বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বাড়ছে। মানি বা না মানি আমাদের এই পৃথিবীর আবহাওয়া প্রতিদিন বদলে যাচ্ছে এবং বদলটা খারাপের দিকে। চলচ্চিত্র এমন একটা মাধ্যম যেখানে সব কিছুর ছাপ বা প্রভাব পড়ে। এখনকার সবচেয়ে আলোচিত বিষয় পরিবেশ, বিশ্ব উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি উঠে এসেছে অনেক চলচ্চিত্রেই।
তারই কিছু বর্ণনা দেয়া গেল :
কাহিনীচিত্র
১. আ সিভিল অ্যাকশন [১৯৯৯] : আইনজীবি জন ট্রাভলটার এক দশক ধরে আইনী লড়ছেন আমেরিকান এক কর্পোরেটের সঙ্গে। লড়াইয়ের বিষয় বস্তু পানি দূষণ। মাসাচুটের অধিবাসীর পক্ষে তার এই লড়াই ছবির মূল বিষয়বস্তু।
২. চায়না সিনড্রোম [১৯৭৯] : জেন ফণ্ডা, মাইকেল ডগলাস ও জ্যাক লেমনের মতো দূর্দান্ত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে তৈরি এই ছবি ইতোমধ্যে ক্লাসিকের মর্যাদা পেয়ে গেছে। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রতিস্থাপন ও তার সমস্যা নিয়ে এই ছবির গল্প গড়ে উঠেছে।
৩. এরিন ব্রকভিচ [২০০০] : এই দূর্দান্ত ছবিতে অভিনয়ের জন্য জুলিয়া রবার্টস অস্কার পেয়েছেন। মার্কিন জগতে এই ছবিতে অভিনয়ের কারণে তিনি পরিবেশ-বান্ধব বলে পরিচিতি পেয়েছেন। ছবিতে তিনি একটি আইনী সংস্থার একজন দাপ্তরিক কেরানি যিনি একটি নামী বিদুৎ কোম্পানির বিরুদ্ধে পরিবেশ দূষণের অভিযোগ উপস্থাপন করেন।
৪. ফায়ার ডাউন বিলো [১৯৯৭] : এ্যাকশন হিরো স্টিভেন সেগাল ছবিতে এনভায়রমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি [ইপিএ]-এর একজন এজেন্ট। তিনি তার এক সহকর্মীর হত্যা রহস্য সমাধানে নামে। শেষে খুনিকে তো ধরেনই এটাও আবিষ্কার করেন যে খুনিরা পরিবেশে মারাÍক বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ জড়ো করায়ও জড়িত।
৫. গরিলাস ইন দ্য মিস্ট [১৯৮৮] : রোয়ান্ডার গরিলাদের সংরক্ষণের কাজে নামেন সিগুরনি ওয়েভার। ছবিতে ডায়ান ফসি চরিত্রে তার অভিনয় অসাধারণ।
৬. সিল্কউড [১৯৮৩] : শের, মেরিল স্ট্রিপ আর কুর্ট রাসেলের এই ছবিও নিউক্লিয়ার পাওয়ার স্টেশন সমস্যা নিয়ে তৈরি।
৭. দ্য আমেরিকান প্রেসিডেন্ট [১৯৯৫] : মাইকেল ডগলাস আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। অবিবাহিত প্রেসিডেন্ট মিলিত হতে চান একজন পরিবেশবাদীর সঙ্গে।
৮. ডেনজার জোন [১৯৯৬] : আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকায় রন সিলভার বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ ফেলে বেড়ায়। পরিবেশের এই শত্র“র বিরুদ্ধেই এই ছবি।
৯. ফ্রি উইলি [১৯৯৩] : বিখ্যাত তিমি কিয়েকোকে নিয়ে এই ছবি।
১০. হ্যাকার্স [১৯৯৫] একদল প্রতিভাবান তরুন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ কর্পোরেটের লক্ষ লক্ষ টাকা মেরে দেয়া এবং সমুদ্রের চারপাশে গ্যালন গ্যালন তেল ফেলে দেয়ার কু-বুদ্ধি করে।
১১. পেলিক্যান ব্রিফ [১৯৯৩] : এই ছবির সবচেয়ে বড় শক্তি সেরা দুই অভিনেতা জিন হ্যাকম্যান, ডেনজেল ওয়াশিংটন আর অভিনেত্রী জুলিয়া রবার্টসের দূর্দান্ত অভিনয়। অস্কার জয়ী এই তিন ঝানু শিল্পী এই ছবির মাধ্যমে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে পরিবেশ আর রাজনীতির এক রোমাঞ্চকর কাহিনীর উšে§াচন করেন।
১২. অন ডেডলি গ্রাউন্ড [১৯৯৪] : এটিও স্টিভেন সেগালের ছবি। এখানে তিনি শুধু অভিনেতা নন, পরিচালকও। স্টিভেন প্রাক্তন এক সিআইএ এজেন্ট যিনি আলাস্কার কিছু তেল ব্যবসায়ীকে অনুসরণ করেন। তার আশঙ্কা এই তেল ব্যবসায়ীরা নিুমানে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছে যার ফলে তেল ছড়িয়ে পড়বে এবং পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে।
তথ্য চিত্র
১. এন ইনক্নভিনিয়েন্স ট্রূথ [ ২০০৬] : আমেরিকার সিনেট, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী আল গোর-এর এই তথ্যচিত্রের মূল বিষয়বস্তু বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ [গ্লোবাল ওয়ার্মি]। সিম্পসন খ্যাত এনিমেটর ম্যাট গ্রোয়েনিংকে নিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ুর পরিবর্তনকে তিনি সহজ-সরল বোধগম্য করে উপস্থাপন করেছেন। প্রতিটি সচেতন মানুষের জন্য অবশ্য দ্রষ্টব্য ছবি।
২. আর্টিক টেল [২০০৭] : মেরু ভাল্লুক আর সিন্ধুঘোটক [ওয়ারলুস] -এর দুই ছানাকে দিয়ে আর্টিকের বরফ ঘেরা পরিবেশে এই তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছে। ছবিতে বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ, মেরুর বরফ গলা, মেরু অঞ্চলের প্রাণীদের বিপর্যয় এবং পরিবেশন দূষণ তুলে ধরা হয়েছে।
৩. দ্য কোভ [২০০৯] : চলচ্চিত্রকার লুই শিহোস প্রাণী অধিকার রক্ষককর্মী [এনিমেল রাইট এক্টিভিস্ট] রিচার্ড ও’ বেরিকে অনুসরণ করে এই ছবি নির্মাণ করেছেন। জাপানী সরকার ও আন্তর্জানিত তিমি কমিশনের যৌথ চেষ্টায় জাপানের একদল লোভী জেলে বছরে হাজার হাজার ডলফিন শিকার করে। এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড কোথায় কিভাবে কেন হয় তাই ছবিতে সাহসের সাথে তুলে ধরা হয়েছে।
৪. ক্রুড [২০০৯] : নির্মাতা জো বার্লিঙ্গার তার এই ছবিতে টেক্সাকো/শেভরন আমাজন রেইনফরেস্টের যে ক্ষতি করছে তাই তুলে ধরেছেন। এই খ্যাতনামা জ্বালানি কোম্পানি তাদের বিষাক্ত বর্জ্যে ধ্বংস করছে বিশ্বের অন্যতম সেরা সবুজ বনানী। তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আদিবাসী থেকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও আজ সোচ্চার।
৫. ডিস্আর্ম [২০০৫] : পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধকালে মাটির নীচে মাইন পোতা হয়ে ছিলো। যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলেও সে সব এলাকা আজও নিরাপদ নয়। মাটির বুকে এখনও লুকায়িত আছে বিধ্বংসী মাইন। সেই সব ফেটে যে কোন সময়ই ঘটতে পারে বিপর্যয়। এই নিয়ে ডিস্আর্ম ছবিটি।
৬. আর্থ ডেজ [২০০৯] : প্রতিবছর জাকজমক করে আর্থ ডে পালন করা হয়। ষাটের দশকে মার্কিন পরিবেশবাদীরা সবাইকে সচেতন করতে এই দিবস চালু করেছে। কিন্তু বছরে একদিন পরিবেশ নিয়ে কাজ করে কী ফল পাওয়া যাচ্ছে?
৭. দ্য এলেভেন্থ আওয়ার [২০০৭] : বারোটা এখনও বাজেনি, তবে পৃথিবীর এখন ১১টা বেজে গেছে। ক্রমশ পরিবেশ দূষণ আর বিপর্যয়ের কারণে পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে তার শেষ মুহূর্তের দিকে। এখনই শেষ সময় পৃথিবীকে রক্ষা করার। ভূমিকম্প, ঘুর্ণিঝড়, সুনামি এই সব ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে বাঁচতে হলে পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে আগে। অস্কার বিজয়ী অভিনেতা লিউনার্দো ডি ক্যাপ্রিও-এর প্রযোজনা ও উপস্থাপনায় এই তথ্যচিত্রে মূল্যবান মতামত রেখেছে স্টিফেন হকিংসের মতো সেরা বিজ্ঞানীরা।
৮. এম্পটি ওসেন’স, এম্পটি নেস্ট : দ্য রেস টু সেভ ম্যারিন ফিশারিজ : হ্যাবিটেট মিডিয়ার এই ছবিতে অপরিকল্পিত মৎস শিকারের ফলে সমুদ্রের পরিবেশ কীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তা তুলে ধরা হয়েছে।
৯. ফ্লো - ফর লাভ অব ওয়াটার [২০০৮] : পৃথিবীতে ক্রমশ খাওয়ার পানির অভাব বাড়ছে। এ ছবিতে বিশেষজ্ঞদের মতামতের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে সাধারণ মানুষের নির্বুদ্ধিতা, কর্পোরেট কোম্পানিগুলো অর্থ লোভ কিভাবে পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলোকে ধ্বংস করছে। পানির অভাবে পৃথিবী যে প্রাণ শূণ্য হতে দেরী নেই এই তথ্যচিত্র তার আভাস য়ে। অন্যদিকে একাধিক প্রমাণ ও তথ্য সাপেক্ষে নেসলে, কোকাকোলা, পেপসি, ভিভেনডি, টেমস, সুয়েজ-এর মতো বড় বড় কোম্পানিকে এ জন্য দায়ী করা হয়েছে।
১০. দ্য গার্ডেন [২০০৮] : আমেরিকার উত্তর-মধ্যাঞ্চলের কিছু কৃষকদের নিয়ে এ তথ্যচিত্র। লস-এঞ্জেলেসের দরিদ্র এই কৃষকরা নগরের এক পরিত্যক্ত এলাকায় ফুল ফোটানোর উদ্যোগ নিয়ে। কিন্তু স্বার্থপর জমির মালিক বাধা দেয়। নিজেরদের বাগানকে রক্ষা করতে আত্মসš§ান এবং পৃথিবীর প্রতি ভালবাসা নিয়েই তারা স্বার্থের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
১১. মাণ্ডা বালা [২০০৭] : ব্রাজিলের শ্রেণী সংগ্রামের এক রক্তাক্ত দলির এই তথ্যচিত্র। কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজের লোকের কীভাবে অসহায় দরিদ্রদের শোষণ করে, কীভাবে তাদেরকে অপহরণ করে এবং জবাবে গরীবরা কীভাবে নৃশংস হয়ে ওঠে তার পাশাপাশি ব্রাজিলের আমাজান বনের ব্যাঙের বিপন্ন জীবনও এ ছবিতে উঠে এসেছে।
১২. কিং কর্ন [২০০৭] : পরিবেশবাদী আয়ান এবং কুর্ট এক এককর জায়গা নিয়ে ভুট্টার চাষ করে। তথ্যচিত্রের আসল মজাটা শুরু হয় এরপরেই। তারা এরপর তাদের চাষ করা ভুট্টা আমেরিকার কোথায় যায়, এটিকে খাদ্য হিসাবে ক্রেতা কাছে পৌঁছাতে কি কি প্রক্রিয়া করা হয় এই সব কিছু অনুসরণ করে। তাদের অনুসন্ধনানের মাধ্যমেই দর্শক জানতে পারে অতিমাত্রায় যান্ত্রিকতার কারণে খাদ্য শস্য কিভাবে পরিবেশ দূষণের শিকার হয়ে ওঠে।
১৩. ট্রাবল দ্য ওয়াটার [২০০৮] : টিয়া লেসেন এবং কার্ল ডিয়েল নিউ অর্লেসের এক দম্পতি কিম্বার্লি ও স্কর্ট রবার্টকে অনুসরণ করে। এই দম্পতি ভয়াবহ হারিকেন ক্যাটারিনা থেকে বেঁচে যায় এবং তারা কিছু বিধ্বংসী চিত্র ধারণ করতে সক্ষম হয়। তাদের মাধ্যমেই আমরা জানতে পারি বিশ্বমাতা ক্ষুব্ধ হলে তার রূপ কতো ভয়াবহ হতে পারে।
১৪. আপ দ্য ইয়াশং [২০০৮] : চীনের বৃহৎতম নদী ইয়াশিং নদীর উপর থ্রি জর্জেস বাঁধ তৈরির কারণে তীরবর্তী মানুষের জীবনে কী প্রভাব পড়ে তাই নিয়ে এই ছবি। স্বল্প সময়ের অর্থনৈতিক লাভের জন্য মানুষ ও পরিবেশ কী কে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারে এ তথ্যচিত্রে তাই তুলে ধরা হয়েছে।
১৫. হু কিলড দ্য ইলেকট্রিক কার?
১৬. বিখ্যাত জিএম ষড়যন্ত্রের দলিল এই তথ্য চিত্র। বিদুৎ চালিত পরিবেশ বান্ধব গাড়ি আবিষ্কার ও বাজারে ছাড়ার বিরুদ্ধে জিএম যড়যন্ত্র করেছিলো।
১৭. বি দ্য চেঞ্জ [২০০৮] : অন্য তথ্যচিত্রগুলো থেকে এটি এক অর্থে ভিন্ন। আর সব তথ্যচিত্রে যেখানে পরিবেশ বিপর্যয়ের ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়েছে এখানে তা করা হয়নি। এই তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে, কিভাবে বিশ্বকে বাঁচানো যায়। বর্তমান পরিবেশকে উন্নত করার ১০১টি উপায় এই চিত্রে দেখানো হয়েছে।