অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আজ থেকে পাওয়া যাচ্ছে ঐতিহ্য'র স্টলে। প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ।দাম: ৯০ টাকা
‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’ এরকম একটি ধারণা ছোটগল্প নিয়ে প্রচলিত। গল্প লেখার ক্ষেত্রে সে ধারা থেকে বেরুনোরও উপায় নেই! কোনো না কোনোভাবে গল্পের এক ধরণের পরিণতি দিতেই হয়। তখন সে গল্প প্রচলিত ছকের প্রতিবিম্ব হয়ে ওঠে। এসব সূত্রটুত্র মাথায় রেখেই ‘অ্যান্টিগল্প’ এগিয়ে চলেছে। অনেকাংশেই সাধারণ গল্পের মত হয়েও শেষ পর্যন্ত গল্পগুলি প্রচলিত ধারার গল্প নয়। কোনো কোনো মোড়ে এসে হঠাৎই তীব্র বাঁক নিয়ে এক ধরণের বিপরীত আবহ সৃষ্টি করেছে, আর সে কারণেই গল্পগুলোকে বলা হচ্ছে - অ্যান্টিগল্প।
সাধারণত গল্প উপন্যাসের পটভূমি থেকে প্রাত্র পাত্রী সবই কল্পনায় সৃষ্টি, কিন্তু এই অ্যান্টিগল্পগুলোর পাত্র পাত্রীর নাম ধাম বাদে আর কোনো কিছুই কাল্পনিক নয়। যেমন ‘ক্রান্তিকালের মা’ গল্পটিতে যে নভেরা খাতুনের কথা বলা হয়েছে তিনি চরম বাস্তব চরিত্র। ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত বিপ্লবী মিজানুর রহমান টুটুলের মা। তা বাদেও প্রত্যেকটি চরিত্র, ঘটনা, সময় কাল, ঘটনার পরিসমাপ্তি সবই নিরেট বাস্তব। গল্পের প্রয়োজনে শুধু নামগুলোই বদলে গেছে।
..................................................................................................
রাশেদ। পাঁচ ফুট ছয়। ছত্রিশ-ত্রিশ-চৌত্রিশ। চশমা। স্টিলরীম। ওয়ান পয়েন্ট ফাইভ। চোখ ভাসা ভাসা। হনুর হাঁড় সামান্য উঁচু। চেস্টের বা পাশের রিবের সাত আর আটের মাঝখানে গর্তমত। ডান বাম দুটো হাতই সমান চলে। আক্রান্ত হলে সোজা এগিয়ে এসে
আক্রমনকারীর কণ্ঠনালী চেপে ধরে। প্রিয় অস্ত্র- জানা যায়নি। চুলে কোন বিশেষ বিশিষ্টতা নেই.....................
ফাইলটা খুলে গড় গড় করে পড়ে গেলেন ডিপার্টমেন্টের সবচে' তুখোড় পুলিশ সুপার মন্ডল। কেরামত মন্ডল। বিশেষ দায়িত্বে এই এলাকায় আসার পর থেকে সাধারণ পুলিশ পর্যন্ত খামারি দেয়া ভুলে গেছে। তার সামনে যাওয়ার পর তাদের স্বভাবিক বোলচালের ছন্দ পর্যন্ত ঘুলুট হয়ে গেছে।...হ্যাঁ স্যার..বানচো... সরি স্যার.....মাদারচো.......না না আমি বলছি কি স্যার.....চুত্.......না স্যার...বলছিলাম....এর পর 'সাট্আপ', 'স্টপ' এসবের কিছুই বলতে হয়নি। মন্ডলের চোখের ঠান্ডা সাপের চাউনিতেই বুকের রক্ত হিম হয়ে গেছে দারোগা-সেপাই সকলের ।
মন্ডল ফাইলটা দারোগার সামনে ছুড়ে দিয়ে বললেন-গেট লস্ট। টাইম ওনলি থারটিসিক্স আওয়ারস। ওনলি থারটিসিক্স।
১৮ মাস আগে। শহরের একটা বিশেষ জায়গায় ঘোরাঘুরি করে গোয়েন্দাদের বিশেষ সন্দেহের উদ্রেগ করার পর ফাঁদ পেতে রাশেদকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। রাশেদ একটা ভাঙ্গাবাড়ি খুঁজছিল......... দশ বছর আগেই তো বাড়িটা ছিল এখানে ? যাবে কোথায়? পষ্ট মনে আছে একটা টিনের গেট পেরিয়ে খোঁয়া বিছানো পথ ধরে কুড়ি-পঁচিশ পা হাঁটলেই একটা দোচালা ঘর , তার ঠিক পেছনই একটু ঢিবি মত। ঢিবিটার পাশেই একটা ঘোড়ানীমের গাছ ছিল ! সব মনে পড়ছে ওর। আশ্চর্য! বাড়ি, গাছ, গেট হাওয়া হয় কি করে? পর পর তিন দিন রহস্যজনক ভাবে ঘোরাঘুরি করার পর আশপাশের লোকজন পাগল পাগল বলে পিছু নিয়েছিল।
টিনের সেই গেটটার পাশে এখন কাঁচঘেরা একটা দোকান। টগবগে সব ছেলে-মেয়ে ঢুকছে আর বেরুচ্ছে। ওর দৃঢ়বিশ্বাস জিনিসটা আছে । ওখানেই আছে। কাল আবার আসবে এটা ভেবে বড় রাস্তায় উঠে এসেছিল। তারপর আপন মনে ফিরতি পথ ধরেছিল। নিজেকেই যেন শোনাচ্ছিল...থাকতেই হবে, এখানেই আছে। একবারের জন্যও ওর ষঢ়রিপুর কোনো রিপুতে ক্রিয়া করেনি যে ওর গতিবিধি নিয়ে রিপোর্ট হয়েছে, একটা ফাইলও তৈরি হয়েছে। জানবে কি করে ? দশ বছর আগের একটা ফাইল যে পুলিশের ওপর মহলের বিশেষ নির্দেশে ধূলো ময়লা ঝেড়ে আপটুডেট করে রখা হয়েছে সেটা ওর জানার কথা নয়।
চতুর্থদিন ও এ্যরেস্ট হলো। কথা বের করার জন্য পুলিশের ট্রাডিশনাল কায়দাগুলো এ্যপ্লাইও করা হলো, কিন্তু পুলিশ কিছুই বের করতে পারল না। সেপাইদের ধারণা হলো মাদা....দ এ্যয়সা ঘোড়েলের ঘোড়েল ,সহজে চিৎ হবে না। জোর করে চিৎ করে তারপর ইয়ে করতে হবে।
সপ্তম দিন পুলিশ হাসপালের ডাক্তার এসে রিপোর্ট দিল ......লেফ্ট আর্ম ব্রোকেন। রাইট নীক্যাপ ডিজলোকেটেড। নাম্বার এইট অব ব্যাকবোন স্পিলিট ডিসপ্লেসড। মে বি ওয়ান এ্যান্ড হাফ লিটার ব্লাড ডিসচার্জড....এ্যান্ড হি ইজ মেন্টালি পার্ট ডিজএ্যাবল।
দারোগা কুদ্দুসের মেজাজ বিগড়ে গেল ওই বালের রিপোর্ট দেখে।
-যা: বাঁড়া,মারলামনা ধরলামনা তাদেই শালার মাল খসে গেল ? এ তো দেখছি মহা চোদনাগিরিতে পড়া গেল !
ডাক্তারের রিপোর্টে যা হলো , রাশেদকে হাসপাতালে ট্রান্সফার করা হলো। চোদ্দ-পনের দিনের মাথায় একটু একটু হাঁটতে পারল দেখে ওই রাতেই বেডশিট টুকরো টুকরো করে দড়ি বানিয়ে জানালা দিয়ে পালালো । ও পালানোর পরদিনই বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে মন্ডল এসেছিলেন।
থারটিসিক্স আওয়ারের দরকার ছিল না। গোয়েন্দা বিভাগের হাসিখুশি চেহারার খুবই সদালাপি এমরান ফিস ফিস করে বললেন -খোঁজাখুঁজির দরকারই নেই, ওই বাড়িটার কাছে যেয়ে বসে থাক, ও ওখানে যাবেই। দায়িত্বপ্রাপ্ত দারোগার খোমা আবারো লাল হয়ে গেল - শালা বকরিচোদ বলে কি? আমরা বলে ঘাম ঝরিয়ে দিচ্ছি, আর মাগিপটানো চোদনা জ্ঞান দিচ্ছে?
কুদ্দুস যতই গালি দিক ঠিকঠাক ওই বাড়ির সামনে ওৎ পেতে বসল। ঘন্টাখানেক পরই ওর মেজাজ চড়তে শুরু করল। শালা কোথায় কায়েসের দোকানে বসে থাকা কচি মালটা ছানাছানি করব..... শালা জিনিস বটে! ওইটুকু একটা শরীর ! তার মধ্যে ইয়া দুইটা ইয়ে নিয়ে...... ধ্যাত্ বাল! কিছুক্ষণ পর আর থাকতে না পেরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে প্যান্টের চেন খুলল। কাজটা হয়ে যাবার পর দুতিনটা আড়াঝাঁকি দিয়ে জায়গামত ওটা সাইজ করতে গিয়েই দেখল -চান্দু আসেছ। ঠিক!
প্রথমত:অন্যায়, দ্বিতীয়ত: হাজতপালানো,তৃতীয়ত:ওদের ছানাছানি তে বাগড়া দেয়ার সব ঝাল একসাথে মিটিয়ে দেয়া হলো। যখন প্রায় জ্ঞান হারানোর অবস্থা ঠিক সেই সময়ে ধীর পায়ে উদয় হলেন মন্ডল......স্টপ! ধমকে উঠলেন মন্ডল। তোমাদেরকে ধরে আনতে বলেছি, মেরে ফেলতে নয়। স্টুপিড কোথাকার! বেরোও, বেরোও, যত্তোসব আনাংলার ধাড়ি।
রাশেদকে তুলে মন্ডলের ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো। রক্তটক্ত মুছিয়ে মোটামুটি ভদ্রস্থ করার পর খুব মোলায়েম স্বরে মন্ডল বললেন...
আমার মধ্যে ওরকম কোন ব্রুটালিটি পাবে না। আমি জানি পুলিশের এক্তিয়ার কতটুকু। আমি বিশ্বাস করি টর্চার করে কোন দিন ইনফরমেশন বের করা যায় না। তুমি আমাকে তোমার বড় ভাই ভাবতে পারো। -ছি: দেখেছ কি ভাবে মেরেছে গোঁয়ার গুলো! এই ভাবে কেউ মারে ? আমি এসব নিয়ে রিপোর্ট করব।
অনেক দিন পর একজন মানুষকে দেখে রাশেদ অভিমানে কষ্টে কেঁদে ফেলল। হুড়মুড় করে বলতে গেল তার টর্চারের কাহিনী.........থামো থামো....দরকার নেই, আমি যা বোঝার বুঝে নিয়েছি..... তুমি এখন রিল্যাক্স হও। আর কোন ভয় নেই, আমি থাকা অবস্থায় কেউ তোমার কিচ্ছুটি করতে পারবে না । কিছুক্ষণ মন্ডলের মুখের দিকে চেয়ে রাশেদের আতংক অনেকটাই কেটে গেল । আরো কিছুক্ষণ পর মন্ডল ফিস ফিস করে জানতে চাইল....তুমি ওখানে কি খুঁজছিলে রাশেদ ?
-কই কিছু না তো !
-না না খুঁজছিলে । হাসতে হাসতে বলল মন্ডল।
-আমি ওখানে গিয়েছিলাম......কিন্তু নেই...ওটা নেই......
-কি নেই
-তাতো জানি না ।
-জানো। তুমি কি কিছু লুকিয়ে রেখেছিলে ?
ঝট্ করে মন্ডলের মুখের দিকে তাকায় ও। অফিসার কি বলতে চায় ? ও কি জেনে গেছে?...
-কি ভাবছ? হ্যাঁ আমি জানি। তুমি ........
রাশেদের মাথার মধ্যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে...কি যেন মনে করতে চেয়েও পারছে না...কি সেটা ?..এক একবার মনে হয় মনে পড়ছে, আবার গুলিয়ে যাচ্ছে......জিহ্বা দিয়ে ঠোঁটের রক্ত চাটছিল ও, নোনতা। আসটে গন্ধ। জিহ্বাটা একটা ভাঙ্গা দাঁতে লাগতেই ছড়ে যায়...দাঁত...দাঁত.... হঠাৎ শব্দ করে বলে ওঠে ও...আপনি অফিসার...আপনার একটা দাঁত...উপরের মাঁড়ির আট নম্বর....সোনা বাঁধানো...দাঁত.. হ্যাঁ হ্যাঁ...ঝট্ করে উঠে বসে রাশেদ। বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকে ও.....আপনি মন্ডল....দশ বছর আগে....রাজশাহী...নওগাঁ....মুখের দুই কষা বেয়ে রক্ত গড়াচ্ছিল......আমি চিনেছি আপনাকে.....।
মন্ডলের মুখে দু'ধরণের ছবি খেলে যায়। একবার ঝাঁপসা নেগেটিভ। একবার পরিষ্কার পজেটিভ। মন্ডল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। পকেট থেকে ছোট্ট একটা চাকু বের করে। ব্লেডটা মাত্র সাড়ে তিন ইঞ্চি। ..আমার মধ্যে কোন ব্রুটালিটি পাবে না । আমি জানি বাম বুকের ঠিক স্তনের বোঁটার নিচে দুই রিবের মাঝখানে দিতে হবে। এক ফোঁটা রক্তও বেরুবে না। একেবারে পরীক্ষিত।
এবারো জয়ী হলো মন্ডল । হয়তো ওই বাড়িটার নিচে যা ছিল তা মন্ডলের জন্যই দশ বছর ধরে পড়ে ছিল। হাইরাইজ । ফাস্টফুড। পিচঢালাপথ। মার্বেল স্লাব। মাটি কই? তাছাড়া মাটি অত দিন মেটালকে রাস্ট করে দেয় বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা দেন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৪৪