অভিনন্দন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। বাংলা প্রবাদে আছে "শুভস্য শিঘ্রম" আর ইংরেজি প্রবাদে আছে "The sooner the better"
‘বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মশা মারা সম্ভব না’
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের উপরোক্ত উক্তি শুনে আমার চোখে সামনে ভেসে উঠল স্কুল জীবনে পড়া ব্যাঙের জীবনচক্রের ছবি। ব্যাঙ যখন ডিম পাড়ে তখন শুরুতে মনে হয় মাছের ডিম। এর পরে ডিম ফুটে যখন ব্যাঙাচির আকার ধারণ করে তখনও মানুষ বিভ্রান্ত হয় টাকি-মাছের বাচ্চা ভেবে। সময়ের সাথে ব্যাঙাচির লেন্জা ঝড়ে পড়লে ব্যাঙের জীবন চক্র পূর্ণ হয় ও মানুষ ব্যাঙ বলিয়া নিশ্চিত হয়।
সাবেক অরাজনৈতিক ব্যক্তি ও মিডিয়া কথিত ভালো ও সৎ মানুষ (দেশ কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে রাষ্ট্রের টাকা লুট-পাটের ঘটনা ভুলিয়া গেলাম; তবে আপনাদের জানার আগ্রহ থাকলে ব্লগার দিনমুজুর (প্রকৌশলি কল্লোল মোস্তফা) এর ব্লগে ঘুরে আসতে পারেন আনিসুল হকের “দেশ রেন্টাল” জাতিকে কি দিয়াছে?) আনিসুল হক ব্যাঙাচির মতো অবশেষে নিজের ভালো মানুষীর লেন্জা ঝাড়িয়া ফেলিয়া নিজেকে পরিপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা হিসাবে জাতির সামনে উপস্থাপন করিতে পারিলেন।
ঢাকা শহরের মানুষকে মশা বাহিত রোগ ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ও এবছরের নতুন প্রাদুর্ভাব চিকুনগুনিয়া থেকে রক্ষা করতে চাইলে উজবেকিস্তানের তুলা আহরণের মতো বাধ্যতামূলক আইন করার জন্য সরকারকে ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।
প্রত্যেক দেশে বা সমাজে কিছু-কিছু সমস্যা আছে যেগুলো পৃথিবীর কোন সরকার বা বাহিনীর পক্ষে একাই সমাধান করা সম্ভব হয় না। ঢাকা শহরের মশা সমস্যা তেমনি একটি। ঢাকা শহরে প্রতিবছর বর্ষার সময় যেভাবে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ও এবছরের থেকে যোগ হওয়া চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে বা কষ্ট ভোগ করতেছে তাতে করে সময় এসেছে ১লা বৈশাখ বা একুশে ফেব্রুয়ারির মতো বছরের একটি দিনকে জাতীয় মশক নিধন দিবস ঘোষণা করার।
নির্দিষ্ট করে এই দুইটি দিবসের কথা বলার কারণ হলো এই দুইটি দিন দল-মত-বয়স ভেদে দেশের জনসংখ্যার বিশাল একটা অংশ পালন করে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে বলতে হয় বাসা থেকে বের হয়ে অংশ গ্রহণ করে। মশক নিধন দিবসে একই ভাবে সবাই ঢাকা শহর পরিষ্কারে অংশগ্রহণ করবে। বাবা-মায়ের নেতৃত্বে সন্তানরা, অফিসের বসের নেতৃত্বে কর্মীরা, স্কুল-কলজের প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে ছাত্র-ছাত্রীরা, সেনা-নৌ-বিমানবাহিনীর প্রধানদের নেতৃত্বে সৈনিকরা ও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রী-এমপিরা।
ছবি: উজবেকিস্তানের স্কুল ছাত্রীরা মাঠে তুলা আহরণ করছেন (ছবি সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস)
মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানের প্রধান রপ্তানি দ্রব্য হলও তুলা যেমনটি ছিলও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পাট ১৯৭০-১৯৮০ দশকে। বিশ্বে অনেক দেশে প্রাপ্তবয়স্ক তরুণ-তরুণীদের সামরিক ট্রেনিং নেওয়া বা সামরিক বাহিনীতে নির্দিষ্ট সময় চাকুরী করা বাধ্যতামূলক। উজবেকিস্তানে তেমনি একটা আইন আছে তবে সেটা হলও তুলা আহরণে স্বেচ্ছা শ্রম দেওয়া বাধ্যতামূলক। প্রতিবছর তুলা আহরণের সময় সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষকে (স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার কেউই ঐ আইনের ব্যতিক্রম না) মাঠে গিয়ে তুলা আহরণ করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। কেউ তুলা আহরণের কাজ করতে না চাইলে ঐ সময়ের জন্য সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে মাইনে দিয়ে শ্রমিক নিয়োগ করতে হবে, যারা তার পক্ষে তুলা আহরণ করবে।
In Uzbekistan, the Practice of Forced Labor Lives On During the Cotton Harvest
Every year the government of Uzbekistan forcibly mobilizes over a million citizens to grow and harvest cotton
ঢাকায় বসবাসরত সকল নাগরিক এগিয়ে না আসলে ঢাকা সিটি-কর্পোরেশনের ২ মেয়র ও ২/৪ শত মশক নিধন কর্মীর পক্ষে ঢাকা শহরের মশা সমস্যা সমাধান করা আগামী ১০০ বছরও সম্ভব হবে না। ঢাকার নাগরিকদের সম্পৃক্ত করার কাজটা শুধুমাত্র দুই মেয়রের দ্বারা সম্ভব না। এই জন্য সরকার প্রধানকে নিজেই উদ্যোগ নিতে হবে। ঘরে টিভির সামনে পপকর্ন নিয়ে বইসা দুই মেয়রকে গালি দিয়া কোন লাভ হয় নাই অতিতে; ভবিষ্যতেও হবেনা তার হলফ করিয়াই বলা যায়।
************* সবাই মিলে পথে নেমে পড়ি; ঢাকা শহরকে মশার উৎপাত মুক্ত করি ********************
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৩:১৪