somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্তরে অতৃপ্তি রবে, সাঙ্গকরি মনে হবে, শেষ হইয়াও হইল-না শেষ: ভাল থাকবেন অধ্যাপক Maryam Mirzakhani

১৫ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঘুম থেকে উঠে দেখি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক Maryam Mirzakhani ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, ইন্নালিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। মৃত্যু কালে তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৪০ বছর।

গণিতের নোবেল পুরষ্কার হিসাবে পরিচিত "ফিল্ডস মেডেল" যা ১৯৩৬ সালে থেকে দেওয়া হচ্ছে। নোবেল পুরষ্কার মৃত্যুর পূর্বের দিন পর্যন্ত পাওয়া যায় কিন্তু "ফিল্ডস মেডেল" পেতে হলে প্রার্থীকে ৪০ বছরের কম বয়সী হতে হবে। আশ্চর্য জনক হলেও সত্য যে ১৯৩৬ সাল থেকে এই পুরষ্কার দেওয়া হলেও ২০১৩ সাল পর্যন্ত কোন মহিলা গণিতবিদ তা অর্জন করতে পারে নি।

ছবি: গনিত চর্চায় মগ্ন অধ্যাপক Maryam Mirzakhani

২০১৪ সালে Maryam Mirzakhani এই পুরস্কার অর্জনের গৌরব অর্জন করেন। ২০১৭ সাল পর্যন্ত একমাত্র মহিলা যে "ফিল্ডস মেডেল" অর্জন করেন। অধ্যাপক Maryam Mirzakhani এর গবেষণার বিষয় ছিলও "complex geometry and dynamical systems" শৈশবেই নিজের গণিত প্রতিভার প্রমাণ দেন দুই বার আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে গোল্ড মেডেল অর্জন করে। ইরানের মতো রক্ষণ শীল দেশে মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া একজন মেয়ের জন্য আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে গোল্ড মেডেল অর্জন অসাধারণ কৃতিত্বের সাক্ষর রাখে।

ছবি: স্বামী ও কন্যার সাথে অধ্যাপক Maryam Mirzakhani

প্রবাদে আছে "রতনে রতন চিনে শুয়োর চিনে ঘেচু"। Maryam Mirzakhani এর শৈশবের অসাধারণ অর্জন তার জন্য খুলে দেয় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পথ। ঐ দিকে তার জন্য নিজের ঘরের দরজা খুলে স্বাগত জানানোর জন্য বসে আছে আর এক রতন: বিশ্ববিখ্যাত স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। গনিতে পিএচডি ডিগ্রী লাভ করার সাথে-সাথে যোগ দেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে অধ্যাপনা-রত অবস্থায় ২০১৪ সালে "ফিল্ডস মেডেলে" ভূষিত হন।

ছবি: নিজ কন্যাকে কিছু একটা শেখাচ্ছেন অধ্যাপক Maryam Mirzakhani

Maryam Mirzakhani প্রথম ইরানি নাগরিক হিসাবে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ পদক অর্জন করেন; একবার না দুইবার। দ্বিতীয় বার পারফেক্ট স্কোর অর্জন করেন।

আশ্চর্য জনক ভাবে মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে যাওয়া: সর্বশক্তিমান হয়ত চান নি অসাধারণ গাণিতিক প্রতিভাধারি মেয়েটির অকাল মৃত্যু। ১৯৯৭ সালে যখন ইরানের শরিফ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সের ছাত্রী তখন ইরানের আহভাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় গণিত প্রতিযোগিতা থেকে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরত আসার সময় তাদের বহনকারী বসাটি দুর্ঘটনায় পতিত হলে তার ৬ জন সহপাঠী মৃত্যু বরণ করলেও গুরুতর আহত হলেও ভাগ্য গুনে সে সময় প্রাণে বেঁচে যান মারিয়ম।

Maryam Mirzakhani সম্বন্ধে অন্যান্য গণিতবিদের মূল্যায়ন:

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পিএইচডি সুপারভাইজার Kurt McMullen (যিনি নিজেও একজন "ফিল্ডস মেডেল" ধারি গণিতবিদ) এর মূল্যায়ন:

At Harvard, she was known for her “fearless ambition”, “She would formulate in her mind an imaginary picture of what must be going on, then come to my office and describe it. At the end, she would turn to me and say, ‘Is it right?’ I was always very flattered that she thought I would know.”

পিএইচডি সুপারভাইজার Kurt McMullen বিজ্ঞান ম্যাগাজিন সাইন্টিফিক আমেরিকানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের ছাত্রী সম্বন্ধে বলেছেন:

"Competitions such as the IMO tend to reward quick problem-solving, a skill that doesn’t always lead to a successful research career in a field that requires long-term planning and perseverance. “Maryam was one of the rare mathematicians who combined outstanding problem solving skills with the insight and curiosity of a mature scientist,” McMullen says."

শিকাগোর ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতবিদ Ramin Takloo এর মূল্যায়ন:

“Even without a Fields Medal, Maryam is one of the great mathematicians of our time.”

প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গনিতবিদ Peter C. Sarnak এর মূল্যায়ন:

“a big loss and shock to the mathematical community worldwide,” “Not only did she solve many problems; in solving problems, she developed tools that are now the bread and butter of people working in the field.”

Maryam Mirzakhani সম্বন্ধে তার স্বামী (যে নিজেও একজন গনিতবিদ) এর মূল্যায়ন:

"Mirzakhani constantly doodles, drawing surfaces and other images related to her research. “She has these huge pieces of paper on the floor and spends hours and hours drawing what look to me like the same picture over and over,” "

"papers and books are scattered haphazardly about her home office. “I have no idea how she can work like this, but it works out in the end,"

২০১৪ সালে "ফিল্ডস মেডেল" অর্জন করার পরে ম্যগাজিন তার সাক্ষাৎকার নেয় ও তার জীবন ও কর্মের উপর একটা প্রবন্ধ প্রকাশ করে যার শিরোনাম ছিলো

A Tenacious Explorer of Abstract Surfaces: Maryam Mirzakhani’s monumental work draws deep connections between topology, geometry and dynamical systems.

ঐ সাক্ষাৎকারে Maryam Mirzakhani গনিত নিয়ে গবেষনাকে নিম্নরুপে উপস্হাপন করেন:

"mathematics research feels like writing a novel. “There are different characters, and you are getting to know them better,” she said. “Things evolve, and then you look back at a character, and it’s completely different from your first impression.”"

অসাধারণ একটা সাক্ষাৎকার ও তথ্যসমৃদ্ধ প্রবন্ধ। বিজ্ঞানে আগ্রহ থাকলে অবশ্য উপরোক্ত আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ জানাবো সবাইকে।

Maryam Mirzakhani এর গবেষণার বিষয় বস্তু ও গনিতে তার অবদান:

"Mirzakhani studied hyperbolic surfaces, creating a formula to estimate the number of lines for a surface of a given length. She also solved two other problems—on the volume of the so-called “moduli” space and about a long-debated mystery around topological measurements, moduli spaces and string theory. One of the most impressive achievements, says University of Chicago mathematician Benson Farb, is that she linked these findings. Solving each of these problems would have been an achievement on its own, he said. The fact that she linked them together was truly remarkable."

সূত্র: ইরান ওয়ার ডট কম থেকে সংকলিত

শৈশব ও স্কুল জীবনে Maryam Mirzakhani এর প্রিয় কাজ ছিলো বই পড়া বড় হয়ে ফিকশন সাহিত্যিক হওয়া, যা তিনি ঠিকই হয়েছেন তবে সেটা হলো গানিতিক উপন্যাসিক।




************ কিছু কিছু মৃত্যু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্পের সংজ্ঞা মনে করিয়ে দেয়: **********

"অন্তরে অতৃপ্তি রবে,
সাঙ্গকরি মনে হবে,
শেষ হইয়াও হইল-না শেষ।।"

মনে প্রশ্ন জাগে:

**** কবি কাজি নজরুল ইসলাম জীবনের পুরোটা সময় শারীরিক ভাবে সুস্থ থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো সাহিত্য চর্চা করলে বাংলা সাহিত্যকে আরও কতটুকু সমৃদ্ধ করতো?

******কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য মাত্র ২১ বছর বয়সে মারা না গেলে বাংলা কবিতাকে আরও কতটুকু সমৃদ্ধ করতো?

******* আরেক গণিতবিদ জন ন্যাস মাত্র ৩১ বছর বয়সে সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে পরবর্তী ৩০ বছর পুরো মানসিক ভারসাম্য না হরিয়ে জীবনের পুরোটা সময় শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকলে গণিত ও অর্থনীতি বিদ্যাকে আরও কতটুকু সমৃদ্ধ করতো?


Rest in peace Professor Maryam Mirzakhani, you may die but your mathematical ingenuity wouldn't

Mathematical Genius John Forbes Nash Jr. এর উপর আমার একটা ব্লগ আছে পড়ে দেখার আমন্ত্রন রইল।

তথ্য সূত্র:

১) Surviving Prejudice and Negligence in Her Country to Shine in Math

২) Maryam Mirzakhani, Only Woman to Win a Fields Medal,

৩) A Tenacious Explorer of Abstract Surfaces: Maryam Mirzakhani’s monumental work draws deep connections between topology, geometry and dynamical systems.

৪) Mathematics World Mourns Maryam Mirzakhani, Only Woman to Win Fields Medal
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৭:২৯
১৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×