৩৩ বছর পর আবারও বায়তুল মোকারমে ঘৃণার জুতা নিক্ষিপ্ত হলো একাত্তরের রাজাকার শিরোমণি গোলাম আযমের প্রতি। ১৯৮১ সালে এক জানাজায় অংশ নিয়ে বিক্ষিপ্ত জনতা জুতাপেটা করেন গোলাম আযমকে। গতকাল শনিবার তার মরদেহ বায়তুল মোকাররমে আসার পথে পল্টন মোড়ে উপস্থিত বিক্ষুব্ধ জনতা তার লাশবাহী ফ্রিজার ভ্যানে জুতা নিক্ষেপ করে। এর মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণ হলো মৃত্যুর পরও গোলাম আযমকে ক্ষমা করেনি বাংলাদেশ। এছাড়া বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনে বেশ কয়েকটি ককটেল ফাটানো হয়। এদিকে বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন ও অনলাইন এক্টিভিস্টরা স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে গোলাম আযমের লাশ দাফনের প্রতিবাদে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
শনিবার জোহরের নামাজের আগে বিজয়নগর দিয়ে পল্টনের দিকে গোলাম আযমের লাশ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছলে তাতে জুতা নিক্ষেপ করা হয়। ভিড়ের মধ্যে মরদেহবাহী কফিন নিয়ে যাওয়ার সময় কেউ একজন ‘জয় বাংলা’ বলে মরদেহের দিকে জুতা ছুড়ে মারে। ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদীত্য বসু এ বিষয়ে সন্ধ্যায় বর্তমানকে জানান, গণজাগরণ মঞ্চের শুরু থেকে থাকা ও অন্যতম সংগঠক মাহমুদুল হক মুন্সী বাঁধন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে গোলাম আযমের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সকে লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে মারেন। এরপর পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাকে ও অন্যদের সরিয়ে দেয়। জানাজায় অংশ নিতে আসা ছাত্রশিবিরের কর্মীরাও বিক্ষোভরত ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে জুতা ছোড়ে।
এর আগে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বাধীন গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের নেতাকর্মী ও ব্লগাররা গোলাম আযমের জানাজা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়। তারা শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের দিকে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরে তারা পল্টন মোড়ে অবস্থান নেন। এরই জের ধরে বায়তুল মোকাররম এলাকায় চলছিল অস্থিরতা। সেখানে ৬টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে।
‘গোলাম আযম শয়তান, লাশ যাবে পাকিস্তান’
‘গোলাম আযম শয়তান, লাশ যাবে পাকিস্তান’— এই স্লোগান নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিভিত্তিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো প্রতিবাদ মিছিল করেছে। তারা গোলাম আযমের জানাজা প্রতিহত করতে টিএসসি থেকে মিছিল নিয়ে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের দিকে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ তাদের জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাধা দেয়। তারা সেখানেই বসে বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভ সমাবেশে কামাল পাশা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন গণজাগরণ মঞ্চ, ছাত্রলীগ, ছাত্রমৈত্রী ও অন্যান্য ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনও অংশ নেয়। এখানে আরও ছিল সিপি গ্যাং, চুরুগুষ্ঠী ও স্লোগান’৭১। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি মেহেদী হাসান, আরেফ ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক মোকলেছুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড ঢাবি অংশের সভাপতি আল মামুন, ব্লগার আতিক মাহমুদ, ফরহাদ হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সেলিম রেজা প্রমুখ।
সমাবেশে ছাত্রমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক তানভীর রুসমত বলেন, ‘গোলাম আযম কিসের অধ্যাপক। তিনি একজন বেয়াদব। তিনি বাঙালি জাতির প্রতি যে বেয়াদবি করেছেন তা ক্ষমার অযোগ্য। তাই তার লাশ পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া উচিত।’
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম বায়তুল মোকাররমের দিকে বিক্ষোভ করতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়।
বায়তুল মোকাররমের সামনে ককটেল
গোলাম আযমের জানাজা সফলভাবে সম্পন্ন করতে পল্টন থেকে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত সড়কে সব ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল; কিন্তু লাশ নিয়ে আসার আগে সকাল সোয়া ১১টায় বায়তুল মোকাররম এলাকায় পরপর কয়েকটি হাতবোমা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হঠাত্ করেই বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের ওভারব্রিজের পাশে বিকট শব্দে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এর পর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনের সামনে আরও চারটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। পরে দৈনিক বাংলা মোড় থেকে একটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করে পুলিশ।
এ বিষয়ে মতিঝিল জোনের এডিসি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি। কারা ককটেল ফাটিয়েছে এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।’
এদিকে জানাজা উপলক্ষে সকাল ৮টা থেকেই সাঁজোয়াযানসহ পুলিশ অবস্থান নিয়েছে মসজিদের সামনে, উত্তর ও পশ্চিম গেটে। নিরাপত্তার স্বার্থে বায়তুল মোকাররমের আশপাশে বসানো ভাসমান দোকানপাট সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। জানাজার পর আবার এসব দোকানপাট বসতে দেয়া হয়। - See more at: Click This Link