somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোন্দলে বেহাল তৃণমূল বিএনপি

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রায় এক দশক ধরে প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশে থাকা বিএনপি তৃণমূল পর্যায়ে অভ্যন্তরীন কোন্দলে পড়ে ঘুরে দাঁড়াতে হিমশিম খাচ্ছে। ক্রমশ: দুর্বল হচ্ছেন মাঠের নেতাকর্মীরা। সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেকটা শিথিল হয়ে পড়েছে। মুলত: দলের স্থানীয় পর্যায়ে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার, ‘পকেট পলিটিকস’ (অনুগত নেতা-কর্মীদের নিয়ে ব্যক্তি স্বার্থে দলীয় কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ), নেতৃত্ব ও ভবিষ্যতে সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হওয়ার প্রতিযোগিতার কারণে এ দ্বন্দ্ব নিরসনে সফল হচ্ছেন না হাইকমান্ড। গ্রুপিং এবং দ্বন্দ্ব-সংঘাতহীন কোন জেলা ও উপজেলা কমিটি নেই।

কিছুসংখ্যক কেন্দ্রীয় নেতা নিজের নামে নিজ অনুসারীদের নিয়ে দলে পৃথক বলয় সৃষ্টি করে রেখেছেন। গ্রুপে গ্রুপে বিভক্তি ও কোন্দল নিরসনে দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত ৫১টি টিম জেলা সফরে গিয়ে প্রকাশ্য স্থানীয় সংঘর্ষ-সংঘাত ও রক্তারক্তি প্রত্যক্ষ করেছেন।

২০১৫ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়ার পর গত দুই বছরেও শেষ হয়নি বিএনপির ৭৫ টি সাংগঠনিক জেলার পুনর্গঠন। সর্বশেষ তৃণমূলকে চাঙ্গা, তহবিল গঠন ও ডাটাবেজ তৈরির জন্য সদস্য সংগ্রহ অভিযানও দলীয় কোন্দলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। টাঙ্গাইল, রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জ, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় রক্তাক্ত সহিংসতায় পণ্ড হয়েছে সদস্য সংগ্রহ অভিযান।

জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে পর্যুদস্ত জেলাগুলোর মধ্যে রাজশাহী অন্যতম। সেখানে বিএনপিতে বর্তমানে আট গ্রুপ। দিনে দিনে প্রকট হচ্ছে দ্বন্দ্ব। দলটির কেন্দ্র থেকে প্রথমে আংশিক ও পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পরও জেলা বিএনপির অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এতে করে তৃণমূল নেতাকর্মীরা বিভক্ত হওয়ার পাশাপাশি বিভ্রান্ত হচ্ছেন। এক গ্রুপ অপর গ্রুপের নেতৃত্ব মানতে নারাজ। নেতাকর্মীরাও আট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। গ্রুপগুলো হলো- জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাদিম মোস্তফা গ্রুপ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল মনির গ্রুপ, চারঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদ গ্রুপ, রাজশাহী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত গ্রুপ, জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু গ্রুপ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু গ্রুপ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আমিনুল হক গ্রুপ ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবির হোসেন গ্রুপ। গত ২২ জুলাই রাজশাহী জেলা বিএনপির সদস্য সংগ্রহ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তুমুল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই গ্রুপ। ঢাকা জেলায় প্রভাবশালী দুই গ্রুপের চাপে মাঠের নেতা-কর্মীরা দিশাহারা। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমানউল্লাহ আমানের সমর্থকদের মধ্যে মারামারির ঘটনা প্রায়শ ঘটছে।

চট্রগ্রামে নেতাদের দ্বন্দ্ব-গ্রুপিং নিরসনে সব রকমের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন দলের হাইকমান্ড। চট্রগ্রামে আছে ৫টি গ্রুপ। দক্ষিণ জেলা বিএনপিতে তিনটি গ্রুপ রয়েছে। দক্ষিণ জেলার সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, সেক্রেটারি শাহজাহান জুয়েল ও এনামুল হক এনামের নেতৃত্বে এ গ্রুপিং চলছে। সেখানকার বিভিন্ন থানা, পৌর ও ইউনিয়ন কমিটিরও দুই কমিটি রয়েছে বলে জানা গেছে। চট্টগ্রাম বিএনপিতে আরেকটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদের (চাকসু) এজিএস ছিলেন। তাকে সমর্থন দিচ্ছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানের নেতৃত্বাধীন নোয়াখালী গ্রুপ বলে জানা গেছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে চট্রগ্রাম উত্তরে আছে দুই গ্রুপ। এদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে প্রায়ই। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ও দক্ষিন জেলায় দুই দিন ধরে বিএনপির কর্মীসভায় দলের দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ ও রক্তারক্তি হয়। এরপর এই ঘটনায় দায়ী দলের দক্ষিণ জেলা সেক্রেটারি গাজী শাহজাহান জুয়েল ও উত্তর জেলা সদস্যসচিব কাজী হাসানকে দলের সব পদ থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেন বেগম খালেদা জিয়া। শামীমকে আরও সতর্কভাবে দায়িত্ব পালন করতে সতর্ক করা হয়।

বিএনপির ঘাঁটি বলে পরিচিত বগুড়াতে বিএনপি মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি, অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক। বিভক্তির কারণে কোনো কর্মসূচি সফল করতে পারেনা তারা। দলের কোনো কোনো নেতা আবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলেমিশে ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। স্বাভাবিকভাবেই দলীয় কর্মসূচিতে তাঁদের আগ্রহ কম।

বিভক্ত বগুড়া জেলা বিএনপির একপক্ষে সভাপতি সাইফুল ইসলামের সঙ্গে আছেন জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মো. শোকরানা, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর শাহে আলম, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আরাফাতুর রহমান, মহিলা দলের সভাপতি লাভলী রহমান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শাহ মেহেদী হাসান প্রমুখ নেতারা। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বগুড়া পৌরসভার মেয়র এ কে এম মাহবুবুর রহমান, সাবেক সাংসদ হেলালুজ্জামান তালুকদার, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আসগর তালুকদার, জেলা যুবদলের সভাপতি শিপার আল বখতিয়ার, সোনাতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আহসানুল তৈয়বসহ অন্যরা।

চাঁদপুরে দলীয় কোন্দলের কারণে সাংগঠনিক শক্তিতে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে এ দলটি। জেলার আট উপজেলায় দুটি করে গ্রুপ রয়েছে। সব উপজেলায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের সমর্থিত একটি কমিটি ও সাবেক এমপিদের সমর্থিত পৃথক কমিটি বিদ্যমান রয়েছে বলে জানাগেছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চাঁদপুরে বিএনপিতে বিভাজনের রাজনীতি প্রকট আকার ধারণ করে। সেই থেকেই চলে আসছে নেতায় নেতা্য় বিরোধ। এখন শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বিরুদ্ধে একাট্টা জেলার সাবেক মন্ত্রী-এমপিরা।

মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা আর সাধারণ সম্পাদক মইনুল হোসেন খান শান্তর বৈরিতা। পটুয়াখালী জেলা সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্নেহাংশু সরকার কুট্টি, শাহাদাত হোসেন মৃধা ও মোস্তাক আহমেদ দীপুর দ্বন্দ্বের কারণে আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করে তারা। চুয়াডাঙ্গা বিএনপিতে এখন চতুর্মুখী দ্বন্দ্ব। মাদারীপুর জেলা বিএনপিতে তিনটি গ্রুপ সক্রিয়।সুনামগঞ্জে ফজলুল হক আসপিয়ার সঙ্গে নাছির চৌধুরী এবং মৌলভীবাজারে নাসের রহমান বনাম খালেদা রাব্বানীর দ্বন্দ্ব অনেকটাই প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। কয়েকমাস আগে বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে তুমুল হট্টগোল, চেয়ার ছোড়াছুড়ি এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। বরিশাল মহানগর যুবদলের পদবঞ্চিত নেতাদের একটি অংশ জেলা ও মহানগর বিএনপি অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়। বেগম খালেদা জিয়ার নিজ জেলা ফেনীতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে দল বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। বিএনপির দুর্গ বলে খ্যাত এ জেলার সাংগঠনিক কার্যক্রম এখন অনেকটাই নিস্ক্রিয়। তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পৃথকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ইত্তেফাককে বলেন, বিএনপি অনেক বড় দল। বটবৃক্ষের মতো। এই দলে গ্রুপিং আধিপত্য প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা থাকবেই। জেলায় জেলায় বিএনপির কোন্দলের বিষয়ে যা বলা হচ্ছে এগুলোকে কোন্দল বলা যাবে না। এগুলো নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা। কোন্দলের কারনে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এটাও যেমন সত্য তেমনি এর মাধ্যমে দল শক্তিশালী হয় সেটাও সত্য। তবে কোন্দল দীর্ঘস্থায়ী হলে বিরূপ প্রভাব তৃণমূলের ওপর পড়ছে বলে তিনি মনে করেন। যার খেসারত দিতে হতে পারে আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম ও জাতীয় নির্বাচনে। তিনি বলেন, কোন্দল নিরসনের চেষ্টা অব্যাহত আছে। বেগম জিয়া দেশে ফিরলে নতুনভাবে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×