somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাস ও সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্প্রতি প্রশ্ন উঠানো হয়েছে, স্বাধীনতা ঘোষণা ছাড়াই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এ ধরনের একটি আচমকা-যুক্তিহীন ও ইতিহাসবিবর্জিত প্রশ্ন নিয়ে আলোচনার ইচ্ছা না থাকলেও যেহেতু প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এ কে খন্দকারের লিখিত বই থেকে, সে জন্য এর প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো উত্থাপন ঐতিহাসিক কারণেই জরুরি। তবে এ প্রসঙ্গে তার উত্থাপিত মৌলিক প্রশ্ন সম্পর্কে সবিনয়ে সংক্ষিপ্তভাবে ঐতিহাসিক ও প্রাসঙ্গিক বিষয় আলোচনার দাবি রাখে। কেননা এর ফলশ্রুতিতে দেশ ও জাতির ভ্রান্তি নিরসনে যেমন নতুন মাত্রা যোগ হবে তেমনি সবচেয়ে উপকৃত হতে পারি আমি স্বয়ং।
এক. মার্কিন গোপন দলিলে লিখিত আছে, 'মুজিব ও ইয়াহিয়া খান ২৩ মার্চ একটি সম্ভাব্য সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল অবিলম্বে বাংলাদেশের প্রাদেশিক সরকার গঠিত হবে এবং কেন্দ্রের হাতে কেবল দেশ রক্ষা, বিদেশনীতি এবং অর্থ সীমিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে'। কিসেঞ্জার সিআইএর প্রধান রিচার্ড হেলমসকে জিজ্ঞাসা করেন শেখ মুজিব গ্রেফতার হলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে? তিনি বলেন, বর্তমানে পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজিবের যে অত্যুঙ্গ জনপ্রিয়তা ও আবেগ রয়েছে তার ফলে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে, যার পরিসমাপ্তি ঘটবে স্বাধীনতা প্রাপ্তির মাধ্যমে। কিসেঞ্জার বলেন, পরিস্থিতি যাই হোক আমরা পাকিস্তানের পক্ষে থাকব। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা, স্টেটস ডিপার্টমেন্ট সবাই অবগত ছিলেন, শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে কোনো ছাড় দেবেন না।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী নিরীহ বাঙালির ওপর যে আক্রমণ করবে এ কথা বঙ্গবন্ধুর অজানা ছিল না। প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ওইদিন রাজনৈতিক সমঝোতার ঘোষণা না দিয়েই ছদ্মবেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। যাওয়ার আগে তিনি সামরিক বাহিনীকে আক্রমণের নির্দেশ দেন। এ বিষয়টি বঙ্গবন্ধু অবগত ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা সম্পর্কে গবেষণায় দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু বেশ কয়েকটি চ্যানেল প্রস্তুত করেছিলেন। এগুলোর মধ্যে ছিল ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস ও অন্যান্য স্থানে রক্ষিত ওয়্যারলেস, গুলিস্তানস্থ টিএন্ডটি ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি ও টেলিফোন অফিস থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রদত্ত ঘোষণা প্রেরণের ব্যবস্থা। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বিভিন্ন চ্যানেলে প্রদত্ত স্বাধীনতার ঘোষণা সমগ্র দেশে পৌঁছে যায়। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে এই ঘোষণা বিস্তারিত উল্লেখ আছে। এমনকি ১৫ মার্চ মার্কিন গোপন নথির এক তথ্যে বলা হচ্ছে- 'মুজিব দেশের শাসনভার গ্রহণ করেছেন।' ২৬ মার্চ হেনরি কিসিঞ্জারের জবাবে সিআইএ প্রধান তাকে জানান, A clandestine radio broadcast has Mujibur Rahman declaring the independence of Bangladesh.
দুই. গ্রেফতারের পূর্বে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎপ্রাপ্ত শেষ ব্যক্তি হিসেবে দাবিদার বিশিষ্ট সাংবাদিক প্রয়াত আতাউস সামাদ তার বইতে লিখেছেন, সামরিক বাহিনীর আক্রমণের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলাতে বঙ্গবন্ধু তার দিকে মাথা নিচু করে যাতে তিনি শুনতে পান সেভাবেই বললেন, 'আই হ্যাভ গিভেন ইউ ইনডিপেন্ডেন্ট। নাউ গো অ্যান্ড প্রিজার্ভ ইট।' স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে বেলাল মোহাম্মদ বলেছেন, '২৫ মার্চ দিবাগত রাতে তারবার্তা আকারে বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রামে যে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন, যার ভিত্তিতে চট্টগ্রাম শহরে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণা মাইকিং করে প্রচার করা হয়। ঘোষণা সম্পর্কে সাইক্লোস্টাইল হ্যান্ডবিল বিতরণ করা হয়। ২৬ মার্চ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার আলোকে লিখিত বক্তব্য বেতারে প্রচার করেন। যা ঐতিহাসিকভাবে সত্য।
তিন. বইটিতে প্রশ্নাকারে বিশদভাবে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেনাবাহিনীকে নির্দেশনা না দেওয়ার ফলে স্বাধীনতাযুদ্ধে সময় ক্ষেপণ হয়েছে ও বহুলোকের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের সুসংগঠিত করা হয়নি। আমি তখন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য। বঙ্গবন্ধু সব নেতাকে ৭ মার্চের পরই এলাকায় যাওয়ার ও সর্বত্র সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন। তখনই সারা দেশে ট্রেনিং শুরু হয়। থানা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করা হয়। নিকটবর্তী ইপিআর বাহিনীর সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করা হয়। মার্কিন গোপন দলিলে বলা হয়েছে, ২৫ মার্চ ৫০০০ বাঙালি সৈন্য এবং তার বিপরীতে ২০ হাজার পাকিস্তানি নিয়মিত সৈন্য বাংলাদেশে অবস্থান করেছে। তা ছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ইপিআর, পুলিশ, আনসার, মুজাহিদবাহিনী সব মিলিয়ে আরও ১৩ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছিল। কিন্তু ইপিআর বাহিনীর যা ছিল মুক্তিযুদ্ধের অগ্রণী বাহিনীর অধিকাংশ ইউনিটে কমান্ডিং অফিসার ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা। সে সেনাবাহিনীর মনোভাব সম্পর্কে ১৯৭২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মুক্তিবাহিনীর সেনাপ্রধান জেনারেল ওসমানী বলেছেন, 'পাকিস্তান সামরিক বাহিনী যদি শুধু ছাত্র-যুবক, শ্রমিক ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে তাদের আক্রমণ সীমাবদ্ধ রাখত তাহলে বাঙালি সেনা-অফিসাররা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করত কিনা সন্দেহ। যখন তাদের ওপর আক্রমণ শুরু হলো তখন কেবল তারা রাতারাতি মুক্তিবাহিনী হিসেবে এগিয়ে এলেন।' একটানা ১৯৫১-১৯৬৯ অর্থাৎ ১৮ বছর ধরে পাকিস্তানে কর্মরত বিমান বাহিনীর চৌকস ও মেধাবী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে এ কে খন্দকার বাংলাদেশে এসে অতি সহজে কর্মরত বাঙালি সেনাসদস্যগণের যে মনোভাব ছিল তার মনস্তাত্তি্বক বিশ্লেষণ করেছেন কিনা তা আমার জানা নেই। কারণ '৭০ সালের নির্বাচনের আগের ঘটনাবলি সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা সীমিত হয়ে থাকবে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ। আগরতলা মামলার অভিজ্ঞতা তার চিন্তা-চেতনাকে সমৃদ্ধ করেছে। সেসময় বাঙালি সেনা-কর্মকর্তাদের ওপর নানা ধরনের মানসিক চাপ ও পেশাগত অমর্যাদাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল এবং বাঙালি সেনা অফিসারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। যার ফলে তারা নিজেরাই একে অপরের সঙ্গে মনখুলে কথা বা সম্পর্ক রাখতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। সে কারণে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক চটজলদি সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ বিভিন্ন গ্রুপে ও কমান্ডে বিভক্ত বাঙালি সামরিক সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি দেওয়া যথার্থ হতো কিনা তারও বিশ্লেষণ প্রয়োজন। কেননা আগরতলা মামলায় অভিযুক্ত সেনাবাহিনীর নিদারুণ-নির্যাতন তাদের মনে জ্বল জ্বল করছিল। এ ছাড়া পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করত কিনা সেটাও বিবেচ্য। চট্টগ্রামে ইপিআরের ক্যাপ্টেন মেজর রফিক, মেজর সাফায়েত জামিল, খালেদ মোশাররফসহ দু-চারজন ব্যতিক্রম ব্যতীত অধিকাংশ সেনাছাউনিতে বাঙালি সেনা-কর্মকর্তারা পাকিস্তানিদের দ্বারা আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত অস্ত্র তুলে নেননি। তারা নির্দেশ পেলেও একসঙ্গে যুদ্ধে এগিয়ে এসে খন্দকার সাহেবের মতে 'রাতারাতি দেশ স্বাধীন করতে পারতেন' কিনা সন্দেহ। একটি ক্ষুদ্র দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়টি দেখা একরকম যেমনটি দেখেছেন এ কে খন্দকার। কিন্তু সার্বিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের বিশ্লেষণ তার লিখিত পুস্তকে অনুপস্থিত থাকায় তার লেখা সম্পূর্ণ পটভূমিকে স্পর্শ করেনি।
চার. আহমেদ সালিম রচিত 'ব্লাড বিটেন ট্র্যাক' পুস্তকে স্বাধীনতা ঘোষণা সম্পর্কে লিখেছেন, 'জেনারেল টিক্কা খানকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের গ্রেফতার প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে টিক্কা খান জবাব দেন, 'আমার কো-অর্ডিনেশন অফিসার একটি তিন ব্যান্ড রেডিও নিয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলেছিল, 'স্যার, শুনুন শেখ সাহেব স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন' এবং আমি নিজে রেডিওর এক বিশেষ ফ্রিকোয়েন্সিতে সেই স্বাধীনতার ঘোষণা শুনি। আমি তার কণ্ঠের সঙ্গে পরিচিত ছিলাম তাই তাকে গ্রেফতার করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না। পাকিস্তানে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বাংলাদেশ স্বাধীন করার অভিযোগে পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে দেশদ্রোহী হিসেবে অভিযুক্ত করেছিলেন। ২৬ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান প্রদত্ত বেতার-টিভির বক্তৃতায় তার প্রমাণ বিধৃত।
পাঁচ. স্বাধীনতা ঘোষিত না হলে কীসের ভিত্তিতে সরকার গঠিত হয়েছিল? এ প্রসঙ্গে তিনি শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণা সংবলিত বঙ্গবন্ধুর কাছে উত্থাপিত 'এক টুকরো কাগজে লেখা' পাঠ করেননি বলে খন্দকার সাহেব এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা করেননি। বঙ্গবন্ধু তাজউদ্দীন সাহেবকে বলেছিলেন, 'এই চিরকুটে ঘোষণার দরকার হবে না। মনি, সিরাজুল আলম কলকাতা থেকে ঘুরে এসেছে। চিত্তরঞ্জন সুতারের সঙ্গে কথা বলে এসেছে। সেই তোদের ব্যবস্থা করে দেবে।' সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন করার পরিকল্পনা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু এক নম্বর আসামি ছিলেন। সে অভিজ্ঞতা তার মনে ক্রিয়াশীল ছিল। সেজন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে তার পরিকল্পনায় ছিল জনযুদ্ধ। ৭ মার্চ তিনি ওই জনযুদ্ধের নির্দেশনা প্রদান করেন।
ছয়. জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে যেমন জাতীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিতে হয়েছে, তেমনি জাতিসংঘ স্বীকৃত একটি রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরুদ্ধে প্রথম আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত হলে জাতিসংঘের চার্টার অনুযায়ী আত্দনিয়ন্ত্রণের অধিকার সমুন্নত থাকে না। সে জন্য পাকিস্তান সামরিক বাহিনী নিরীহ বাঙালিদের ওপর আক্রমণ শুরু করলে বঙ্গবন্ধু যথারীতি স্বাধীনতার ঘোষণা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।
সাত. তাজউদ্দীন আহমদ ও ব্যারিস্টার আমিনুল ইসলাম ভারত সীমান্তে পৌঁছালেন। বর্ডারে পৌঁছে তারা আশ্চর্য হলেন যে, যখন দেখলেন অপরিচিত দুজন লোক তাদের সেলুট দিয়ে অভ্যর্থনা জানায়। তাদের পরিচয় তারা বিএসএফের লোক। তাদের ওপর ইনেস্ট্রাকশন ছিল বিএসএফের প্রধান রুস্তমজির কাছে নিয়ে যাওয়া। তিনি অস্থিরভাবে অপেক্ষা করছেন। রুস্তমজির জিপে তারা উঠে বসলেন। রুস্তমজির সঙ্গে দেখা হলে তিনি বললেন, কলকাতা না গিয়ে সোজা দিলি্ল চলে যান, 'ইন্দিরাজির সঙ্গে সাক্ষৎ করুন।' সাক্ষাতে কয়েক দিন বিলম্ব হয়। এর মধ্যে পিএন হাস্কার, কাউলসহ নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে দুজনের আলোচনা হয়। ৩ এপ্রিল ইন্দিরা গান্ধী সরকার গঠনের কথা জিজ্ঞাসা করলে তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন। সেই প্রেক্ষিতে তাকে প্রেসিডেন্ট করে ইতিমধ্যে সরকার গঠন করা হয়েছে। সেই আলোচনায় কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত। ক) সীমান্তের কাছাকাছি রণাঙ্গন নির্ধারণ। খ) ভারতে বসেই কূটনৈতিক তৎপরতা ও সরকারের কার্যপরিচালনার সুবিধাদি প্রদান। গ) অস্ত্র সাহায্য। ঘ) একটি শক্তিশালী বেতারযন্ত্র।
আট . বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন বলেই তার ভিত্তিতে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম স্বাধীনতার খসড়া সনদ রচনা করেন, যা প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন কর্তৃক অনুমোদিত হয়। মূলত 'প্রোক্লেমেশন অব ইন্ডিপেনডেন্স' হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম সাংবিধানিক দলিল। অন্যকথায়, 'জেনেসিস অব দ্য কনেস্টেটিউশন'। যা সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদে চতুর্থ তফসিলে বর্ণিত ও সাংবিধানিকভাবে অনুমোদিত। স্বাধীনতার সনদ আইনানুগভাবে অনুমোদন করেন জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত সদস্যগণ। এই সনদের ভিত্তিতেই ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে আইনানুগ সরকার শপথ গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। এই সরকারের অধীনেই জেনারেল ওসমানী সেনাপ্রধান ও এ কে খন্দকার উপ-সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান ও দায়িত্ব পালন করেন।
নয়. ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল গণপরিষদে উদ্বোধনী ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, "২৫ শে মার্চ তারিখে আমাদের আক্রমণ করল। তখন আমরা বুঝতে পারলাম যে আমাদের শেষ সংগ্রাম শুরু হয়ে গেছে। আমি ওয়্যারলেসে চট্টগ্রামে জানালাম বাংলাদেশ আজ থেকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। এই খবর প্রত্যেককে পৌঁছে দেওয়া হোক- যাতে প্রতিটি থানায়, মহকুমায়, জেলায় প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে উঠতে পারে। সে জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছিলাম।" এরই প্রেক্ষিতে ওই দিন পার্লামেন্টের প্রস্তাবের একাংশে বলা হয়, "১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার যে ঘোষণা করেছিলেন এবং যে ঘোষণা মুজিবনগর থেকে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বীকৃত ও সমর্থিত হয়েছিল এই সঙ্গে এই গণপরিষদ তাতে একাত্দতা প্রকাশ করছে।" বাংলাদেশের সংবিধানেও মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রস্তাবনায় বিদ্যমান।
দশ. তৃতীয় প্রশ্ন হলো ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে যে ঐতিহাসিক দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দেন, সে ভাষণ পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে আখ্যায়িত। যে ভাষণে বিধৃত আছে মুক্তিযুদ্ধের ও রাজনৈতিক কৌশলগত দিক। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও মুক্তির নির্দেশনা। বিশাল ওই জনসভায় তৎসময়ে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ সদস্য হিসেবে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। ভাষণের শেষে বঙ্গবন্ধু 'জয় পাকিস্তান' উচ্চারণ করেছিলেন এ কথা এ কে খন্দকার সাহেব তার বইতে উল্লেখ করলেও আমার মতো সচেতন মানুষের কর্ণকূহরে সেদিন তা প্রবেশ করেনি। এ সম্পর্কে এককালীন তথ্যমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা পার্লামেন্টে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে 'জয় পাকিস্তান' নিয়ে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি আকাশ-পাতাল ঘেঁটেও সে চ্যালেঞ্জ প্রমাণ করতে পারেননি। সম্মানীয় আবদুল করিম খন্দকার জিয়াউর রহমানের আমলে (১৯৭৬-১৯৮২) পর্যন্ত রাষ্ট্রদূত, এরশাদের শাসনকাল (১৯৮২-১৯৮৬) সাল পর্যন্ত ভারতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, ১৯৯৮ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদে সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬-১৯৯০ সময়সীমায় এরশাদ সরকারের এবং ২০০৯-২০১৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন। তার মতো অভিজ্ঞতা, বিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং বিদগ্ধবরেণ্য ব্যক্তি যদি তার বক্তব্যের স্বপক্ষে দলিল, প্রমাণপত্র উপস্থিত করতে পারেন তাহলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। না হলে তিনি সংবিধান লঙ্ঘন ও ইতিহাসের চ্যালেঞ্জে একজন বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবেই চিহ্নিত হবেন। মূল লেখক: অধ্যাপক আবু সাইয়িদ
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×