somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতে ২ লাখ কৃষকের আত্মহত্যার করুণ ঘটনাবলি নিয়ে নির্মিত ডকুমেন্টরি-‘নিরোর অতিথিরা’!!!

১৬ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত ৩ মার্চ ভারতের ব্যাঙ্গালোর এর আই আই সায়েন্স সিটিতে প্রথম প্রদর্শনী হয়ে গেল বিখ্যাত তথ্যচিত্র ‘নিরোর অতিথিরা’র। ছবিটির অফিসিয়াল ট্রায়ালকে বাধাগ্রস্ত করতে কর্ণাটকের সরকার কম চেষ্টা করেনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছবিটি মুক্তি পেয়েছে এবং সাধারণ মানুষ জানতে পেরেছে গত এক দশক ধরে ভারতের কৃষকদের সঙ্গে কি আচরণ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার এবং ভারতের বিখ্যাত সব মিডিয়া টাইকুনেরা! এই ছবিটির নামকরণেও বিশেষ বৈশিষ্ট আছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যখন শত শত চাষী আত্মহত্যা করছে, তখন সরকারের এবং মিডিয়ার ধারণায় সে সব কেবলই ‘নিরোর বাঁশী’র সুর! আর সেই ব্যঙ্গ-শ্লেশকে অবলম্বন করেই ছবিটির নাম হয়েছে ‘নিরোর অতিথিরা’ বা "Niro's Guests"

ছবিটির বিষয় বস্তু ভারতের প্রায় দুই লাখ কৃষক, যারা গত দশ বছরে আত্মহত্যা করেছে। কেন আত্মহত্যা করেছে? কারণ তারা তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, কষ্টার্জিত ধারের টাকা লগ্নি করে যে ফসল উৎপাদন করে তার বাজার মূল্য পায় না। ধার করা টাকা শোধ দিতে না পেরে শেষ পর্যন্ত তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এভাবে গত দশ বছরে ভারতে প্রায় দুই লাখ কৃষকের মৃত্যু হয়েছে! চকচকে ঝকঝকে শত শত চ্যানেলে এই খবর আসেনি। তেমনভাবে আসেনি কোনো প্রিন্ট মিডিয়াতেও। ঠিক সেই সময় ‘দ্য হিন্দু’ সংবাদপত্রের মফস্বল বিষয়ক সম্পাদক পি সাঁইনাথ একেবারে প্রান্তিক চাষীদের ভেতরে গিয়ে খবর সংগ্রহ করে তা ছাপিয়ে বিভিন্ন রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে চাপ দিতে থাকেন। তার পরও সরকার তার সেই রিপোর্টকে আমলে আনেনি। এতে করেও পি সাঁইনাথ হতদ্যোম হয়ে পড়েননি। তিনি একের পর রিপোর্ট লিখে গেছেন, আর সেই সব রিপোর্টের শেষে তিনি একটি বার্তা সমাজকে জানাতে থেকেছেন, আর তা হলো-‘আমরা ভারতকে এই রূপে দেখতে চাই না।’

পি সাঁইনাথ শুধু ‘দ্য হিন্দু’র মফস্বল বিষয়ক সম্পাদকই নন। তিনি ২০০৭ সালে এশিয়ার সবচেয়ে সন্মানজনক ‘রামন ম্যাগসেসাই’ পুরষ্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক। যে পুরষ্কারকে ‘এশিয়ার নোবেল’ বলা হয়। তিনি একই সাথে সাহিত্য, সৃষ্টিশীল সামাজিক দায় দায়িত্ব এবং তথ্য প্রবাহ বিষয়েও খ্যাতিমান। এ যাবত ৩৫ বার বিশ্বস্তরের পুরষ্কার জিতেছেন। তার সর্বশেষ কাজ -

"the agrarian crisis has produced the largest journalistic body of work ever on the Indian countryside in terms of the problems faced by farming communities. It is also a body of work that goes far beyond the realm of journalism, capturing issues and complexities that academia and policy makers have failed.”

ছবিটি পরিচালনা করেছেন দীপা ভাটিয়া। যিনি বিখ্যাত চিত্র পরিচালক গোবিন্দ নিহালিনীর সাথে সহকারি হিসেবে দীর্ঘ দিন কাজ করেছেন। (দেব, হাজার চুরাশির মা, দিহাম প্রভৃতি বিখ্যাত ছবির সাথে জড়িত ছিলেন দীপা ভাটিয়া)। এর আগে বাণিজ্যিক ছবি করলেও দীপার এটা প্রথম তথ্য চিত্র। আর এই একটি ছবি কেন্দ্র করেই দীপা এখন আলোচিত। ‘নিরোর অতিথিরা’ তাকে বাণিজ্যিক ছবির আবহ থেকে এক ঝটকায় গণ মানুষের কাতারে সামিল করে দিয়েছে।

এদের দুজনকেই বাংলাদেশের গণমানুষের পক্ষ থেকে স্যালুট! আমাদের দেশে সারের দাবিতে শত শত কৃষকের মৃত্যু হলেও সেই সংবাদও আমাদের মিডিয়ায় আলোচিত হয় না। সেই সব বিভৎস মৃত্যু নিয়ে কেউ ডকুমেন্টারি বানানোর সাহস করেন না। তার বদলে আমাদের মিডিয়ায় মিডিয়া রুলস ভঙ্গ করে পুলিশের হাতে, RAB এর হাতে নিহত হতভাগাদের ভাঙ্গাচোরা ছবির প্রদর্শনী চলে! আর চলে কৃষকে নিয়ে নির্লজ্জ বাণিজ্যিকীকরণের লাম্পট্য! কৃষকে দিয়ে কাবাডি খেলানো হয়, তাদের নিয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের মচ্ছব করা হয়। এবং অতি অবশ্যই "কৃষকই বাংলার প্রাণ", "কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে" মার্কা স্লোগান নষ্টামি!

তথ্য সূত্রঃ মুম্বই মিরর ডট কম



পি সাঁইনাথ

পরিচালক দীপা ভাটিয়া

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩৭
১২টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×