চোরের সাক্ষী মাতোয়াল, আর রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাক্ষী বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারি অধ্যাপক কাজী বায়েজিদ কবির।
"গত ৪০ বছরে সারা দেশে যে পরিমাণ পারদ পোড়ানো হয়েছে, তাতে মাছের কী হয়েছে? ফারাক্কাতে ২১০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। এর কাছের শহর রাজশাহী ও পদ্মা নদী। সেখান যদি অনেক ছাই হতো তাহলে পদ্মায় মাছ থাকত না এবং রাজশাহীও সবুজ নগরী হতো না।"
উপরোক্ত কথাগুলো নাকি বলেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারি অধ্যাপক কাজী বায়েজিদ কবির। প্রকৌশলিদের প্রফেশনাল সংগঠন আইইবির ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারের। সেমিনারের আয়োজক ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ; কিন্তু সেই সেমিনারে বক্তা ভাড়া করা হয়েছে একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারকে।
ছবি: কাজী বায়েজিদ কবির, সহকারি অধ্যাপক, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)
দৈনক প্রথম আলোতে প্রকাশিত সংবাদ ‘ফারাক্কায় ২১০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মার কী ক্ষতি হয়েছে?’
কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার জনাব কাজী বায়েজিদ কবির এর পড়া-লেখা ও গবেষণার বিষয় নিয়ে ঘাটা-ঘাটি করতে গিয়ে বাংলা ভাষার চিরন্তন প্রবাদ "চোরের সাক্ষী মাতোয়াল" কথাটি কেন সৃষ্টি হয়েছিল তার প্রমাণ পাওয়া গেল।
"কয়লা ধুলে ময়লা যায় না"। কয়লা কোম্পানির টাকায় অন্নের সংস্হান করার মানুষের পক্ষে কি সম্ভব কয়ালা থেকে উৎপন্ন দূষণে পরিবেশ মানবদেহের উপর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে কথা বলা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী বায়েজিদ কবির ও তার পিএচডি সুপারভাইজারের গবেষক জীবনের সকলের গবেষণা কয়লা নিয়া। সহজ ভাষায় বলতে হয় কিভাবে কয়লা মহাত্ন মানুষের কাছে উপস্থাপন করা যায়।
ছবি: Sankar Bhattacharya, কাজী বায়েজিদ কবির এর পিএচডি সুপারভাইজার
জনাব কাজী বায়েজিদ কবির এর পিএচডি সুপারভাইজারের প্রোফাইল দেখে মানীয় স্পীকার হয়ে গেলাম। নাম তার Sankar Bhattacharya, অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক। সেই অধ্যাপক নিজের কর্ম জীবন শুরু করেছে কয়লা কোম্পানিতে ও নিজের কর্ম জীবনের প্রায় পুরোটা সময় কাজ করেছে কয়লা কোম্পানিতে অথবা কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এমন কোম্পানিতে প্রসেস ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে (Principal Process Engineer, Anglo Coal Australia, 2006; Senior Design Engineer- Coal-fired power station design and commissioning services, Development Consultants, India, 1981-1987)।
Sankar Bhattacharya এর বর্তমান গবেষনা প্রজেক্টগুলো নিম্নরুপ:
১) Gasification of brown coal and biomass - catalytic and mineral matter effects, and assessment of slagging, slag rheology
২) Use of lignitic ash for building products and CO2 storage
৩) Steam and flue gas drying of coal and related drying kinetics
৪) Oxyfuel combustion of Victorian Brown coal and overseas lignites, and mineral matter effects
Sankar Bhattacharya এর বর্তমান গবেষনা ইন্টারেষ্ট ও পাবলিকেশনের শিরোনাম গুলো দেখে হলফ করেই বলা যায় গবেষনার পুরো অর্থ আসে কয়লা কোম্পানি থেকে। কয়লা কম্পানির স্বার্থ রক্ষা করাই তার গবেষনার মুখ্য উদ্দেশ্য। অনেক চেষ্টা করলাম জানার জন্য যে কোন উৎস থেকে তার গবেষনার অর্থ আসে যা প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যপকের ওয়েবসাইটে থাকে; কিন্তু ব্যাতিক্রম Sankar Bhattacharya। প্রবাদে আছে চোরের মন পুলিশ-পুলিশ। কয়লা বা তেল কোম্পানির অর্থ নিয়ে যে অধ্যাপকরা গবেষনা করে তার প্রায় সকলেই সেই তথ্য লুকায়। জনাব Sankar Bhattacharya ও তাই করেছে।
Sankar Bhattacharya ১৯৯৫ সালে পিএইচডি করার পরে কোথাও পোষ্ট ডক্টরাল ফেলো হিসাবে কাজ করার কোন তথ্য নাই, সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কাজ করার কোন তথ্য নাই। হঠাৎ করে ২০০৯ সালে সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে কাজ করার তথ্য দেওয়া আছে। এই ধরণের ঘটনা ঘটে যখন কোন ব্যক্তি দীর্ঘদিন কোম্পানিতে কাজ করে সে কোম্পানির কোন বড় পোষ্টে পৌঁছানোর পরে সেই কোম্পানি বা ঐ ফিল্ডের কোম্পানির থেকে ফান্ড যোগাড় করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করে নিজের ফান্ড নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা শুরে করে দেয় ঐ সকল কোম্পানির স্বার্থ নিয়ে গবেষণার জন্য। কয়লা-তেল-গ্যাস কোম্পানির কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এই ঘটনা গুলো সচরাচর দেখা যায়। এই জন্য এই ধরনের গবেষণাগুলো বেশিভাগ-ক্ষেত্রে ফরমায়েশি গবেষণা বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের টাকার নোট গুলো উপর যেমন লিখা থাকে "চাহিবা মাত্র বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে"। কয়লা-তেল-গ্যাস কোম্পানির টাকা নিয়ে করা গবেষণাগুলোও একই ভাবে মূল্যায়িত হয়ে থাকে।
আরও কিছু কথা উল্লেখ না করে পারলাম না। বিশ্বে অন্যতম কয়লা রপ্তানিকারক দেশ অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম উৎস কয়লা। উন্নত দেশ গুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়াই একমাত্র দেশ যে এখনও কয়লার পক্ষে কথা বলে যায়।
কাজী বায়েজিদ কবিরের উদ্যেশ্য বলতে হয় বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছিলেন 'আমাদের কেউ দাবাইয়া রাখতে পারবা না'। সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে পাকিস্তানি শাষকরা দাবায় রাখতে পারেও নি।
বঙ্গবন্ধুর ভাষায় বলতে হয় রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে দালালি চালাইয়া যান, আপনারে কেউ দাবাইয়া রাখতে পারবেনা ;
ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার পিলিপসের ১০০ ওয়াটের বাতির মতোই ঝক-ঝকা; ভবিষ্যতে বুয়েটের ভিসি হওয়া কেউ ঠেকাইতে পারবো না।
===========================================================================
রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাম্ভব্য প্রতিক্রিয়া নিয়ে দৈনিক বনিকবার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত আমার লেখা উপসম্পাদকীয়:
==========================================================================
লিংক গুলো সঠিক ভাবে সংযুক্ত করা হয়নি তাই কাজ করতেছিলো না। সমাস্যাটি সমাধান করা হয়েছে। সাময়িক সমস্যার জন্য দুঃখিত।
প্রথম পর্ব:
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত্ প্রকল্প নিয়ে কিছু কথা: প্রথম পর্ব
দ্বতীয় পর্ব:
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত্ প্রকল্প নিয়ে কিছু কথা: দ্বিতীয় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৭:৩৪