somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোরা (MORA) এর চারিত্রিক সনদপত্র ও সর্বশেষ আপডেট

২৯ শে মে, ২০১৭ দুপুর ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবি ১ (কৃতজ্ঞতা: আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত প্রতিষ্ঠান Joint Typhoon Warning Center (JTWC))


ঘূর্ণিঝড় মোরা (MORA) এর আপডেট ৬ (বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সকাল ১১ টা ৫০ মিনিট)
=========================================================

নিচে সংযুক্ত ৩ টি (1,2,3) চিত্র জাপানের আবহাওয়া উপগ্রহ Himawari-8 দ্বারা সকাল ১১ টায় সংগ্রহীত। ঘূর্ণিঝড় মোরা (MORA) এর লেন্জা স্থল ভাগ অতিক্রম করতে আরও ২ ঘণ্টার মতো সময় লাগতে পারে।









পূর্বে উল্লেখ করেছি ঘূর্ণিঝড় এর বায়ু প্রবাহের বিপরীত মুখী একটি বায়ু ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ঠিক উপরে সক্রিয় থাকার কারণে ঘূর্ণিঝড় মোরা (MORA) শক্তিশালী হতে পারে নি। ভবিষ্যতে একই রকম কন্ডিশন নাও সৃষ্টি হতে পারে। মানে, দুইটি বিপরীতমুখী বায়ু একই সময়ে একই স্থানে সক্রিয় নাও হতে পারে। এবারের এই কন্ডিশন দৈবক্রম বাল যেতে পারে।

আশা করছি ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ খুব বেশি হবে না যেহেতু ঘূর্ণিঝড় মোরা (MORA) এর বায়ুর গতিবেগ অনেক কম ছিল স্থল ভাগ অতিক্রম করার সময়।

============================================================
ঘূর্ণিঝড় মোরা (MORA) এর আপডেট ৫ (বাংলাদেশ সময় সকাল ৬ টা)
============================================================



ঘূর্ণিঝড় মোরা (MORA) এর সম্মুখ্য ভাগ মহেশখালি ও কুতুবদিয়া দ্বীপের স্হাল ভাগ স্পর্ষ করা শরু করেছে। বাতাসের গতিবেগ প্রায় ১০০-১৩০ কিলোমিটার। তবে সবচেয়ে চিন্তার বিষয় কত ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে উপকূলীয় এলাকায়। নিচে সংযুক্ত ৩ টি চিত্র জাপানের আবহাওয়া উপগ্রহ Himawari-8 দ্বারা সংগ্রহীত।







============================================================
ঘূর্ণিঝড় মোরা (MORA) এর আপডেট ৪ (বাংলাদেশ সময় রাত ২ টা ৪৫ মিনিট)
============================================================



চট্টগ্রামের বাঁশ খালি ও কুতুবদিয়া দ্বীপের উপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় মোরা (MORA) এর কেন্দ্র স্থল ভাগে প্রবেশ করবে বলে কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র ও আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেল সেটাই নির্দেশ করতেছে। কুতুবদিয়া ও মহেশখালী দ্বীপের মানুষরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ঘূর্ণিঝড় মোরা (MORA) চট্টগ্রাম, ও কক্সবাজার জেলা থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার (~ ১৫০ নটিকাল মাইল) দূরে অবস্হান করছে।



আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত প্রতিষ্ঠান Joint Typhoon Warning Center (JTWC) এর সর্বশেষ পূর্বাভাষ মতে ২০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানতে পারে কোন কোন এলাকায়। যেহেতু ঘূর্ণিঝড় এর বর্তমান অবস্থান করা স্থানের পানির গভীরতা কম ও ঐ স্থানের পানির তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত বেশি তাই ঘূর্ণিঝড় মোরা (MORA) স্থল ভাগে আঘাত করার পূর্বে কিছুটা শক্তিশালী হতে পারে।




============================================================
ঘূর্ণিঝড় মোরা (MORA) এর আপডেট ৩ (বাংলাদেশ সময় সোমবার, রাত ১১ টা ৪৫ মিনিট)
============================================================



ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র কিছুটা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সরে এসেছে। এখনকার কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র ও আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেল অনুসারে ঘূর্ণিঝড় "মোরা" এর কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলে দক্ষিণ ও কক্সবাজার জেলার উত্তর দিক দিয়ে অর্থাৎ দুই জেলার মাঝা-মাঝি এলাকার উপর দিয়ে বাংলাদেশের স্থল ভাগ অতিক্রম করবে। ঘূর্ণিঝড় "মোরা" এর স্থল ভাগ অতিক্রমের সম্ভব্য সময় কিছুটা এগিয়ে এসেছে। ঘূর্ণিঝড় মোরা (MORA) চট্রগ্রাম উপকূল থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্হান করছে। বর্তমান গতিবেগ ঠিক থাকলে মঙ্গলবার ভোর ৩ থেকে সকাল ৯ টার মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় আঘাত করতে পারে।



৩ টি আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেল ঘূর্ণিঝড়টির প্রায় একই সম্ভব্য পথ নির্দেশ করছে। সুতরাং HIGH CONFIDENCE নিয়ে বলা যাচ্ছে নির্দেশিত পথে ঘূর্ণিঝড় মোরা (MORA) স্থল ভাগ অতিক্রম করবে। এখনও শক্তিশালী হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়টি; যেহেতু ঘূর্ণিঝড় এর বর্তমান অবস্থান করা স্থানের পানির গভীরতা কম তাই ঐ স্থানের পানির তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত বেশি।



নতুন একটি ছবি যোগ করলাম এবার। এটি বায়ুর গতিবেগ নির্দেশ করতেছে। এই চিত্র থেকে দেখে নিতে পারেন উপকূলীয় কোন এলাকার কত নটিকাল মাইল বেগে আঘাত করতে পারে ( ১ নট = ১ দশমিক ৮৫২ কিলোমিটার বা 1 knot/nautical mile = 1.852 km)। চিত্র দেখে মনে হচ্ছে চট্টগ্রাম ও টেকনাফ এর মাঝামাঝি এলাকা বিশেষ করে মেরিন ড্রাইভ এলাকা ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ঘূর্ণিঝড় মোরা (MORA)। একই ভাবে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও।


ঘূর্ণিঝড় মোরা (MORA) এর আপডেট ২ (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪ টা)



ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র কিছুটা পশ্চিম-উত্তর দিকে সরে এসেছে। এখনকার কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র ও আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেল অনুসারে ঘূর্ণিঝড় "মোরা" এর কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলার মাঝা-মাঝি এলাকার উপর দিয়ে বাংলাদেশ অতিক্রম করবে। স্হল ভাগ অতিক্রমের সাম্ভব্য সময় ভোর ৬ টা।



উপরের ছবিতে যে বৃত্ত দেখিতেছেন ঐ বৃত্ত গুলোর কেন্দ্র হলো ঘূর্ণিঝড় এর কেন্দ্র। ঐ বৃত্ত গুলোর পাশে কাটা-কাটা দাগের মধ্যে যে এলাকা পড়েছে ঐ সকল এলাকার উপর দিয়ে যেতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। লাইনের পাশে যে লেখা গুলো দেখিতেছেন 21/00z, 21/12z তা নির্দেশ করতেছে মে মাসের ২৮/২৯/৩০/৩১ তারিখ, ও 00z = রাত ১২ টা, 06Z = ভোর ৬ টা, 12z = দুপুর ১২ টা, 18z = বিকেল ৬ টা সময় নির্দেশ করতেছে (ঐ সময়ে ঘূর্ণিঝড় এর কেন্দ্রের অবস্থান)।

আশা করছি গত কয়েক বছরে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় সংঘটিত ভূমিধ্বস ও হতাহতের ঘটনা নিশ্চয় আমরা ভুলি নাই। প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় আগামী ২৪ ঘন্টায়। চট্টগ্রাম জেলায় প্রচণ্ড জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে সেটা হলফ করিয়াই বলা যায়। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধ্বস হওয়ার সম্ভাবনাও খুবই বেশি।

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে বলুন পাহাড়ের পাদদেশে বা উপরে বসবাসরত মানুষদের সরিয়ে নিতে যাতে করে ভূমিধ্বসের কারণে ১ টা মানুষের মৃত্যু না হয়।

আপডেট ১: সময় বাংলাদেশ সময় দুপুর ২ টা ৩০ মিনিট

ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র কিছুটা পশ্চিম-উত্তর দিকে সরে এসেছে। এখনকার কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র ও আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেল অনুসারে ঘূর্ণিঝড় "মোরা" এর কেন্দ্র ঠিক ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলার মাঝা-মাঝি এলাকার উপর দিয়ে বাংলাদেশ অতিক্রম করবে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র উড়ির চর ও সন্দীপের উপর দিয়ে যাবে; ফলে ঐ সকল চর এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে ১০-১৪ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেল গুলো নির্দেশিত ঘূর্ণিঝড়ের পথ এর মধ্যে পার্থক্য অনেক কমে এসেছে। প্রায় ৩ টি মডেলই নির্দেশ করতেছে যে ঘূর্ণিঝড় "মোরা" এর কেন্দ্র ঠিক ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলার মাঝা-মাঝি এলাকার উপর দিয়ে বাংলাদেশ অতিক্রম করবে।



চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে বলুন মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে। ঘূর্ণিঝড় আগামীকাল ভোর রাত থেকে দুপরের মধ্যে স্থল ভাগে প্রবেশ করবে। বাতাসের গতিবেগ যদি আরও বৃদ্ধিপায়, যার সম্ভাবনা আছে প্রচুর, ও ১৫০ কিলোমিটার এর উপর যায় তবে ভাল ক্ষয়-ক্ষতি হবে।

======================

দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় রূপান্তরিত হয়েছে। এই ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করা হয়েছে "মোরা (MORA)"। নামে মোরা হলেও আচরণে পুরাই ৩/৪ বছরের বাচ্চার মতো চঞ্চল। গত ২৪ ঘণ্টায় বেশ কয়েকবার গতিপথ পরিবর্তন করেছে। কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র ও আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেল অনুসারে ঘূর্ণিঝড় "মোরা" ফেনী, চট্টগ্রাম, ও কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে অতিক্রম করার সম্ভাবনা খুবই বেশি। উপকূল অতিক্রম করার সময় ঘূর্ণিঝড়টির সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার। সেই সাথে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০-১৪ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় মোরা বর্তমানে (বাংলাদেশ সময় সোমবার দপুর ১২ টা) চট্টগ্রাম, ও কক্সবাজার জেলা থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার (~ ৩০০ নটিকাল মাইল) দূরে অবস্হান করছে।


ছবি ২: বঙ্গোপসাগর এলাকার একটি সাধারণ মানচিত্র (কৃতজ্ঞতা: Cooperative Institute for Meteorological Satellite Studies, Space Science and Engineering Center, University of Wisconsin-Madison)

এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বার বা কমিশনার যেমন ঐ এলাকায় বসবাসরত নাগরিকের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সনদ পত্র দেয় তেমনি আমিও এই ঘূর্ণিঝড় মোরা এর চারিত্রিক সনদপত্র দিলাম। তয় চেয়ারম্যান-মেম্বার বা কমিশনারদের মতো চোখ বন্ধ কইরা সনদপত্র ইস্যু করি না। আমার ইস্যু করা সনদপত্রটি সম্পূর্ণ রূপে বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণের উপর ভিত্তি করে লেখ। নিচে ৫ টি ছবি সংযুক্ত করা হলও সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় মোরা এর চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ ব্যাখ্যা করার জন্য।

২য় চিত্রটি বঙ্গোপসাগর এলাকার একটি সাধারণ মানচিত্র। যে চিত্রে একটি মাত্র সাধা লাইন দেখা যাচ্ছে যা নির্দেশ করতেছে ঘূর্ণিঝড়টির সম্ভব্য পথ। এই পথটি কিভাবে পাওয়া গেল তা জানার জন্য আপনাকে দেখতে হবে ২ নম্বর চিত্রটি। যেখানে দেখা যাচ্ছে ঐ সাদা লাইনের মতোই লাল, নীল ও সবুজ ৩ টি লাইন।


ছবি ৩ (কৃতজ্ঞতা: Cooperative Institute for Meteorological Satellite Studies, Space Science and Engineering Center, University of Wisconsin-Madison)

১) আমেরিকার তৈরি একটি আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেল ব্যবহার করে ঘূর্ণিঝড় মোরা এর সম্ভব্য যে পথ পাওয়া গেছে তা লাল রঙ্গের লাইনটি দিয়ে নির্দেশ করা হয়েছে।

২) যুক্তরাজ্য বা ইংল্যান্ড এর বানানো আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেল ব্যবহার করে ঘূর্ণিঝড় মোরা এর সম্ভব্য যে পথ পাওয়া গেছে তা নীল রঙ্গের লাইনটি দিয়ে নির্দেশ করা হয়েছে।

৩) কানাডার তৈরি একটি আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেল ব্যবহার করে ঘূর্ণিঝড় মোরা এর সম্ভব্য যে পথ পাওয়া গেছে তা সবুজ রঙ্গের লাইনটি দিয়ে নির্দেশ করা হয়েছে।

উপরোক্ত ৩ টি আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেল নির্দেশিত ঘূর্ণিঝড়টির সম্ভব্য পথ এর গড় করে যে পথ পাওয়া গেছে তা সাদা রঙ্গের লাইনটি দিয়ে নির্দেশ করা হচ্ছে।


ছবি ৪, বঙ্গোপসাগরের পানির তাপমাত্রা (কৃতজ্ঞতা: Cooperative Institute for Meteorological Satellite Studies, Space Science and Engineering Center, University of Wisconsin-Madison)। ছবির ডান দিকের স্কেল পানির তাপমাত্রা নির্দেশ করে।

মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে কেন ঘূর্ণিঝড়টি ঐ ২ টি জেলার উপর দিয়ে অতিক্রম করার সম্ভাবনা খুবই বেশি? বেশ কয়েকটি কারণের মধ্যে যেটি প্রধানতম কারণটি হলও কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র নির্দেশ করতেছে বঙ্গোপসাগরের পানির তাপমাত্রা ঐ ২ টি জেলার সম্মুখ বঙ্গোপসাগরের সর্বোচ্চ (৪ নম্বর ছবি)। আবারও প্রশ্ন করতে পারেন বঙ্গোপসাগরের পানির তাপমাত্রার সাথে ঘূর্ণিঝড় এর সম্পর্ক কি? খুব সাধারণ ভাষায় সম্পর্কটি ব্যাখ্যা করি।

ভাত রান্না করার সময় তাপের কারণে পাতিল হতে যেমন করে পানি বাষ্পায়িত হয়ে উড়ে যায় একই ভাবে বঙ্গোপসাগরের পানি বাষ্পায়িত হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের পানির তাপমাত্রার যে স্থানে সবচেয়ে বেশি সে স্থানের পানি বাষ্পায়িত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। মোটরসাইকেল চালাতে গেলে যেমন পেট্রল দরকার তেমনি ঘূর্ণিঝড় উৎপত্তি স্থল থেকে সামনে এগোতে দরকার মেঘ। বঙ্গোপসাগরে পানি বাষ্পীভবনের ফলে মেঘের সৃষ্টি হচ্ছে সেই সময় মেঘের মধ্যে এক প্রকার তাপ ত্যাগ করে যে তাপকে পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় বলে সুপ্ত তাপ বা Latent Heat। সহজ ভাষায় বলা যায় যত বেশি পরিমাণ মেঘ সৃষ্টি হবে ঘূর্ণিঝড়টি তত বেশি পরিমাণ শক্তিশালী হবে। এবারে ৩ নম্বর ছবিটিতে দেখুন আকাশে মেঘের অবস্থান কোন স্থানে কেমন? ৩ নম্বর চিত্রটি কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত visible satellite imagery (a snapshot of what the satellite sees, সোজা বাংলায় বলতে হয় মেক-আপ ছাড়া নাটক-সিনেমার নায়ক-নায়িকারা দেখতে যেমন হয়)।


ছবি ৫, কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত Infrared (IR) satellite imagery (which depicts the temperature of the clouds) যা মেঘের তাপমাত্রা নির্দেশ করছে (কৃতজ্ঞতা: Cooperative Institute for Meteorological Satellite Studies, Space Science and Engineering Center, University of Wisconsin-Madison)। ছবির ডান দিকের স্কেল মেঘের মধ্যে অবস্হিত জ্বলীয় বাষ্পের তাপমাত্রা নির্দেশ করে।

মানুষের জ্বর হলে যেমন শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয় থার্মোমিটারের সাহায্যে তেমনি ভাবে মেঘের মাথার তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয় কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহে স্থাপিত সেন্সর (এক প্রকার থার্মোমিটার) এর সাহায্যে। ৫ নম্বর ছবিটিকে বলা হয় Infrared (IR) satellite imagery (which depicts the temperature of the clouds) যা মেঘের তাপমাত্রা নির্দেশ করছে। ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন অবজেক্টকে বুঝার সুবিধার্থে কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত visible satellite imagery কে False color দেওয়া হয় বাংলা সিনেমার নায়ক সাকিব খান যেমন লাল লিপিষ্টিক লাগায় ঠোট লাল দেখানোর জন্য (হে হে হে)। মানুষের শরীরের তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রী ফারেনহাইট এর উপরে যত বেশি হবে তা যেমন শারীরীক অবস্থার তত অবনতি নির্দেশ করে। বিপরীত-ক্রমে মেঘের চাঁদির তাপমাত্রা যত বেশি ঋনাত্নক হবে সেই মেঘ তত বেশি শক্তিশালী বলে গণ্য করা হয়ে থাকে। মেঘের চাঁদির তাপমাত্রা দেখে মেঘের উচ্চতা পরিমাপ করা হয়ে থাকে। বেশি ঋনাত্নক তাপমাত্রা উঁচু মেঘের নির্দেশ করে ও সেই মেঘ থেকে তত বেশি বৃষ্টিপাত হবে। ডান দিকের স্কেল থেকে মেঘের তাপমাত্রা দেখে নিতে পারেন।


ছবি ৬, বঙ্গোপসাগরের পানির তাপমাত্রা ও ঘূর্ণিঝড় মোরা এর কেন্দ্রের ঘূর্ণন চিত্র (কৃতজ্ঞতা: Cooperative Institute for Meteorological Satellite Studies, Space Science and Engineering Center, University of Wisconsin-Madison)। ছবির ডান দিকের স্কেল বঙ্গোপসাগরের পানির তাপমাত্রা নির্দেশ করে।

৬ নম্বর চিত্রে ঘূর্ণিঝড় মোরা এর কেন্দ্রে কিছু বৃত্তাকার বাদামি রঙ্গের লাইন দেখা যাচ্ছে। এই লাইন গুলোকে বলা হয় ভোর্টিসিটি (Vorticity) লাইন যা ঘূর্ণিঝড় মোরা এর কেন্দ্রের ঘূর্ণন এর পরিমাণ নির্দেশ করে। একই সাথে এটাও নির্দেশ করে যে ঘূর্ণিঝড় এর কেন্দ্রে কোথায় অবস্থান করছে। বায়ুর গতি ব্যবহার করে ঐ লাইন গুলো পরিমাপ করা হয়ে থাকে।

=====================================================================
বিশেষ দ্রষ্টব্য: কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ হতে প্রাপ্ত বিভিন্ন চিত্রের যে ব্যাখ্যা উপরে দিলাম অনুগ্রপূর্বক তা মনে রাখার চেষ্টা করবেন যাতে করে এর পর থেকে কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত কোন ছবি দিলে বুঝতে কোন সমস্যা না হয়। সংযুক্ত পোষ্টে ঢু মারতে পারেন।

পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে চলমান ঘূর্ণিঝড়, টাইফুন কিংবা হ্যারিকেন থেকে জীবন ও সম্পদ রক্ষার্থে পরিচিত হউন ১ ডজন ওয়েবসাইট এর সাথে
=====================================================================

উপরের পোষ্টে সংযুক্ত ১৩ টি সাইট হতে খুবই গুরুত্বপূর্ন ৪ টি সাইট এর লিংক এই পোষ্টে যুক্ত করা হলো যাতে করে আপনি নিজেই ঘূর্ণিঝড় এর চলমান আপডেট পেতে পারেন। এই জন্য আপনাকে একটু পরিশ্রম করতে হবে। কিছু-কিছু ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও আবহাওয়া পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে খুবই সাধারণ কিছু জ্ঞান প্রয়োজন হতে পারে, বিশেষ করে কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্রগুলো বোঝার জন্য। এই লিংক গুলো সংযুক্ত করার কারণ আপনারা নিজেই নিজের আবহাওয়ার পূর্বাভাষ তৈরি করে নিতে পারেন।

১) আমেরিকার হাওয়াই রাজ্যে অবস্থিত Pacific Disaster Center কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত তথ্য গানিতিক মডেলে ব্যবহার করে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভব্য গতিপথের পূর্বাভাষ দেয় প্রায় রিয়েল টাইম (প্রতি ঘণ্টায় আপডেট করে হয়)।

২) আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত ও প্রতিষ্ঠানটির নাম Joint Typhoon Warning Center (JTWC)

৩) আমেরিকার University of Wisconsin-Madison বিশ্ববিদ্যালয়ের এর Cooperative Institute for Meteorological Satellite Studies কর্তৃক পরিচালিত

৪) আমেরিকার National Oceanic and Atmospheric Administration (NOAA) কর্তৃক পরিচালিত Regional and Mesoscale Meteorology Branch ও জাপানের আবহাওয়া উপগ্রহ Himawari-8 দ্বারা সংগ্রহীত চিত্র হতে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় এর চলমান আপডেট পাওয়া যাবে।

এই লিংক ক্লিক করে ঘূর্ণিঝড় মোরা (MORA) এর এনিমেশন দেখা যাবে



=====================================================================

মোস্তফা কামাল (পলাশ),
পৃথিবী ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়,কানাডা
[email protected]


সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০২০ বিকাল ৫:৪৮
৩৭টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×