ভদ্রমহিলার নাম শেরিল। বয়স এখন চল্লিশের উপর। সিডনীর ভালো একটা অ্যাকাউন্টিং ফার্মের ম্যানেজার। উনি বিবাহিত ছিলেন, এখন ডিভোর্সড। একটা ছেলে আছে, বয়সটা আমি জানিনা। হয়ত পনেরো বা বিশ। ভ্দ্রমহিলা এখন একা থাকেন, ছেলে বাপের সাথে থাকে। ম্যানেজারের বেতন যেরকম, উনার একার জীবন রাজকীয় ভাবে চলার কথা। সেভাবেই চলছে। আমার ওয়াইফ অ্যাকাউন্টিংএ ইন্টার্নি করার জন্য উনার ফার্মে অ্যাপ্লাই করেছিলো। কাহিনীটা ওর কাছ থেকে শোনা। আপনাদের সাথে শেয়ার করছি আর একটু সাহায্য চাইব ভ্দ্রমহিলার জন্য।
ইন্টারভিউর সময় স্বভাবসুলভ হোমকান্ট্রির কথা 'বাংলাদেশ' শুনে শেরিলের চোখমুখ উদ্ভাসিত হয়ে উঠে। অ্যাকাউন্টিং বা এক্সপেরিয়েন্সের ধারে কাছে না গিয়ে উনার পরের প্রশ্ন " তুমি 'কোমিল্লা' চেনো?" হ্যা, বলতেই উনার চেহারায় যেন দুনিয়া জয় করার ছাপ পড়ে। ঐদিন উনি কিছু বলেলনি। পরের দিন আমার ওয়াইফের সাথে লান্চ করার সময় উনি সবকিছু খুলে বলেন। বাংলাদেশের একজন মানুষের সাথে ওনার পরিচয় ছিলো। ওনার বাসা কুমিল্লা। নাম নুরুল আজাদ ইসলাম। একসাথে থাকতেন দুজন। ভদ্রলোক ওনাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। শেরিলের ভাষায় " আজাদ আমাকে পাগলের মত ভালোবাসতো। আমরা একসাথে ঘুরতাম, রেষ্টুরেন্টে খেতাম, সারাদিন আমাকে বিভিন্নভাবে সারপ্রাইজ দেবার প্রানপন চেষ্টা করত। হয়ত আমাকে চোখ ব্ন্ধ করতে বলে পকেট থকে বের করত গোলাপ বা আমার প্রিয় কোনো জামা। সেগুলো প্রাইসওয়াজ খুব বেশি ছিলোনা কিন্তু আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতাম আর ভাবতাম তোমাদের দেশের মেয়েরা কত ভাগ্যবান এরকম ভালো ছেলেরা তাদের টেক কেয়ার করে। কত রাত আমি আজাদের বুকের উপর ঘুমিয়েছি আমি জানিনা। ওর সাথে অনেক দেশ ঘুরেছি। একবার ইন্ডিয়াতেকিছু লোক আমাদের সম্পর্কে কটুক্তি করায় ও আমাকে ওয়াইফ হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো। আমাদের মাঝে খুব ভালো সম্পর্ক থাকলেও ও কখনো ওর ব্যাকগ্রাইন্ড নিয়ে কিছু বলেনি। এই একটা বিষয়ে খুব গোপনীয়তা ছিলো তার। আমি কিছু জানতে চাইলে এড়িয়ে যেত। আমিও খুব গুরুত্ব দেইনি কারন এটা তার পারসোনাল বিষয়। ভাল কাটছিলো দিনগুলি, খুব ভালো। তারপর একদিন হঠাৎ.......
রাতে ঘুমিয়েছি। বরাবরের মত আজাদের বুকে ঘুমিয়ে গিয়েছি। সকালে উঠে দেখি আজাদ নেই। ম্যাজিকের মত ভ্যানিশ হয়ে গেছে। আমি অনেক খুজেছি (উনি পুলিশকে জানিয়েছিলেন কিনা আমি জানিনা), ঘন্টা যায়, দিন যায়, মাস যায়। আজাদ আর ফেরেনি। কোনো কন্টাক্ট করেনি। কয়েক বছর চলে গেছে, কোনো ট্রেস পাইনি। আমি বিয়ে করেছিলাম, টেকেনি। কারন আজাদের মত সে আমাকে ভালোবাসতে পারেনি, সারপ্রাইজ দিতে পারেনি। ওনার অনেক সম্পদ আছে কিন্তু আমি কেয়ার করিনা। দিন রাত সব যায়গায় আমি আজাদকে খুজি। যদি পাই শুধু জানতে চাইব কেন সে কিছু না বলে চলে গিয়েছিলো। শুধু একটাই প্রশ্ন।"
শেরিল কাজের ফাকে ফাকে ফেসবুক, গুগল, টুইটারে সারাদিন আজাদ সাহেবকে খোজেন। বিভিন্ন কম্বিনেশনে, যেমন আজাদ কুমিল্লা বা ইসলাম আজাদ বা আজাদ ইসলাম। এমন না যে আজাদ কে না পেলে উনি মরে যাবেন কিন্তু প্রশ্নটা তাকে করতেই হবে। শেরিল বলেছে একদিন উনি বাংলাদেশে যাবেন, তাকে খুজতে কিন্তু সমস্যা হলো বাংলাদেশে আজাদের কোনো খবরই জানেন না, যেমন এলাকার নাম বা বাবার নাম, শুধু জানেন কুমিল্লা। কুমিল্লা দিয়ে কি খুজে পাওয়া যায়?
সামান্য কিছু ইনফরমেশন উনি জানেন যেটা শেয়ার করেছেন। জানি ব্যাক্তিগত ইনফরমেশন ব্লগে দেয়া ঠিক না কিন্তু উনি যেভাবে আজাদ সাহেব কে খোজেন তাতে এই ইনফরমেশন শেয়ার করাটাই সঠিক, যদি কেউ আজাদ সাহেব কে চিনতে পারেন!
খাপছাড়া তথ্যগুলো এমন:
নুরুল আজাদ ইসলাম, রাজনীতি করতেন, ৮৬ এ স্টুডেন্ট ভিসায় অষ্ট্রেলিয়া আসেন, এখন অষ্ট্রেলিয়ার নাগরিক, রেষ্টুরেন্ট ছিলো সিডনীতে, অনেক আগে অষ্ট্রেলিয়ায় এক চায়নিজ মেয়েকে হয়ত বিয়ে করেছিলেন সিটিজেন হবার জন্য, বাবার সুত্রে অনেক প্রোপার্টি আছে বাংলাদেশের কুমিল্লায়, মার নামে কুমিল্লায় সম্ভবত লাইব্রেরী আছে, সাদা বাড়ি, ভাইয়ের নাম বাশার, অষ্ট্রেলিয়া থাকতেন, কিছুদিন আগে বাংলাদেশে সেটেল্ড হয়েছেন।
কুমিল্লার কেউ কি একটু চেষ্টা করে দেখবেন? ভদ্রমহিলার অনেক উপকার হতো। সবাইকে ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:০৭