somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণমাধ্যম যখন গরম গণযোগাযোগ অধ্যাপিকা কর্তৃক অন্য গবেষকের গবেষণা প্রবন্ধ থেকে গন-চুরির অভিযোগে

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গতকাল থেকে গণমাধ্যম গরম সেলিব্রেটি এক গণমাধ্যম ব্যক্তি কাম গণযোগাযোগ বিষয়ে অধ্যাপনায় নিয়োজিত অধ্যাপিকা কর্তৃক অন্য গবেষকের গবেষণা প্রবন্ধ থেকে গন-চুরির অভিযোগ নিয়ে। এত "গন" এর মধ্যে নিজেকে আর ব্যক্তিগত রাখতে পারলাম না। গন-স্রোতে নিজের তরীও ভাসাইলাম।

এই মাননীয়া ব্যক্তিটি এক সময় আমার ফেসবুক বন্ধু লিস্টেও ছিলেন। আজ থেকে প্রায় ৩ বছর পূর্বে কোন একটা ব্যাপার নিয়ে উনাকে একটা ম্যাসেজ দিয়ে বলেছিলাম আপা, আপনি টেলিভিশনের পর্দায় বসে সবসময় দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তি, আমলা, সরকারি কর্মকর্তাদের কাজের সমালোচনা করেন কিন্তু আপনার ফেসবুক ওয়ালে কেউ আপনার কোন মন্তব্যের সমালোচনা করলে সাথে সাথে ব্লক করে দেন সেই ব্যক্তিকে। এমনকি ইন্টেলেকচুয়াল আলোচনায় অংশগ্রহণ করাী ব্যক্তিও বাদ যায় না আপনার ব্লক লিস্ট থেকে। আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যাপনা করেন; আপনার আচরণ যদি এত অশিস্নু হয় ও ভিন্নমত সহ্য করতে না পরেন তবে আপনার কাছ থেকে আপনার শিক্ষার্থীরা কি শিক্ষা নিবে?

উপরোক্ত মন্তব্য করার কিছুক্ষণ পরেই দেখি আমিও ব্লক। এই হলও গণযোগাযোগ বিষয়ে অধ্যাপনায় নিয়োজিত ও গন-চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত অধ্যাপিকার চরিত্র। ঘটনাটা শুনার পর থেকে বিশ্বাস করতে পারতেছি সাংবাদিকতা বিষয়ের এত বছর অধ্যাপনা করা একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের (লেকচারার > সহকারী অধ্যাপিকা > সহযোগী অধ্যাপিকা) পক্ষে এত নোংরা কাজ কিভাবে করা সম্ভব?



Plagiarism নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা বলি; ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসার পরে প্রথম সেমিস্টারে নিজের সুপারভাইজারের সাথে একটা রিডিং কোর্স করতে হয়েছিল। নর্থ আমেরিকায় মাস্টার্স ও পিএইচডি করতে আসা প্রায় সকল ছাত্র-ছাত্রীকে এই রকম একটা রিডিং কোর্স করতে হয় ২/১ জন ব্যতিক্রম বাদে। এই কোর্সটায় মূলত বিভিন্ন গবেষণা প্রবন্ধ ও বই এর নির্দিষ্ট চ্যাপটার পড়ে প্রতি সপ্তাহে ১/২ সামারি করতে হয় ৫০-১০০ পৃষ্ঠা পড়ে। এক সপ্তাহ পড়া-লেখা করে আমিও যথাবিহিত সুপারভাইজারকে ২ পৃষ্ঠার সমারি পাঠালাম (যদিও প্রফেসরের নির্দেশ ছিলও ১ পৃষ্ঠার সমারি)। প্রায় ১০০ পৃষ্ঠার কন্টেন্ট পড়ে ১ পৃষ্ঠার সমারি লিখতে যে পরিমাণ স্কিল্ড হতে হয় সেই পরিমাণ ছিলাম না; অন্তত প্রথম সেমিস্টারে।

প্রথম সপ্তাহের সামারি পাঠানোর পরের দিন সুপারভাইজারের মেইল পেয়ে মনে হলও আগামী সপ্তাহে মনে হয় বাংলাদেশে ফেরত যেতে হবে। মেইলের সথে ৩ টা লিংক যুক্ত করে পাঠিয়েছিলেন। প্রথম লিংক হলও Plagiarism, paraphrasing এর সংজ্ঞা, উদাহরণ, কতটুকু paraphrasing করা যাবে; মাত্রাতিরিক্ত paraphrasing এর সমস্যা কি ইত্যাদি নিয়ে। দ্বিতীয় লিংক হলও Plagiarism নিয়ে ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিসি (ধরা পড়লে শাস্তি কি? কমপক্ষে ১ সেমিস্টার সকল প্রকার শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার, এমনকি ভর্তি বাতিল)। তৃতীয় লিংকটা হলও ফ্যাকাল্টি অফ সাইন্সের ডিনের তত্বাবধানে প্রত্যেক মাস্টার্স ও পিএইচডি ছাত্র-ছাত্রীকে আবশ্যিক কার্যক্রম হিসাবে Academic integrity নামক একটা ট্রেনিং সম্পন্ন করা। Academic integrity নামক ওয়ার্কশপে Plagiarism, paraphrasing এর উপর বিভিন্ন কেস স্টাডি করে হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া হয় কি করা যাবে কি করা যাবে না। এই ট্রেনিং ট্রান্সক্রিপ্টে উল্লেখ করা থাকে। এই ট্রেনিং সম্পন্ন না করলে কেউ ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রী সার্টিফিকেট পাবে না অন্য সকল ডিগ্রি রিকোয়ারমেন্ট সম্পন্ন করলেও।

প্রথম সপ্তাহে সুপারভাইজারের ঐ মেইল পাওয়ার পরে ন্যাড়া আর দ্বিতীয় বার বেল তলায় যায় নাই ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের Plagiarism বিষয়ে হাতে খড়ি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশেষ করে ল্যাব রিপোর্ট ও প্রজেক্ট রিপোর্ট গুলোতে। পূর্বের বছরের ল্যাব রিপোর্ট কপি > পেষ্ট করা হয় বেশিভাগ ক্ষেত্রে। ডাটা গুলো নতুন করে সংগ্রহ করা হলেও ল্যাব রিপোর্টের ভাষা গুলো পুরোই কপি করা হয়; নিজের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সেমিষ্টারে ২ টা কোর্স করতেছি। প্রথম দিনেই অধ্যাপক বলে দিয়েছেন যে উনি Turnitin নামক Pelagianism detection software দিয়ে সকল আস্যাইনমেন্ট চেক করবেন। সুতরাং সাধু সাবধান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপিকা ও টেলিভিশন সেলিব্রেটি এর চুরির বিষয়টা গোপনই থাকত যদি না আমেরিকার প্রকাশনা সংস্থা থেকে সরাসরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ আসতো।

"ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল জানান, দার্শনিক মিশেল ফুকোর লেখা “The Subject and Power” শীর্ষক প্রবন্ধ, প্রকাশ করেছে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস (১৯৮২), থেকে লেখা পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা চুরি করে নিজের নামে ছাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ করেছে স্বয়ং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস। (সুত্র: এনটিভি)"

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগেরই এক শিক্ষক চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত নিজ বিভাগে চলে আসা নীতি বহির্ভূত কার্যক্রম নিয়ে আত্নসমালোচনা ও কিছু বিব্রতকর তথ্য প্রকাশ করেছেন। সবাইকে পড়ে দেখার অমন্ত্রন রইল।

আশা করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিরপেক্ষ ভাবে অভিযোগটি তদন্ত করবেন। তদন্তে সুনির্দিষ্ট ভাবে Plagiarism এর অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্হা গ্রহণ করে সেই সংবাদ আমেরিকার প্রকাশনা সংস্থাকে জানাবেন। এতে করে বিশ্ব দরবারে একটা ম্যাসেজ যাবে এটা সত্যেন বোস-এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; মেধাসত্ব চোরদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় না।

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:০৪
১১টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হেঁটে আসে বৈশাখ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০০


বৈশাখ, বৈশাখের ঝড় ধূলিবালি
উঠন জুড়ে ঝলমল করছে;
মৌ মৌ ঘ্রান নাকের চারপাশ
তবু বৈশাখ কেনো জানি অহাহাকার-
কালমেঘ দেখে চমকে উঠি!
আজ বুঝি বৈশাখ আমাকে ছুঁয়ে যাবে-
অথচ বৈশাখের নিলাখেলা বুঝা বড় দায়
আজও বৈশাখ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×