somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আন্দোলন জমাতে পারছে না বিএনপি

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বড় বড় হুঙ্কার দিলেও কোনভাবেই সরকারবিরোধী আন্দোলনের পথ খুঁজে পাচ্ছে না বিএনপি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই আন্দোলনের ভাল ইস্যুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে তারা। কিন্তু আন্দোলনের জন্য মোক্ষম কোন ইস্যু না পেয়ে বিএনপি এখন হতাশ।
সূত্র মতে, নেতাকর্মীদের হতাশা কাটাতে বিএনপি হাইকমান্ড নানামুখী তৎপরতা চালালেও কিছুতেই সাফল্য আসছে না।
সম্প্রচার নীতিমালা ও বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার সরকারী সিদ্ধান্তের পর বিএনপির পক্ষ থেকে আশা করা হয়েছিল সাংবাদিক ও আইনজীবীরা আন্দোলনে ফুঁসে উঠবে। কিন্তু সাংবাদিক ও আইনজীবীরা নিজেদের পেশার স্বার্থেই আন্দোলনের পথে গিয়ে নিজেদের বিতর্কিত করতে চায়নি। এতে বিএনপি নেতারা ক্ষুব্ধ হন। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, সম্প্রচার নীতিমালার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদেরই সোচ্ছার হওয়া উচিত কিন্তু এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা এগিয়ে আসছেন না।
আলাপকালে এক বিএনপি নেতা বলেন, বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার সরকারী সিদ্ধান্তের পর বিএনপির পক্ষ থেকে আশা করা হয়েছিল আইনজীবীরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবেন। কিন্তু সাংবাদিকদের মতো তাঁরাও সে পথে যাননি।
বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় দলের হাইকমান্ড থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করার ব্যাপারে যেভাবে হাঁকডাক দেয়া হয়েছিল সেভাবে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের বিষয়টিতে তেমন সাড়া জাগানো যায়নি। উপরন্তু নির্বাচনের ক’দিন আগেই আন্দোলনের নামে নাশকতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় আইনশ্ঙ্খৃলা বাহিনী। একেকটি নাশকতামূলক কর্মকা-ের পর বিএনপির একাধিক নেতার নামে মামলা হয়। এ পরিস্থিতিতে গ্রেফতার আতঙ্কে দলের সিনিয়র নেতারা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা চরম হতাশ হয়। এ কারণে নির্বাচনের আগে বিএনপি আন্দোলনের যে ক’টি কর্মসূচী দেয় তার অধিকাংশই ব্যর্থ হয়। এ কারণে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন শেষ করে দেশে আরেকটি নতুন সরকারও গঠিত হয়ে যায়। আর নতুন সরকার গঠনের পর এ সরকার পুরো ৫ বছর মেয়াদ পূরণের কথা বলায় বিএনপি এখন আরও হতাশ হয়ে পড়েছে।
এদিকে শীঘ্রই বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করার কোন লক্ষণ না থাকায় বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যেই হতাশা দিন দিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে দলের যে সকল নেতাকর্মী নির্বাচনের আগে আন্দোলন চলাকালে বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল তারা এখন মামলা, হামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে ঘরে থাকতে পারছে না। নিজ এলাকা ছেড়ে বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। কেউ কেউ দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। এসব নেতাকর্মীকে দলের উচ্চ পর্যায় থেকে তেমন কোন সহযোগিতাও দেয়া হচ্ছে না। তাই এ সকল বিএনপি নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা এখন চরম অস্থিরতার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। তবে এই অস্থিরতা কাটাতে কোন কোন তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মী এখন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নিজেদের নিরাপদ রাখার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যেই সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, খাগড়াছড়ি ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির অনেক তৃণমূল নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
পুরনো ইস্যুতে আন্দোলন জমাতে না পেরে বিএনপি এখন সকল দলের অংশগ্রহণে পরবর্তী নির্বাচনের দাবিসহ যে কোন জাতীয় ইস্যুতে আন্দোলন নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চায়। এ জন্য নতুন নতুন ইস্যুর জন্য অপেক্ষা করছে দলটি। যখনই কোন নতুন ইস্যু পেয়ে যাবে সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করবে তারা। আর নতুন কোন ইস্যু না পেলে সভা-সমাবেশসহ স্বাভাবিক কর্মসূচী দিয়ে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখার চেষ্টা করে যাবে। সেই সঙ্গে বিদেশী কূটনীতিক ও দাতা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে করার ব্যাপারে চেষ্টা-তদ্বির চালিয়ে যাবে বিএনপি।
বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে মোদি সরকারের সহযোগিতা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর চাপ বৃদ্ধি করার চেষ্টা করবে বিএনপি। এ জন্য বিএনপির একটি টিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন বলে জানা গেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিকদের কাছ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস পেলেও ভারতের রাজনীতিক ও কূটনীতিকদের কাছ থেকে সেভাবে সহযোগিতার আশ্বাস পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানা গেছে।
বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, খালেদা জিয়াসহ দলের সিনিয়র নেতারা বার বার আন্দোলনের কথা বললেও তাদের কথায় আশ্বস্ত হতে পারছে না তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তারা মনে করছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজপথে কঠোর আন্দোলন করতে গিয়ে একদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিগৃহীত হয়েছেন আর অপরদিকে এত বড় ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন করার পরও দলের কেন্দ্র থেকে তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে সারাদেশে আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন রাজধানীতে অবস্থান করা কেন্দ্রীয় নেতারা দলে দলে আত্মগোপনে চলে যান। আর এ কারণেই সে সময়ের আন্দোলন ব্যর্থ হয়। আর আন্দোলনের এ ব্যর্থতার রেষ এখনও বিএনপি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তাই দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
বিএনপিসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে একটি আন্দোলন সফল করতে হলে কোন রাজনৈতিক দলের বেশ কয়েক নেতাকে অনেক পরিশ্রম ও ত্যাগ শিকার করতে হয়। কিন্তু বিএনপিতে এখন তেমন পরিশ্রমী ও ত্যাগী নেতার বড়ই অভাব। আর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও বয়সের ভারে ন্যুব্জ। আর তার চারপাশে সবসময় যাঁরা থাকেন ত্যাঁরা হচ্ছেন আলামপ্রিয়। তাঁদের পক্ষে রাজপথে নেমে সাধারণ নেতাকর্মীদের নিয়ে কঠোর আন্দোলন করা সম্ভব নয়। আর এক সময় বিএনপির যে ত্যাগী নেতাকর্মীরা রাজপথ কাঁপাতেন তাঁরা এখন নানাভাবে অর্থ কামিয়ে ব্যবসায়ী বনে গেছেন। তাই ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি করে তারা আর আন্দোলনে নামতে চাচ্ছে না। আর কিছু ত্যাগী নেতাকর্মী এখনও থাকলেও তাঁরা মামলার ভয়ে নিজেদের আড়াল করে রাখছেন।
অবশ্য বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান লন্ডন থেকে মাঝে মধ্যে বিএনপির কর্মকা-ে সহযোগিতা দিয়ে থাকে। তবে এতে দূরে থেকে নিজের বিশ্বস্ত কিছু লোকের মাধ্যমে এ সহযোগিতা দিতে গিয়ে কখনও কখনও আবার কিছু সমস্যারও সৃষ্টি হয়। কারণ তার ঘনিষ্ঠজনরা সব সময় সঠিক তথ্য তারেক রহমানের কাছে পৌঁছাতে পারেন না। যে কারণে সমস্যার সৃষ্টি হয়। আর দূরে থাকার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে সে সমস্যার সমাধানও করতে পারেন না তিনি।
জানা যায়, বিএনপি হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে এখন নতুন বছরে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ জন্য তারা একটি ভাল ইস্যুর সন্ধানে রয়েছে। তবে আগামী জুন মাসের মধ্যে ভাল কোন ইস্যু না পেলে বিএনপিতে হতাশা আরও বাড়ার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও দলটি কোণঠাসা হয়ে পড়বে বলে খোদ দলের নেতাকর্মীরাই এখন বলাবলি করছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, আন্দোলন সংগ্রাম একদিনে হয় না। সরকার যেভাবে দেশ চালাচ্ছে তাতে জনমনে চরম অসন্তোষ চলছে। দেশের জনগণ ফুঁসে উঠলে আন্দোলনও দানা বেঁধে উঠবে। জনগণ ফুঁসে উঠলে তখন সরকার আর সামাল দিতে পারবে না। তিনি বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আন্দোলনে আছি। দল গুছিয়ে শীঘ্রই আন্দোলন জোরদার করা হবে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×