিঙ্কে এবং পত্র-পত্রিকায় দেখে আগামী লেখার উপকরণ খুঁজে নেব???!!!








সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৩৩
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×