somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাঙছে ১৯ দল !!!

২০ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৮:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বিএনপির সঙ্গে জোটের ছোট ছোট কিছু রাজনৈতিক দলের বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের বিষয়টি নিয়ে বিএনপি সুস্পষ্টভাবে কয়েকটি ছোট দলের মতামত নেয়নি। এ কারণে নির্বাচন বর্জনের বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে তারা মনেপ্রাণে মেনে নেয়নি। কিন্তু নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠন হওয়ার পর ওসব ছোট দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে আর বেশি দিন না থাকার পক্ষে অবস্থান নেয়। নির্বাচনের মাস তিনেক পরে এসে এখন নিশ্চিতভাবেই ভাঙনের কবলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯ দলীয় রাজনৈতিক জোট। ইতোমধ্যেই এই ১৯ দলীয় জোট থেকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ ভাসানী) সরে গেছে। এলডিপি, ডেমোক্রেটিক লীগ ও ইসলামী ঐক্যজোটসহ আরও কয়েকটি দল যে কোন সময় সরে যাওয়ার ঘোষণা দিতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
৩১ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ১৯ দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয় ন্যাপ ভাসানী। জোটে যথাযথ মূল্যায়ন না পাওয়া এবং এ জোটের অনেক সিদ্ধান্তের সঙ্গে এক না হতে পারায় জোট থেকে বেরিয়ে এসেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ারুল হক জানান। তিনি বলেন, জোটে থেকে কর্মীদের জন্য কিছুই করতে পারিনি। আমাদের কর্মীরাও চেয়েছে আমরা যেন জোট থেকে বেরিয়ে আসি। দল বাঁচাতেই আমরা জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা এখন বামফ্রন্টের মতো রাজনীতি করতে চাই। আর না হলে বসে থাকব। ন্যাপ ভাসানীর সরে যাওয়ায় ১৯ দলীয় জোট এখন ১৮ দলে পরিণত হয়েছে। একই কারণে আরও কয়েকটি দল জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
বিএনপি ঘটা করে ৪ দলীয় জোট সম্প্রসারণ করে সমমনা ছোট ছোট রাজনৈতিক দল নিয়ে প্রথমে ১৮ দলীয় জোট ও পরে ১৯ দলীয় জোট গঠন করলেও এসব ছোট দলকে মূল্যায়ন করেনি। এর ফলে দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ এতোদিন চাপা থাকলেও বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কিছু একটা সুবিধা পাবে এই ভেবে চুপ ছিল। কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বে পুরো জোট দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলে ছোট দলগুলোর আশায় গুড়েবালি পড়ে। এ কারণে কিছু ছোট দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ছাড়ার পথ খুঁজতে থাকে। এরই অংশ হিসেবে ন্যাপ ভাসানীর পর আরও কয়েকটি শরিক দল জোট ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের শরিকদলগুলোর মধ্যে জামায়াত ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (জেপি) ছাড়া অন্য কোনো দলকে দলই মনে করে না বিএনপি। ওসব দলের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে জোটের সিদ্ধান্ত বলে চালিয়ে দেয় বিএনপি। অন্যদিকে অপর একটি সূত্র বলছে, নিজেদের খুঁটির জোর না থাকায় ছোট দলগুলোও সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তুলে দিচ্ছে বিএনপির কাঁধে। ফলে জোটের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, মূল্যায়ন না করা থেকে মান-অভিমান ও ক্ষোভ-বিক্ষোভ দিন দিন বেড়েই চলছে।
উপজেলা নির্বাচন শুরু হওয়ার আগে খালেদা জিয়া রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামীকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাঁকে সামনের সারিতে বসতে না দেওয়ায় তিনি হলরুম থেকে বেরিয়ে যান। এছাড়া তিনি একবার আটক হন সকাল ১০টায় এবং একঘণ্টা পর ছাড়া পান অথচ খালেদা জিয়া রাত ১০টায় নেজামীর মুক্তির দাবি করে বিবৃতি দেন। এ নিয়ে বিএনপির প্রতি ইসলামী ঐক্যজোট চরম ক্ষুব্ধ হয়।
কর্নেল অলি (অব.)’র নেতৃত্বাধীন এলডিপিকেও বিএনপি জোটের রাজনীতিতে তেমন মূল্যায়ন করছে না বলে জানা গেছে। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে এলডিপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির প্রার্থী দেওয়ায় ২ দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে মনকষাকষির সৃষ্টি হয়। এ অবস্থার অবসান না ঘটালে যে কোনো সময় এলডিপি ১৮ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া এক সময়ের ডাকসাইটে রাজনৈতিক নেতা অলি আহাদের ডেমোক্রেটিক লীগকে অলি আহাদ মারা যাওয়ার পর আর বিএনপি মূল্যায়ন করছে না বলে জানা গেছে। এই ক্ষোভ থেকে এ দলটিও ১৮ দলীয় জোট ত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জোটের কিছু ছোট দল যে বিএনপির প্রতি ক্ষুব্ধ তা বুঝতে পেরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এসব দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যেই তিনি লেবার পার্টির ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলকে তাঁর গুলশান অফিসে ডেকে কথা বলেছেন। বাকি দলের সঙ্গেও তিনি শিগগিরই কথা বলবেন বলে জানা গেছে।
ছোট দলগুলোই কেবল নয়, জামায়াতের সঙ্গেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিএনপির মন কষাকষি চলছে। বিশেষ করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জামায়াত আন্দোলন সফল করতে মরিয়া হয়ে মাঠে নামলেও বিএনপির সিনিয়র নেতারা দলে দলে পালিয়ে যাওয়ায় এ আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার জন্য জামায়াত বিএনপিকে দায়ী করে। আবার উপজেলা নির্বাচনে জামায়াত বিএনপির বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়ায় জামায়াতের প্রতি বিএনপি হাইকমান্ড নাখোশ হয়। তবে জামায়াত রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় থাকায় বিএনপিকে ছেড়ে যাবে না। আর বিএনপিও ভোটের রাজনীতির কারণে জামায়াতকে ছাড়বে না। এ কারণেই কিছুদিন ২ দলের মধ্যে মান-অভিমান চললেও এখন আবার সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে। শিগগিরই জামায়াতের সঙ্গেও বিএনপি চেয়ারপারসন বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।
২০০১ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী ঐক্যজোট মিলে চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করে। কিন্তু কিছুদিন পরই এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি চারদলীয় জোট থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু নাজিউর রহমান মঞ্জু নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (বিজেপি) জোটে থেকে যায়। সরকারবিরোধী আন্দোলন বেগবান করতে ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সম্প্রসারণ করে ছোট ছোট সমমনা কিছু দলকে নিয়ে ১৮ দলীয় জোট গঠন করে। আর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিছুদিন আগে অর্থাৎ ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে এরশাদের জাতীয় পার্টি থেকে বের হয়ে কাজী জাফর আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করে ১৮ দলীয় জোটের সঙ্গে যোগ দিলে এই জোট ১৯ দলীয় জোটে পরিণত হয়। কিন্তু ৩১ মার্চ ন্যাপ ভাসানী এই জোট থেকে বের হয়ে গেলে এখন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ১৮ দলীয় জোটে পরিণত হয়।
বর্তমানে ১৮ দলীয় জোটের রাজনৈতিক দলগুলো হচ্ছে বিএনপি, জামায়াত, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), এলডিপি, জাতীয় পার্টি (জাফর), ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিশ, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), মুসলিম লীগ, ইসলামিক পার্টি ও ডেমোক্রেটিক লীগ।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×