somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাইবার জগতের অপব্যবহার শুরু করে শিবিরই প্রথম

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাইবার ক্রাইম বা সাইবার অপরাধ এখন আমাদের দেশেও খুব পরিচিত শব্দবন্ধ। সাইবার অপরাধ বলতে সাধারণভাবে ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে করা অপরাধ বুঝানো হয়ে থাকে। ইন্টারনেট যেমন মানুষের সামনে খুলে দিয়েছে ভার্চুয়াল দুনিয়া, তেমনি এই ইন্টারনেটের মাধ্যমেই সাইবার জগতে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে নানা অপরাধ। সাইবার অপরাধের কারণে বর্তমানে প্রযুক্তিনির্ভর মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। বিশেষ করে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ সাইট ব্যবহার করে প্রতারণাসহ নানা অপরাধের খবর প্রায়ই জানছি আমরা। দিন দিন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে সাইবার অপরাধীরা। দেশে প্রচলিত সাইবার ক্রাইমের মধ্যে রয়েছে প্রতারণা, ক্রেডিট কার্ডের নম্বর চুরি, ব্ল্যাকমেইল, পর্নোগ্রাফি, হয়রানি প্রভৃতি। সাইবার অপরাধীদের শিকারে পরিণত হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, সামাজিকভাবে হেনস্তা হওয়া, এমনকি এসবের পরিণামে প্রাণনাশের নজিরও রয়েছে। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলেছে সাইবার অপরাধের ধরণ ও কৌশল। আমাদের দেশে প্রচলিত সাইবার সুরক্ষা ব্যবস্থা ও প্রচলিত আইন রুখতে পারছে না অপরাধীদের।
আমাদের দেশে ইন্টারনেট কেন্দ্রিক যে অপরাধগুলো ঘটছে, এর মাঝে বেশি হলো সামাজিক যোগাযোগ সাইটের মাধ্যমে বন্ধুত্ব তৈরি করে মিথ্যা সম্পর্কের আশ্বাস বা অন্য কোনো প্রলোভন দেখিয়ে অন্যের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা বা প্রতারণার মাধ্যমে ফাঁদে ফেলা; কারো কোনো অন্তরঙ্গ বা আপত্তিকর অবস্থার ছবি বা অন্যকোনো একান্ত ব্যক্তিগত বা গোপনীয় তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া বা ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি প্রদান করে জিম্মি করা। স্কুল-কলেজ পড়–য়া অল্পবয়সী মেয়েরাই এসব প্রতারণার শিকার হচ্ছে বেশি। সাইবার অপরাধের শিকার বেশ কটি মেয়ের আত্মহত্যার দৃষ্টান্ত রয়েছে আমাদের সামনে। এ ছাড়া আরেকটি বড় অপরাধ প্রবণতা হলো ইন্টারনেটে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো। রাজনৈতিক বা বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে ইন্টারনেটে মিথ্যা বানোয়াট উস্কানিমূলক তথ্য প্রচারণা। এর পরিণামে ব্যক্তিবিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াই শুধু নয়, কোনো একটা জনগোষ্ঠী আক্রান্ত হওয়া থেকে জাতীয় স্থিতিশীলতা পর্যন্ত হুমকিগ্রস্ত হতে পারে। আমাদের চোখের সামনেই রয়েছে এর দৃষ্টান্ত একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছবি চাঁদে দেখা যাওয়ার প্রচারণায় ব্যাপক মানুষকে উস্কানি দিয়ে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি; মহানবীকে অসম্মান করা হয়েছে এমন একটি ফেসবুক স্টেটাসকে কেন্দ্র করে উদ্দেশ্যমূলক উস্কানির মাধ্যমে রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর জঘন্য আক্রমণ, তাদের বাড়িঘর-উপাসনালয় ধ্বংস করা বেশি দিন আগের ঘটনা নয়। এ ছাড়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রতিনিয়তই ছড়ানো হচ্ছে আরো নানা বিকৃত ছবি, পর্নোগ্রাফি আর যতো অরুচিকর ভার্চুয়াল সামগ্রী, চলছে আরো নানা রকম প্রতারণা, অপরাধকর্ম। আমরা প্রায়ই সংবাদ মাধ্যমে ইন্টারনেট-কেন্দ্রিক প্রতারণা ও অপরাধের খবর পাচ্ছি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরাই বলছেন, এ সংক্রান্ত অপরাধের মাত্রা আরো বেশি, অনেক অপরাধের খবরই সংবাদ মাধ্যমে আসে না। মানসম্মানের ভয়ে অনেকে এরকম অপরাধের শিকার হয়েও থানা পুলিশ কিংবা অন্য কোনো সংস্থার কাছে অভিযোগ করছেন না। ফলে অনেক ঘটনাই বিচারের আওতায় আসছে না আর যেগুলো আসছে, সেগুলোরও অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীদের শনাক্ত করা যায় না। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, দেশের প্রেক্ষাপটে সাইবার অপরাধের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের শনাক্তকরণের উপায়। সেবা গ্রহণ থেকে শুরু করে সেবা ব্যবহারকালে ব্যবহারকারীর গতিবিধি রেকর্ড করার যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই। অপরাধীরা নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে সহজেই মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ ও ব্যবহার করে যে কোনো অপরাধকর্ম করতে পারে। কাজেই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর গতিবিধি শনাক্তকরণের ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ দরকার। দরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাইবার অপরাধ বিষয়ে ভালোভাবে প্রশিক্ষিতকরণ। এছাড়া প্রচলিত আইনও বর্তমানের বহুমুখী সাইবার অপরাধ কভার করার জন্য পর্যাপ্ত নয়। কাজেই সাইবার অপরাধ বিষয়ক সময়োপযোগী আইনি সংস্কার বা আইন প্রণয়নেও কালক্ষেপণের সুযোগ নেই। আর শুধু র্যা ব, পুলিশ এবং বিচার বিভাগ দিয়েও এ অপরাধ ঠেকানো যাবে না, পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ হলো সামাজিক প্রতিরোধ। সাইবার অপরাধ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা ও সামাজিক প্রতিরোধ জোরদার করতে হবে।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×