গতকাল থেকে গণমাধ্যম গরম সেলিব্রেটি এক গণমাধ্যম ব্যক্তি কাম গণযোগাযোগ বিষয়ে অধ্যাপনায় নিয়োজিত অধ্যাপিকা কর্তৃক অন্য গবেষকের গবেষণা প্রবন্ধ থেকে গন-চুরির অভিযোগ নিয়ে। এত "গন" এর মধ্যে নিজেকে আর ব্যক্তিগত রাখতে পারলাম না। গন-স্রোতে নিজের তরীও ভাসাইলাম।
এই মাননীয়া ব্যক্তিটি এক সময় আমার ফেসবুক বন্ধু লিস্টেও ছিলেন। আজ থেকে প্রায় ৩ বছর পূর্বে কোন একটা ব্যাপার নিয়ে উনাকে একটা ম্যাসেজ দিয়ে বলেছিলাম আপা, আপনি টেলিভিশনের পর্দায় বসে সবসময় দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তি, আমলা, সরকারি কর্মকর্তাদের কাজের সমালোচনা করেন কিন্তু আপনার ফেসবুক ওয়ালে কেউ আপনার কোন মন্তব্যের সমালোচনা করলে সাথে সাথে ব্লক করে দেন সেই ব্যক্তিকে। এমনকি ইন্টেলেকচুয়াল আলোচনায় অংশগ্রহণ করাী ব্যক্তিও বাদ যায় না আপনার ব্লক লিস্ট থেকে। আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যাপনা করেন; আপনার আচরণ যদি এত অশিস্নু হয় ও ভিন্নমত সহ্য করতে না পরেন তবে আপনার কাছ থেকে আপনার শিক্ষার্থীরা কি শিক্ষা নিবে?
উপরোক্ত মন্তব্য করার কিছুক্ষণ পরেই দেখি আমিও ব্লক। এই হলও গণযোগাযোগ বিষয়ে অধ্যাপনায় নিয়োজিত ও গন-চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত অধ্যাপিকার চরিত্র। ঘটনাটা শুনার পর থেকে বিশ্বাস করতে পারতেছি সাংবাদিকতা বিষয়ের এত বছর অধ্যাপনা করা একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের (লেকচারার > সহকারী অধ্যাপিকা > সহযোগী অধ্যাপিকা) পক্ষে এত নোংরা কাজ কিভাবে করা সম্ভব?
Plagiarism নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা বলি; ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসার পরে প্রথম সেমিস্টারে নিজের সুপারভাইজারের সাথে একটা রিডিং কোর্স করতে হয়েছিল। নর্থ আমেরিকায় মাস্টার্স ও পিএইচডি করতে আসা প্রায় সকল ছাত্র-ছাত্রীকে এই রকম একটা রিডিং কোর্স করতে হয় ২/১ জন ব্যতিক্রম বাদে। এই কোর্সটায় মূলত বিভিন্ন গবেষণা প্রবন্ধ ও বই এর নির্দিষ্ট চ্যাপটার পড়ে প্রতি সপ্তাহে ১/২ সামারি করতে হয় ৫০-১০০ পৃষ্ঠা পড়ে। এক সপ্তাহ পড়া-লেখা করে আমিও যথাবিহিত সুপারভাইজারকে ২ পৃষ্ঠার সমারি পাঠালাম (যদিও প্রফেসরের নির্দেশ ছিলও ১ পৃষ্ঠার সমারি)। প্রায় ১০০ পৃষ্ঠার কন্টেন্ট পড়ে ১ পৃষ্ঠার সমারি লিখতে যে পরিমাণ স্কিল্ড হতে হয় সেই পরিমাণ ছিলাম না; অন্তত প্রথম সেমিস্টারে।
প্রথম সপ্তাহের সামারি পাঠানোর পরের দিন সুপারভাইজারের মেইল পেয়ে মনে হলও আগামী সপ্তাহে মনে হয় বাংলাদেশে ফেরত যেতে হবে। মেইলের সথে ৩ টা লিংক যুক্ত করে পাঠিয়েছিলেন। প্রথম লিংক হলও Plagiarism, paraphrasing এর সংজ্ঞা, উদাহরণ, কতটুকু paraphrasing করা যাবে; মাত্রাতিরিক্ত paraphrasing এর সমস্যা কি ইত্যাদি নিয়ে। দ্বিতীয় লিংক হলও Plagiarism নিয়ে ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিসি (ধরা পড়লে শাস্তি কি? কমপক্ষে ১ সেমিস্টার সকল প্রকার শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার, এমনকি ভর্তি বাতিল)। তৃতীয় লিংকটা হলও ফ্যাকাল্টি অফ সাইন্সের ডিনের তত্বাবধানে প্রত্যেক মাস্টার্স ও পিএইচডি ছাত্র-ছাত্রীকে আবশ্যিক কার্যক্রম হিসাবে Academic integrity নামক একটা ট্রেনিং সম্পন্ন করা। Academic integrity নামক ওয়ার্কশপে Plagiarism, paraphrasing এর উপর বিভিন্ন কেস স্টাডি করে হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া হয় কি করা যাবে কি করা যাবে না। এই ট্রেনিং ট্রান্সক্রিপ্টে উল্লেখ করা থাকে। এই ট্রেনিং সম্পন্ন না করলে কেউ ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রী সার্টিফিকেট পাবে না অন্য সকল ডিগ্রি রিকোয়ারমেন্ট সম্পন্ন করলেও।
প্রথম সপ্তাহে সুপারভাইজারের ঐ মেইল পাওয়ার পরে ন্যাড়া আর দ্বিতীয় বার বেল তলায় যায় নাই ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের Plagiarism বিষয়ে হাতে খড়ি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশেষ করে ল্যাব রিপোর্ট ও প্রজেক্ট রিপোর্ট গুলোতে। পূর্বের বছরের ল্যাব রিপোর্ট কপি > পেষ্ট করা হয় বেশিভাগ ক্ষেত্রে। ডাটা গুলো নতুন করে সংগ্রহ করা হলেও ল্যাব রিপোর্টের ভাষা গুলো পুরোই কপি করা হয়; নিজের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সেমিষ্টারে ২ টা কোর্স করতেছি। প্রথম দিনেই অধ্যাপক বলে দিয়েছেন যে উনি Turnitin নামক Pelagianism detection software দিয়ে সকল আস্যাইনমেন্ট চেক করবেন। সুতরাং সাধু সাবধান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপিকা ও টেলিভিশন সেলিব্রেটি এর চুরির বিষয়টা গোপনই থাকত যদি না আমেরিকার প্রকাশনা সংস্থা থেকে সরাসরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ আসতো।
"ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল জানান, দার্শনিক মিশেল ফুকোর লেখা “The Subject and Power” শীর্ষক প্রবন্ধ, প্রকাশ করেছে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস (১৯৮২), থেকে লেখা পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা চুরি করে নিজের নামে ছাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ করেছে স্বয়ং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস। (সুত্র: এনটিভি)"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগেরই এক শিক্ষক চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত নিজ বিভাগে চলে আসা নীতি বহির্ভূত কার্যক্রম নিয়ে আত্নসমালোচনা ও কিছু বিব্রতকর তথ্য প্রকাশ করেছেন। সবাইকে পড়ে দেখার অমন্ত্রন রইল।
আশা করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিরপেক্ষ ভাবে অভিযোগটি তদন্ত করবেন। তদন্তে সুনির্দিষ্ট ভাবে Plagiarism এর অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্হা গ্রহণ করে সেই সংবাদ আমেরিকার প্রকাশনা সংস্থাকে জানাবেন। এতে করে বিশ্ব দরবারে একটা ম্যাসেজ যাবে এটা সত্যেন বোস-এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; মেধাসত্ব চোরদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় না।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:০৪